somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মৃত্যু বিষয়ক ভাবনা

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাণ থাকলেই মৃত্যুর স্বাদ পেতেই হবে। মৃত্যু এমনই এক প্রক্রিয়া যা কোনভাবেই এড়িয়ে যাবার উপায় নেই।অবশ্য সাধু-সন্ন্যাসীরা মৃত্যুকে অন্যভাবে দেখে থাকেন।তারা দেহত্যাগ করেন। তারা তাদের ক্ষণস্থায়ী জৈবিক দেহ ও অমর আত্মার প্রভেদ জানেন। তাই তারা তাদের নির্দিষ্ট সময়ে নিজেদের আত্মাকে দেহ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। ব্যাপারটা আমার মতে তর্ক-সাপেক্ষ কারণ আত্মা ব্যাপারটা দেখার বা শোনার, এমনকি অনুভব করারও উপায় নেই। এটা শুধুই উপলব্ধির ব্যাপার - যদিও উপলব্ধি করার উপায়টা খুবই কষ্টসাধ্য কিংবা আদৌ এটা উপলব্ধি করা যায় কিনা আমার জানা নেই।আবার এমনও হতে পারে যে আমি আমার জ্ঞান দিয়ে এখনো আত্মাকে বুঝে উঠতে পারিনি ।

আমার ত্রিকালদর্শী, মহাজ্ঞানী নানা-ভাই ‘সামসুদ্দিন’ বলতেন -- তিনটি ব্যাপার তোকে বুঝতে হবে?
-- আমি বললাম, কী সেই তিন ব্যাপার?
--তিনি বললেন, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিদ্যা।
-- আমি ব্যাখ্যা চাইলাম। এবার তিনি ব্যাখ্যা শুরু করলেন।
-- জ্ঞানের মাধ্যমে শাদা-কে শাদা, কালো-কে কালো ও রঙ্গিন-কে রঙ্গিন বোঝা যায়। জ্ঞানের মাধ্যমে দড়ি-কে দড়ি ও সাপকে সাপ বলে চেনা যায়। জ্ঞানের দ্বারা কোন কিছুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করা যায়।জ্ঞানী মানুষ তার অর্জিত জ্ঞানকে বিতরণ বা প্রকাশ করতে পছন্দ করেন।
প্রজ্ঞা উপলব্ধির সাথে সম্পর্কিত। যতক্ষণ উপলব্ধি নাই, ততক্ষণ হাউকাউ। যখন উপলব্ধি আসবে তখন শান্ত, স্থির। রামকৃষ্ণ পরমহংসের সেই কনের বর দেখানো গল্পটা মনে আছে? বর তার বন্ধুদের নিয়ে এসেছে। কনে’র বান্ধবীরা বরে’র প্রতিটি বন্ধুকে দেখিয়ে কনেকে জিজ্ঞেস করছে, এইটা কি তোর বর? এইটা কি তোর বর? কনে না, না করে যাচ্ছে। যখন বরের দিকে নির্দিষ্ট করে জিজ্ঞেস করল, এইটা কি তোর বর? কনে তখন নিশ্চুপ ও মিটিমিটি হাসে। প্রজ্ঞাবান নিজেকে প্রকাশ-প্রচার থেকে বিরত থাকেন।
বিদ্যা সকলের ঊর্ধ্বে। বিদ্যার সীমানা অসীমে বিস্তৃত। বিদ্যা সবকিছুকে ভেদ করে। এখানে অবিদ্যার স্থান নেই। বিদ্যার ঠিকানা পার্থিব জগত-কে ছাড়িয়ে যায়। বিদ্যা আমিত্ব-কে ভেদ করে বিশ্বজগতে ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়টাতে আমি আমার নানা-ভাইয়ের সাথে ঘন্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন দার্শনিক আলোচনায় ব্যস্ত থাকতাম। নানা-ভাইয়ের উপদেশে বিভিন্ন রকম জটিল বই পড়ায় ব্যস্ত থাকতাম। সবকিছু বুঝতাম না, অনেককিছুই মাথার উপর দিয়ে যেত। অনেক কথোপকথনের মধ্যে উপরের সংলাপটি একটি। ইদানীং মৃত্যু ব্যাপারটি নিয়ে ভাবছি। মৃত্যু ব্যাপারটি আসলে কী ? চেষ্টা করছি এটা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের, প্রজ্ঞার মাধ্যমে উপলব্ধি করতে, ও বিদ্যার মাধ্যমে ভেদ করতে।

আত্মা এবং মৃত্যু সম্পর্কে বাইবেল কী বলে, "Then shall the dust return to the earth as it was and the spirit shall return unto God who gave it. " Ecclesiastes 12:7. বাইবেলের কথানুযায়ী আমাদেরকে ঈশ্বর কর্তৃক দেয়া আত্মা আমাদের জৈবিক দেহের মৃত্যুর পর আবার ঈশ্বরের কাছে ফেরত যাবে।
* মৃত্যু সম্পর্কে আমরা কোরানে কী দেখতে পাই, “Say: "The Angel of Death, put in charge of you, will (duly) take your souls, then shall ye be brought back to your Lord. ” As-Sajda : Verse 11. আবার, “Allah receiveth (men's) souls at the time of their death, and that (soul) which dieth not (yet) in its sleep. He keepeth that (soul) for which He hath ordained death and dismisseth the rest till an appointed term. Lo! herein verily are portents for people who take thought.” Az-Zumar : Verse 42. এখানেও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের এই নশ্বর দেহের মৃত্যুর পর আত্মা তার স্রষ্টার নিকট ফিরে যাচ্ছে।
** এবার দেখা যাক, শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা কী বলে, “সকল প্রাণী জন্মের পূর্বে দেহহীন এবং মৃত্যুর পরেও দেহহীন অবস্থাতে থাকে, কেবল জন্ম-মৃত্যুর মধ্যেকার সময়ে এই দেহধারণটা আমরা দেখে থাকি, জন্মের পূর্বে এবং মৃত্যুর পশ্চাতে কিছুই দেখা যায় না ” ২।।২৮। আবার, “আত্মাই অমৃত। আত্মাই অবিনাশী, যার তিনকালে বিনাশ নাই। আত্মাই সৎ।দেহ নাশ্‌বান, তাই তা অসৎ; ত্রিকালে যার কোন অস্তিত্ব নেই।” ২।।১৮।
বৌদ্ধধর্মে মৃত্যুকেই জীবনের সমাপ্তি বলা হয় নি, বরং মৃত্যুর পর কর্মফল অনুযায়ী আবার জন্মলাভ হবে দুঃখভোগ করার জন্য আর এটাই হল অনাত্মা। বুদ্ধের মতে জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুর (পুনরায় জন্ম) জন্য জীবন দুঃখময় এবং এ সম্পর্কে বুদ্ধ চারটি উপদেশ দিয়ে গেছেন, যা ‘চত্বারি আর্য্য সত্যানি’ নামে পরিচিত। দুঃখ (এবং সকল প্রকার বন্ধন) থেকে মুক্তি (নির্বাণ) পাবার জন্য আমাদের জন্মচক্রকে রোধ করতে হবে এবং এটার জন্য বুদ্ধ অষ্টবিধ উপায়ের মাধ্যমে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে গেছেন।

প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলোর প্রায় সবগুলোতেই আমাদের এই নশ্বর দেহকে অপ্রয়োজনীয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র ধর্ম বা দর্শন চিন্তার মধ্যে আমার চিন্তার প্রক্রিয়াটা কখনোই সীমাবদ্ধ থাকে না। বিজ্ঞান আমার কাছে বরং বেশী প্রাধান্য পায়। তাই আমার মন হয়ে উঠে সন্দেহ-প্রবণ ও অনুসন্ধিৎসু।মৃত্যু ব্যাপারটিকে আজ পর্যন্ত কেউ রোধ করতে পারেনি , এমনকি ধর্মপ্রচারকগণও নন, যদিও ইতিহাসের পাতায় আমরা তাদেরকে ঈশ্বরের দ্বারা সরাসরি প্রেরিত মানুষ হিসেবে দেখি, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অবতারগণ নিজেরাই মনুষ্য-রূপে পৃথিবীতে নেমে এসেছেন। হজরত ঈসা বা যীশুর মৃত মানুষকে জীবিত করার কথা বলা আছে, এমনকি আমি সাধু ত্রৈলংগ স্বামীর জীবনীতে পড়েছি যে উনিও মৃত্যু মানুষ জীবিত করেছেন, কিন্তু কেউ মৃত্যুকে শেষ পর্যন্ত রোধ করতে পারেন নাই। মৃত্যুকে জয় করতে পারার অপারগতা থেকেই কি তারা আত্মা নামক অদৃশ্যমান ব্যাপারটি নিয়ে এসেছেন? একই সাথে মৃত্যু ব্যাপারটিই একটি অস্তিত্বের সমাপ্তি - এটা বিশ্বাস করতেও মনে খটকা লাগে।

বিখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থবিদ পল ডিরাক (Paul Dirac) ১৯২৮ সালে প্রতিপদার্থ (antimatter) আবিষ্কারের মাধ্যমে হৈ চৈ ফেলে দেন এবং একটি সূত্রের (Dirac Equation) মাধ্যমে তিনি প্রতিপদার্থের অস্তিত্ব প্রমাণ করে দেন - যা তাকে ১৯৩৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার পাইয়ে দেয়।ডিরাক বলেন, প্রতিটি কণার (particle) বিপরীতে একই বৈশিষ্ট্যের বিপরীত চার্জের একটি প্রতি-কণা (antiparticle) আছে - যেমন একটি ইলেকট্রনের বিপরীতে পজিটিভ চার্জের একটি অ্যান্টি-ইলেকট্রন (Antielectron) আছে। ইলেকট্রন, নিউট্রন, প্রোটন মিলে যেভাবে একটি অ্যাটম (Atom) তৈরি হয়, একইভাবে অ্যান্টি-ইলেকট্রন (পজিট্রন) (Antielectron /Positron), অ্যান্টি-নিউট্রন (Anti-Neutron) , অ্যান্টি-প্রোটন (Antiproton) মিলে তৈরি হতে পারে অ্যান্টি-অ্যাটম (Antiatom)। সাম্প্রতিক সময়ে সার্ন (CERN) ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে অ্যান্টি-ম্যাটার তৈরী ও তা চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।অ্যান্টি-হাইড্রোজেনের ৩৮ টি অ্যাটম তারা ০.১৭ সেকেন্ডের জন্য ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিল। আমাদের এই দেহও তো অনেকগুলি কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ইত্যাদির সঠিক অনুপাতের মিশ্রণের ফসল। তাহলে কি আমাদেরও একটি প্রতি-আমি (Antimyself) আছে। যদি থেকে থাকে তাহলে সেই প্রতি-আমি কোথায়? মৃত্যু কি আমার আমিকে আমার প্রতি-আমির সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়। আমি এবং প্রতি-আমির সাক্ষাৎটা কেমন হতে পারে --মিলনাত্মক নাকি ধ্বংসাত্মক ?



মৃত্যু হবার সাথে সাথে আমরা মৃত্যুর বিপরীত দিকটা কখনোই দেখতে পাই না। কারো মৃত্যু হবার পর আমরা মৃত্যু নামক অবস্থাটির সাথে একাত্ম হয়ে যাই। এ যেন বিখ্যাত অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ শ্রোডিংগার-এর বিড়াল (Schrödinger’s Cat) বিষয়ক থট্‌ এক্সপেরিমেন্টের মত।এরউইন শ্রোডিংগার (Erwin Schrödinger) একই বছর ১৯৩৩ সালে পল ডিরাক-এর সাথে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার পান। ১৯৩৫ সালে শ্রোডিংগার একটি বিড়ালের একই সময়ের একই সাথে জীবিত এবং মৃত্যু অবস্থার থট্‌ এক্সপেরিমেন্ট করেন। থট্‌ পরীক্ষাটি এরকম ছিল - ধরা যাক, একটি বাক্সে একটি জীবিত বিড়াল,একটি রেডিও অ্যাক্‌টিভ পরমাণু ও পয়জন রেখে বাক্সটি বন্দী করে দেয়া হল।বন্দী বাক্সটিতে এমন একটি ব্যবস্থা করা হল - যদি পরমাণুটির পারমাণবিক রেডিয়েশন ঘটে (Radioactive decay), তাহলে বাক্সটিতে পয়জন ছড়িয়ে বিড়ালটি মারা যাবে। এখন বাক্সটি না খোলা পর্যন্ত দুটি অবস্থা ঘটতে পারে-- পরমাণুটির রেডিয়েশন হবে বা হবে না অর্থাৎ বিড়ালটির দুটি অবস্থা - একইসাথে জীবিত ও মৃত্যু অবস্থা বিদ্যমান।বাক্সটি খোলার পর কিন্তু কখনোই দুটি অবস্থা থাকবে না । আমরা বিড়ালটির হয় জীবিত অথবা মৃত্যু অবস্থা দেখতে পাব।বাক্সটি খোলার সাথে সাথে দুটি দশা ভাগ হয়ে যাবে এবং একটি মাত্র দশার সাথে একাত্ম হয়ে একটি মাত্র দশা আমরা দেখতে পাব। যদিও বাক্স খোলার সাথে সাথে আমরা বিড়ালটির একটি দশার জগতে প্রবেশ করব, তারপরেও কণার দ্বৈত-আচরণ (wave-particle duality) নীতি অনুযায়ী বিড়ালটি একই সময়ে জীবিত ও মৃত অবস্থায় বিরাজমান হতে পারে। আমরা আমাদের ইউনিভার্সে বিড়ালটিকে যে অবস্থায় দেখতে চাইব (ধরা যাক মৃত), বিড়ালটি আমাদের কাছে সে অবস্থায় দেখা দিবে যদিও বিড়ালটির অন্য অবস্থা (জীবিত) একইসাথে অন্য ইউনিভার্সে বিরাজমান হতে পারে। কণার এই দ্বৈত অবস্থা আচরণ প্রমাণিত - যা ডাবল স্লিট (Double Slit) এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমেও দেখা যায়। তাহলে আমাদের মৃত্যু কি মৃত্যু নয়? আমাদের আরও একটি সত্ত্বা কি অন্য কোথাও, অন্য কোন ডাইমেনশনে, অন্য কোন ইউনিভার্সে বিরাজমান?



চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সকল প্রকার জৈবিক কার্যকলাপের সমাপ্তিকেই মৃত্যু বলা হয়। বর্তমানে ডাক্তার এবং ফরেনসিক এক্সামিনারগণ মৃত্যুকে অবশ্য জৈবিক মৃত্যু (Biological death) বা ব্রেইন ডেথ (Brain Death) বলে থাকেন। হার্ট-বিট, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমাপ্তি, ব্রেইনের সকল প্রকার ইলেকট্রিক্যাল কার্যকলাপের সমাপ্তির ফলে চেতনার পরিসমাপ্তি ঘটলেই তাকে মৃত্যু বলা হয়।মৃত্যুর পরে কী হয়? অক্সিজেনের অভাবে দেহের এনার্জি মলিকিউল (Energy molecule) তৈরিতে সহায়ক সকল প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় । সাধারণত তিন মিনিটের বেশী মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ থাকলে ব্রেইন কোষগুলোর মৃত্যু ঘটে। পেশী কোষ কয়েকঘন্টা পর্যন্ত, হাড় এবং চামড়ার কোষগুলো কয়েকদিন পর্যন্ত অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যতিরেকে বেঁচে থাকতে পারে। দেহ মারা যাবার তিন থেকে বার ঘণ্টার মধ্যে মাংসপেশিগুলোতে রাসায়নিক পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়, যার ফলস্বরূপ মাংসপেশিসমূহের ফ্লেক্সিবিলিটি নষ্ট হয়ে শক্ত হয়ে যায় (Rigor Mortis)। দেহের সকল কোষের মৃত্যুর ফলে দেহ ব্যাকটেরিয়ার সাথে আর পেরে উঠে না, যার ফলস্বরূপ পচন শুরু হয়ে যায়।*** আমাদের শরীরের বেশীর ভাগ (শতকরা প্রায় ৯৩ ভাগ) কার্বন (১৮%), হাইড্রোজেন (১০%) ও অক্সিজেনের (৬৫%) অণু দিয়ে তৈরি। চিকিৎসক ও লেখক দীপক চোপরা (Deepak Chopra) তার Life After Death : The burden of proof বইতে লিখেছেন, আমাদের এই জৈবিক দেহের মৃত্যু হওয়ার পর প্রথমে তা অণু ও পরমাণু পর্যায়ে ভেঙ্গে যায়।পরবর্তীতে আবার ভেঙ্গে প্রথমে সাব-এটমিক পার্টিকেল ও পরে এনার্জি ওয়েভে (energy wave) রূপান্তর হয়ে যায়। First law of thermodynamics কী বলে ?--শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই, শুধুমাত্র রূপান্তর আছে।তাহলে আমাদের মৃত্যুটা রূপান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়।আমরা শুধুমাত্র একটা রূপ থেকে আরেকটা রূপে প্রবেশ করি। মৃত্যুর মাধ্যমে যদি আমরা অন্য একটি রূপে প্রবেশ করি, তাহলে আমরা কি আমাদের বর্তমান রূপে অবস্থানকালীন সমস্ত স্মৃতি, চিন্তা পরবর্তী রূপে নিয়ে যেতে পারি? আমাদের পরবর্তী রূপটাই বা কেমন?

মৃত্যুর কাছাকাছি জায়গা (Near death experience) থেকে ফিরে আসা বেশির ভাগ ব্যক্তিই বলে থাকেন যে, তারা একটি আলো দেখতে পেয়েছিলেন। অনেকে আবার মৃত আত্মীয়-স্বজনকেও দেখে থাকেন। মৃত্যুর কাছাকাছি অভিজ্ঞতা কোনরকম পরিকল্পনা করে আসে না যে এতে মনের উপর কোনকিছুর প্রভাব পড়বে। হঠাৎ করেই দুর্ঘটনা বা অন্য কোনভাবে কেউ কেউ মৃত্যুর কাছাকাছি জায়গায় চলে যান? তাহলে তারা কেন আলো দেখতে পান? মৃত্যুর অপর পারে কি কোন আলোকিত জগত আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে?

মৃত্যু ব্যাপারটি রহস্যমূলক হলেও মৃত্যু-চিন্তা কিন্তু খারাপ নয়। সমাজকর্মী গ্যারি রিস (Gary Reiss) মাঝে মাঝে বিছানায় শোয়া অবস্থায় মরে যাওয়ার চিন্তা করতে বলেছেন। যেমন, ধরা যাক, একজন মানুষ খুব রাগী কিংবা অস্থির স্বভাবের। এখন যদি সে বিছানায় শুয়ে থেকে ভাবে যে, সে মারা গিয়েছে, তবে সে মারা যাবার সাথে তার অস্থির স্বভাব, রাগও মারা যাবে। এভাবে অভ্যাসের দ্বারা রাগ, অস্থিরতা বা অন্য কিছু কমানো যায় বলে গ্যারি রিস দাবী করেছেন।

মৃত্যু বিষয়ক রহস্যের উদঘাটন এখনও সম্ভব হয় নি। তাই বলে চিন্তার প্রক্রিয়াটিকে বাদ দেওয়া যাবে না। হয়তবা অতি বুদ্ধিমান কেউ বা আমার মত কোন এক সাধারণ একদিন এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতে পারে কারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ (Genius of geniuses) বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব কোন ল্যাবরেটরিতে বসে আবিষ্কার করেন নাই, থট্‌ এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমেই আবিষ্কার করেছিলেন। বিখ্যাত দার্শনিক রেনে ডেসকার্তে (René Descartes) বলে গিয়েছেন, সংশয় (doubt) থাকতে হবে, কারণ সংশয় থেকেই চিন্তার শুরু। মন থাকতে হবে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন যাতে চিন্তা প্রক্রিয়াটি একদিকে সীমাবদ্ধ না হয়ে যায়।

কোথা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, কোথায় গিয়ে যাত্রা শেষ করব কিংবা এ যাত্রার আদৌ কোন শেষ আছে কিনা জানি না, তবে যাত্রার মাঝপথে পৃথিবী নামক গ্রহটিতে এসে থমকে গিয়েছি, বিশ্বজগতের রহস্যটি জট পাকিয়ে গিয়েছে। মৃত্যু ভাবনা আমার মধ্যে আসে তবে এটা কখনোই আমাকে বিচলিত করে না, আমি বিচলিত হই এটা ভেবে যে, বিশ্বজগতের রহস্যটি জানার আগেই হয়তবা মৃত্যু প্রক্রিয়াটির সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়ে যাবে।মৃত্যু ও বিশ্বজগতের রহস্যটি আমার নিকট অনুন্মোচিত থেকে যাবে - এত বড় অবিদ্যা নিয়ে আমি মারা যেতে চাই না।

যেহেতু আমার নানা-ভাই সামসুদ্দিন-কে আমার লেখায় অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং আমার জীবন ও আদর্শের বেশীরভাগ জুড়ে উনি আছেন, তাই উনার সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। নানা-ভাই বিখ্যাত কেউ নন কিন্তু তিনি তার জীবন সৃষ্টি-জগতের রহস্য উন্মোচনে কাটিয়েছেন। তিনি সংসারে থেকেও সংসারত্যাগী ছিলেন। তিনি তার জীবনের ৩২ টি বছর কবরস্থানে কাটিয়েছেন কারণ কবরস্থানকে তিনি তার চিন্তার জন্য উত্তম জায়গা মনে করতেন। নানা-ভাই নিরামিষভোজী ছিলেন, এমনকি দুধ-ডিমও উনি খেতেন না।জীবনের শেষদিনগুলোতে দেহ অতিমাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়াতে ডাক্তারের নির্দেশে উনাকে দুধ-ডিম খেতে হয়েছিল। উনি পৃথিবী নামক গ্রহটিতে আর নেই। আমি আমেরিকা আসার পর তিনি তার যাত্রার পৃথিবী পর্ব শেষ করেন।তার সম্পর্কে আরেকটি ঘটনা দিয়ে লেখাটি আজকের মত শেষ করি।
-- আমি নানা-ভাইকে বললাম, নানা-ভাই কবরস্থানে কীভাবে থাকেন? আপনি খুব সাহসী!
-- নানা-ভাই উত্তর দিলেন, একটা পিঁপড়াও কবরস্থানে থাকে। আমার সাহস পিঁপড়ার চেয়ে বেশী নয়।
এভাবেই তিনি তার অহং-কে জয় করেছিলেন।

সঞ্চয় রহমান
মে ০২, ২০১১, ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।
(আমি একসময়ে তিন/চারটা ব্লগে লেখালেখি করতাম। এই লেখাটা লিখেছিলাম ও প্রিয়ব্লগে পোস্ট করেছিলাম ২০১১ সালের মে মাসের ২ তারিখে। এখন সেখানে আর লেখাটা খুঁজে পাই না। প্রিয় ডট কম এখন একটা খিচুরি সাইটে পরিণত হয়েছে। তাই এখানে লেখাটা পোস্ট করলাম।)
* QuranExplorer.com
** শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা -- স্বামী অড়গড়ানন্দ
* http://atlas.ch/antimatter.html
*** H. A. Harper, V. W. Rodwell, P. A. Mayes, Review of Physiological Chemistry, 16th ed., Lange Medical Publications, Los Altos, California 1977.
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×