somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগের থেকে কতটুকু আলাদা তারা?

৩০ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তাদের দেখে মনে পড়ে যায় আওয়ামী লীগের চেতনা ব্যবসার কথা

(১)
আওয়ামী লীগ অন্তত সরকারিভাবে হলেও ১৯৭১-সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকায় ছিল। এরপর সেই ভূমিকার কারণে তারা দেখা গেল যে দেশটাকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করত। তারা মনে মনে এই নষ্ট-ভ্রষ্ট ধারণা পোষণ করত যে, "যেহেতু আমরা এই দেশের জন্ম দিয়েছি, তাই শুধু আমরাই ক্ষমতায় থাকব; আর কেউ নয়!'
বিস্ময়করভাবে, ঠিক তেমনটাই দেখলাম ২০২৪-এর গণঅভ্যূত্থানের পর। এই অভ্যূত্থানে যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীরা নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিল, তারাও যেন মনে করল, "আমরাই ফ্যা/সিস্ট হাসিনাকে সরিয়েছি, আমরাই দেশকে 'দ্বিতীয়বার স্বাধীন' করেছি। কাজেই, আমরাই এই দেশের সবকিছুর হর্তাকর্তা! দেশ, সরকার, সবকিছু চলবে আমাদের ইচ্ছাতেই!"
আওয়ামী লীগের সেই ফ্যা/সি*বাদী মনোভাবের সাথে তাদের এই অতি জঘন্য মনোভাবের এত মিল কেন রে ভাই? তারা কি আওয়ামী লীগের থেকে খুব বেশি ভিন্ন? আওয়ামী লীগ দেশ ও দেশের জনগণের শত্রু হলে এরা কেন নয়?

(২)
জুলাই গণঅভ্যূত্থান দেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অংশ, যা না হলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসন থেকে দেশবাসীর মুক্তি মিলত না। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মতোই ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যূত্থানকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করাটা বা একে কাজে লাগিয়ে যা খুশি করাটা কি জায়েজ হয়ে যায়?
আওয়ামী লীগ তাঁর ১৫ বছরের শাসনে যে কাজটা সবচেয়ে নিকৃষ্টতমভাবে করেছিল, সেটা হলো কথা কথায় কথিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র ব্যবহার। আওয়ামী বিরোধীদের তারা কথায় কথায় ‘রাজাকার,’ ‘জামাত-শিবির,’ ‘পাকিস্তানের এজেন্ট’ , ইত্যাদি কত ট্যাগই না দিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবহার করতে করতে তারা এমন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল যে মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ কথাটাই তেতো হয়ে গিয়েছিল। ঠিক সেই কাজটিই কি করছে না বর্তমানে এনসিপি? কথায় কথায় জুলাইয়ের চেতনার কথা তুলছে তারা; দ্বিমত পোষণ করলেই অথবা তাদের দুর্নীতি, মববাজির সমালোচনা করলেই ‘জুলাইয়ের বিরোধী’ বানিয়ে দিচ্ছে তারা। এমনকি কেউ আজীবন আওয়ামী বিরোধী অবস্থানে থাকলেও, স্রেফ এনসিপি বা তাদের সমর্থকদের সাথে না মিললে তাদের কাউকে কাউকে বলা হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর!”
এমনকি গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রধান শক্তি বিএনপিকেও এই এনসিপি ও তাদের প্রমোটার জামাতের অনেকেই ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বা ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বানিয়ে দিচ্ছে। এর চেয়েও ঘৃণ্য কাজ হলো, তাদের বিরোধীদের অনেককেই তারা ট্যাগ দিচ্ছে ‘ভারতের দালাল’, ‘র-এর এজেন্ট’ হিসেবে। যারা সারাজীবন ভারতবিরোধী অবস্থান নিলো, তাদেরকেই এধরনের ট্যাগ দেওয়া কতটা জঘণ্য, ঘৃণ্য ও বিকৃত মানসিকতা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
চেতনা ব্যবসায় কি আওয়ামী লীগের মতোই বাজে উদাহরণ দেখাচ্ছে না এই এনসিপি বা তাদের সমর্থকেরা?
আওয়ামী লীগ চাইত যেনতেনভাবে নির্বাচন করে, কারচুপি বা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে, হত্যা,খুন, দমন-নিপিড়ণ করে ক্ষমতায় থাকতে। তেমনি, রাজনৈতিকভাবে প্রজ্ঞাবান কেউ যদি মনে করে যে এনসিপি ও এর সমর্থকদের ‘পাঁচ বছর, পাঁচ বছর’, ‘নির্বাচন চাই না’ টাইপের কথাবার্তা এবং প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে শত্রুজ্ঞান করাটা তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার একটা অপচেষ্টা ও বিশাল চক্রান্ত, তবে সে কি খুব বেশি ভুল করবে?
বিএনপির সাথে মিলেমিশে নিঃসন্দেহে থাকতে পারত এনসিপি। কেননা, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে নিঃসন্দেহে তারা একে অপরের সহযোদ্ধা। কিন্তু, দেশের জনগণের একটা বিরাট অংশ মনে করে যে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়ে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় ক্ষমতায় যাবার বদলে তারা এখনই বা কিছুদিনের মধ্যেই ক্ষমতায় যেতে চায়; অথবা, এখন তারা যেমন ক্ষমতার একটা অংশ, সেইভাবে ক্ষমতাটাকেই তারা যেমনে পারে যতদিন খুশি দীর্ঘ করতে চায়। তাই তো তারা বিএনপিকেও এখন গোনে না!
এমন মরিয়া, হঠকারী, ঘৃণ্য মনোভাব কি আওয়ামী লীগের রাজনীতিকেই স্মরণ করায় না?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৭
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×