somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশের পরপরই একদম আদালত থেকেই তীব্র প্রতিবাদ ও হট্টগোল শুরু করে তার অনুসারীরা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শুরুতে এই হট্টগোলের নেতৃত্ব দেয় মুলত সনাতন আইনজীবীরাই। সাথে হাতে গোনা কিছু আওয়ামীলীগপন্থী আইনজীবী তাদের সাথে দেখা গেলেও দ্রুত তারা সরে পড়ে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা স্লোগানে স্লোগানে আদালত চত্ত্বর কাঁপিয়ে ফেললেও তাকে প্রিজন ভ্যানে তোলা থেকে বিরত করতে না পেরে প্রিজন ভ্যান আটকে দেয়। এর মধ্যে আদালত ভবনের তিন তলা থেকে পুলিশের গায়েব পাথর ছোঁড়া কারণে একাধিক তরুণ যুবককে জনগণ গণধোলাই দেয়। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের অনুসারীদের ক্রমাগত অবস্থানের কারণে পুলিশ বিজিবি বল প্রয়োগ শুরু করে।

পরিস্থিতি মুলত খারাপ হয় সেখান থেকে। তার অনুসারীরা চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল বিল্ডিং এর পাশের গলি দিয়ে নামতে থাকে। আর ক্রমাগত পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। অবস্থানরত কিছু কার ও বাইক ভাঙচুর হয়। এই পাথর ছুঁড়াছুঁড়ির একপর্যায়ে নাম্বার পথে মসজিদের জানালায়ও কিছু পাথর লাগে। বিষয়টা কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক ছিল। এই পর্যায়ে এসে এটা ধর্মীয় বিরোধিতার রূপ নেয়। পরিস্থিতি কন্ট্রোল করতে না পেরে এই জায়গা থেকে উপস্থিত সনাতনপন্থী আইনজীবীরা বিদায় নেয়। এখানে স্পষ্টতঃ বলে রাখা ভালো, এখানে আওয়ামী লীগপন্থী কোন নেতা বা কর্মীকে (মুসলিম) দেখা যায়নি।

পুলিশের সাথে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ ও আইনজীবীরাও। পাথর এদিক থেকেও ছোঁড়া হচ্ছে ওদিক থেকেও ছোঁড়া হচ্ছে । পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা শুরু করে। সাধারণ মানুষ ও কিছু আইনজীবীর পাথর ছোড়াছুড়িতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা নিচে নেমে আসে। নামতে নামতে তারা রঙ্গম বিল্ডিং এর গলি (আরেক নাম বোধহয় মেথর পট্টির গলি) - তে ঢুকে পড়ে। পিছু পিছু ঢুকে পড়ে সাধারণ মানুষ ও কিছু আইনজীবী ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী । ঠিক সে মুহূর্তে তারা একত্র হয়ে হঠাৎ একটা ধাওয়া দেয়। উলটো ধাওয়াতে হুট করে সামনের সারিতে থাকা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ পড়ে যায়। আলিফ আর উঠতে পারে নাই। ততক্ষণে চলে আসে এই দুষ্কৃতিকারীরা, মাথায় বারে বারে লাটি ও দা'- এর কোপে মাথাটা একদম ছেঁচে দেওয়া হয়। মায়ের বুক খালি করে আলিফ সেখানেই নিহত হয়।

ফিরতি ধাওয়াতে আলিফকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে গেলেও কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করে (তাকে প্রথমে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে গুজব ছিল। পরবর্তী তার পরিস্কার গলার ছবি দেখে বিষয়টা স্পষ্ট হয়) আলিফের মৃত্যু ও মসজিদের জানালার কাঁচ ভাঙার ঘটনা চট্টগ্রাম আদালতের পরিস্থিতি আরো খারাপ করে ফেলে। যে বিষয়টা রাজনৈতিক বিবেচনায় ইসকন বিরোধী ছিল, সেটা পরবর্তীতে ধর্ম বিরোধিতার রূপ নেয়। সনাতন আইনজীবীরা কোট আঙ্গিনা ত্যাগ করে।

এখানে সাধারণের জন্য বলে রাখা ভালো, আইনজীবী সমাজের মধ্যে একটা কমন প্র্যাকটিস আছে। একজন আইনজীবী যে ধর্ম বা রাজনৈতিক দলের অনুসারী হন না কেন আমাদের মধ্যে আইনজীবী পরিচয়টা সবার উপরে থাকে। স্বাধীনতার পর থেকে এভাবেই আইন ব্যবসা চলছিল। এই প্রথম ধর্ম পরিচয়টা আগে চলে আসলো।

আমার পরিচিতি ফুঁসতে থাকা অনেক আইনজীবীদের আচরণ দেখে মনে হয় তারা যেন উম্মাদ হয়ে গেছে। যেন এক ধর্মযুদ্ধে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বহু বছরের পুরানো ট্রাডিশন এখন ভাঙ্গার পথে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগামী কাল ২৭ তারিখ চট্টগ্রাম আদালত বর্জনের ঘোষনা দিয়েছে। পরিস্থিতি ঠান্ডা হতে (অন্ততঃ কোর্ট আঙ্গিনায়) এই সিদ্ধান্তের বিকল্প ছিল না।

কিছুদিন আগে হাজারী লাইনের ঘটনায় মুসলিম সমাজ ও সনাতন সমাজ মুখোমুখিতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে না হতেই এ ধরনের ঘটনা বৃহৎ কোন শক্তির ষড়যন্ত্র বলেই আমার নিকট প্রতীয়মান হয়। এই বৃহৎ শক্তিটাই আমাদের ক্রমে ক্রমে সম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷

আমরা প্রতিটা ধর্মের মানুষ দাবী করি তাদের ধর্মই শান্তির ধর্ম। এই দাবিটা তাদের দাবীতেই সীমাবদ্ধ, আচরণে নয়। শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে হলে সহিষ্ণু আচরণ করুন। মানুষকে ভালোবাসুন। আইন হাতে তুলে নিবেন না। একত্রে বসে কোন সমাধান খুঁজুন।

আসার পথে দেখলাম আলিফের মৃত্যুর জায়গাটায় কারা যেন আগুন জ্বালিয়েছে৷ এই আগুন কবে নিভবে জানি না। হয়তো পুরো বাংলাদেশ জ্বলবে।

শান্তনু চৌধুরী শান্তু. এডভোকেট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮
১৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×