শওগাত আলী সাগর
১.
ইউক্রেনিয়ান ইয়থ ইউনিটি কমপ্লেক্স এর ফাণ্ডরাইজিং এর একটি অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি পিটার গোল্ডরিং । গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি নিজেই। হঠাৎ পুলিশের ইশারা- গাড়ি থামাতে হবে। থামালেন্ও তিনি। রাস্তার উপর কয়েকটি পুলিশ ভ্যান। রাস্তায় পুলিশের গাড়ি মানেই হয় দুর্ঘটনা, না হয় বেপরোয়া গাড়ী চালানো। পিটারও প্রথমটা সেরকমই ভেবেছিলেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাকেই গাড়ি থামাতে ঈশারা করলো তখনো তিনি কি ঘটতে যাচ্ছে তা আন্দাজ করে উঠতে পারেননি। কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল পেশাদার বিনয়ী ভঙ্গিতেই জানালেন, নেশা করে এবং বেপরোয়া গাড়ি চালনা বন্ধ করতে বিশেষ অভিযান চলছে এই রাস্তায়। গাড়িচালকদের থামিয়ে তাদের ‘ব্রেথ স্যাম্পল’(নিশ্বাস) নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে কেউ মদপান করে গাড়ি চালাচ্ছেন কী না।
এতোটুকু পর্যন্ত ঠিকই ছিলো পিটারের কাছে। কিন্তু পুলিশ যখন পিটার গোল্ডরিংক্ওে নিশ্বাসের নমুনা দিতে বললেন তখনি তার মেজাজটা আর ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। টানা ১১ বছর ধরে এমপি হিসেবে বিজয়ী হওয়া সরকারি দলের এই সাংসদ পুলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ‘নিশ্বাসের নমুনা’ দিতে তিনি সম্মত হলেন না। নিজের পরিচয় দিয়ে পুলিশকে জানালেন, তিনি একটা পার্টিতে বক্তৃতা করে ফিরছেন, আর যাই হউক তিনি অন্তত নেশা করেন নি। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে আর কিছুই বললেন না। কিন্তু মামলা ঠুকে দিলেন ‘নিশ্বাসের নমুনা‘ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর অভিযোগে।
মধ্যরাতে ঘটলেও ঘটনাটি চাপা থাকেনি কোনোভাবেই। মিডিয়ায় প্রকাশ হয়ে পড়ে ঘটনাটি। আর তার পরপরই কনজারভেটিভ পার্টির ককাস (সংসদীয় কমিটি) থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন পিটার। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে মিডিয়ায় কোনো মন্তব্য করতেই তিনি সম্মত হন নি। শুধু বলেছেন, ব্যাপারটা যেহেতু আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, রায় না হ্ওয়া পর্যন্ত আমার ককাসে না থাকাই উচিত। আর একই কারনে আপাতত আমার কোনো মন্তব্য করাও উচিত নয়। নাছোড় বান্দা মিডিয়া হাজির হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের প্রেস সেক্রেটারি সারা ম্যাকইনটায়ার বলেছেন,বিষয়টা যেহেতু আদালতে বিচারাধীন কাজেই এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কোনো মন্তব্য করতে পারে না। তবে ‘মদ পান করে গাড়ি চালানোকে বর্তমান সরকার গুরুতর অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
পিটারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শেষ পর্যন্ত কি পরিণতি হবে তা এখনি বলা মুশকিল। লক্ষণীয় বিষয়, পিটারের বিরুদ্ধে মদপান করে গাড়ি চালানোর অভিযোগ আনা হয়নি, আনা হয়েছে তিনি মদ পান করেছেন কী না সে ব্যাপারে পরীক্ষা দিতে পুলিশের অনুরোধে অস্বীকৃতি জানানোর। পুলিশকে কর্তব্যকাজে অসহযোগিতার এই অভিযোগটিতে তিনি দোষী প্রমানিত হলে প্রচলিত আইন অনুসারে ৬০০ ডলার জরিমানা থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে তার। সেটা অবশ্য অনেক পরের ঘটনা।
লক্ষণীয় বিষয়, আদালতে বিচারাধীন বলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কেও মিডিয়ায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি। বরং স্বেচ্ছায় সংসদীয় কমিটির দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিয়েছেন।তার বিরুদ্ধে তদন্তটা যাতে প্রভাবমুক্তভাবে হতে পারে, সেজন্যই এই ব্যবস্থা। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়? না, দলীয় এমপিকে সাধূ বানাতে উচ্চকণ্ঠ হয়ে উঠেনি তারা। বরং ‘মদ পান করে গাড়ি চালানোকে বর্তমান সরকার গুরুতর অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করে’ – এই বার্তাটি জানিয়ে দিয়ে আদালতের উপর নির্ভরশীল হয়েছেন তারা।
এবার আসুন,ঘটনাটা আমরা একটু অন্যভাবে দেখি। ধরুন এই এমপি ভদ্রলোকটি বাংলাদেশের সরকারি দলের (আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি- দু দলই ভাবতে পারেন) সদস্য। তাহলে চিত্রটি কি রকম হতো? আপনিই বলুন!