শওগাত আলী সাগর
‘খুন হয়ে যাওয়া তিতাস’- এ পর্যন্ত পড়ে যে কারো মনেই ‘তিতাস’ নামের কারো প্রাণহানির আশংকাই মনে উঁকি দেবে নিঃসন্দেহে। সামাজিক যোগযোগের নেট্ওয়ার্কগুলোতে গত কযেকদিন ধরে এই শব্দগুলো নিয়ে বেশ তোলপাড় হচ্ছে। কাহিনীটা অবশ্যই খুনের, তবে সেটা কোনো মানুষের নয়। একটি নদীর খুন হয়ে য্ওায়ার কাহিনী নিয়ে তোলপাড় চলছে ব্লগে ব্লগে,ফেসবুকে। বিকল্প মিডিয়াকে কাঁপিয়ে দিল্ওে এই কাহিনীটি এখন পর্যন্ত ঢাকার মুলধারার মিডিয়ার দৃষ্টিই আকর্ষন করতে পারে নি। কেন পারে নি সেটাও সম্ভবত মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে নদী কিংবা লেক খুন হয়ে য্ওায়া নতুন কোনো ঘটনা নয়।খোদ রাজধানীতে লেক দখল কিংবা ভরাট হয়ে য্ওায়ার খবর আমরা মুলধারার মিডিয়াতে হরহামেশাই দেখতে পাই। বুড়িগঙ্গা ভরাট করে ফেলার ঘটনাতো আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু তিতাসের হত্যাযজ্ঞ যেন কারোই দৃষ্টি কাড়তে পারেনি। কেন পারেনি? এর সঙ্গে আ্ওয়ামী লীগ বা বিএনপি দলীয় নেতা এমপিদের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই বলে? না কি কোনো ভূমিদস্যু হাউজিং কোম্পানি এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েনি সে জন্য? রাজনীতি আর গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহৃত হ্ওয়া মিডিয়ার কাছে এ্ দুটোই খুবই উপাদেয় ইস্যূ।তিতাসের খুন হ্ওয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে কূটনীতির। প্রতিবেশি দেশ ভারতকে ট্রানজিট দিতে গিয়ে খুন করতে হয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই নদীটিকে।
যদ্দুর জানা যায়, তিতার খুন হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে এটি কারোই চোখে পড়েনি। মিডিয়ার চোখে তো নয়ই, পরিবেশবাদী কোনো সংগঠন এমনকি ভারতের ’আধিপত্যবাদের’ বিরোধীতায় ন্ওায়া খ্ওায়া হারাম করে দ্ওেয়া রাজনীতিকদের চোখ্ওে এটি ধরা পড়েনি। জাতির সামনে ঘটনাটি তুলে ধরেছে একুশে টেলিভিশন । ট্রানজিট নিয়ে তিন কিস্তিতে প্রচারিত একটি খবরের শেষ কিস্তি ছিলো তিতাসের এই করুন পরিণতির খবর। গত ২০ ডিসেম্বর এই সংবাদটি প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই ফুঁসে উঠেছে বিকল্প মিডিয়া। বিকল্প মিডিয়া সূত্রে প্ওায়া তথ্য হলো, তিতাস নদীর ঠিকমাঝখানে রাস্তা বানিয়ে ভারতীয় পণ্যপরিবহনের সুযোগ করে দ্ওেয়া হয়েছে। সরকারি তরফে যেখানে বলা হচ্ছে ভারতকে এখনো ট্রানজিট দেওয়া হয়নি, তিস্তার পানি না পেলে ট্রানজিট নয়, সেখানে এক বছর আগ থেকে তিস্তার বুকে বাধ দিয়ে রাস্তা তৈরি হয় কিভাবে? না, এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর প্ওায়া যায়নি। একুশে টেলিভিশনে সংবাদটি প্রচার হ্ওয়ার র্পও সরকারি তরফে এব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। হয়তো সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ভেবেছেন- টেলিভিশনের খবর মানুষ মনে রাখবে না। হয়তো তাই হতো। বিকল্প মিডিয়া বিশেষ করে ব্লগাররা উদ্বিগ্ন হয়ে না পড়লে তিতাস খুন হয়ে য্ওায়ার ঘটনাটি এতো আবেদন তৈরি করতে পারতো না। কিন্তু মূলধারার মিডিয়া বিষয়টিকে আমলে নিলো না কেন?
বাংলাদেশের কোনো কোনো প্রধান দৈনিক তো নদী ভরাট,লেক ভরাট,গাছ কাটা নিয়ে রীতিমতো সামাজিক আন্দোলন করেছেন অতীতে। তাদের কাছে তিতাস ভরাট করে রাস্তা তৈরির বিষযটি কোনোই সংবাদ মূল্য পেলো না। অথচ তাদেরই উচিত ছিলো- বিষয়টিকে আলোচনায় নিয়ে এসে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা। তাহলে কি মূলধারার মিডিয়া নিজস্ব এজেন্ডার বাইরে কোনো কিছুকে খবরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না? তাদের দায়বদ্ধতা তাহলে কোথায় ? কে দেবে এর উত্তর।