somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রিকেটার যমজেরা

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাতৃগর্ভে একসঙ্গে বাস,পৃথিবীর আলো দেখা কিছুক্ষণের ব্যবধানে। এরপর একসঙ্গে ক্রিকেট খেলা। বলছি ক্রিকেটার যমজ ভাইদের কথা। চলুন আজ এমন কয়েকজন যমজ ক্রিকেটারের গল্প শোনা যাক।

স্টিভ ও মার্ক ওয়াহঃ স্টিভের চার মিনিট পর পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন মার্ক। আন্তর্জাতিক অভিষেকেও পেছনে মার্ক। স্টিভের ছয় বছর পর টেস্ট অভিষেক হয় মার্কের। ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিলো অবশ্য আরও বছর তিনেক আগেই। মার্কের টেস্ট অভিষেকটাও ক্রিকেটের অমর এক গল্প। দলে সুযোগ পেয়েছিলেন যমজ বড় ভাই স্টিভের বদলে! আর অভিষেকেই দেখিয়েছিলেন দারুণ চমক। তবে স্টিভ ফিরেছিলেন দ্রুতই। পরবর্তী প্রায় এক যুগ ওয়াহ ভাইয়েরা ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা। দু'জনে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে খেলেছেন ৮৬৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। করছেন ৩৫ হাজারের বেশী আন্তর্জাতিক রান,নিয়েছেন ৪৩১টি উইকেট এবং ৫১২টি ক্যাচ। এই পরিসংখ্যানের পর ওয়াহদের নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে হয় নেই।
একসঙ্গে খেলাই শুধু নয়,একই রুমে দীর্ঘদিন থেকেছেন দু'জন,বেড়ে ওঠেছেন একসাথে। তার পরেও খেলার ধরণ,ব্যক্তিত্ব সবকিছুতেই দু'জন ছিলেন আলাদা। এই প্রেক্ষাপট থেকেই জন্ম ক্রিকেটের বিখ্যাত স্লেজিংগুলোর একটির। ২০০১ সালে ওভাল টেস্টে অভিষিক্ত ইংলিশ পেসার জিমি আরমন্ডকে মার্কের স্লেজিং,"মেট,তুমি এখানে কী করছো? তুমি তো টেস্ট খেলার যোগ্যই নও!" জবাবে আরমন্ড বলেন,"হয়তো তোমার কথাই ঠিক,তবে আমি অন্তত আমার পরিবারের সেরা ক্রিকেটার!"

হ্যামিশ ও জেমস মার্শালঃ ২০০৫ সালে অকল্যান্ড টেস্টে বড্ড বিপাকে পড়েছিলেন রিকি পন্টিং। কারণ কিউইদের হয়ে তখন একসঙ্গে ব্যাট করছিলেন মার্শাল যমজরা। রিকি বুঝতেই পারছিলেন না কোন জন কে! দুই ভাই দুই ব্র্যান্ডের ব্যাট নিয়ে খেলছিলেন বলে রক্ষা। অবিকল চেহারা,প্রায় একই উচ্চতা,শারীরিক গঠন আর কোঁকড়ানো চুল মিলিয়ে দুই মার্শালকে আলাদা করতে গলদঘর্ম হতে হয় পরিচিত জনদেরও। একসঙ্গে টেস্ট খেলা ১ম 'আইডেন্টিক্যাল' বা একই রকম চেহারার যমজ নিউজিল্যান্ডের এই দুই ভাই। এখন দু'জনের বয়স ৩৫ বছর। তবে ভালো ফর্ম ধরে রাখতে না পারায় দু'জনেই এখন দলের বাইরে।

দুই ডেন্টনঃ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেননি দু'জনের কেউই। তবে দীর্ঘদিন নর্দাম্পটনশায়ারের ইনিংস ওপেন করেছেন বিলি ও জন ডেন্টন। দুজনেই খেলেছিলেন একশর বেশী ম্যাচ। পরে এই যমজদের ছোট ভাই ডন ডেন্টনও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছিলেন।

ডাডলি ও সিডনি রিপনঃ কেনসিংটনে জন্ম,কিন্তু দুজনেই খেলেছেন সামারসেটের হয়ে। ডেন্টনদের মতো তাদেরও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি কখনই। এই দু'জনও ছিলেন ওপেনার ব্যাটসম্যান। একসাথে ব্যাট করার সময় যথেষ্ঠই গোলমাল বেধে যেতো স্কোরারের। ১৯১৪ সালে নর্দাম্পটনে এক ম্যাচে স্কোরারের তো পাগল হওয়ার মতো অবস্হা হয়েছিলো। কারণ সামারসেটের হয়ে ইনিংস ওপেন করেছিলেন রিপন যমজরা,অপর দিকে নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে ইনিংস শুরু করেছিলেন ডেন্টন যমজরা!

দুই মাতামাবানাদজোঃ জিম্বাবুয়ের হয়ে মাত্র ৩টি টেস্ট ও ৭টি ওয়ানডে খেলেছেন। কিন্তু নামটাই তাকে মনে রাখা বা ভুলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ-এভারটন ভিকমবোরেরো মাতামবানাদজো! ভালো একজন ফাস্ট বোলার ছিলেন,কিন্তু পিছু না ছাড়া চোটের কারণে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সেই ছেড়ে দেন ক্রিকেট খেলা। এভারটনের যমজ ভাই ডারলিংটনও খেলেছেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট।

ডেভিড ও জোনাথন ভ্যারিঃ যমজদের একসঙ্গে খেলার নজিরতো কতই আছে,কিন্তু দু'জন দুই দলে? এখানেই আলাদা হয়ে আছেন ডেভিড ও জোনাথন ভ্যারি। ডেভিড পড়তেন কেমব্রিজে,জোনাথন অক্সফোর্ডে। এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট মাঠে মুখোমুখি হতো নিয়মিতই,যমজ ভাইয়ের লড়াইও তাই জমতো দারুণ। জোনাথন ছিলেন পেস বোলার। ১৯৮২সালের এক ম্যাচে ডেভিডকে আউট করেন জোনাথন। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি তাদেরও।

দুই বেডসারঃ মুখাবয়বে যেমন,তেমনি সাদৃশ্য ছিলো শারীরিক গড়নেও। দু'জনেই ছিলেন সুঠামদেহী,দূর থেকে আলাদা করা যেতোনা। তবে একজন ছিলেন পেসার অন্যজন স্পিনার। এ নিয়েও মজার এক গল্প আছে,ছেলেবেলায় দু'ভাই টস করে ঠিক করেছিলেন কে পেস বল করবেন আর কে স্পিন। টসে জিতে আলেক বেডসার বেছে নিয়ে ছিলেন পেস বোলিং। নিজের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করে পরে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৫১টি টেস্ট। সর্বকালের সেরা মিডিয়াম পেসারদের একজন মনে করা হয় স্যার আলেক বেডসারকে। এরিক বেডসার টেস্ট ক্যাপ পরার সুযোগ পাননি। তবে দুই দশক কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছেন বেশ দাপটের সাথেই।

সিগন্যাল বোনেরাঃ ক্রিকেটের বিখ্যাত যমজদের কথাতো অনেকেই জানেন,কিন্তু একসঙ্গে টেস্টে অভিষেক হওয়া যমজদের কথা ক'জন জানেন? তথ্যটি তাই অনেকের জন্যই আসবে বিস্ময় হয়ে,একসঙ্গে টেস্টে অভিষেক হওয়া যমজ ক্রিকটার কিন্তু ছেলে ক্রিকেটার নয়,মেয়ে ক্রিকেটার! জন্মই শুধু একসঙ্গে নয়,লিজ ও রোজ সিগন্যাল নিউজিল্যান্ড মহিলাদলে সুযোগ পেয়েছিলেন একসাথে। ১৯৮৪ সালে তাদের টেস্ট অভিষেক হয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে,হেডিংলিতে।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×