ফটিকছড়ির কাজিরহাটে হত্যাযজ্ঞ চালানোর সময় উল্লাস করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে এমন স্লোগান যাতে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতার জোরালো প্রমাণ মেলে। গত ১১ এপ্রিল সংঘটিত সহিংসতার একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, হামলার সময় 'থানা আক্রমণ করো', 'টিপুর ঘর আক্রমণ করো', 'নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার', 'আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো' স্লোগান দেওয়া হয়েছে।
গত ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার উপজেলার কাজিরহাট বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলায় তিনজন নেতা-কর্মী মারা যায়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় দুই শতাধিক গাড়ি।
পাঁচ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ভিডিও কে ধারণ করেছিলেন তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে এ ফুটেজ দেখে মারধরের ঘটনায় জড়িত একজনকে শনাক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাঁরাজানিয়েছেন, তৌফিক নামের এই যুবক ছাত্রশিবির করেন। তৌফিক (৩২) নারায়ণহাট ইউনিয়নের সুন্দরপুর গ্রামের সুফি বাড়ির মাস্টার তফজ্জল হোসেনের ছেলে।
ভিডিওর শেষ পর্যায়ে দেখা যায়, সরকারি দলের নেতা-কর্মী ফারুক ইকবাল ও ফোরকানসহ তিনজনকে নৃশংসভাবে প্রহার করা হচ্ছে একটি বিদ্যালয়ের কক্ষে। পিটিয়ে হত্যা যখন চলছিল তখনই শোনা যায় স্লোগান 'নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার, আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো'।
ভিডিওতে দেখা যায়, আগুনে অনেক গাড়ি পুড়ে গেছে। কিছু গাড়ি তখনও জ্বলছে। এ সময় আশপাশে পায়জামা-পাঞ্জাবি এবং মুখোশ পরিহিত কিছু ছেলে ও যুবককেও দেখা যায়। ফুটেজে 'থানা আক্রমণ করো' 'টিপুর ঘর আক্রমণ করো' ইত্যাদি মন্তব্য শোনা যায়। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ভুজপুর থানা ও যুবলীগ নেতা টিপুর বাড়িতে আক্রমণ হয়নি।
ভিডিওচিত্রটি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. ফরিদ উদ্দীন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ফুটেজটি যাচাই-বাছাই করছি।' তিনি বলেন, 'ভিডিওতে যাদের শনাক্ত করা যাবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' এ ছাড়া কিছু অডিও কণ্ঠও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ভিডিও দেখে একজনকে চিনতে পারার কথা জানিয়ে নারায়ণহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ বলেন, 'তৌফিক নারায়ণহাট বাজারের একজন ব্যবসায়ী। সে জামায়াত-শিবির করত বলে আমি জানতাম। সে দুঃসাহসিক ধরনের ছেলে।' তিনি আরো জানান, গত মাসের প্রথম দিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর ভুজপুর থানা এলাকায় নাশকতার ঘটনায় তৌফিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর তিনি আত্মগোপন করেন। চেয়ারম্যানের ধারণা, প্রস্তুতি নিয়েই জামায়াত-শিবির ও অন্যরা আওয়ামী লীগের ওপর হামলা চালায়।
ফটিকছড়ির ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনাকারী সহকারী পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ফেসবুকে ছাড়া ভিডিওচিত্রটি পুলিশের হাতে এসেছে। তবে ভিডিওচিত্রটি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় হামলাকারীরা আত্মগোপনে চলে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, 'ওই হামলায় এলাকার বাইরের অনেক দুষ্কৃতকারী ছিল। তাদের অনেকের নাম পেয়েছি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।'
উপজেলা জামায়াতের বায়তুল মাল সম্পাদক নাজিম উদ্দীন গতকাল সোমবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার, আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো স্লোগান শুধু জামায়াত না, সব মুলমানেরই স্লোগান।' অভিযুক্ত তৌফিকের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'সে জামায়াতের সমর্থক হতে পারে, সক্রিয় কর্মী হলে চিনতাম।' সেদিন যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, 'আমি নিজেই ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। এমন নারকীয় ভিডিও দেখে নিজকে স্থির রাখতে পারছি না।' তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'ওই এলাকার ৮০ শতাংশ লোক সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ভোট দেয়। তাই হামলার ঘটনায় তারা সংশ্লিষ্ট থাকবে, এটা অস্বাভাবিক নয়।' অবশ্য গত শুক্রবার রাতে কালের কণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে কারাবন্দি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেছিলেন, 'যারা অভিযোগ করছে তাদের জিজ্ঞেস করুন, সর্বশেষ আমরা ফটিকছড়ি কখন গিয়েছিলাম।'
জানা যায়, ন্যাশনাল স্কুলের ওই শ্রেণীকক্ষে যে তিনজনকে পেটানো হয় তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে বক্তপুর ইউনিয়নের মফিজুল হকের ছেলে ফারুক ইকবাল বিপুল (৩৫) ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। অন্যজন জাহানপুর ইউনিয়নের এজাহার মিয়ার ছেলে ফোরকান।
ওই কক্ষে মারধরের শিকার তৃতীয় জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




