১. কোন এক ছুটির দিনে আশুলিয়ার পথ দিয়ে যেতে যেতে ডান তাকিয়ে আপনার মনে হবে ইশ! এখানে যদি আমার একটা জায়গা থাকতো। জানালা খুলেই কি সুন্দর প্রকৃতি দেখতে পারতাম। এই দমবন্ধ ঢাকা থেকে মুক্তি মিলতো। আপনার পরিচিত যে বন্ধুরা ইতোমধ্যেই এই স্বর্গ নিশ্চিত করে ফেলেছে তাদের কথা ভেবে আপনার ঈর্ষাও হচ্ছে। দেখুন পরের টি।
দেখুন আগেরটি ২. আপনার কষ্ট এবং আকাংখা আরো একটু বেড়ে যাবে যখন দেখবেন আরে মেট্রোরেলটা তো এখান থেকেই শুরু হয়েছে। কি আরাম করে জ্যাম এড়িয়ে অফিস যাওয়া যাবে। আহ! স্কাইয়ে বসে সেলফি পোস্ট করবেন। ডানপাশে ওয়াটার বডি। জাস্ট ওয়াও। দেখুন পরের টি।
দেখুন আগেরটি ৩. আপনি একটু এদিকেও তাকাবেন। আরে নদীটা কি ভরা। বিকেলে এখানে বেড়াতে আসা যাবে। ছবি তোলা যাবে। এরকম প্রাকৃতিক দৃশ্য থাকবে। দেখুন পরের টি।
দেখুন আগেরটি। ৪. আপনার মনে হবে এই দুইজন নদীর দিকে তাকিয়ে কি দেখে? নদীর সীমানা? থাক! এঁদের নিয়ে এত ভাবনার আর কিছু নেই। যারা এভাবে একদম পথের পাশেই বসে থাকে তারা আর কেমন হবে? এরা নিশ্চয়ই সেই ফ্ল্যাটে থাকে না। দেখুন পরেরটি।
দেখুন আগেরটি। ৫. আপনি বিরুলিয়া ব্রীজে যাবেন। সেখান থেকে ফেইসবুকে দেবার জন্য সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে চাইবেন। দ্বীপ হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা এই গাছগুলো দেখে আপনার মনে হবে ইউটিউবে কোন কোন নাটকে জানি দেখছিলাম! আপনারও মনে হবে যাই যাই। কিন্তু আগের ছবির মত এই বালুবাহী লঞ্চ আপনার বিশেষ মনযোগ নিবেনা। lনদীর মধ্যে এই খাম্বার কোন অর্থ আপনার মধ্যে ঢুকবে না। আপনার মধ্যে ডানদিকে নৌকায় চড়ার এক্সাইটমেন্ট কাজ করবে। দেখুন পরেরটি।
দেখুন আগেরটি। ৬. আপনি বুঁদ হয়ে আছেন এইসব কন্ডোমিনিয়ামে নিজের জায়গাটুকু নিশ্চিত করার স্বপ্নে। আর নাহয় বিরুলিয়া ব্রীজের পাশে মাটির কাপে চা খাওয়ার বাসনায় দেখুন পরেরটি।
দেখুন আগেরটি। ৭. আপনি বালির ড্রেজার, নদীটার মধ্যে বাঁদিকের জায়গাটার সাথে কোন সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন না। আপনার মনে হবে না যে বাঁদিকের জায়গাটা ছিলনা। ঐ জায়গাটা নদী দখল করেই হয়েছে। দেখুন পরেরটি।
দেখুন আগেরটি। ৮. আপনি হয়ত খেয়াল করেননি, তবে কুকুরটি হয়ত খেয়াল করেছে ক'দিন আগে সেখানেও নদী ছিল। এখন বড় বড় ক্রেন এসে কামড়ে কামড়ে নদী ভড়াট করছে। সেই চিরাচরিত ড্রেজিং এর পাইপ বসেছে। আর যে লোকটি দেখাশোনা করছে সে ক্যামেরাওয়ালা কাউকে দেখেই সন্দেহ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আর বলছে "কে ভাই আপনি? সাংবাদিক নাকি?" দেখুন পরেরটি।
দেখুন আগেরটি। ৯. কখনো একটু থেমে চিন্তা করে দেখলে ভাবতে পারেন।
ঐই হয়। প্রথমে বালি ভরাট হয়। সেটি দিয়ে নদীতে একটা টিলা হয়। আশেপাশে একটা চিমনি থাকে, সেখান থেকে ইট আসে। টাওয়ার থাকে দুইটা সেখানে নেটওয়ার্ক আসে। সেখানে একটা ছাউনি হয়, সেখানে শ্রমিক আসে। সেখানে ব্যাটা পুরুষ নেতা হয়, দালাল হয় আর নতুন নতুন দালান তৈরি করে। সে আবার দালানের মালিক হবার স্বপ্ন দেখে। সেই দালানে সিমেন্টে বিজ্ঞাপন দিয়ে নতুন নতুন আয় করার ধান্ধা আসে। আবার সেখানে নির্লজ্জ কাশফুলও ফোটে। সেখানে লোকেরা বেড়াতে আসে। সেখানে ফুচকার দোকান বসে। চক্র চলতে থাকে। ঢাকা বিস্তৃত হয়। প্রকৃতি পরাস্ত হয়। শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৪৭