somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতিশ্বর ফিনিক্স

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে পবিত্র অনল প্রভা থেকে ফিনিক্স পাখির সৃষ্টি। ফিনিসীয় পুরাণ, চাইনিজ পুরাণ, গ্রিক পুরাণ এবং প্রাচীন মিসরীয়দের বর্ণনায়ও ফিনিক্স পাখির উল্লেখ পাওয়া গেছে। প্রাচীন গ্রিক পুরাণ অনুসারে ফিনিক্স হল এক পবিত্র ‘অগ্নিপাখি’। আর এটি এমনই পবিত্র আগুন পাখি, যার জীবনচক্র আবর্তিত হয় হাজার বছর ধরে। মনোলোভা স্বর্ণের লেজ এবং লাল, গোলাপি ও নীল রঙের পালকে আবৃত ময়ূর সদৃশ এই পাখির প্রকৃত অর্থে মৃত্যু নেই। হাজার বছর নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকতে পারে এরা। যমদূত আসার ঠিক আগেই ফিনিক্স পাখি নিজের বাসা নিজেই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। আর নির্মমভাবে দগ্ধীভূত এই পাখি ও তার বাসার ভস্ম থেকেই জন্ম নেয় নতুন ডিম। প্রাণ পায় নতুন জীবনের। শুরু হয় আবারও জাতিশ্বর ফিনিক্সের অবিনাশী যাত্রা। বেঁচে থাকে আগের জনমের আয়ুষ্কালের মতোই। প্রচলিত লোককাহিনী মতে, ফিনিক্স পাখিকে হিংসুকেরা আঘাত করলে এর পালক থেকেও জন্ম নেয় নতুন প্রাণ। এদের চোখের পানিও বদলে দিতে পারে কারও জীবন। আগুন ও পবিত্রতার বদৌলতে এরা মৃত্যুপথযাত্রীদেরও সাময়িক জীবন দেয়ার ক্ষমতা রাখে।


অন্য কাহিনী অনুযায়ী ফিনিক্স পাখির পুড়ে যাওয়া ছাই ডিমের আকারে মমি করে মিসরের সূর্যশহর কিংবা গ্রিসের দ্য সিটি অব সান-এ রেখে দেয়া হয়েছিল। একদিন ওই ছাইয়ের ডিম থেকেই পাখিটি পুনজন্ম লাভ করে এবং দেবপাখির প্রতীক হয়ে যায় গ্রিকদের কাছে। ফিনিক্স পাখি খ্রিস্টানদের শিল্পকলা, সাহিত্য ও প্রতীকবাদে খুব দ্রুত পুনরুত্থিত হয় এবং তা খুব জনপ্রিয়ও হয়। খ্রিস্টানরা তাকে তাদের পুনরুত্থান, অমরত্ব ও মৃত্যুর পর জীবিত হওয়ার প্রতীকও মনে করতে থাকে। এই গ্রিক ফিনিক্স পাখি পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর অনেক সভ্যতায় ঐশ্বরিক প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মিসরীয়রা ফিনিক্সকে বক জাতীয় পাখি মনে করে একে ডাকত বেন্নু পাখি বলে। বেন্নুকে বলা হয় সূর্য দেবতা ‘রা-এর আত্মা। পরবর্তী সময়ে রোমান চিত্রকলায় ফিনিক্স ঈগল রূপে প্রতিষ্ঠা পায়। পারস্যের লোককাহিনী অনুযায়ী মহাবীর রুস্তমের বাবা জাল এই প্রতীক পাখিকে সযত্নে লালন করেছিলেন। গৃহহীন এই পাখিকে তিনি পেয়েছিলেন আলব্র“জ পাহাড়ে। লেবানন তাদের প্রাচীন এবং আধুনিক সংস্কৃতির প্রধান বাহক মনে করে ফিনিক্সকে। লেবানন ও বৈরুতের ইতিহাসে এই প্রতীকের ভাস্কর্য সাতবার ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ফিনিসীয় সভ্যতায় ফিনিক্সের আবাসস্থল থাকত কোনো ঝরনা বা কূপের পাশে। ভোরে গোসল করার সময় ফিনিক্সের গাওয়া গান শোনার জন্য গ্রিক সূর্য দেবতা হেলিয়োস রথ থামাতেন। অমরত্ব আর পুনরুজ্জীবনের প্রতীক ফিনিক্স মৃত্যুর আগে হেলিওপোলিসে গমন করত।
চীনে লোককাহিনীর প্রাণী ড্রাগনের পরই ফিনিক্সের স্থান। চীনের কিংবদন্তিতে ফিনিক্স হচ্ছে এক ধরনের উপকারী পাখি। চীনারা ‘সোনালি ফিনিক্সকে’ প্রতিকূল পরিবেশে বড় হওয়া সেরা ধীশক্তির উপমা হিসেবে ব্যবহার করে। চীনের ক্যারাতে দো এসোসিয়েশন এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান ফিনিক্স পাখির লোগো ব্যবহার করে। আর তা ব্যবহার করা হয় এই বিশ্বাসে, আমরাও ফিনিক্স পাখির মতো পুনরায় জন্মলাভ করতে চাই। এছাড়া চাইনিজ এবং জাপানিজ ঐতিহ্যে ফেংহুয়াং পাখিকে ফিনিক্সের কাছাকাছি ধরা হয়। চীনের বেইজিং শহরে ফিনিক্সের স্ট্যাচু এখনও সম্মানের প্রতীক হয়ে আছে। এটিকে চীনের পাখিদের নেতাও বলা হয়। জাপানে ফিনিক্সকে ডাকা হয় অমরত্বের পাখি হিসেবে। বর্তমান সময়ে অনেকে নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশে ফিনিক্স পাখির ট্যাটু আঁকিয়ে রাখে সৌভাগ্যের আশায়।
ফিনিক্সের মনোমুগ্ধকর পালকগুচ্ছ বর্ণময় ও উজ্জ্বল। অধিকাংশ বর্ণনা মতে লাল, গোলাপি ও নীল রঙের পালকে আবৃত এই পাখিটি অনেকটা ময়ূর সদৃশ। এর পুচ্ছ-পাখনা রক্তচন্দন বা লাল মুনিয়ার মতো। ফরাসি সাহিত্যিক ও দার্শনিক ভলতেয়ার ফিনিক্সের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে ‘ফিনিক্সের আকৃতি ঈগলের মতো বিশাল কিন্তু চোখগুলো নিষ্ঠুর ও ভীতিকর নয়, নির্দয় ঈগলের তুলনায় নিরীহ ও সংবেদনশীল। ঠোঁটগুলো গোলাপের মতো। গ্রীবা ও ঘাড় রংধনু সদৃশ বা এর থেকেও দীপ্তিমান। পালকগুচ্ছে খেলা করে স্বর্ণালি ছায়াচ্ছন্নতা। বেগুনি-লাল বা রুপালি তার পদযুগল’। এভাবে পৃথিবীর দেশে দেশে পৌরাণিক এ পাখি ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে নানাভাবে ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। এছাড়া রাশিয়া, তাইওয়ানসহ আরও অনেক দেশের লোককাহিনী বা ধর্মীয় বিষয়াদিতে এ পাখির সন্ধান পাওয়া যায়। কিংবদন্তিতে আরও বলা হয়েছে, ফিনিক্স যখন মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখে তখন তার চোখ থেকেও জল গড়ায়, আর তার স্পর্শে মানুষ হয়ে ওঠে মৃত্যুঞ্জয়ী।
ফিনিক্স পাখি সত্যিই আছে কিনা সেটা এখনও যুক্তি-তর্কের বিষয়। সেটি যদি সত্যি থেকেই থাকে তবে পৌরাণিক কাহিনী ফিরে আসতে পারে সত্যি রূপে নতুবা এটি সত্যিই একটি পৌরাণিক কাহিনী হিসেবেই বেঁচে থাকবে বছরের পর বছর।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×