তাদের দেখে মনে পড়ে যায় আওয়ামী লীগের চেতনা ব্যবসার কথা
(১)
আওয়ামী লীগ অন্তত সরকারিভাবে হলেও ১৯৭১-সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকায় ছিল। এরপর সেই ভূমিকার কারণে তারা দেখা গেল যে দেশটাকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করত। তারা মনে মনে এই নষ্ট-ভ্রষ্ট ধারণা পোষণ করত যে, "যেহেতু আমরা এই দেশের জন্ম দিয়েছি, তাই শুধু আমরাই ক্ষমতায় থাকব; আর কেউ নয়!'
বিস্ময়করভাবে, ঠিক তেমনটাই দেখলাম ২০২৪-এর গণঅভ্যূত্থানের পর। এই অভ্যূত্থানে যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীরা নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিল, তারাও যেন মনে করল, "আমরাই ফ্যা/সিস্ট হাসিনাকে সরিয়েছি, আমরাই দেশকে 'দ্বিতীয়বার স্বাধীন' করেছি। কাজেই, আমরাই এই দেশের সবকিছুর হর্তাকর্তা! দেশ, সরকার, সবকিছু চলবে আমাদের ইচ্ছাতেই!"
আওয়ামী লীগের সেই ফ্যা/সি*বাদী মনোভাবের সাথে তাদের এই অতি জঘন্য মনোভাবের এত মিল কেন রে ভাই? তারা কি আওয়ামী লীগের থেকে খুব বেশি ভিন্ন? আওয়ামী লীগ দেশ ও দেশের জনগণের শত্রু হলে এরা কেন নয়?
(২)
জুলাই গণঅভ্যূত্থান দেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অংশ, যা না হলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসন থেকে দেশবাসীর মুক্তি মিলত না। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মতোই ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যূত্থানকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করাটা বা একে কাজে লাগিয়ে যা খুশি করাটা কি জায়েজ হয়ে যায়?
আওয়ামী লীগ তাঁর ১৫ বছরের শাসনে যে কাজটা সবচেয়ে নিকৃষ্টতমভাবে করেছিল, সেটা হলো কথা কথায় কথিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র ব্যবহার। আওয়ামী বিরোধীদের তারা কথায় কথায় ‘রাজাকার,’ ‘জামাত-শিবির,’ ‘পাকিস্তানের এজেন্ট’ , ইত্যাদি কত ট্যাগই না দিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবহার করতে করতে তারা এমন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল যে মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ কথাটাই তেতো হয়ে গিয়েছিল। ঠিক সেই কাজটিই কি করছে না বর্তমানে এনসিপি? কথায় কথায় জুলাইয়ের চেতনার কথা তুলছে তারা; দ্বিমত পোষণ করলেই অথবা তাদের দুর্নীতি, মববাজির সমালোচনা করলেই ‘জুলাইয়ের বিরোধী’ বানিয়ে দিচ্ছে তারা। এমনকি কেউ আজীবন আওয়ামী বিরোধী অবস্থানে থাকলেও, স্রেফ এনসিপি বা তাদের সমর্থকদের সাথে না মিললে তাদের কাউকে কাউকে বলা হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর!”
এমনকি গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রধান শক্তি বিএনপিকেও এই এনসিপি ও তাদের প্রমোটার জামাতের অনেকেই ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বা ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বানিয়ে দিচ্ছে। এর চেয়েও ঘৃণ্য কাজ হলো, তাদের বিরোধীদের অনেককেই তারা ট্যাগ দিচ্ছে ‘ভারতের দালাল’, ‘র-এর এজেন্ট’ হিসেবে। যারা সারাজীবন ভারতবিরোধী অবস্থান নিলো, তাদেরকেই এধরনের ট্যাগ দেওয়া কতটা জঘণ্য, ঘৃণ্য ও বিকৃত মানসিকতা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
চেতনা ব্যবসায় কি আওয়ামী লীগের মতোই বাজে উদাহরণ দেখাচ্ছে না এই এনসিপি বা তাদের সমর্থকেরা?
আওয়ামী লীগ চাইত যেনতেনভাবে নির্বাচন করে, কারচুপি বা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে, হত্যা,খুন, দমন-নিপিড়ণ করে ক্ষমতায় থাকতে। তেমনি, রাজনৈতিকভাবে প্রজ্ঞাবান কেউ যদি মনে করে যে এনসিপি ও এর সমর্থকদের ‘পাঁচ বছর, পাঁচ বছর’, ‘নির্বাচন চাই না’ টাইপের কথাবার্তা এবং প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে শত্রুজ্ঞান করাটা তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার একটা অপচেষ্টা ও বিশাল চক্রান্ত, তবে সে কি খুব বেশি ভুল করবে?
বিএনপির সাথে মিলেমিশে নিঃসন্দেহে থাকতে পারত এনসিপি। কেননা, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে নিঃসন্দেহে তারা একে অপরের সহযোদ্ধা। কিন্তু, দেশের জনগণের একটা বিরাট অংশ মনে করে যে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়ে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় ক্ষমতায় যাবার বদলে তারা এখনই বা কিছুদিনের মধ্যেই ক্ষমতায় যেতে চায়; অথবা, এখন তারা যেমন ক্ষমতার একটা অংশ, সেইভাবে ক্ষমতাটাকেই তারা যেমনে পারে যতদিন খুশি দীর্ঘ করতে চায়। তাই তো তারা বিএনপিকেও এখন গোনে না!
এমন মরিয়া, হঠকারী, ঘৃণ্য মনোভাব কি আওয়ামী লীগের রাজনীতিকেই স্মরণ করায় না?