somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেলাফতের গুরুত্ব ও কল্যাণ

০৯ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলিম জাহান আজ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত আজ সর্বগ্রাসী অবক্ষয়ের শিকার হয়ে বিধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। সমস্ত মুসলিম আজ শতধা বিভক্ত হয়ে পরস্পর ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পরস্পরের মাঝেই নেই ঐক্য। মুসলমানদের এই অনৈক্যের কারণেই ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়তে দ্বিধাবোধ করছে না। সর্বত্রে মুসলমানরা আজ মার খাচ্ছে, এর কারণ কি? শ্রেষ্ঠ নবীর, শ্রেষ্ঠ উম্মতের এই চরম অধঃপতন ও বিপর্যয় তো কখনো কাম্য হতে পারে না। সমগ্র মুসলিম বিশ্বের এই চরম বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ হলো তাদের আজ কোন ঐশী নেতা নেই। মুসলিম জাহান আজ নেতৃত্ব শূন্য অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে যার ফলেই এই অধঃপতন।

হযরত মুহাম্মদ মুস্তোফা (সা.) বিশ্ববাসীকে ধ্বংস ও পতন থেকে রক্ষা করে পূণ্যের পথে চালিত করার জন্যেই এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি ঐশী নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য স্বীকার করে একতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে ভ্রার্তৃত্বের সেতুবন্ধন সুদৃঢ়তর করে প্রগতির পথে চলতে বলেছেন। আজ সমগ্র মুসলিম জাহান কোন্ পথে চলছে? প্রিয় নবী (সা.) এর ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে ঐশী খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল। সতকর্মশীল মু’মিনদের সঙ্গে মহান আল্লাহ এই খেলাফত ব্যবস্থা কায়েমেরই অঙ্গীকার করেছেন।

পবিত্র কুরআনের সুরা নূরের ৫৬ নং আয়াতে উল্লেখ মহান আল্লাহ খেলাফতের ওয়াদা করেছেন যে, যারা ঈমান আনে ও পূণ্য কাজ করে তাদের মাঝে তিনি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করবেন, যেমন তিনি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে। আমরা জানি, মহানবী (সা.)এর লাশ মোবারকের দাফন কার্য সমাধা করবার পূর্বেই উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সম্মিলিতভাবে হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.)কে খলীফা মেনে নিয়ে তাঁর হাতে বয়াত গ্রহণ করেছিলেন। এ আধ্যাত্মিক ঘটনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়, ইসলামে খেলাফতের গুরুত্ব কত ব্যাপক। মু’মিনদের জন্য নবুওয়াতের পর যে বিষয়টি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য তা হচ্ছে খেলাফত। ধর্মীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, আল্লাহ্ তা’লা সকল নবীর পরেই খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খেলাফত ছাড়া ঐশী নবীর কাজ পরিপূর্ণতা লাভ করে না। তাই নবী-রাসূলরা যে মহান দায়ীত্ব নিয়ে এই পৃথিবীতে আগমন করেন, তাঁদের এই মহান দায়ীত্ব ও উদ্দেশ্যকে চূড়ান্ত বিজয়ে পৌঁছান আল্লাহ মনোনীত নবীর খলীফাগণ। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের দিকে যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই, অগণিত স্থানে মহান খোদা তা’লা এই খেলাফতের কথা উল্লেখ করেছেন। খেলাফত সম্পর্কে এত স্পষ্টভাবে বলা এটাও প্রমাণ করে ইসলামে খেলাফত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কারা মু’মিন এবং কারা মু’মিন নয় বা কারা সত্যিকারের ঈমানদার তা পরীক্ষা করার নিমিত্তে খেলাফত ব্যবস্থা একটি ঐশী মানদন্ড।

মহানবী (সা.) বলেছেন, “সুম্মা তাকুনু খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়ত” অর্থাৎ নবুওয়তের পদ্ধতিতে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। (মুসনাদ আহমদ, মিশকাত)। সূরা নুরের ৫৬ নম্বর আয়াত এবং মহানবী (সা.)-এর এই হাদিস দ্বারা বিষয়টি পরিষ্কার যে, আল্লাহ্ তা’লা ঈমান আনয়নকারী ও পূণ্যকর্মকারীদের মাঝে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন। অর্থাৎ উম্মতে মুহম্মদীয়া যখন কুরআনের শিক্ষার ওপর সঠিকভাবে আমল করবে তখন আল্লাহ এ অঙ্গীকার পূর্ণ করবেন। আর তখন রসূল করীম (সা.)-এর কথা মত নবুওয়তের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা জারী হবে। আর আজ তা-ই আহমদীয়া জামা’তে বিদ্যামান রয়েছে। খলীফার মাধ্যমে মুসলমানরা এক আল্লাহর ইবাদত করে এবং সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এমনভাবে আবদ্ধ করেন যেন মনে হয় সবাই ভাই-ভাই। এছাড়া সমগ্র বিশ্বের ধনী দরিদ্র, সবল-দূর্বল, শিক্ষিত অশিক্ষিত জনগণকে এক সাধারণ যোগসূত্রে গ্রথিত করে প্রগতিশীল জাতিতে সংঘবদ্ধ করার জন্য ঐশী নেতৃত্বের অতি প্রয়োজন। বিভেদ বা সংঘাত নয়, সত্য প্রতিষ্ঠা এবং একক নেতৃত্বের অধীনে থেকে জীবন অতিবাহিত করার শিক্ষাই পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বার বার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম শান্তি ও ঐক্যের ধর্ম। ঐক্য প্রতিষ্ঠাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। ইসলামে খেলাফতের গুরুত্ব যে অপরিসীম এই ব্যাপারে সকল যুগের জ্ঞানী-গুনি, পন্ডিত ব্যক্তিবর্গরা তাদের মতামত পেশ করেছেন। সকলেই অকপটে শিকার করেছেন যে, ঐক্য ছাড়া ইসলামের উন্নতি হতে পারে না। ইসলামের উন্নতির জন্য ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক আর এই ঐক্য প্রতিষ্ঠা কিভাবে হবে? তা হতে পারে একমাত্র ঐশী খেলাফতের অধিনে চলে জীবন অতিবাহিত করার মাধ্যমেই। বহু পূর্ব থেকেই ইসলামে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অনেকেই অনেক আন্দোলন, চেষ্টা-প্রচেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থ সাব্যস্ত হয়েছে। দেখা যায়, ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় পৃথকভাবে যে আরব-ঐক্য গড়ে ওঠেছিল, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধে তা-ও নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষতঃ -এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে যে অতি প্রয়োজনীয় একক নেতৃত্ব কিংবা নেতৃত্বের ঐক্য গড়ে উঠবার সম্ভাবনা অনেকেই দেখেছিলেন তা-ও ধূলায় লুণ্ঠিত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন আবারও নতুন করে দেখা দিয়েছে, কীভাবে মুসলিম ঐক্য গড়ে উঠবে, এই প্রশ্ন আজ সব মুসলমানেরই মনে, হোক সে সুন্নী বা শিয়া, মাযহাবী বা লা-মাযহাবী অথবা ওয়াহাবী যে-ই হোক না কেন সবাই আজ উপলব্ধি করছেন, ইসলামে একক নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। কিন্তু তারা জানে না যে, ঐশী খেলাফত কারো চেষ্টা-প্রচেষ্টার ফলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নয়। এটি কেবল মাত্র আল্লাহ তা’লা প্রতিষ্ঠা করেন।

হযরত রসূলে করীম (সা.)-এর সাহাবারা (রা.) জানতেন যে সকল কল্যাণ এই খেলাফতের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। তাই তাঁরা হযরত রসূল করীম (সা.)এর ওফাতের পর খলীফা মনোনীত করে খলীফার হাতে বয়াত করে সেই মহান কল্যাণের চাদরে আবৃত হোন। খেলাফত যদি ঐশী কল্যাণ না হতো তাহলে কি রসূলে করীম (সা.)-এর পবিত্র দেহ মোবারক দাফন করার পূর্বেই এই খলীফা নির্বাচন করতেন? অবশ্যই না। এতে সকল কল্যাণ নিহিত রয়েছে বলেই তাঁরা (রা.) প্রথমেই খলীফা নির্বাচন করে একক নেতৃত্বের কথা মেনে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিলেন। কিন্তু মুসলিম জাতির দুর্ভাগ্য! এই মহান কল্যাণ থেকে মাত্র ৩০ বছর পরেই বঞ্চিত হয়ে গেল। তারা খেলাফত হারিয়ে ফেললো, কিন্তু হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের সেই ভবিষ্যদ্বাণী ‘সুম্মা তাকুকুন খিলাফাতুন আলা মিনহাযিন নবুওয়াত” [অর্থাৎ ইমাম মাহদী (আঃ) এর মাধ্যমে] এরপর নবুয়তের পদ্ধতিতে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। আর সেই ‘খেলাফত আলা মিনহাজিন নবুয়ত’এর যুগে খেলাফতের সবচেয়ে বড় কল্যাণ ইসলামের পুনরায় বিজয় লাভ করার দৃশ্য বিশ্ববাসী দেখবার অপেক্ষায় ছিল। আল্লাহ তা’লা হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে দেয়া সেই সুসংবাদ অনুযায়ী তাঁর খাদেম ও সেবক ও খলীফাতুল্লাহ্ হযরত ইমাম মাহদী ও মসীহ্ মাওউদ আলায়হেস সালামকে প্রেরণ করলেন। যার কাজ হলো সমগ্র বিশ্বাসীকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে একত্রিত করা। আজ তাঁরই ৫ম খেলাফত কাল চলছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:২৯
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×