মুসলিম জাহান আজ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত আজ সর্বগ্রাসী অবক্ষয়ের শিকার হয়ে বিধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। সমস্ত মুসলিম আজ শতধা বিভক্ত হয়ে পরস্পর ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পরস্পরের মাঝেই নেই ঐক্য। মুসলমানদের এই অনৈক্যের কারণেই ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়তে দ্বিধাবোধ করছে না। সর্বত্রে মুসলমানরা আজ মার খাচ্ছে, এর কারণ কি? শ্রেষ্ঠ নবীর, শ্রেষ্ঠ উম্মতের এই চরম অধঃপতন ও বিপর্যয় তো কখনো কাম্য হতে পারে না। সমগ্র মুসলিম বিশ্বের এই চরম বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ হলো তাদের আজ কোন ঐশী নেতা নেই। মুসলিম জাহান আজ নেতৃত্ব শূন্য অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে যার ফলেই এই অধঃপতন।
হযরত মুহাম্মদ মুস্তোফা (সা.) বিশ্ববাসীকে ধ্বংস ও পতন থেকে রক্ষা করে পূণ্যের পথে চালিত করার জন্যেই এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি ঐশী নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য স্বীকার করে একতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে ভ্রার্তৃত্বের সেতুবন্ধন সুদৃঢ়তর করে প্রগতির পথে চলতে বলেছেন। আজ সমগ্র মুসলিম জাহান কোন্ পথে চলছে? প্রিয় নবী (সা.) এর ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে ঐশী খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল। সতকর্মশীল মু’মিনদের সঙ্গে মহান আল্লাহ এই খেলাফত ব্যবস্থা কায়েমেরই অঙ্গীকার করেছেন।
পবিত্র কুরআনের সুরা নূরের ৫৬ নং আয়াতে উল্লেখ মহান আল্লাহ খেলাফতের ওয়াদা করেছেন যে, যারা ঈমান আনে ও পূণ্য কাজ করে তাদের মাঝে তিনি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করবেন, যেমন তিনি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে। আমরা জানি, মহানবী (সা.)এর লাশ মোবারকের দাফন কার্য সমাধা করবার পূর্বেই উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সম্মিলিতভাবে হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.)কে খলীফা মেনে নিয়ে তাঁর হাতে বয়াত গ্রহণ করেছিলেন। এ আধ্যাত্মিক ঘটনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়, ইসলামে খেলাফতের গুরুত্ব কত ব্যাপক। মু’মিনদের জন্য নবুওয়াতের পর যে বিষয়টি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য তা হচ্ছে খেলাফত। ধর্মীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, আল্লাহ্ তা’লা সকল নবীর পরেই খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খেলাফত ছাড়া ঐশী নবীর কাজ পরিপূর্ণতা লাভ করে না। তাই নবী-রাসূলরা যে মহান দায়ীত্ব নিয়ে এই পৃথিবীতে আগমন করেন, তাঁদের এই মহান দায়ীত্ব ও উদ্দেশ্যকে চূড়ান্ত বিজয়ে পৌঁছান আল্লাহ মনোনীত নবীর খলীফাগণ। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের দিকে যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই, অগণিত স্থানে মহান খোদা তা’লা এই খেলাফতের কথা উল্লেখ করেছেন। খেলাফত সম্পর্কে এত স্পষ্টভাবে বলা এটাও প্রমাণ করে ইসলামে খেলাফত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কারা মু’মিন এবং কারা মু’মিন নয় বা কারা সত্যিকারের ঈমানদার তা পরীক্ষা করার নিমিত্তে খেলাফত ব্যবস্থা একটি ঐশী মানদন্ড।
মহানবী (সা.) বলেছেন, “সুম্মা তাকুনু খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়ত” অর্থাৎ নবুওয়তের পদ্ধতিতে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। (মুসনাদ আহমদ, মিশকাত)। সূরা নুরের ৫৬ নম্বর আয়াত এবং মহানবী (সা.)-এর এই হাদিস দ্বারা বিষয়টি পরিষ্কার যে, আল্লাহ্ তা’লা ঈমান আনয়নকারী ও পূণ্যকর্মকারীদের মাঝে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন। অর্থাৎ উম্মতে মুহম্মদীয়া যখন কুরআনের শিক্ষার ওপর সঠিকভাবে আমল করবে তখন আল্লাহ এ অঙ্গীকার পূর্ণ করবেন। আর তখন রসূল করীম (সা.)-এর কথা মত নবুওয়তের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা জারী হবে। আর আজ তা-ই আহমদীয়া জামা’তে বিদ্যামান রয়েছে। খলীফার মাধ্যমে মুসলমানরা এক আল্লাহর ইবাদত করে এবং সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এমনভাবে আবদ্ধ করেন যেন মনে হয় সবাই ভাই-ভাই। এছাড়া সমগ্র বিশ্বের ধনী দরিদ্র, সবল-দূর্বল, শিক্ষিত অশিক্ষিত জনগণকে এক সাধারণ যোগসূত্রে গ্রথিত করে প্রগতিশীল জাতিতে সংঘবদ্ধ করার জন্য ঐশী নেতৃত্বের অতি প্রয়োজন। বিভেদ বা সংঘাত নয়, সত্য প্রতিষ্ঠা এবং একক নেতৃত্বের অধীনে থেকে জীবন অতিবাহিত করার শিক্ষাই পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বার বার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম শান্তি ও ঐক্যের ধর্ম। ঐক্য প্রতিষ্ঠাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। ইসলামে খেলাফতের গুরুত্ব যে অপরিসীম এই ব্যাপারে সকল যুগের জ্ঞানী-গুনি, পন্ডিত ব্যক্তিবর্গরা তাদের মতামত পেশ করেছেন। সকলেই অকপটে শিকার করেছেন যে, ঐক্য ছাড়া ইসলামের উন্নতি হতে পারে না। ইসলামের উন্নতির জন্য ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক আর এই ঐক্য প্রতিষ্ঠা কিভাবে হবে? তা হতে পারে একমাত্র ঐশী খেলাফতের অধিনে চলে জীবন অতিবাহিত করার মাধ্যমেই। বহু পূর্ব থেকেই ইসলামে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অনেকেই অনেক আন্দোলন, চেষ্টা-প্রচেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থ সাব্যস্ত হয়েছে। দেখা যায়, ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় পৃথকভাবে যে আরব-ঐক্য গড়ে ওঠেছিল, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধে তা-ও নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষতঃ -এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে যে অতি প্রয়োজনীয় একক নেতৃত্ব কিংবা নেতৃত্বের ঐক্য গড়ে উঠবার সম্ভাবনা অনেকেই দেখেছিলেন তা-ও ধূলায় লুণ্ঠিত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন আবারও নতুন করে দেখা দিয়েছে, কীভাবে মুসলিম ঐক্য গড়ে উঠবে, এই প্রশ্ন আজ সব মুসলমানেরই মনে, হোক সে সুন্নী বা শিয়া, মাযহাবী বা লা-মাযহাবী অথবা ওয়াহাবী যে-ই হোক না কেন সবাই আজ উপলব্ধি করছেন, ইসলামে একক নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। কিন্তু তারা জানে না যে, ঐশী খেলাফত কারো চেষ্টা-প্রচেষ্টার ফলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নয়। এটি কেবল মাত্র আল্লাহ তা’লা প্রতিষ্ঠা করেন।
হযরত রসূলে করীম (সা.)-এর সাহাবারা (রা.) জানতেন যে সকল কল্যাণ এই খেলাফতের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। তাই তাঁরা হযরত রসূল করীম (সা.)এর ওফাতের পর খলীফা মনোনীত করে খলীফার হাতে বয়াত করে সেই মহান কল্যাণের চাদরে আবৃত হোন। খেলাফত যদি ঐশী কল্যাণ না হতো তাহলে কি রসূলে করীম (সা.)-এর পবিত্র দেহ মোবারক দাফন করার পূর্বেই এই খলীফা নির্বাচন করতেন? অবশ্যই না। এতে সকল কল্যাণ নিহিত রয়েছে বলেই তাঁরা (রা.) প্রথমেই খলীফা নির্বাচন করে একক নেতৃত্বের কথা মেনে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিলেন। কিন্তু মুসলিম জাতির দুর্ভাগ্য! এই মহান কল্যাণ থেকে মাত্র ৩০ বছর পরেই বঞ্চিত হয়ে গেল। তারা খেলাফত হারিয়ে ফেললো, কিন্তু হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের সেই ভবিষ্যদ্বাণী ‘সুম্মা তাকুকুন খিলাফাতুন আলা মিনহাযিন নবুওয়াত” [অর্থাৎ ইমাম মাহদী (আঃ) এর মাধ্যমে] এরপর নবুয়তের পদ্ধতিতে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। আর সেই ‘খেলাফত আলা মিনহাজিন নবুয়ত’এর যুগে খেলাফতের সবচেয়ে বড় কল্যাণ ইসলামের পুনরায় বিজয় লাভ করার দৃশ্য বিশ্ববাসী দেখবার অপেক্ষায় ছিল। আল্লাহ তা’লা হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে দেয়া সেই সুসংবাদ অনুযায়ী তাঁর খাদেম ও সেবক ও খলীফাতুল্লাহ্ হযরত ইমাম মাহদী ও মসীহ্ মাওউদ আলায়হেস সালামকে প্রেরণ করলেন। যার কাজ হলো সমগ্র বিশ্বাসীকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে একত্রিত করা। আজ তাঁরই ৫ম খেলাফত কাল চলছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




