somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইমেলা ২০২১-এ প্রকাশিত আমার দুটো অনুবাদ বই- দ্য মার্শিয়ান ও আর্টেমিস

০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





এবারের বইমেলা ২০২১-এ আমার অনুবাদে অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে 'দ্য মার্শিয়ান' ও 'আর্টেমিস।' বইদুটোর লেখক অ্যান্ডি উইয়ার। দুটো বইই সায়েন্স ফিকশান ঘরানার। প্রথমটি মঙ্গল গ্রহ অভিযানকে নিয়ে, দ্বিতীয় বইটি চাঁদে বসতি স্থাপনকারীদের নিয়ে। তাই, বিষয়বস্তুর দিক থেকে বইদুটো বেশ অনন্য সায়েন্স ফিকশান বলতে হবে। প্রিয় ব্লগার ও পাঠকদের এবার পরিচয় করিয়ে দিতে চাই বইদুটোর সাথে--

দ্য মার্শিয়ান

‘দ্য মার্শিয়ান’ লেখক অ্যান্ডি উইয়ারের জগদ্বিখ্যাত এক বই। এই বইয়ের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে হলিউড চলচ্চিত্রও। সেই সিনেমাটিও পেয়েছে বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তা।
জনরার দিক থেকে এই বইটি সায়েন্স ফিকশন; অদূর ভবিষ্যতে মানুষের মঙ্গল গ্রহ অভিযাত্রার উপর ভিত্তি করে রচিত এর কাহিনি। এর মূল চরিত্র মার্ক ওয়াটনি, যাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিল তার সহ-নভোচররা। কিন্তু আসলে মরেনি সে। সম্পূর্ণ একা ও পরিত্যক্ত অবস্থায় মঙ্গলের বুকে শুরু হয় টিকে থাকার সংগ্রাম। সেই অবস্থায়ও সে স্বপ্ন দেখে ও পরিকল্পনা এঁটে যায় আবার দুনিয়ার বুকে ফিরে আসার। মার্কের সেই সংগ্রাম ও হার না মানা মনোভাব নিঃসন্দেহে পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করে যাবে।

বইটিতে মহাকাশ যাত্রা ও এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপভাষা বা টার্ম রয়েছে। পাঠকদের সুবিধার জন্য যেখানে সেটাকে বাংলা করা উপযুক্ত মনে হয়েছে, সেখানে সেটা করা হয়েছে। আর যেখানে মনে হয়েছে সেটার অবিকল ইংলিশ টার্মটাই রেখে দেওয়া বেশি মানানসই, সেক্ষেত্রে সেটাই করা হয়েছে। ইংলিশ টার্ম যেসব জায়গায় রেখে দেওয়া হয়েছে, সেখানে শব্দের পাশেই ব্র্যাকেটে শব্দটির বিশদ রুপ বা পরিভাষাটি উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। তাই আশা করা যায় পাঠকের জন্য এই বইটি পড়তে কোনো সমস্যা হবে না।

আবার, বইটির উল্লেখযোগ্য একটা ব্যাপার হলো রসালো ভাষা ও স্ল্যাংয়ের ব্যবহার। সেসবকে বাংলাদেশের পাঠকের উপযোগী করে মার্জিত ও মানানসই ভাষায় রুপান্তর করা হয়েছে। এখানেও পাঠকের ধারণক্ষমতার ব্যাপারটিকে মাথায় রাখা হয়েছে।

কাহিনি পরিচিতিঃ
মঙ্গল গ্রহে এক মিশনে এসে প্রবল ধূলিঝড়ের কবলে পড়ে বাধ্য হয়ে মঙ্গল ত্যাগ করে পৃথিবীর পথে পাড়ি জমিয়েছে নাসার নভোচারীরা। কিন্তু মৃত মনে করে ফেলে রেখে চলে গিয়েছে তাদের সহযাত্রী মার্ক ওয়াটনিকে। চরম বিরুদ্ধ ও প্রতিকূল পরিবেশের লাল গ্রহটিতে একা পড়ে রয়েছে সে। পৃথিবীর সাথে যোগাযোগেরও কোনো উপায় নেই তার।

যদি অক্সিজেনেটর ভেঙে পড়ে তাহলে দমবন্ধ হয়ে এবং যদি ওয়াটার রিক্লেইমার নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তৃষ্ণায় কাতর হয়ে মারা পড়বে সে। তার বসবাসের আশ্রয়স্থল হাবটা ফুটো হয়ে গেলে হবে বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।

এসবের কিছু যদি নাও ঘটে, এরপরও একসময় খাবারের ভাণ্ডার ফুরিয়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করবে অনাহারে।

এই ভয়ানক অবস্থায় সে আদৌ কি টিকে থাকতে পারবে? কখনো কি ফিরে যেতে পারবে তার প্রাণের নীল গ্রহ পৃথিবীতে?

আসুন পাঠক, পরিচিত হোন ‘মহাশূন্যের রবিনসন ক্রুসো’ মার্ক ওয়াটনির বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও পৃথিবীতে ফিরে আসার অসীম সাহসিক যুদ্ধের সাথে…!

আর্টেমিস

‘আর্টেমিস’ লেখক অ্যান্ডি উইয়ারের দ্বিতীয় উপন্যাস। ঘরানার দিক থেকে এটি হাই কনসেপ্ট সাই-ফাই থ্রিলার। সায়েন্স ফিকশন এই উপন্যাসটি বেশ কিছু দিক দিয়ে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
প্রথমত, চাঁদের বসতি স্থাপনকারীদের নিয়ে এরকম উপন্যাস তেমন একটা নেই বললেই চলে। দ্বিতীয়ত, এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র জেসমিন বাশারা ওরফে জ্যাজ বাশারা একজন নারী। নারীকে মূল চরিত্রে রেখে এরকম সায়েন্স ফিকশন সত্যিই আলাদা করে উল্লেখ করার মতো একটা ব্যাপার। তৃতীয়ত, এই বইয়ের প্রটাগনিস্টই অনেকটা এন্টাগনিস্ট, অর্থাৎ সেদিক থেকেও উপন্যাসটি ব্যতিক্রমী। এরপরও এমনভাবে লেখক জ্যাজের চরিত্রটি অঙ্কন করেছেন যে তাকে ভালো না বেসে উপায় নেই পাঠকের।

চাঁদে বসতি স্থাপনকারীদের জীবনধারা কেমন হতে পারে, এই বই পড়ে সেটার ধারণা অনেকখানি পাবেন পাঠকেরা। এই বইয়ে জায়গায় জায়গায় উঠে এসেছে লেখকের রসবোধের প্রয়োগ। এই কারণে সায়েন্স ফিকশনের মতো অপেক্ষাকৃত গুরুগম্ভীর বিষয়ও পাঠকের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।

দারুণ উপভোগ করেছি বইটার অনুবাদের কাজটা। অ্যান্ডি উইয়ার লেখক হিসেবে বিশ্বজুরে দারুণ জনপ্রিয় হলেও এখনও বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে সেভাবে জনপ্রিয় নন। তবে, তার ‘দ্য মার্শিয়ান’ ও ‘আর্টেমিস’ বইটা যারা পড়বেন, তারা অবশ্যই লেখকের ভক্ত হয়ে যাবেন।

কাহিনি পরিচিতিঃ

চাঁদের বুকে গড়ে ওঠা কৃত্রিম শহর আর্টেমিস। যদি কেউ ধনী পর্যটক বা আজব খেয়ালের বিলিয়নিয়ার না হয়, তবে সেখানে জীবন ধারণ একটু কষ্টকরই। সেই শহরের এক বাসিন্দা জেসমিন বাশারা ওরফে জ্যাজ বাশারা। বিভিন্ন পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার পাশাপাশি কম ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পণ্যের চোরাচালানও তার একটা কাজ। এটা সে করে একটু অতিরিক্ত টাকা-পয়সার আশায়।
সেই জ্যাজের কাছেই একটা নিখুঁত অপরাধকর্ম করার প্রস্তাব আসে। সেটাতে সফল হতে পারলে সেও হয়ে যাবে মিলিয়নিয়ার। এই লোভনীয় প্রস্তাব তাই তার পক্ষে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু এই দারুণ কঠিন চ্যালেঞ্জটাই তার জন্য জন্ম দেয় গুরুতর কিছু সমস্যার।নিজেকে সে আবিষ্কার করে আর্টেমিসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলা লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে। তার উপরই এখন নির্ভর করছে তার নিজের ও আর্টেমিসের ভবিষ্যৎ। আর এই কাজটা আগেরটার চেয়ে অনেক কঠিন, অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে প্রতিমুহূর্তে হুমকির মুখে থাকবে তার জীবন।

লেখক পরিচিতিঃ
২০১৪-তে প্রকাশিত এই ‘দ্য মার্শিয়ান’ বইটি লেখক অ্যান্ডি উইয়ারকে এনে দিয়েছে বিশ্বজোড়া খ্যাতি। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল নভোচারী হওয়ার। মহাশূন্য অভিযাত্রা সবসময় টেনেছে তাকে। কিন্তু নভোচারী না হয়ে তিনি লিখে চলেছেন মহাশূন্য ভ্রমণ ও মহাশূন্যে বসতি স্থাপনের উপর বই।
‘দ্য মার্শিয়ান’-এর মাধ্যমে লেখক হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আগে দুই দশক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন। এই বই প্রকাশের পর থেকে তিনি এখন পুরোদস্তুর লেখক। তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘আর্টেমিস’ এবং ‘প্রজেক্ট হেইল মেরি’ (প্রকাশিতব্য)। এছাড়াও শিশুদের উপযোগী কয়েকটি বইও তিনি লিখেছেন। ১৯৭২ সালে জম্ন নেওয়া এই লেখক বর্তমানে বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।

শুধু অনুবাদক বলেই বলছি না, আসলেও বইদুটি সায়েন্স ফিকশন হিসেবে মাস্টারপিস। যারা সায়েন্স ফিকশন পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য বইদুটো। আর যারা সায়েন্স ফিকশন পড়েন না, তারা এই বইদুটো দিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারেন সায়েন্স ফিকশনের বিস্ময়কর জগতে।
বইদুটো বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে অন্বেষা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে (প্যাভিলিয়ন নম্বর ২৭)। এছাড়া অর্ডার করা যাবে রকমারি ডটকমসহ যেকোনো অনলাইন বুকশপে।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৪৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×