বর্তমান জেনারেশন জেড বা জেন জি নিয়ে আমার ভাবনা -১
জেন জি বা জেনারেশন জেড বর্তমানে বহুল আলোচিত এক টার্ম। বিশেষ করে দেশে জুলাই গণঅভ্যূত্থানের সময় ও এর পরের সময়কালে এই টার্মটি আরো বেশি আলোচিত হয়ে ওঠে, যখন অনেকেই এই গণঅভ্যূত্থানের সফলতার পিছনে এই জেন জির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের ভূমিকাকেই প্রধান নিয়ামক হিসেবে উল্লেখ করেন। দেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্রমাগত স্তূতি করা হয় এই জেনারেশনের। কিন্তু কারা এই জেন জি? জেনারেশন বা প্রজন্ম হিসেবে কতটা শক্তপোক্ত ও সামর্থ্যবান এই জেন জি?
জেন জি বলতে তাদেরই বোঝানো হয় যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২-এর ভিতরে। অর্থাৎ এখনো পর্যত যাদের বয়স ১৩ থেকে ২৮, তারাই জেন জি।
বিভিন্ন বিদেশি জার্নাল ও সমাজবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের মতে, জেন-জি’র কিছু পজিটিভ সাইড যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু নেতিবাচক দিকও…জেনজিরা বলতে গেলে টেকনোলজি নির্ভর এক প্রজন্ম। স্বাধীনচেতা, বেশ উদারমনের, স্মার্ট, চটপটে হয়ে থাকে এরা। কিন্তু অন্যদিকে, ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর হবার কারণে এবং দিনের বড় অংশ এতে মত্ত থাকায় কোনোকিছু নিয়ে খুব গভীরভাবে চিন্ত করার বা সেই চেষ্টা করার সুযোগ পায় না এদের বেশিরভাগই। বই পড়া, খেলাধূলা করার মতো জিনিসে ওদের আগ্রহ দেখা যায় বেজায় কম। এই কারণে ওদের চিন্তার গভীরতা খুব কমই দেখা যায়। এজন্যই অনেকে বলে, জেন-জি ভাবে কম, অ্যাকশনে যায় বেশি। এই কারণে হুটহাট করে আগ্রাসী হয়ে যাওয়া, বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতার মাত্রা এদের ভিতর দেখা যায় খুব বেশি। এরা হয়ে থাকে সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ কারণে সংযমবোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ দেখা যায় কম।
তাহলে তারা কি 'ডার্ক সাইড অব দ্য মুন' বা 'চাঁদের অন্ধকার দিক'??
প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক জার্নাল ইমপেরিয়াম পাবলিকেশন-এ প্রকাশিত এক মেডিকেল প্রবন্ধ অনুযায়ী, টেকনোলজির উপর অতি নির্ভরতা ও প্রজন্ম হিসেবে ধীরস্থির বৈশিষ্ট্যের না হবার কারণে এদের মধ্যে অস্থিরতার মাত্রা দেখা যায় তাদের আগের প্রজন্মের চেয়ে বেশি। অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, মুড সুইংয়ের মতো জিনিসে এদের অনেকেই আক্রান্ত হয়।
তাই, বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশাল সংখ্যায় জড় হয়ে কোনো অঘটন বা মব তৈরি করে ভায়োলেন্স সৃষ্টি করার প্রবণতা এদের অনেকের ভিতরই দেখা যায়। আবার, এদের চিন্তাভাবনার গভীরতা কম থাকায় অনেকেই এদেরকে উসকে দিয়ে, মিসগাইড করে কার্যসিদ্ধি করতে পারে অনেক দুষ্টুচক্রও। ‘হাইপ,’ ‘ভাইরাল,’— এসব জিনিস দিয়ে খুব বেশি প্রভাবিত হয় এই জেনজিরা। কোনো জিনিস হাইপ পেলে বা ভাইরাল হলে দেখা যায় এদের বেশিরভাগই সেটার পিছনে ছোটে। ভালমন্দ বিচার করতে আর যায় না। তারা যেন মনে করেঃ “এই জিনিসের এত্ত হাইপ, এটা তো ভালোই হবে।“
এই প্রবণতা রোধ করতে জেন জি’র ছেলেমেয়েদেরকে আরো বেশি করে সামাজিক হওয়ার ও চিন্তাশীলতার চর্চা করার পরামর্শ দিয়েছেন জেন্ডার বিশেষজ্ঞরা। এজন্য অভিভাবক ও সিনিয়ারদের রয়েছে এদের প্রতি যথাযথ টেক কেয়ার ও গাইডেন্সের দায়িত্ব।