হাতুড়ি ভাল কোচ, কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু হাতুড়ি কে সব কিছুর শেষ ভাবার কারন কি? হাতুড়ি কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে দেশের জন্য অবশ্যই ভাল হত কিন্তু সে যেভাবে লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছিল তাতে দেশের ক্রিকেটের মঙ্গল থেকে অমঙ্গল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ।
হাতুড়ির সম্পর্কে সব চেয়ে বেশি যেটা বলা হয় তা হচ্ছে হাতুড়ির কোচিং এ বাংলাদেশ নাকি সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে। মানে এর আগে কোন কিছু নাই, হুট করে হাতুড়ি আসল আর বাংলাদেশ সমানে সাফল্য পাওয়া শুরু করে দিয়েছে!! একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো না? বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি কোন একক ব্যক্তির সাফল্য না। একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া পরে এই সাফল্য এসেছে। যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গ্রিনিজের হাত ধরে। হোয়াটমোরের হাতে পরিবর্তন ক্রিকেটের সূচনা। ছোট ছোট দল হলেও জয়ের অভ্যাস তৈরি হয়েছিল তখনই।ছোট ছোট দল কে হারাতে হারাতেই ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারত আর দক্ষিন আফ্রিকা কে হারিয়ে ছিল বাংলাদেশ। সেই দলে এখনকার মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড় কয়জন ছিল?
জিমি সিডন্স অনেকের অপছন্দের কোচ ছিল। সেই সিডন্সের সাফল্য কি কিছু মাত্র কম ছিল? আইসিএলে প্রথম সারির খেলোয়াড়দের হারিয়ে দল যখন নড়বড়ে তখন সেই দল হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড কে প্রথমবারের মত। নিউজিল্যান্ড কে ধবল ধোলাই করা হয় সিডন্সের আমলেই।
এরপর স্টুয়ার্ট ল আসে কোচ হয়ে। খেলোয়াড়দের মানসিকতার যে পরিবর্তনের শুরু তা স্টুয়ার্ট লয়ের আমল থেকেই শুরু বলে মনে করা হয়। এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ!! এত তাড়াতাড়ি ভুল গেলে চলবে? তা এই লয়েরর আমলেই। স্বল্পকালীন কোচ ছিলেন শেন জার্গেনসেন, সেই জার্গেনসেনের সময় বাংলাদেশ হারিয়েছে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ কে। নিউজিল্যান্ড কে করেছে দ্বিতীয় বারের মত ধবল ধোলাই।
এই লম্বা সফর শেষ হয়েই হাতুড়ির হাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এসেছে। তারপরেও তার সাফল্য আসা শুরু করেছে কিন্তু তার আসার পরে না, শুরু হয়েছে মাশরাফি নামক ম্যাজিক যখন থেকে ম্যাজিক দেখানো শুরু করেছিল তারপর থেকে।এর আগে ভারতের দ্বিতীয় সারির দলের কাছে ৫৮ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ, যা হাতুড়ি প্রেমিকরা কখনোই বলে না। হাতুড়ি বরং সৌভাগ্যবান, তার সময় বাংলাদেশ টিম যে পরিমান পরিপক্ক তা এর আগে কখনোই ছিল না। যে বেস্ট ফাইভের কাঁধে ভর দিয়ে হাতুড়ির সাফল্যের ঢোল বাজানো হয় সেই অভিজ্ঞ পাঁচজনের একজন কেও হাতুড়ি তৈরি করেনি। বরং এদের কে সময় সময় অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়েছে কোচের কাছে। অবিশ্বাস্য প্রতিভা নিয়ে আসা মমিনুল কে এখন চিন্তা করতে হয় দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে। অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ কে সকালে বিকালে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। মুসফিকের মত ব্যাটসম্যান কে কোচ নাকি ১৫ সালেই বাদ দিতে চেয়েছিল!! ওয়ানডেতে সাকিবের সাথে তাল দেওয়ার মত আরেকজন স্পিনার আমাদের এখন পর্যন্ত হতে পারে নাই কারন মহান কোচ আব্দুর রাজ্জাকের মত স্পিনার কে জাস্ট দুই বছর আগেই ছেঁটে ফেলে দিতে পেরেছিলেন বলে।
অমঙ্গল হওয়ার আশংকা আসে কারন আমাদের কোচ একজন নির্বাচকও বটে। এবং এমন একজন নির্বাচক যিনি একটা ফাস্ট ক্লাস ম্যাচ দেখার প্রয়োজন মনে করেন না। খেলোয়াড় তৈরি হবে বাতাসে? কোচ একজন খেলোয়াড় কে নির্বাচন করবে গায়েবী কোন তরীকায় নাকি? আর তাই নাইম ইসলাম যত ভালই খেলুক ফাস্ট ক্লাস ম্যাচে তার আর জাতীয় দলের জার্সি পরার সৌভাগ্য কপালে জুটে না।
হাতুড়ি নাকি দারুন পেশাদার কোচ! তার পেশাদারিত্বের নমুনা হচ্ছে তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ছুটি কাটিয়েছেন মাত্র ২২০ দিন। যদিও তার জন্য বরাদ্দ ছুটি ছিল ৪০ দিন। আর তারপর থেকে এখন পর্যন্ত কাটিয়েছেন ১৫০ দিন। চরম পেশাদার ভঙ্গি যা হোক।
হাতুড়ির মনে হয়েছে তাই দলে জায়গা দিয়েছেন জুবায়ের লিখন কে, তানভির হায়দার কে শুভাগত হোম কে। আর তার পূর্ণ খেসারত দিতে হয়েছে বাংলদেশ দল কে এবং সেই সাথে এই খেলোয়াড়দের কেও। মুস্তাফিজ কে দলে আনার কৃতিত্ব দিতে চায় অনেকে হাতুড়ি কে অথচ সত্য হচ্ছে মুস্তাফিজ কে দলে নিতে মাশরাফিকে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়েছে কোচের সাথে। সাফল্য আসার পর সব বাহাবা কোচের আজকে!!!
হাতুড়ি ভাল কোচ, তার ট্যাকনিক্যাল জ্ঞান অসাধারণ। কিন্তু তিনি যখন কোচ থেকেও বেশি কিছু হয়ে উঠতে চান, খেলোয়াড়দের আশ্রয় স্থলের জায়গায় আতঙ্কের নাম হয়ে যান তখন সম্ভবত তার চলে যাওয়াই মঙ্গল। এভাবে চলতে থাকলে আপত দৃষ্টিতে ভাল কিছু মনে হলেও সামনে শ্রীলঙ্কার মত দশা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশের। কোচ দিয়ে সাফল্য বিচার করা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। যার কারনে কিংবদন্তী অস্ট্রেলিয়া দলের সাফল্য নিয়ে আলোচনায় কেউ জন বুকানন কে স্মরণ করে না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২৪