গত তিনদিন যাবৎ মাথা নষ্ট হয়ে আছে। কাজে গিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকি, মনযোগ নেই। এর মধ্যে প্রথমদিন অর্ধেক অফিস করে বাসায় চলে এসেছি । সারাদিন মাথায় থাকে শাহবাগ। একটা মুক্তিযুদ্ধে জন্মই হইনি, আরেকটি মুক্তিযুদ্ধে থেকেও নেই কারণ আমি আছি ভার্জিনিয়াতে। অফিসে দিনের বেলা কিছুক্ষণ পর পরই মোবাইল ফোনে ফেসবুক চেক করি। রাতের বেলা ল্যাপটপের মনিটরের সামনে বসে থাকি। যারা সশরীরে উপস্থিত, তাদের স্ট্যাটাস মেসেজগুলি পড়ি। পত্রিকাও পড়ি কিন্তু স্ট্যাটাস মেসেজ গুলিই জীবন্ত মনে হয়। পত্রিকার লেখাগুলি থাকে সাজানো কিন্তু মাঝে মাঝে এক-আধটু ভুল বানানে কিংবা মাঝে মাঝে আঞ্চলিকতা দিয়ে কিংবা রাজাকারদের গালি দেয়া স্ট্যাটাস মেসেজগুলি সাজানো নয়, দরদ দিয়ে লেখা, সেখানে মিথ্যার কোন স্থান নেই। তারুণ্য ব্যাপারটা এমনই। ভাবনাগুলি, চিন্তাগুলি হৃদয় থেকে সরাসরি কন্ঠে চলে আসে, মস্তিষ্কে গিয়ে প্রসেস হয় না। এখানে কোন রাজনীতি নেই, কোন কিছু চিন্তা করার বা বোঝার নেই। স্রেফ একটাই দাবী - রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ। আমি আমার দেশটির রাস্তা দিয়ে হাটঁব সেখানে কোন বিশ্বাসঘাতক রাজাকার থাকবে না - ভাবতেই এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করে। আমি নিশ্চিত এটা সফল হবেই। আমি শাহবাগের ভিডিও গুলি দেখি, শ্লোগানগুলি দেখি, আমি আমার রক্তকণিকায় এক ধরণের উন্মাদনা টের পাই, আর আমার ইচ্ছে জাগে শাহবাগে গিয়ে তাদের সাথে গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে বলি,
জামায়াত-শিবির রাজাকার
এই মুহুর্তে বাংলা ছাড় ।
আমি সেখানে নেই কিন্তু এখানে থেকেই মনে মনে চিৎকার করি, ভিডিওগুলি আবার নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করি। আমার কাছে মনে হয় আমি শাহবাগেই আছি। রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ এবার হবেই হবে। হতেই হবে।
মানুষের আশাগুলি, স্বপ্নগুলি চেইনের মত। একটা স্বপ্ন আরেকটি স্বপ্ন দেখায়, একটা স্বপ্ন আরেকটি স্বপ্নের বীজ বপন করে। আমি যখন আমার দেশে এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের দেখি, আরেকটি মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবশ্যম্ভাবী বিজয় টের পাই, তখন দেখি এবার সময় হয়েছে নুতনদের হাল ধরার। সময় হয়েছে যা কিছু বস্তাপঁচা, তা আস্তাকুঁড়ে ফেলার । এবার আবার সবকিছু শুরু হবে নুতন প্রজন্মের হাত দিয়ে। কোন রাজাকার থাকবেনা, থাকবেনা কোন দুষিত, কলুষিত রাজনীতিবিদ। নুতন বাংলাদেশের দায়িত্ব ঘাড়ে নিবে আমাদের এই নুতন প্রজন্ম। এই প্রজন্ম নিজেরাই নিজেদের দিক নির্দেশনা দিবে। যেমন আমাদের সবার প্রিয় শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল চিৎকার দিয়ে বলেছেন, "এখন তোমরা যা সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তোমাদের পিছনে পিছনে যাবো।"
আর পেছন ফিরে চলা নয়, এখন শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।