কৃপেশ। ধীর, শান্ত এক সংগ্রামী কিশোর। পড়ালেখা চালাতে কখনো রিক্সা, কখনো নির্মাণ ্রশমিক কখনো আরো কঠিন কোন কাজ করেছে। তার মাতাও নিরন্তর হাতুড়ি, শাবল খৃন্তি পিঠানো শ্রমিক। ফোস্কা পড়তে পড়তে হাতও কঠিন হয়ে উঠেছে এই মমতাময়ী মাতার। চলতি বছরের এসসসি পরীায় সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে দরিদ্র পরিবারের এই শ্রমজীবি কিশোর। তার ও দিনমজুর মায়ের স্বপ্নের নদী বহুদূর প্রবাহিত হওয়ার দাবি রাখলেও ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হওয়াটাই তার জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। তারপরও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে এই পরিশ্রমি কিশোর মায়ের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নপূরন করবেই। এজন্য আরো কঠিন কোন শ্রম করতে হলেও সে তাই করতে চায় মায়ের জন্য। তবে মাত্র ইংরেজি বিষয়ে তার এ প্লাস মিস হওয়ায় চরম আপে হচ্ছে। তাই খাতা পূন পরীার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে কৃপেশ। সে আশাবাদী খাতা পূনপরীা হলে গোল্ডেন এ প্লাস পাবেই।
‘আমার পড়ালেখার জন্য মা অনেক কষ্ঠ করে চলছেন। প্রখর রোদে রাজমিস্ত্রীদের সঙ্গে জোগালি কাজ ও মাটি কামলার কাজ করেছেন। সংসার ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়মিত দিনমজুরের কাজ করছেন। আমিও আমার টিউশনির ফি ও পড়ালেখার খরচ চালাতে কখনো রিক্সা চালানো, কখনো দিনমজুরি এবং মাঝে মাঝে টিউশনি করেও প্রতিদিন আট ঘন্টা পড়ালেখা করেছি। আমার মায়ের কষ্ট কাজে লেগেছে। আমি মাকে দেওয়া কথা রেখেছি। পরিশ্রমি মায়ের পান্ডুর মুখটা এখন আমার সাফল্যে হাস্যোজ্জ্বল।’ এভাবেই অকপটে বলছিল এবারের এসসসি পরীায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র কৃপেশ চন্দ্র দাস। তার দিনমজুর মায়ের স্বপ্ন কৃপেশ ইঞ্জিনিয়ার হবে। তবে শুধু ইংরেজি বিষয়ে এ প্লাস না আসায় গোল্ডেন প্লাস বঞ্চিত কৃপেশ খাতা পূনপরীার আবেদন করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
১২ বছর আগে রোগের কাছে কাবু হয়ে দরিদ্র বাবা বাবা নিপেন্দ্র দাস মারা যান। ৫ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট কৃপেশ। তাদের বাড়ি ধরমপাশা উপজেলার মাসকান্দা গ্রামে। বর্তমানে সুনামগঞ্জ শহরের বনানীপাড়ায় একটি বস্তি সমেত এলাকায় বসবাস করছে তারা। তার মা ও ভাইয়ের দিন মজুরীতেই চলছে তাদের অভাবের সংসার। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। এক বোন ঘরে সেলাইয়ের কাজ করছে।
নিত্য অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা কৃপেশ চন্দ্র দাস মাঝখানে অনেক দুর্যোগ ও দুর্ভোগে পড়লেও অনেক কষ্ট করে পড়ালেখাটা নিয়মিত চালিয়েছে। মায়ের তাগিদটা ছিল যতই কষ্ট হোক পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে হবে। কৃপেশ মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে তাই নিজেও দিনমজুরি করেছে, চালিয়েছে রিক্সা। তারপরও নিজে প্রতিদিন আট ঘন্টা পড়ালেখা করেই সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এখন ইংরেজি বিষয়ে এ প্লাস না আসায় গোল্ডেন প্লাস বঞ্চিত কৃপেশ খাতা পূনপরীার উদ্যোগ নিবে বলে জানিয়েছে।
কৃপেশ জানায়, অসংকোচ পরিশ্রমই তাকে এই সফলতা এনে দিয়েছে। তবে আগামীদিনেও কী এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব এমন প্রশ্নে তার মায়াবি মুখটা হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। অভাবের চাবুক তাড়া করা কিশোরের নিষ্পাস অবয়বে চিন্তার ছাপ ষ্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময়ে সহায়তাকারী স্যারদের কথা মনে করিয়ে বলে ‘আমার প্রিয় স্যাররা আমাকে অভয় দিয়েছেন চিন্তা না করার জন্য। স্যারদের সহযোগিতা ও মায়ের পরিশ্রমেই অবশ্যই আমি সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমি থামবনা। ইঞ্জনিয়ার হয়ে আমি আমার মায়ের স্বপ্নপূরণ করবই। এজন্য আরো কঠোর পরিশ্রম করতেও আমার লজ্জাবোধ নেই।
কৃপেশের দিনমজুর মা জ্যোৎস্না রানী দাস বলেন, কিশোর ছেলেদের অনেক জিনিষের চাহিদা থাকে। কিন্তু আমার অভাববোধ ঝুঝনেঅলা ছেলেটি কোনদিনই আমার কাছে কোন আব্দার করেনি। একটি ভালো জামা ও শখের জিনিষ প্রিয় খোকাকে দিতে না পারায় আমার অনেক কষ্ট ছিল। ভাল খাবারও তাকে কখনো দিতে পারিনি। নিত্য অভাবের মধ্যে থেকেও ছেলে বলেছিল ভালা ফলাফল করবে। আমার লী ছেলে আমার কথা রেখেছে। তবে আগামীতে ছেলেকে এতদূর নিতে পারব কি না এ নিয়ে দুশ্চিন্তাও রয়েছে আমার।
সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃপেশের শিক কল্লোল তাুলকদার বলেন, মেধাবী কৃপেশ খুবই পরিশ্রমী । নিত্য অভাবের মাঝেও রিক্সা চালিয়ে দিনমজুরি করে নিয়মিত আট ঘন্টা পড়াশোনা করেছে। তার কঠিন মনোবল ও পরিশ্রমই তাকে এত ভাল রেজাল্ট করতে সাহায্য করেছে। এখন তার গোল্ডেন প্লাস মিস হওয়ায় আমরা তার ইংরেজির খাতা পূণঃপরীার জন্য বোর্ডে আবেদন করব। আশা রাখি মেধাবী এই ছেলেটি গোল্ডেন প্লাস পাবে। অদম্য এই মেধাবী ছেলের পড়ালেখায় বিত্তবানরা সহায়তার হাত এগিয়েইদলে সে একদিন জাতীয় সম্পদে পরিণত হবে।
আমরাও চাই কৃপেশ যেন না থামে। আসুন সবাই এই মেধাবী ছেলের দিকে সাহায্যেও হাত বাড়িয়ে দেই।
দিনমজুর মায়ের স্বপ্ন কৃপেশ ইঞ্জিনিয়ার হবে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া
১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।