আজ মম জন্মদিন । সদ্যই প্রাণের প্রান্তপথে
ডুব দিয়ে উঠেছে সে বিলুপ্তির অন্ধকার হতে
মরণের ছাড়পত্র নিয়ে । মনে হতেছে কী জানি
পুরাতন বৎসরের গ্রন্থি বাঁধা জীর্ণ মালাখানি
সেথা গেছে ছিন্ন হয়ে ; নবসূত্রে পড়ে আজি গাঁথা
নব জন্মদিন । জন্মোৎসবে এই-যে আসন পাতা
হেথা আমি যাত্রী শুধু , অপেক্ষা করিব , লব টিকা
মৃত্যুর দক্ষিণ হস্ত হতে , নূতন অরুণলিখা
যবে দিবে যাত্রার ইঙ্গিত । - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
জীবন নাকি একটা না, প্রতিটা মুহূর্ত একটা করে জীবন। বাঁচতে হয় প্রতিটা মুহূর্তে। সেভাবে পারছি কি? কত জায়গায় কত আপোষ, কত জায়গায় মাথা নিচু করে ফেলেছি। আজ মনে হয় না করলেও তো পারতাম। সময় মত কত জায়গায় উচ্চারন করতে পারি নাই সাহসি উচ্চারন। আমার একটা শক্তিশালী কণ্ঠস্বরে অনেক বড় পরিবর্তন হতে পারত। আপোষ করে গেছি, মনটা নিচু হয়ে গেছে। এখন বুঝি,না করলেও পারতাম। আবার উল্টোটাও আছে সগৌরবে। চুপ করে থাকলে বা দেখেও না দেখে থাকতে পারলে কত অঘটন ঘটত না। কিন্তু আমি সেখানে সোচ্চার। অথচ লাইফ চেঞ্জ করে দেওয়ার মত ঘটনায় আমার চুপ করে থাকা জরুরি ছিল, তা আজ বুঝতে পারি। আজ বুঝতে পারি কত ঘটনায় আমার উপস্থিতি আমি যতটুকু জরুরি মনে করতাম আদ্যতে তত জরুরি ছিলাম না আমি। কি হাস্যকর ছিলাম আজকে বুঝতে পারি। মানুষ হয়ত হাসাহাসি করে যাচ্ছে আজও। কিংবা যেখানে নিজের অবস্থান জরুরি মনে করেনি সেখানে ছিলাম অবধারিত, সেটা কোথায় তা আজও হয়ত জানা হয়নি! এই না জানার অপরাধে অপরাধী হয়ে ঘুরতে হবে কতদিন কে জানে!! যেখানে নিজেকে যুধিষ্ঠির বলে ভেবেছি পরে দেখেছি আমি সেখানে দুঃশাসন। হায়, কি বোকাই না আমি ছিলাম!!
জন্মের এত দিন পরে নিজেকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিস্তর গুজামিল দেখছি। দেখছি কত কত পরাজয়। নিজেকে দশে মাইনাস কিছু একটা দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই। তবে আমি জ্ঞানত কাও কে কখন বিপদে ফেলিনি, কষ্ট দেইনি।আমি যতখানি খারাপ তা পুরোটাই আমার, তার জন্য অন্য কে কোনদিন ভুগতে দেইনি। পাসে থাকার চেষ্টা করেছি যে কারো বিপদে আপদে, আমার বিপদে সে কোথায় তা কোনদিন খোঁজ করিনি। এ জন্যই মনে হয় বেঁচে আছি আজো, না হলে এমন পাপিষ্ঠকে কে বাঁচায় আবার!!
কত শত ইচ্ছা চাপা দিয়ে রাখছি, বড় হলে করব বলে। রীতিমত জীবনের প্রায় অর্ধেক তো কাটিয়ে দিলাম, আর কবে হবে? আর কত বড় হব আমি? দেখলাম না কত কি, অদেখা থেকে যাবে পুরো পৃথিবী অথচ চুপ করে চলে যেতে হবে একদিন, ভাবলেই মরে যেতে ইচ্ছা করে!! নিজেকে সাহসি ভাবি অথচ সাহস করে মরণোত্তর চক্ষু দান করার ফর্মালিটি পুরন করতে পারছি না। দেহ দিয়ে যাব তাও তো মনস্থির করে উঠতে পারছি না, অথচ সময় বয়ে যাচ্ছে সুপার সনিক বেগে। কবে পারব আমি ?
৯৭৮,৩০৭,২০০ সেকেন্ড কিংবা বলা যায় ১৬,৩০৫,১২০ মিনিট বা ২৭১,৭৫২ ঘণ্টা, যদি দিনের হিসেব করি তাহলে ১১,৩২৩ দিন, সপ্তাহের হিসেবে ১৬১৭ সপ্তাহ, মাসের হিসেবে ৩৭২ মাস। বছরের হিসেবে ৩১ বছর ধরে পৃথিবীতে এসেছি। বিষাক্ত করেছে কত কত বিশুদ্ধ বাতাস। যত দিন যাবে একটু একটু করে পা বাড়াব ফিনিশিং লাইনের দিকে। এই বয়সে এসে এ ধরনের কথা চিন্তা করলে মানুষে আমাকে বুড়ো বলে ডাক দিবে জানি। কিন্তু কি করার আছে? কার ফিনিশিং লাইন কোথায় তার হদিশ কে কবে পেয়েছে?