একদম ধুম করে কক্সবাজার সেন্টমার্ন্টিন যাওয়ার আমন্ত্রন পেলাম। আগের দিন সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত, পরের দিন সন্ধ্যায় যাত্রা শুরু। কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শ্যামলী পরিবহনে কলাবাগান কাউন্টার থেকে। বাস ছাড়বে রাত ১০.৩০ মিঃ। উত্তরা থেকে কলাবাগানের উদ্দেশ্যে সূচনা পরিবহনে উঠলাম। কলাবাগান যেতে ১০.১০ বেজে গেল। বলে রাখা ভাল, এই দীর্ঘ্ ভ্রমনে আমার সবচে কষ্টকর যাত্রা হলো উত্তরা থেকে কলাবাগান যাওয়া।
মাগনা টিপসঃ ঢাকা থেকে শ্যামলী পরিবহনের এসি বাসে ভাড়া নিয়েছে ৯০০ টাকা।
হোটেল তাজমহল, চৌদ্দগ্রাম, রাত ২টা। নিজের থানায়। মনে হচ্ছিল ইস্!! যদি একবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসা যেত!!
ইনানী রিসোর্স, কক্সবাজার, সকাল ৭টা।
সারারাত বাসের মধ্যে শীতে জমে গেছি প্রায়। বাস থেকে কম্বল দিয়েছে, সাথে গরম কাপড়তো ছিলই। কিন্তু শীত থেকে মুক্তি পেলাম না। সকালে যখন ইনানী রিসোর্সে বাস থামল তখন চোখে মুখে একটু পানি মেরে এসে রোদে দাঁড়িয়ে একটু শরীর গরম করলাম। এখান থেকে কক্সবাজার আর মাত্র ১ ঘন্টার পথ। মামা মামির সাথে কথা হলো। মামা কক্সবাজার হলিডে মোড়ের আগে বিসিক রেষ্ট হাউজের সামনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। কলাতলি মোড়ে গিয়ে ফোন দিতে বলে দিয়েছে।
ওরে বাবা!! কত্ত বড় পরোটা!!!
রেষ্ট হাউজে গিয়ে হাত মুখ ধোয়ার পর মামা কেয়ারটেকার কে পাঠাল নাস্তা নিয়ে আসার জন্য। কেয়ার টেকার প্রতি জনের জন্য দুটি পরোটা, ডিম ও ডাল নিয়ে আসল। পরোটার সাইজ দেখে ভিরমি খাওয়ার যোগায়! এত্ত বড় পরোটা এই জীবনে দেখিনি। ঢাকার পরোটার ৪টার সমান হবে প্রতিটি। দ্বিতীয় বার ভিরমি খেলাম পরোটার দাম শুনে। মাত্র ৭ টাকা!! বলে কি!!
খাওয়ার পর সৈকতের উদ্দেশ্যে যাত্রা। এখান থেকে কাছের বিচ লাবনী পয়েন্ট। লাবনী পয়েন্ট যাওয়া আসার পথে অনেক বড় কিছু খিরা খেত। পথের পাশে খিরা বিক্রি হচ্ছে। ইচ্ছে হলে দুটো মেরে দিতে পারেন।
আহা সমুদ্র!!! সমুদ্র দেখে খুশীতে হৃদয়টাও সমুদ্রের মতো বিশাল হয়ে গেল। নওফেল (ভাতিজা) এর হাসিই তা বলে দিচ্ছে। '' আমি কখনো যাইনি জলে, কখনো ভাসিনি নীলে, কখনো রাখিনি চোখ, ডানা মেলা গাংচিলে'' মৌসুমি ভৌমিকের গানটি এই মুহূর্ত থেকে গুরুত্বহীন হয়ে গেল। এই গান শুনে আর সমুদ্র না দেখার যন্ত্রনা কুরে কুরে খাবে না।
মাগনা টিপস: বিচে যাওয়ার আগে কোন পোষাকে যাবেন তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখুন। যেহেতু পানিতে নামবেন সেহেতু ভুলেও স্যুটেড বুটেড হয়ে যাবেন না। আমি কক্সবাজার যাওয়া আসার পথে ছাড়া জুতা একবারের জন্যও পরিনি। সব সময় চামড়ার সেন্ডেল পরে ছিলাম।
মাগনা টিপস: পানিতে নামলে আপনার শুননো জামা কাপড় কোথায় কার কাছে রাখবেন সেটা একটি ভাবনার বিষয়। আমার মামা ছিল বলে রক্ষে। প্রতিবার সব কিছু মামার কাছে রেখে যেতাম। সৈকতে কিছু ছাতা দেখতে পাবেন। ঘন্টায় ত্রিশ টাকা করে ভাড়া দেয়। মামাকে সেখানে বসিয়ে রেখে আমরা পানিতে নেমে পড়তাম।
মাগনা টিপস: আপনাদের সাথে যদি গাড়ি থাকে তবে সব কিছু গাড়িতে রাখতে পারেন।
মাগনা টিপস: সী ইন পয়েন্ট এর পাশে একটি গোসল খানা আছে। গোসল করলে নেবে বিশ টাকা, হাগু করলে ১৫ টাকা, মুতু করলে ৫ টাকা। আমরা সী ইন বিচ থেকে উঠে সেখানে গোসল করে বাসায় ফিরেছি। যদিও বেশীর ভাগ লোক ভেজা কাপড়ে হোটেলে চলে যায়। বিচ থেকে উঠে গোসল করে নিলে ভাল লাগবে। তা না হলে সাগরের বালু আর লোনা পানি যন্ত্রনা দেবে।
বিচেই প্রয়োজনীয় পোষাক পাবেন।
মাগনা টিপস: আপনি যদি গোসল করার জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় না নিয়ে আসেন তবে কোন সমস্যা নাই। বিচেই সব কিছু পাবেন, সর্ট প্যান্ট, ক্যাপ সানগ্লাস সব। এই বান্দা আবার একটু বেশী রকমের লাজুক। সর্ট প্যান্ট পরতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। তাই ফুলপ্যান্ট আর টি শাট পরেই ধাপাধাপি করেছি।
মাগনা টিপস: যা কিছু কিনবেন দামাদামি করে কিনবেন। আমার কাছে সব কিছু ঢাকার তুলনায় সস্তা মনে হয়েছে। যদিও কিছু দোকানি অনেক বেশী দাম হাঁকায়।
মাগনা টিপস: প্যান্ট শার্ট পরে নামলে সবচে খারাপটা পরে নামাই ভাল। সমুদ্রের বালিতে আপনার পোষাকের বারোটা বেজে যাবে। যত বার ধোবেন ততবারই বালু বের হবে। আমার প্যান্ট এর পকেট ও নিচের বর্ডার বালুতে ভর্তি হয়ে আছে। ঢাকা এসে প্যান্টের বর্ডারের সেলাই খুলে বালি বের করতে হয়েছে।
ছবি ওয়ালা, ছবি তুলতে এসে নিজেই ছবি হয়ে গেল।
মাগনা টিপস: সৈকতে তো দারুন মজা করছেন। কিন্তু ছবি তোলা তো হচ্ছে না। সবাই ভিজা, কি করে ছবি উঠাবেন? কোন সমস্যা নাই। সৈকতেই আছে অনেকগুলো ছবিওয়ালা। প্রতি কপি ৩আর ছবির জন্য নেবে ২০ টাকা। দাম দস্তুর করে কমাতে পারলেও পারতে পারেন। তারা ছবি তুলে আপনার হোটেলে পৌছে দেবে। আমি এই ছবি ওয়ালাকে দিয়ে ৫টি ছবি তুলেছিলাম। কিন্তু কোন এক কারণে সে আমার ঠিকানায় আসেনি, ফোনও করেনি।
মাগনা টিপস: নিজের মোবাইল ক্যামেরার উপর ভরসা না করে ছবিওয়ালাদের কে দিয়েই কিছু ছবি তোলা ভাল। আমি মোবাইলের উপর ভরসা করে এখন পস্তাচ্ছি। দেখতেই পাচ্ছেন ছবি গুলো ভাল হয়নি। নকিয়া এন৯৫ দিয়ে তোলা ছবি যদি এমন হয় তবে কেমন লাগে?
আরো বিস্তারিত জানতে আপাতত অপেক্ষায় থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



