লেখালেখি করতে চাই না, পারিও না ; বারবার ছেড়ে দেই কিন্তু বসেও থাকতে পারি না। আমি নানা কাজ করি সাথে লেখালেখি করাটা কঠিন, দুরূহও বটে।
একটা ভিডিও ভাইরাল হলো ছেলে-মেয়ে কালো রঙের পোশাকে মারামারি করেছে, বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক। যুগে যুগে এমনই হয়ে এসেছে। সমাধান হয়েছে, বিচ্ছেদ হয়েছে। পৃথিবী প্রাগৈতিহাসিক থেকে আধুনিক হয়ে উত্তরাধুনিকে এসেছে। মানুষ সভ্য হওয়ার দাবি করছে, কতটুকু হয়েছে সেটি বিবেকের ও বিবেচনার প্রশ্ন।
প্রথমেই পত্রিকাগুলোকে একটু বলি, সাংবাদিক সাহেব নিউজ করেছেন "অবশেষে জানা গেল তরুণ-তরুণীর রাস্তায় ধস্তাধস্তি করা কারণ"। প্রতিটি সাংবাদিক লিখেছেন, নির্যাতিত নারীর নাম মীম, তরুণের নাম মিলন। মানে তরুণ নির্যাতিত নয়। এবার সত্য, সভ্যতা এবং ঐতিহাসিক সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করি।
আমরা দেখেছি ভিডিও-র শুরুতে মিলনের পিছনের পাঞ্জাবি ছেঁড়া। ছেঁড়াটা পিছনে। এটার একটি ঐতিহাসিক মিথ আছে ইসলাম ধর্মে। ইউসুফ (আঃ) যখন দৌড়ে জুলেখা-র কপাট দেয়া ঘর থেকে বের হয়ে যায়, তখন পিছন থেকে টেনে ধরে জুলেখা। জামা ছিঁড়ে পিছনে। তখনকার জ্ঞানী ও গুণীজনেরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান ইউসুফ (আঃ) দোষী নয়, দোষী হলে ইউসুফ (আঃ) এর জামা সামনে থেকে ছেঁড়া থাকতো এবং সামনে আঘাতের চিহ্ন থাকতো।
কিন্তু জুলেখা রাজপত্নী। ন্যায়ের মানদণ্ড সমাজে প্রতিষ্ঠিত নয়, প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার মাপকাঠি। তাই সাজা ইউসুফ (আঃ) কেই দেয়া হলো।
এখানেই ঐতিহাসিক একটি কথা ইউসুফ (আঃ) মুখে উচ্চারিত হয়, "এমন নারীর ফাঁদে পড়া থেকে জেল অতি উত্তম"। যাই হোক, বুদ্ধিমতী জুলেখাও নিজের আসক্তি ও অনুরাগের স্বপক্ষে অসাধারণ যুক্তি উপস্থাপন করেন।
রাজমহলের সুন্দরী রমনীদিগের একটি করে আপেল ও একটি করে চাকু দেন। সামনে দিয়ে ইউসুফ (আঃ) কে যেতে বলেন। সকলেই হাত কেটে ফেলে। এতটুকু আলোচনার কারণ হলো সমাজের ও সাংবাদিকদের কত বিষয় বিবেচনায় আনতে হয় তার জন্যে বলা।
যেমনটি ঘটনা হওয়ার সুযোগ বেশি, ছেলেটি শ্বশুর বাড়ি গিয়েছেন। আতিথিয়েতার পরম মমতায় তাকে মুগ্ধ করাই শ্বশুর বাড়ির দায়িত্ব। রাগ করে বেরিয়ে গেছে বিষয়টি এমন নয় যে রাগ উঠলো হঠাৎ করে আর ছেলেটি বেরিয়ে গেল, কেউ কিছু বলেনি। মেয়েটির মারধরে ছেলেটির পাঞ্জাবি ছিঁড়েনি,টানাটানিতেও না। ছিঁড়েছে শ্বশুর বাড়ি অন্য কারো গায়ে হাত তোলার কারণে। তারপর মেয়েটি স্বামী তো হাজার হলেও তাই ফেরাতে গেছে। দেশে যে নারীর অধিকার নিয়ে এত কথা বলা হয় সবই ভূয়া। আমাদের মূলতই যেটি বলা বিশেষ জরুরী তা হলো পরিবারে নারীর নারীর অধিকার কতটুকু।
পরিবারের বাবা-মা,ভাই-চাচা যখন বিয়ের পরও তার মেয়েটিকে মূল্যায়ন করে, আগলে রাখে, সম্পত্তিতে অধিকার দেয়, সিদ্ধান্তে ডাকে এবং পরামর্শে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তখনই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। গুয়েবলাস নারী অধিকার কর্মীগুলোকে শুধু শুনি কটুম পরিবারে অধিকার নাই, এই সেই। সাংবাদিকটিও তেমনই একটা গুয়েবলাস। জ্ঞানহীন। শ্বশুর বাড়ি গিয়ে মারধরের শিকার সেখানে নির্যাতিত নারী টার্ম ব্যবহার করে। কতটা অসামাজিক এবং অযোগ্য সাংবাদিক ; আপনি ভাবতে পারেন?
আপনি কি একটি বার ভেবেছেন, যদি স্বামী বাপের বাড়ি মারধরের শিকার হয়ে থাকে তার অন্তরযন্ত্রনা কতটুকু হবে সেই নারীর? ক্ষরণটা নারীর কোথায়? সে কি পারবে তার স্বামীর সামনে আত্মসম্মান ও হিমালয়ের মতো থাকতে?
গ্রাম্য বিচারে এমন অনেক বিচক্ষণশীল বহু মীমাংসা দেখার সুযোগ হইছে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত দেড়যুগে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে এটি ভেঙ্গে পড়েছে। কেউ স্বীকার না করুক ভেতরটা মিথ্যা বলবে না। এটিকে আগের জায়গায় নিতে অনেক ঘাম ঝড়বে। আমাদের সমাজ এবং সামাজিক মূল্যবোধ জোর যার মুল্লুক তার শেখ হাসিনা নষ্ট করে নর্দমায় ফেলে দিছে।
শ্বশুর বাড়ি মার খাওয়া লোকটি আপনি; একবার কল্পনা করুন। আপনার বউকে গুরুত্ব না দিয়ে, বাড়ির মেয়েকে গুরুত্ব না দিয়ে ; কোন অন্যায় হয়তো মেয়ের জামাই করেছে, তবুও অতিথি অবস্থায় মেরে দিয়েছে। আপনি নিশ্চিত জানুন, মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে আপনি মুশকিল আসান করেছেন এমন টাইপের গুরুত্ব বাড়ির মেয়েটার। বুঝতে হবে আপনার সমাজের, পরিবারের এবং রাষ্ট্রের সকল মূল্যবোধ ভেঙ্গে পড়েছে। সবকিছু আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় না, দেশে তো আইন বলতে কিছু নেই। থাকলে একটা কথা ছিলো। হাজার বছরের বাঙালির এবং বাংলাদেশের মূল্যবোধ চোখের সামনে ভেঙ্গে পড়তে দেখলাম এক শেখ হাসিনা-র গোষ্ঠীসহ মারছে তার ক্রোধের যাতাকলে, এর বেশি তর্কে যাওয়ার পরিবেশ এখনো বাংলাদেশে নাই। প্রকাশ্যে মিথ্যা বলা এখন শিল্পের পর্যায়। রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা না করে চলছে ক্ষমতা দিয়ে সব মোকাবিলা।
এবার আসি যিনি ভিডিও করলেন, সেই সোনার চাঁনকে নিয়ে। রাস্তায় একটা ঘটনা ঘটলেই সোনার চাঁনগুলা ক্যামেরা নিয়ে হাজির। ভিডিও করতে হবে, ভাইরাল হতে হবে। টাকা কমাইতে হবে ভিউ বাড়িয়ে। নষ্ট একটা প্রজন্ম। হিরো আলম, ব্যারিস্টার সুমন, মাহফুজ-র রহমান; এমন হাজারও নটকাফটকা সামনে আসতে পেরেছে দেশে স্বাভাবিক সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং জীবনবোধ নেই বলে। নাই মঞ্চ নাটক, রুচিশীল যাত্রাপালা, স্কুল নাটক, পাড়া-মহল্লায় সংস্কৃতির আতুড়ঘর নাট্য অনুষ্ঠান। আমরা সিরাজ দৌলার নাটকের সংলাপ শুনতে শুনতে এবং দিতে দিতে বড় হইছি।
২০০৬ এর পরে সব বন্ধ। নতুন কুঁড়ি ছিলো, বন্ধ হইছে। সংস্কৃতি নাই তাই কোন ঘটনা পেলেই শুধু ভাইরাল আর ভাইরাল। উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ তপন রায় চৌধুরী ৪৭ এর দেশভাগের পর একবার পাকিস্তান যায়। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে কোন কথা বলতে পারেনি। চোখ টলটল করছে দুজনেরই।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ-কে জিগ্যেস করে কি পেয়েছো? শুধু বলেছিলো আমার ছেলে হারিয়েছি, আর কথা হয়নি প্রতিত্তোরে শুধু বলেন, তোমরাও তো এক হলে না, ছাড়লে না। ---- " বাঙালনামা" - (তপনরায় বরিশালের সন্তান)
এরপর বহু ইতিহাস, পাকিস্তান ভাঙ্গলো। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র হলো। নির্যাতিত হলো ২ লক্ষ মা-বোন। রচিত হলো ২৫ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস শহীদ হলো ত্রিশ লক্ষ। দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু মুক্তি এলো না। আমার বলতে দ্বিধা নেই যারা যুদ্ধ করলো না, তারাই এসে অনিষ্ট শুরু করলো দেশে। মানুষ ভয়ে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটও পুড়াতো একটা ব্যাক্তির যন্ত্রণায়। আবার তারাই এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে।
যুদ্ধের সময় তাগড়া যুবক জাফর ইকবাল যুদ্ধে না গিয়ে বলে মুক্তিযুদ্ধের গল্প এবং দেশের অর্ধেক জনগণে বিভক্তির সুর তৈরি করে। এখন যখন দেশটা প্রায় খাদের কিনারায়। হঠাৎ দেড় যুগ পর শেখ হাসিনা-র মনে হলো বিভক্তি দিয়ে দেশ আগায় না।
সংবাদ সম্মেলনে বললেন, " সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিতে হবে, বাঁচাতে হবে"
অথচ ততদিনে বিরোধীদের ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়িঘর,মিল-ফ্যাক্টোরী,দোকান-পাট, জমিজমা, পুঁজিপাট্টা, মানসম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দেয়া শেষ।
তাহলে কি বাংলাদেশ এগুবে না? এগুবে অবশ্যই। নতুন করে আবার সংস্কার করে এগিয়ে নিতে হবে।
সবার আগে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে হবে মূল্যবোধ, জোর যার মুল্লুক তার ছাড়তে হবে। বয়সে যারা প্রবীণ, যারা কটুম তাঁদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫১