somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল চেতনায় অ্যানালগ আচরণ! ;) ;) ;) ;) ;)

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন ছাত্রলীগকে অ্যানালগ আচরণ করতে হব। তাতে নাকি সৌজন্য ও মূল্যবোধ বোধ থাকে। তাহলে ছাত্রলীগের আচরণে কি ডিজিটালাইজেশনের অশুভ প্রভাব পড়েছে? নাকি অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের প্রভাবের ভালো দিক গুলোকে ছাপিয়ে ক্ষতিকর দিক গুলোর মতো আচরণে ডিজিটাল প্রভাব দ্বারা তাড়িত হয়েই ছাত্রলীগ এতো বেপরোয়া। সরকার যেখানে পুরো বাংলাদেশটাকে ডিজিটাল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে মূল্যবোধ ও সৌজন্যতাবোধ কে টিকিয়ে রাখতে ছাত্রলীগকে আচরণে এনালগ হতে বলাটা বেশ কৌতূহল উদ্দীপক। এতদিন পরে ডিজিটাল আন্দোলনের কোন প্রবক্তাদের পক্ষ থেকে আচরণে অ্যানালগ হওয়ার পরামর্শে সমাজের সর্বস্তরে বোধের মাত্রায় তাদের বিমূর্ত ডিজিটালিকরণ নিয়ে আগের ধারণার পরিবর্তনের কোন নতুন ইঙ্গিত বহন করে কিনা সেটা জানার বিষয়।

আওয়ামীলিগের অন্য আর দশটা মন্ত্রীর মতো সবসময় তিক্ত সত্যটাকে পাশ কাটিয়ে না গিয়ে তা অপকটে প্রকাশ করার ব্যাপারে ওবায়দুল কাদেরের অনেক সুখ্যাতি আছে যার জন্য তিনি বিশেষ করে দলের বাইরের অনেকের কাছেও শ্রদ্ধার পাত্র। তাছাড়া মন্ত্রনালয়ের সার্বিক কর্মকান্ডে তার ব্যক্তিগত সক্রিয়তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। তাই এমন একজনের উপলব্ধিতে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক আচরণে পরোক্ষভাবে ডিজিটালী প্রভাবের যে দিকটি ধরা পড়েছে সেটা অবশ্যই আলোচনার গুরুত্ব রাখে।
বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক মূল এজেন্ডা ছিল দেশকে ডিজিটাল করবে। এ নিয়ে তাদের নির্বাচন পূর্ব সময়ে প্রচারণার কমতি ছিলো না। মফস্বলের লাখ লাখ খেটে খাওয়া মানুষ গুলো ডিজিটাল মানে কী তা বুঝার আগেই এই চটকদার স্লোগানে দারুনভাবে প্রভাবিত হয়ে ডিজিটালীকরণের এই আন্দোলনে তাদের দৃঢ় সমর্থণ ব্যক্ত করে। ফলশ্রুতিতে আওয়ামীলিগ নির্বাচনের পর পাহাড় সম বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে এবং বাংলাদেশে তাদের নব ধারণার বাস্তবায়নের সুযোগ পায়।

এখন চার বছরের মাথায় এসে কেউ যদি তার মূল্যায়ন করতে যায় তবে সেক্ষেত্রে ভালো মন্দ উভয়টিই উঠে আসবে। কিন্তু ভালো মন্দের বিবেচনায় কোন্‌টার পাল্লা ভারী আর কোন্‌টার কম এটার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করতে পারাটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবার জন্যই খুব কঠিন একটা বিষয়। রাজনৈতিক মেরুকরণ জিনিসটা এদেশের প্রতিটা স্তরে এমনভাবে লেপ্টে আছে যেখান থেকে দলীয় পক্ষপাতিত্বের উর্ধ্বে থেকে কারও কাছ থেকে প্রকৃত চিত্র পাওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি এই অতিমাত্রার দূর্বলতা এদেশের বেশীরভাগ মানুষের হৃদয়ে অনেকটা রাসায়নিক বন্ধনের মতো গ্রথিত ও মথিত হয়ে নিরপেক্ষতা নামক বস্তুটির স্বকীয়তার চির বিলুপ্তি ঘটিয়েছে।

তারপরও দেশে চলতে থাকা পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যকার প্রচার প্রপাগান্ডার কাদা ছুড়া ছুড়িতে আমরা দেশের একটা খসড়া চিত্র পেয়ে থাকি। বলতে গেলে সেটা অনেকটা নাসা মহাকাশযান থেকে সদ্য পাঠানো কোন নতুন গ্রহপৃষ্ঠের ছবির মতো। পরবর্তীতে যে যার মত করে এগুলো বিশ্লেষন করি। অতঃপর প্রতি পাঁচ বছরের মাথায় ঠিক জায়গা মতো গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে সেটার রিপোর্ট করি। মজার ব্যাপার হলো দেশের মানুষের দেওয়া এই রিপোর্ট বিতর্কের উর্ধ্বে না থাকলেও প্রতি ধারাবাহিক দুইটি নির্বাচনের মাধ্যমে বিতর্ক কারীদের দ্বারাই কিন্তু এর নির্ভেজালের পরোক্ষ প্রমাণ মেলে।

যাহোক এমতাবস্থায় ডিজিটাল আন্দোলনের সুফল মানুষের ঘরে ঘরে কতটুকু পৌছেছে সেটার একটা নির্ভেজাল রিপোর্ট পেতে আমাদের অন্তত আরও একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত আমরা খসড়া চিত্রগুলি নিয়েই আলোচনা সমালোচনা করতে থাকি। খুঁজতে থাকি দেশের বিভিন্ন জায়গায় লেগে থাকা ডিজিটাল বিপ্লবের ছোঁয়ার মহান আশীর্বাদে ধন্য অথবা করুন অভিশাপে শুন্য স্থান গুলোকে।

মোবাইল, কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসার আমাদের ব্যাস্ততাপূর্ণ এই ডিজিটাল জীবনে যোগাযোগের যে নতুন মাত্রা দিয়েছে যার গভীরতায় আমরা ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার আর অনলাইন ওয়েব সাইটে হাবুডুবু খাচ্ছি সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। জীবনের প্রয়োজন ও ভোগ বিলাসের তাগিদে বর্ধিত অন্য হাজারটি উপকরণের সাথে এগুলোও সচল রাখতে অতিরিক্ত ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল আন্দোলনের অংশ হিসাবে আমরা অদ্ভুতভাবে আমদানী করেছি ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎ কারখানা। যেটা নিয়ে কারও কারও পক্ষ থেকে প্রবল আপত্তি থাকলেও বিদ্যুৎ বিলের একের পর এক বর্ধিত মাশুল গুনতে কাউকে বাদ যেতে দেখিনি বরং নীরবে সবকিছু সয়ে যেতে দেখেছি।

ডিজিটাল বিপ্লবের পরম ছোঁয়াই দূর্নীতির ক্ষেত্রেও এসেছে ভিন্ন স্বাদ ও মাত্রা। খাম্বা চুরি আর শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অ্যানালগ কাহিনী দেখতে ও শুনতে অভ্যস্ত চক্ষু কর্ণ এখন সেই খাম্বা আর শত কোটিকে ছাপিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির পুকুরচুরির ডিজিটাল চিত্র উপভোগ করছে । মন শুনতে না চাইলেও কান চারপাশের কালো বিড়াল নিয়ে চলতে থাকা কী সব কানাঘুঁষা শুনে ফেলে। বিশ্বাস করতে না চাইলেও শেয়ার বাজার, হলমার্ক, স্বপ্নের পদ্মা সেতু, ডেসটিনির হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাটের সাথে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, ও উপদেষ্টাদের ডিজিটাল সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বিশ্বাসের জায়গাটিকে এবড়ো থেবড়ো করে দিয়ে চিন্তার অমসৃন পথে সবার হৃদয়ে সন্দেহের ঝাঁকুনি তৈরী করেছে। কাউকে দেশপ্রেমিক উপাধি দিয়ে, কখনো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার আদলে উলটা অন্য কারও বিরুদ্ধে একইভাবে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আবার কখনো মূল হোতাদের রেখে চুনোপুটিদের গ্রেফতার করে জনমনে সৃষ্ট সেই সন্দেহ দূর করা যাচ্ছেনা। আর এসব সন্দেহের মাত্রার প্রকৃত স্বরুপ দেখতে আমাদেরকে আরও একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে।

তবে আশঙ্কার ব্যাপার হলো এবারের অপেক্ষার পরের মুহূর্তটি কিন্তু অন্যান্য বারের মতো নাও হতে পারে। পাঁচ বছর পর পর জনগনের এই নির্ভেজাল মূল্যায়নে একটা প্রভাবশালী মহল কিন্তু নিজেদের কর্মকান্ডের উপর আস্থা রেখে এবারের রপোর্ট প্রদানের ঐ পদ্ধতির উপর সন্তুষ্ট নয় যদিও এর ফসল এক সময় তাদের ঘরেও গিয়েছিল। এখানেও ডিজিটাল চিন্তার ছোঁয়া লাগানো যায় কীভাবে সেই মতলবে যখন একটি পক্ষ ব্যস্ত ঠিক সেই সময়ে আর একটি পক্ষ আগের অ্যানালগ ব্যাবস্থার পক্ষে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তৈরী হয়েছে এক চরম অচলাবস্থা। পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ শূন্য এই অবস্থাকে বলা যেতে পারে ডিজিটাল স্ট্যাগনেশন। দেশের কল্যানার্থে এই অচলাবস্থা হতে উত্তোরনের জন্য ও হয়তো প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর অ্যানালগি আচরণ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×