নাম তার আবুল আলা মউদুদী। তার জামাত নেতা পিতা দলের প্রতিষ্ঠাতা মউদুদীর প্রেমে এতই মশগুল ছিলেন যে তার নামেই তার সন্তানের নামকরণ করেন। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান আবুল আলা মউদুদী বাপের মতই ছোটবেলা থেকেই ছাত্র শিবিরের তালিম নেন। পর্যায়ক্রমে সাথী ও সদস্য নিয়ে জামাত সমর্থক হয়ে গত জোট সরকারের আমলে চাকুরি নেন সুনামগঞ্জ সরকারি এসসি গার্লস হাইস্কুলে। বর্তমানে তিনি এই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহীমও একজন জামাত সমর্থক। আবুল আলা মউদুদী সরকারি চাকুরিতে যারা জামাতি তাদের নিয়ে কাজ করেন। সুনামগঞ্জে আসার পর প্রায়ই তিনি মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটুক্তি করেন। ক্লাসে এবং ক্লাসের বাইরেও...। তবে গত ১৫ আগস্ট তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাত্রাছাড়া কটুক্তি করেন। শিক্ষক ও ছাত্রীদের উপস্থিতিতে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ শেখ মুজিব একজন মিথ্যাবাদী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে মানুষ মারা গেছে তিন লাখ অথচ তিনি বেশি বৈদেশিক ত্রাণ পাওয়ার আশায় বলেছেন ত্রিশ লাখ। ৭৫ সালে তাকে হত্যা না করা হলেও পরবর্তীতে জণগন তাকে সরানোর জন্য হত্যা করতো। সেটা ৮১ অথবা ৯১ সালে হতে পারতো। তিনি আরো বলেন, গাদ্দাফী এবং সাদ্দাম হোসেনের লাশ ও প্রতিকৃতির সঙ্গে জনগন যেভাবে ব্যবহার করছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জনণও এমন ব্যবহার তরতো। ’ এভাবেই তার ৪৫ মিনিটের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটুক্তি ও উপহাসমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তার এই বক্তব্যে স্কুলের ছাত্রী ও শিক্ষকদের অনেকেই বের হয়ে এসে স্বজনদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করেন। তার এমন বক্তব্যের পর জেলা ছাত্র লীগ খবর পেয়ে স্কুল থেকে তাকে ধরে এনে থানায় সোপর্দ করে। এসময় ছাত্র লীগ নেতৃবৃন্দ তাকে মারধরও করেন। তবে ছাত্র লীগ-আওয়ামী লীগের দ্বন্ধের কারণে এবং পুলিশের লুকোচুরি ভূমিকা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে জাতীয় শোক দিবসে জাতির জনকের সঙ্গে এমন আচরণ করেও তিনি পের পেয়ে গেছেন। পরদিন তিনি জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান।
জানা গেছে, জেলা ছাত্র লীগ সভাপতি ফজলে রাব্বি স্মরণের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের দুই ঘনিষ্ট দুই নেতার দ্বন্ধ দেখা দেয়। এ নিয়ে ছাত্র লীগ নেতা ওই দুই নেতাকে থ্রেট করেন। যার ফলে ওই নেতা ছাত্র লীগ নেতার প্রতি ক্ষুব্দ হন। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে বিষয়টি রফার জন্য একাধিকবার বসা হয়। তারপরও মিটমাট হয়নি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ছাত্র লীগ নেতার প্রতি ক্ষুব্ধতার কারণ্ েওই দুই নেতা পুলিশকে আবুল আলা মউদুদীকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। আরেক আওয়ামী লীগ নেতা নাকি ওই শিক্ষকের পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ খেয়ে গ্রেফতারি ধারা নরম্যাল দেওয়ার জন্য পুলিশকে চাপ দেন। তবে পুলিশও ওই শিক্ষককে আটকের পর থেকে লুকোচুরি খেলছিল। গ্রেফতারের পর থেকেই থানার ওসি ও আইও কোন কথা বলছিলনা প্রেসের সঙ্গে। ওই জামাতি শিক্ষকের এক ভাই পুলিশ অফিসার এবং এক ভাই জয়েন সেক্রেটারী। তাদের উপর থেকে চাপ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের টাকা খেয়ে ছুটিয়ে নেওয়ার তদ্বির এবং আরেক নেতার ঘুষ নেওয়ার কারণেই শেষ পর্যন্ত পুলিশ ওই শিক্ষককে নামকাওয়াস্তে ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান করে। তবে জামাতে ইসলামীর স্থানীয় নেতারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যবসাপাতি আছে এমন নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার তব্দির করেন। আদালতের নেওয়ার পরেই আবুল আলা মউদুদীর জামিন দেন আদালত। জাতির জনকের প্রতি এমন কটুক্তিতে সংস্কৃতিকর্মী ও প্রগতিশীল রাজনীতিবিদরা ক্ষুব্দ হয়ে ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করলেও আওয়ামী লীগ শিক্ষককে ছাড়ানোর জন্য করলো লজ্জানক কাজ। জাতীয় শোক দিবসে তারা জাতির জনকের আতœার সঙ্গে সঙ্গে করলো বেঈমানী। তবে ছাত্র লীগ করেছে সাহসী কাজ। কিছুদিন আগে দলীয় কোন কর্মসূচী পালন না করায় শাস্তিমূলক হিসেবে ছাত্র লীগ কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগ। সঠিক সময়ে এই কাজ করে পার পেয়ে গেল আওয়ামী লীগ।
আমরা ধিক্ষার জানাই আওয়ামী লীগের হাইব্রীড এসব নেতাদের। যারা জামাতিদের লগে ব্যবসাপাতি ও সুবিধা নিয়ে জাতির জনকের সংগঠনের সঙ্গে করে বেঈমানী।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ২:২৩