লেখকঃ ইজাজ আহমেদ
নিজামীর কথা বলেই যে সেটি খারাপ হবে এমন ধারণা অন্তরে পোষণ করা আমাদের উচিৎ নয়। নিজামী যে কথাটি বলেছেন সেটি আংশিক সত্য। হালকা পোষাক পরায় ছেলেরা মেয়েদের দিকে ঝোকে এবং মেয়েদেরকে উত্তক্ত করে। তবে, এখানে নিজামী সাহেব এর কথায় যেটি পরিস্কার বোঝা যায় তা হল পুরুষদের জন্য কোন ধর্মীয় বিধান নেই। একটি মেয়ে খাটো পোষাক পরলে ছেলেরা তাদেরকে উত্তক্ত করবে তাতে কোন ধর্মীয় নিষেধ নেই। তার মানে ধর্ম এবং নৈতিকতা রক্ষার দায়ীত্ব শুধুমাত্র মেয়েদের। ছেলেরা যা ইচ্ছা তাই করবে এবঙ তার দায়ীত্ব বর্তাবে শুধুমাত্র মেয়েদের উপর। আবার মেয়েদের যতদূর সম্ভব শালীন পোশাক পরাটা যে খারাপ তা বলছি না। তাদের সে রকম পোশাকই পরা উচিৎ। অপরপক্ষে ছেলেদেরো নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে যেন তারা সামান্যতেই মেয়েদেরকে উত্তক্ত না করে। তার মানে দায়ীত্ব উভয়েরই রয়েছে।
এছাড়া, এ বিষয়ের সংগে সংশ্লিষ্ট আর একটি শব্দের কথা না বললেই নয়, তাহল 'অত্যাচার'। উত্তক্ত শব্দটির চেয়ে 'অত্যাচার' বিষয়টি আরো মারাত্মক। মেয়েরা উত্তক্ত হোয়ার চেয়ে অত্যাচারিত হোয়া আরো বেশি ভয়ানক । আর সারা দেশে যে পরিমানে নারীরা নির্যাতিত হচ্চে এবঙ ১৯৭১ সালে হয়েছে, তার মূল কারণ খাটো পোশাক নয়। তার মূল কারণ হল মৌলবাদ। আর মৌলবাদের দায় এবঙ নিজামী গংদের দায় এড়ানোর জন্যই নিজামী সাহেবরা এমন একটি বিষয়ের অবতারনা করেছেন। তিনি পুরো বিষয়টিকেই অর্থাৎ ৭১ এর দায় এড়ানোর জন্যই হয়ত ভিন্ন খাতে জনমত তৈরীর চেষ্টা করছেন। তারমানে, আপনারা যদি এ বিষয়ে নিজামীর মতামতকে সমর্থন করেন, তাহলে হয়ত কোন একদিন নিজামী বলে বসবেন যে, সর্বকালেই নারী নির্যাতনের জন্য নারীরাই দায়ী। পুরুষরা নয়।
তাছাড়া, যদি স্বাধীণতার কথা বলা হয়, তাহলে নারীরাওতো বলতে পারে যে, পুরুষ ছেলেরা যেমন ইচ্ছামত পোষাক পরছে, তারা কেন তা পরতে পারবে না। সমাজের সৃঙ্খলা রক্ষার দায়ীত্ব কি শুধু তাদের ? স্বাধীণতা থাকলে সকলেরই থাকতে হবে। আর সৃঙ্খলা রক্ষা করবে তার দায়ীত্ব প্রাপ্ত লোকজন। সুইজারল্যান্ডে কি সৃঙ্খলা নেই? সেখানে মেয়েরা খাটো পোশাক পরলে তো সেখানকার মেয়েরা উত্তক্ত হচ্ছে? হচ্ছে না। তারমানে,নারীর উত্তক্ত হোয়ার কারণ হল ছেলেদের নৈতিকতার অভাব। যেমন এ অভাবটি ১৯৭১ সালে দেখা গিয়েছিল নিজামীদের মধ্যে।
তাই, শুধুমাত্র মেয়েদেরকে দায়ী না করে আসুন আমরা ছেয়েদেরকে নৈতিক শিক্ষা দেই। তাদেরকে নিজামীর মত নেতীবাচক এবঙ এক চোখা শিক্ষা না দিয়ে বরঙ নৈতিক শিক্ষা দেই। আমি অবশ্য এখানে নিজামী মার্কা নৈতিকতার কথা বলছি না। আমি বলছি, মানবীয় নৈতিকতার কথা। যেখানে মানুষ নারী-পুরুষ সকলকেই দেখবে মানুষ হিসাবে। প্রত্যেকে মনে করবে, তার নিজের যেমন অনেক কিছু করতে ইচ্ছা করে, অন্যেরো তা করতে ইচ্ছা করতে পারে এবঙ অন্যের ইচ্ছারো মূল্য দেওয়া শিখাতে হবে। তাহলেই সমাজে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি আসবে। আর আমি যে শিক্ষার কথা বললাম সেটি মঙ্গল গ্রহের থেকে নেওয়া নয়। এটি এ পৃথিবীর বহৃ দেশে প্রচলিত। আর আমরা আজ একটি গ্লোবাল ভিলেজের অংশ। তাই আমরা অন্যদের থেকে শিক্ষা নেব না তাও হয় না। তাই আসুন আমরা সত্যিকারের সত্যিটাকেই গ্রহণ করি। নিজামীর যদি ভাল কথা হয় সেটি গ্রহণ করি, আর তার ৭১ টাইপের বয়ান হলে তাতে থুথু ছিটাই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১০ দুপুর ১:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




