(১)
মাছের জন্য ডোলা আর তরকারীর জন্য চট কিংবা মোটা কাপড়ের ব্যাগের প্রচলন উঠে গেছে বহু আগেই। এখন সব পণ্য পলিথিনে বহন করা হয়। পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে লক্ষ লক্ষ পলিথিনে হাজার হাজার দোকানীরা পলি ব্যাগে সব পণ্য ভরে দিচ্ছেন আর আমরাও তা স্বচ্ছন্দে গ্রহন করে পরিবেশের ক্ষতির সহায়তা করে যাচ্ছি। একই সাথে পলিথিন ব্যাগটি দ্রুত ও সহজে খুলতে গিয়ে দোকানী তার আঙ্গুলে নিজের যে থুথু মেখে দিচ্ছেন, সেও আমাদের হাতে-শরীরে লেগে ছড়াচ্ছে রোগ-বালাই। এসব ব্যাপারে ক্রেতাদের সচেতনতা কতটুকু ?
(২)
আগে আস্ত মাছ কিনে বাড়ীতে সকলকে দেখানো আর কাটাকুটি করার মজাই ছিল আলাদা ! আর এখন গৃহিনীদের আরাম আয়েশ ও সুখের যেন অন্ত নেই। কারন স্বামী মাছ/মুরগী যদি বা কিনেন, তবে তা কুটিয়েই ঘরে আনেন। এজন্য মাছ কাটার দোকানেও আজকাল লাইন দিতে হয়। পুরুষ মানুষেরা চমৎকার করে (!) মাছ কাটে, প্রতি কেজি পঞ্চাশ টাকা দরে।
(৩)
ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই ঘর-দুয়ার ঝাড়ু দেয়ার অভ্যাস কি হারিয়ে গেল ? মা-দাদী-নানীদের দেখতাম খুব ভোরে উঠে ঘর-দোর ঝাড়ু দিতেন। কেন আগেকার মানুষেরা ভোরে ঘর-দুয়ার ঝাড়ু দিতেন ? অপয়া দূর করা জন্য কী ?
(৪)
সুডন্ট ইট কল এনি মোর ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ ! নতুন বাসা/ফ্লাট এ উঠলেই অনেকে এখন আর মান্ধাত্বা আমলের পুরাতন ফার্নিচার গুলো সাথে নিতে চান না। বাবা-দাদার গড়া প্রাচীন অথচ দামী এসব জিনিসের মূল্য আধুনিক যুগের উত্তরাধিকারীগনের কাছে যেন খুবই নগন্য বিষয়। নতুন ও আধুনিক আসবাবপত্র কি মানুষের রুচি, অভ্যাস, মন-মানসিকতা বদলে দিতে পারে ?
(৫)
হাতে এদের সুদৃশ্য এবং মূল্যবান মোবাইল- একটা, দু’টো, কারও বা তিনটে ! কাপড়, জুতো সব আধুনিক ও দামী। কিন্তু ২/১ টাকার জন্য এদের সাথে বাস কন্ট্রাকটর কিংবা রিকসাওয়ালার সাথে বিশ্রি তর্ক বা ঝগড়া কখনও কখনও হাতাহাতির পর্যায়েও চলে যায়। চেহারা আর পোষাকের বিপরীতে মানুষের আচরন মানানসই হবে কবে ? কি করে ?
(৬)
এ যুগের সন্তানেরা মা-বাবাকে কিংবা চাচা-বড় ভাইকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে। শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালোবাসার নিরীখে ‘আপনি’ আর ‘তুমি’ এর মধ্যে বিস্তর ফারাক- আধুনিক মাতা-পিতা ও সন্তানদের মাঝে এ ধারনাটা নেই বললেই চলে। মা-বাবা কি সন্তানদের বন্ধু হতে পারে ? না হতে দেয়া উচিত?
(৭)
বয় বা গার্লফ্রেন্ড আর সস্তা প্রেম-ভালোবাসার সহজলভ্য ছড়াছড়িতে কত প্রিয়জন যে কত মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, পরিবার ভেংগে যাচ্ছে, তা দেখছিনা কেন ?! ফ্রেন্ডদের পিছনে ফ্রেন্ডরা খরচও করেন অনেক অনেক। এ অর্থের উপর পরিবারের মানুষজন ছাড়া আর কারো অধিকার আছে কি ?
(৮)
মানবিক জ্ঞানশুন্য পোকা-মাকড়, পশু-পাখি, জীব-জন্তুরাও খুব কম ক্ষেত্রেই তাদের স্বজাতীয়দের হত্যা করে বা খায়। তবে তারা এটি করে শুধুমাত্রই জীবন ধারনের জন্য। কিন্তু বিবেক সম্পন্ন মানুষ ?! মানুষ কি মানুষকে খেতে পারে ?? হ্যাঁ, সত্য এটাই যে, মানুষও মানুষকে খায় ! ক্ষমতা এবং টাকার জন্য সভ্য দুনিয়ার নামধারী সভ্য মানুষেরা বাহুবল, শোষন, অত্যাচার, অবিচার, হত্যা এবং জীবজন্তুর চেয়েও ঘৃণ্য ও নৃশংস পন্থায় অন্য মানুষকে নিস্পেসিত করে পরোক্ষভাবে স্বজাতীয়দের খাচ্ছে। এ খাওয়া-খাওয়ির যেন শেষ নেই ! একটা জীবনের জন্য কিংবা একটা পরিবারের জন্যই হোক, তাতেই বা একজন মানুষের কত কত টাকার দরকার ??
(৯)
চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর বয়সে অসুখ-বিসুখ যখন শরীরে জেঁকে বসে- তখন রমনা পার্কে কিংবা বিভিন্ন উদ্যানে সকাল-বিকাল হাঁটাহাঁটি করে, কতই বা সুস্থ্য থাকা সম্ভব ?? যুবা বয়স থেকে নিয়মিত শরীর চর্চা, ভারসাম্য খাদ্যাভ্যাস ও শরীরের যত্ন নিলে বৃদ্ধকালে অনেক রোগ-ই কাছে ভিড়তো না। আমরা কি আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের এ ব্যাপারে এখন থেকেই প্রস্তুত করতে পারি না ??