পৃথিবীতে ‘মা’ নিয়ে যত লেখালেখি হয়, তার তুলনায় ‘বাবা’ নিয়ে লেখার পরিমান নেই বললেই চলে। পুরুষ বলে মা-কে আমি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছিনা, কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, মা’র তুলনায় বাবা’র মূল্য তলানীতে পৌছে গেছে ! কেন এমন হচ্ছে ? বাবা সন্তান পেটে ধরেনি বলেই কি ? কিন্তু সন্তান পেটে এলে স্বামীর আনন্দ, স্ত্রী’র সেবা-যতেœ গভীর মনোযোগ, সাধ্যানুযায়ী খাবার, চিকিৎসা সহ স্ত্রী’র প্রতি আবেগ-ভালবাসা, সন্তান ধারনে স্ত্রী’র শারিরীক অবস্থার প্রতি উৎকন্ঠা এবং সার্বক্ষনিক নজরদারী ইত্যাদি একজন স্বামীকেই তো সবচেয়ে বেশী করতে হয়। মহান আল্লাহ্’র বিধান যে, মা’কে-ই কষ্ট ভোগ করতে হবে, নতুবা ; সন্তান প্রসব বেদনার অংশীদারের সুযোগ থাকলে কোন স্বামী-ই তার স্ত্রী-কে সে যন্ত্রনা এককভাবে সইতে দিতনা এটা নিশ্চিত বলা যায়। ঘটনাতো এমনও ঘটে- মা’কে বাঁচাতে চাইলে সন্তান বাঁচবেনা, আবার সন্তানকে বাঁচাতে চাইলে মা বাঁচবেনা- এ রকম পরিস্থিতিতে কোনও স্বামী তার স্ত্রীকে বিসর্জন দিয়ে সন্তান কামনা করেছে- এ নজির বিশ্বে নেই ! তবে এ ধরনের সন্তান বিসর্জনে বাবা’র বা মা’র কষ্ট হয়না তা কিন্তু নয়। বাবা’র ভালবাসা যদি মা’র প্রতি এতটাই বিশাল, এতই মহৎ, তা হলে সংসারে বাবা কি আরও একটু বেশী মনযোগ পেতে পারেনা ? এখনও তো আমাদের সমাজে বাবা-ই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংসারের জন্য উপার্জন করে। এ উপার্জন করার বিষয়টি কি খুবই সহজ। উপার্জন করতে গিয়ে বাবাকে ‘মনিবের শিকল’ পরে, যানবাহনে চড়ে, ভীড়ের চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে অফিস করতে হয়। এরপর বসদের ধমক, কটু কথা, ফরমায়েস এবং কাজের সূত্রে আরও কত রকমের মানষিক ধকল সইতে হয় ! বেতনের টাকায় সংসারের খরচ নির্বাহ না হলে বাবাকে বন্ধু/কলিগদের কাছে গোপনে হাত পাততে হয়। টাকা যোগারে কত রকমের যে গঞ্জনা তা কি বাবা শেয়ার করে ? এমনকি স্ত্রী’র সাথেও কি ? স্ত্রী-সন্তানের চিকিৎসা, শিক্ষার যত সব খরচের টাকা বাবা কোথা থেকে পায় ? দিন শেষে বাবা যখন বাড়ী ফেরে তখন টিভি-সিরিয়াল, লেখা-পড়া ছেড়ে বাবার ঘামে ভেজা শার্ট, ধুলি-মলিন জুতো খুলে দেয়ার সময় কি বাড়ীর মানুষ গুলোর থাকে ? কিংবা থাকে কি কেউ, বাবা কখন ঘরে ফিরবে তার অপেক্ষায় ? তৈরী থাকে কি বাবা’র প্রিয় কোন খাবার ? বরং এক রাশ অভিযোগ, চাওয়া যেন বাবা’র ঘরে ঢোকার অপেক্ষায় সবাই জমিয়ে রাখে। বাবা দু’হাত ভরে বাজার-সদায় নিয়ে ঘরে ফিরলে স্ত্রী-সন্তানদের কত সুখ ! কিন্তু বাবা’র হাত দু’টো কি কেউ ছুঁয়ে দেখে, তাতে কোন কষ্টের দাগ বসে গেছে কিনা !
বাবা তার জীবনের সঞ্চিত সম্পদের উত্তরাধিকারী নির্ধারন করে রেখে যায় কাকে ? স্ত্রী/মা কিংবা সন্তান ছাড়া আর কাউকে কি ?
আসলে এ জগৎ সংসারে বাবা সবার খবর রাখে, কিন্তু বাবার খবর অনেকেই রাখে না। মা কষ্ট পেলে কেঁদে তার প্রকাশ ঘটায়, কিন্তু বাবা’র কষ্ট চিরকালই নিরবে-নিভৃতে থেকে যায়।
“জননীর পদতলে সন্তানের বেহেস্ত” এটি যেমন সত্য, আবার “বাবা’র চেহারার দিকে আদব ও নেক নজরে একবার তাকালে একটি মকবুল হজ্ব ( যে হজ্ব কবুল হয়েছে ) এর ছওয়াব হয়, দিনে যতবার তাকাবে ততটি মকবুল হজ্ব করার” সৌভাগ্য সন্তানের হবে- এটাও সত্য। আর যার একটিও হজ্ব কবুল হয়, সে কি বেহেস্ত এ যাবেনা ?
পৃথিবীতে কিংবা আমাদের দেশে ‘বাবা’ মৃত্যূর হার কত ? আচ্ছা, বাবা-কে কি আরও একটু বেশী শ্রদ্ধা, ভালবাসা দেয়া যায়না ?