somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার ব্যাপারে কিছু আইডিয়া

৩০ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার ব্যাপারে আমার নিজস্ব একটা সলিউশন/আইডিয়া আছে। জানিনা সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার আইডিয়াটা পৌঁছাবে কিনা তো জানি না। তবে এই বিষয়ে লিখতে না পারলে বিবেকের কাছে আমার দায়বদ্ধতা এড়াবে না। আইডিয়াটা শেয়ার করার আগে কিছু ভূমিকা দেয়া প্রয়োজন।


দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি স্বাধীনতার পর থেকে কোন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল এরকম কোন রেকর্ড আমার চোখে পড়ে না। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে মধ্যসত্বভোগীদের বিলুপ্ত করে বাজার ব্যবস্থাপনা সরাসরি রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালনা হয় বিধায় দ্রব্যমূল্যের দাম কম থাকে। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটা সম্ভব না। বাংলাদেশের সকল সরকার বাজার ব্যবস্থার নীতি নির্ধারণে ক্যাপিটালিজম ও কমিউনিজম অর্থ ব্যবস্থার মাঝামাঝি একটা নীতি গ্রহণ করে চলছিল।


সমস্যা দেখা যায় যখন রাষ্ট্র ব্যবস্থা দুর্নীতির কারণে ঘুণে ধরে। তখন রাষ্ট্র সঠিকভাবে পারফর্ম করতে পারে না। অর্থনৈতিক বিষয়টিতে মনোপলির রাজত্ব চলে। দেশ চালায় ব্যবসায়ীরা। দেশের নীতি নির্ধারণ করে ব্যবসায়ীরা। স্বাভাবিকভাবে সেখানে জনসাধারণের সেবা গুরুত্ব পায় না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাজার ব্যবস্থা দখল করে নেয়। প্রশাসনে যারা বাজার তদারকির দায়িত্বে আছে তারা বিক্রি হয়ে যায় সিন্ডিকেটের কাছে। কথা না শুনলে হয়ে যায় বদলী। ফলে রক্ষক হয়ে যায় ভক্ষক। প্রশাসন তখন আর বাজার কন্ট্রোল করতে পারে না। কারণ সিন্ডিকেট তখন প্রশাসন কন্ট্রোল করছে। বর্তমান সরকারও উত্তরাধিকার সূত্রে এই মাথা ব্যাথা টা পেয়েছে। সিন্ডিকেট ডিস্ট্রয় করার সামর্থ্য তাদের নেই। কারণ সিন্ডিকেটের সদস্যদের খুঁজে বের করে ডিস্ট্রয় করবে প্রশাসন। আর প্রশাসনের আমলারাই এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য।


যাই হোক, এখন মূল পয়েন্টে আসি। আমার মনে হয় না বর্তমান সরকার আমলাদের অসহযোগিতার কারণে সিন্ডিকেট কন্ট্রোল বা ডিস্ট্রয় করতে পারবে। যা করতে হবে আমাদেরই করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরকে দিয়ে কিছু হবে না। সরকারি অধিদপ্তরের বাহিরে বেসরকারি কোন সংস্থা তত্ত্বাবধানে কাজ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এক নখদন্তহীন ভোক্তা সংস্থা আছে। তার নাম বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতি (ক্যাব)।


এটি এমন একটি সংস্থা যে মাঝে মাঝেই মানববন্ধন করে আর পত্রিকায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বক্তব্য দিয়ে প্রেস রিলিজ করে দায় সারে । এটাই তাদের মূল কাজ। এর বাহিরে কোন কাজ তারা করতে চায় না বা পারে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন কোন সংগঠন গড়ার চেয়ে এই সংগঠনকে টেকওভার করে এক যোগ্য ব্যক্তির হাতে সঁপে দিতে হবে। তারপর স্টেপ বাই স্টেপ শুরু করতে হবে।

প্রথমতঃ ক্যাবকে দিতে হবে সর্বোচ্চ মিডিয়া কভারেজ। ক্যাবের প্রধানের যেকোনো বক্তব্যকে প্রায়োরিটির ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রচার করতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশের শিক্ষিত শ্রেণীর বড় একটা অংশকে ক্যাবের সদস্য করতে হবে। সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (যেমন সরকারী বেসরকারি টিভি চ্যানেল, জাতীয় ও লোকাল পত্রিকা, ফেসবুক, ইউটিউবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে) বিপুল প্রচারণা চালিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাবের সদস্য হতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে ৩/৪ কোটি জনসংখ্যাকে একটা অ্যাপের আওতায় নিয়ে আসা খুব একটা কঠিন কাজ না। অ্যাপের সাবস্ক্রিপশন ফি হবে মাসে ১ টাকা বা বছরে মাত্র ১২ টাকা।

তৃতীয়তঃ দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বেচ্ছাসেবকদের একটা কমিটি (১০-৩০ জনের) গঠন করতে হবে এবং এই কমিটির প্রধান সদস্য হিসেবে কোন আইনজ্ঞ ব্যক্তি থাকবে এবং সদস্যদের বড় অংশ অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হতে হবে। ক্যাব তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে প্রতি মাসে বেতন দিবে। কমিটির সদস্যরা প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে স্থানীয় বাজারের দ্রব্যমূল্যের রিপোর্ট হেড অফিসে জমা দিবে।

চতুর্থতঃ যখনই কোন পণ্যের দাম যৌক্তিক কারণ ছাড়া অস্বাভাবিক হারে বাড়বে (যেমন তেলের দাম বাড়ার কারণে কিলোমিটার প্রতি এক টাকা খরচ বাড়তি হলেও পণ্যের দাম বাড়ার অনুপাত দ্বিগুন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি) সেই পণ্যগুলোকে রেড মার্ক করা হবে।

পঞ্চমতঃ এইসব রেড মার্ককৃত পণ্যকে সরাসরি মিডিয়াতে কভার করতে। অ্যাপ ব্যবহারকারী (বা নরমাল মোবাইল ব্যবহারকারী) প্রতিটা মোবাইলে রেড এলার্টের এস এম এস চলে যাবে। বলা হবে একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত এই এই পণ্য বর্জন করতে এবং বিকল্প পণ্য ব্যবহার করতে। দাম বাড়া কমার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনে নির্ধারিত সময় হ্রাস বৃদ্ধি করা যাবে। অ্যাপ ৩/৪ কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে ১০/২০ লাখ সদস্যও যদি তা মান্য করে। দ্রব্যমূল্য সরকারি কোন হস্তক্ষেপ ছাড়াই, কোন সহিংসতার আশ্রয় না নিয়ে এমনিতেই কন্ট্রোলে চলে আসবে।


এটা আমার প্রাথমিক পরামর্শ। এই লাইনে বিজ্ঞ সমাজের আরো চিন্তাভাবনার অবকাশ আছে। লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে দেখে লিখছি না। সুবিবেচকদের পরামর্শ কামনা করছি।

শান্তনু চৌধুরী শান্তু, এডভোকেট/
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৮
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×