somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়বকুন্ড-৩

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দু’দিন হলো সিসিসি’র গেস্ট হাউজে আছি। মিঃ নূরুল আমিন ছাড়াও তার রূমে আরও দু’জন কর্মকর্তা থাকেন। মিঃ আবুল বাশার, সহঃ প্রকৌশলী (রসায়ন) ও মিঃ ইমরান আহমেদ, সহঃ ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক)। তাদের সাথে পরিচয় হলো। মিঃ ইমরানের সাথে অবশ্য আগে থেকেই চেনা-জানা ছিল। বাহ্যিক দর্শনেই সে শুধু হিরো নয়; স্মার্ট, কর্মঠ ও অভিজ্ঞ। মিঃ বাশারকে চিনতে পেরেছি পরে। বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট হলেও খুব দ্রতই তাদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক তৈরী হলো।
ডরমেটরীতে তিন বেলা খাওয়ার সুবাদে কারখানার সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় এবং অল্প-সল্প কথা হচ্ছে। আজ সকালে ডাইনিং রূমে নাস্তা করছি। এমন সময় স্নেহ-হাসি মূখ, ঝাকড়া চুলো, সুঠাম দেহের এক ছেলে ঢুকলো। প্রখমে চেনতেই পারিনি। সজীব নেওয়াজ। ও-ই পরিচয় দিল। ৯৪-৯৫ এ বিসিআইসি কলেজে আমার ছাত্র ছিল। ওর পোষ্টিং এখানে জানা ছিল না। কমার্শিয়াল ক্যাডারে জুনিয়র অফিসার হিসেবে বিসিআইসি’তে জয়েন করে সিসিসি এ পোষ্টিং হয়েছে। ওকে পেয়ে খু-উ-ব ভালো লাগলো। পরবর্তীতে পিজিটিআর এর সময় ওর নিরলস ও চমৎকার কর্মতৎপরতা আমাকে ব্যাপক সহায়তা যুগিয়েছে। সে কথা পরে বলবো।
বাড়বকুন্ডের আবহাওয়া এ সময়ে রোদ-মেঘ-বৃষ্টির চক্রাকারে ঘুড়ছে। কখনও মৃদু বাতাস থাকলেও গরমের দাপট কমছে না। এখানে দেখলাম দিনে-রাতে দু’টি জিনিস একেবারে শরীরের অঙ্গের মত করে রাখতে হয়। একটি হলো ছাতা; অপরটি টর্চ লাইট।
ডরমেটরীতে নাস্তা খেয়ে সকাল ৮.৩০ এ অফিসে যাচ্ছি। স্বাভাবিক হাঁটলেও ১২/১৫ মিনিট লাগে। পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল। গায়ে ইন-বিহীন হাফ শার্ট। নিঃসন্দেহে গাইয়া লাগছে। ঢাকায় অবশ্য বেশীরভাগ দিনই জুতা পড়ে শার্ট ইন করতাম। ৯ টায় অফিস। ডিডিটি গেট থেকে স্টোর হয়ে যে পথ অফিসে গেছে; সেদিক দিয়ে যাচ্ছি। মাথায় ছাতা। সাপ-জোঁকের ভয়ে বার বার রাস্তা-পায়ের দিকে তাকাচ্ছি। দু’ধারে বড় বড় ইউক্যালিপটাস, মেহগনি, কড়ই, সেগুন, চাপালিশ গাছ। স্টোর পার হয়ে এদের শাখা-প্রশাখা দু’দিক থেকে মিশে সুন্দর ছায়া পড়েছে। নানান পাখি-বিশেষত মাছরাঙ্গা ও ঘুঘু পাখির ডাকে প্রান্তর মুখরিত। এত বড়, সুন্দর ও বাহারী রঙের ঘুঘু পাখি! তবে রাস্তার দু’পাশে ঝোঁপ-জঙ্গল দেখে গা ছমছম করছে।
কিছুদূর গিয়ে বায়ে বাঁক; এর পর ডানে ঘুড়তেই খালের উপর বড় এক আরসিসি ব্রিজ। দূরের পাহাড় থেকে প্রাকৃতিকভাবে নেমে আসা ঝর্না থেকে তৈরী সরু খাল। স্থানীয়রা একে বলে ‘ছড়া’। হাটু পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। পরে দেখেছি বৃষ্টি হলে এ ছড়ায় পানি বয়ে যাওয়ার তীব্রতা। ও পাশে কে একজন ছীপ ফেলে বসে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, কি পাওয়া গেল? উত্তর এলো ; ছোট গুলসা, তেলাপিয়া মাছ।
নির্ধারিত সময়ে একটু আগেই অফিসে যাওয়ার অভ্যাষ চাকুরীর শুরু থেকেই। যেন আমি না গেলে অফিস চলে যাবে।
সকাল ৮.৪০ এ-ও সিসিসি’র প্রশাসন ভবন খোলা; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এ হলো টিএসপি থেকে বদলী হয়ে আসা মিঃ মোহন চন্দ্রের কাজ। পরেও দেখেছি তার এ নিয়মের কোন হেরফের হয়নি। পতেঙ্গা, টিএসপি’র বাসা থেকে ভোর ৭.৩০/৪০ এ সিসিসি বাড়বকুন্ডে প্রতিদিন আসা! প্রায় দেড় বছর তার এরকম উপস্থিতির কোন পুরষ্কার আমি ওকে দিতে পারিনি। দাপ্তরিক ও অন্যান্য কাজেও অভিজ্ঞতায় সে ছিল অতুলনীয়। এ প্রসঙ্গেই মনে এলো বিআইএসএফ এর সার্বিক প্রশাসনে আমার সহকর্মী মিঃ মাহবুবের কথা। ১৩ বছর! এ সময়ে তাকে সর্বোচ্চ ১৯০ জন পh©ন্ত কর্মকর্তার ফাইল একাই ডিল করতে দেখেছি। এর বাইরে বিভিন্ন প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি-আদেশ, কর্মকর্তাদের ৬/৭ প্রকারের ছুটি/ছুটির আদেশ, বদলী-অবসর (তার ডকুমেন্ট সংরক্ষণ), প্রশিক্ষণ ও চাকুরী সংক্রান্ত ছক এ তথ্য সন্নিবেশ, তদন্ত-শৃঙ্খলামূলক নোট উত্থাপন, জুনিয়র কর্মকর্তাদের সব ধরণের কাজ- সর্বশেষ সেটেলমেন্ট; প্রশাসনিক এমন কোনও কাজ নেই যে কাজে মিঃ মাহবুব জানতো না বা করতো না। সে ছিল অসাধারন এক প্রশাসনিক মেধা।
নতুন কর্মস্থলে কাজ শুরু হলো। ৫ কক্ষ বিশিষ্ট দক্ষিন মুখো ১ তলা প্রশাসনিক ভবন। সামনে বারান্দা। ৬৪/৬৫ সনে তৈরী এ ভবনের ফ্লোর যেন বাইরের চেয়ে নীচু। এখান থেকে ফ্যাক্টরীর একাংশ দেখা যায়। সামনে ১০০ গজ দূরে অফিসের ইবাদতখানা। ডানে দোতলা ভবনের নীচ তলায় পh©vয়ক্রমে ক্যাশ-কাউন্টার, পে এন্ড বিল, বিদ্যুৎ বিভাগীয় প্রধান, পরে বাণিজ্যিক বিভাগীয় প্রধানের দপ্তর, স্টোর একাউন্টস, উৎপাদন বিভাগের দু’টি কক্ষ সর্বশেষে উৎপাদন বিভাগীয় প্রধানের দপ্তর। দোতলায় হিসাব বিভাগীয় প্রধানের দপ্তর ও হিসাব বিভাগের জন্য দু’টি কক্ষ। এর ডানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ের জন্য দোতলা ভবন। অবশ্য দেতলায়ই শুধু তাঁর দপ্তর ও কনফারেন্স রূম। নীচ তলায় দুটি কক্ষে চাইনীজদের অফিস। কয়েকদিন পরে জেনেছি কারখানা চালুর জন্য চাইনীজ ঠিকাদার কোম্পানীর প্রকৌশলী, টেকনিশয়ান, সি-ই মিলিয়ে মোট ৩৩ জন চাইনীজ কারখানায় কাজ করছে।
আপাততঃ জিএম স্যার, মিঃ রতন ও অন্যান্যদের সামনে বসে এখানকার প্রশাসনিক কাজের প্রাথমিক ধারণা নেয়া, ফাইল দেখা ও প্রয়োজনানুযায়ী কাজ করছি। স্যার জানালেন, নতুন চেয়ার-টেবিল কেনা হয়েছে। এলেই আমার বসার ব্যবস্থা হবে।
একই অর্ডারে বিআইএসএফ থেকে বদলী হওয়া মিঃ নুরল ইসলাম, উপ-সহ তত্ত্বাবধায়ক আজ সিসিসি-এ এসেছেন। তারও থাকার জায়গা হলো গেস্ট হাউজের দোতলার একটি রূমে। বিআইএসএফ এ বন্ধুর মতো ছিলাম। এখন তিন বেলা খাওয়া, অফিসে যাওয়া, বিকালে বেড়ানো সব একসাথে চল্লো। উনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। দিলখোলা-প্রানবন্ত মানুষ। চাকুরী আছে মাত্র ছয় মাস; কিন্তু দেহে-মনে এখনও যুবকের শক্তি-তারুণ্য। আজ বিকালে বেড়াতে বেড় হয়ে সিসিসি’র হাইস্কুলের উল্টো দিকের ছোট্ট পাহাড়টায় উঠে দুজনে ছবি তুললাম।
গেষ্ট হাউজের এ বদ্ধ আবহাওয়া , ছোট্ট এক রুমে সিনিয়রের সাথে থাকা, নীচে নেমে টয়লেট সারা (হাই কমোডে আমি অভ্যস্থ নই) ইত্যাদি অবস্থা থেকে আমি পালাতে(!) চাইছিলাম। এ অবস্থা জিএম স্যারকে জানালাম। স্যার তৎক্ষনাৎ এক রকম রুল জারী করলেন। খুঁজে খুঁজে সিসিসি’র হাই স্কুলে যেতে চাইনীজদের থাকার যে দোতলা ভবন; তারই পিছনের ডি-টাইপ ভবনের দোতলার মাঝখানে ১টি ফাঁকা রূম পাওয়া গেল। খাট-আসবাব কিছুই নেই। কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছি- এরই মাঝে মিঃ আমিন আপাততঃ ডরমেটরীতে পড়ে থাকা পুরাতন জাহাজের অতি পুরাতন একটি সীঙ্গেল খাটের ব্যবস্থা করলেন। আমার ১টি ব্যাগ আর সে খাট নিয়ে রূমে উঠলাম। ৬৫ সনে বানানো বিল্ডিং। বেশ প্রশস্ত রূম। ছাদ উঁচুতে। দেয়ালে নতুন সাদা চুনকাম করা। নতুন লাগানো দরজাগুলো আর পুরাতন জানালা; সব সবুজ রং করা। আমার সবচেয়ে স্পর্শকাতর যে বিষয়; তা দেখে রীতিমত হতাশ হলাম। যদিও বেশ বড়, কিন্তু বাথ+টয়লেট একসাথে এবং মাত্র ১টি। তিন জন কর্মকর্তা কি করে তা ব্যবহার করবো; এ চিন্তা মাথায় কুড়কুড় করে কামড়াতে রাগলো। বাথরূম বরাবর আমার রূম। রূমের দরজা খুলে বাইরে এলাম। কমপক্ষে ৮ বাই ১৬ ফুট চওড়া, সামনে লোহার গ্রীল দেয়া বিশাল দক্ষিনা বারান্দা! কিছুটা ডানে ২০/২২ গজ সামনে চাইনীজদের থাকার জন্য সি-টাইপ দোতলা বিল্ডিং। এর বা দিকে ১০০ গজ দূরে সিসিসি হাই স্কুল। স্কুলের সামনে বিশাল মাঠ, সীমানা প্রাচীর পh©šÍ। এর পর বাইরে চলাচলের রাস্তা। তারও ওপাশে পূর্ব-দক্ষিনে প্রায় দেড়-দুইশ ফুট উচুঁ ছাই রঙের ১টি পাহাড়। অদ্ভুত সুন্দর এক দৃশ্য। নয়নাভিরাম বিশাল এ প্রকৃতির অপরূপ শোভা আমার মনটাকে এলোমেলো-অস্থির করে দিল। এমনটি চাইছিলাম কিনা জানিনা; তবে মনে হচ্ছিল- “এ মুহুর্তে আমার চেয়ে সুখী যেন আর কেউ নেই”। বাথরূম নিয়ে হতাশা কোথায় যে উধাও হলো!
তিন রূমের এ ফ্লাটে আমার ডান পাশের রূমে থাকেন সহঃ প্রকৌশলী (যান্ত্রিক), মিঃ নারায়ন চন্দ্র, আর বাম পাশে হিসাব কর্মকর্তা, মিঃ রতন কুমার মজুমদার। ভাল মানুষের সঙ্গায় পড়ে না, এমন কিছুই তাদের মাঝে পরবর্তীতে খুঁজে পাইনি। পরের সময় গুলো তাদের সাথে বন্ধু-পরমাত্মীয়ের সম্পর্ক নিয়ে কেটেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×