মুভি রিভিউঃ Whale Rider-তিমির পীঠে চড়ে ছুটে চলা এক জাতির গল্প...
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ব্যাতিক্রমি একটা মুভি, ব্যাতিক্রমি অভিনয় আর মনকে নাড়া দেওয়া মেসেজ আছে এমন একটা মুভি নিয়ে লিখছি। এটা কোন তথাকথিত বিগ বাজেটের হলিউড মুভি না, এতে নেই কোন সুপারস্টার বা চোখ ধাঁধানো স্পেশাল ইফেক্ট। কিন্তু একটা গল্প আছে মুভিটায়, একটা দুঃখী উপজাতির গল্প...যারা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে আধুনিকতার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, গল্প আছে একটা পিচ্চি মেয়ের, যে শুধুমাত্র মেয়ে হবার কারনেই হারিয়ে ফেলছে তাঁর জীবনের অনেককিছু। এই মুভিতে অসাধারণ অভিনয় করে সর্বকালের সবচেয়ে কম বয়সে (১৩ বছর ৩০৯ দিন) অস্কার মনোনয়ন লাভ করে মুভির প্রধান অভিনেত্রী Keisha Castle-Hughes (যেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে আরেক পিচ্চি ২০১২ সালে)।
মুভিটা ২০০২ সালের, একটা ড্রামা মুভি...যেটা আমি দেখেছিলাম ইউনিভার্সিটির একটা কোর্স কারিকুলাম হিসেবে। একটা অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়েছিলো এই মুভিটার উপর, দেখার আগে ভেবেছিলাম যে কি না কি মুভি স্যার দেখাবেন, সময়টা নষ্টই হয় কিনা! কিন্তু আমার ধারনা ছিল একেবারেই ভুল, আগাগোড়া চমৎকার একটা মুভি...যেটা দেখানোর জন্য স্যারকে পরে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম!
মুভির নাম Whale Rider, ২০০২ সালের একটা মুভি যার IMDb রেটিং ৭.৬ আর RT ফ্রেশ রেটিং ৯০% (স্কোর ৭.৭)। প্রখ্যাত অনেক সমালোচকই এই মুভিকে ফুল মার্ক্স দিয়েছেন, স্বয়ং রজার এবার্ট দিয়েছেন ৪/৪...এবং Keisha Castle-Hughes সম্পর্কে বলেছেন "THIS is a movie star!" ওই বছর সেরা অভিনেত্রীর অস্কার পেয়েছিলেন শারলিজ থেরন, Monster মুভিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স এর জন্য। কে জানে, থেরনের অমন একটা পারফরম্যান্স না থাকলে হয়ত অস্কারটা Keisha Castle-Hughes ই পেয়ে যেত!
মুভিটা তৈরি হয়েছে New Zealand এর সুপ্রাচীন মাওরি উপজাতিদের নিয়ে। মুভির প্রধান চরিত্র হচ্ছে Pai (Keisha Castle-Hughes), যে তাঁদের উপজাতির নেতার নাতনী। মাওরিদের বিশ্বাস তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন Paikea, এবং তিনি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তিমি মাছের পীঠে চড়ে... তাই Paikea কে বলা হয় Whale Rider। মাওরিদের নেতাকে হতে হবে সেই Paikea এর সরাসরি বংশধর, এবং অবশ্যই পুরুষ। যুগের পর যুগ তাই হয়ে এসেছে, কিন্তু Pai যে মেয়ে! Pai অনুভব করে তাঁর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে আছে...সে ই হবে পরবর্তী গোত্রপ্রধান, রক্তে সে সাগরের টান অনুভব করে সর্বদা...কিন্তু গোত্রের বর্তমান প্রধান, তাঁর দাদা সেটা মনে করেন না। Karo, Pai এর দাদা তাঁর নাতনীকে যথেষ্ট ভালবাসলেও এক্ষেত্রে তাঁর হাত বাধা, তাঁর কিছু আচরনে মনে দুঃখ পায় ছোট্ট Pai। বাবার সাথে এলাকা ছেড়ে সাগরপার থেকে ইটপাথরের শহরে যাওয়া পাকাপোক্ত করে ফেলে Pai, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আটকে যায় সাগরেরই টানে।
Karo ইতিহাসকে উপেক্ষা করে কোনভাবেই একটা মেয়েকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করতে চান না। তাই তিনি গ্রামের কমবয়সী ছেলেদের নিয়ে ট্রেনিং দিতে থাকেন, আশা হয়ত এখান থেকেই বেরিয়ে আসবে তাঁদের পরবর্তী গোত্রপ্রধান। কিন্তু সে আসায় গুরেবালি, কারন সেইসব ছেলেরা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই হেরে যায় Pai এর কাছে। Karo এর সময় ফুরিয়ে আসছে, দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে সেই নেতাটিকে...কিন্তু কোন পথ খুঁজে না পেয়ে তিনি দিশেহারা। Pai এর সাথে তাঁর দাদার সম্পর্কের অবনতি ঘটে, শেষ পর্যন্ত কি হবে কেউ জানে না। Pai কি তাঁর আজন্ম স্বপ্নকে বাস্তব করতে পারবে? সেই স্বপ্নপুরনে সবচেয়ে বড় বাঁধাটি কিন্তু তাঁর নিজেরই অনমনীয় মানসিকতার দাদা!
একটা ফ্যামিলি মুভি, পরিবারের সবাই মিলে একসাথে উপভোগ করার মত। মুভিটা পরিবারের প্রতি ভালোবাসার, নিজের ভাগ্যকে নিজেই গড়ে নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার, হতাশার তলানি থেকে আবার উঠে আসার। ভালো লাগা মুভি, দেখলে যে কেউই আবেগে আক্রান্ত হবেন। আর Pai এর চরিত্রে পিচ্চি যেই অভিনয় করেছে, একেবারে মাইন্ড ব্লইং! মুভিতে দেখা যায় কিভাবে প্রাচীন উপজাতিগুলো লড়াই করে যাচ্ছে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য, এটা আসলে সারা পৃথিবীর সকল উপজাতিদের জন্যই প্রযোজ্য। সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, ঐতিহ্য হারিয়ে যায়...আমরাও কি অতি আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে আমাদের ঐতিহ্যকেই হারিয়ে ফেলছি না? ভেবে দেখার বিষয় এটা, মুভিটা না দেখে থাকলে দেখে নিতে পারেন...আশাকরি একটা সুন্দর সময়ই কাটাবেন!
ডাউনলোড লিংক- Click This Link
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার
এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।
আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন
কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই
দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।
সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন
রম্য : মদ্যপান !
প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=
এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।
বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন
Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই
শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন