somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডঃ ইউনুস তারেক রহমান বৈঠকঃ কতটুকু নিশ্চয়তা দিলো সুষ্ঠু, নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক উত্তরণের?

১৯ শে জুন, ২০২৫ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তারেক রহমানের সাথে ডঃ ইউনুসের সাম্প্রতিক বৈঠকের ফলাফল নিয়ে বিএনপিসহ দেশের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলগুলোর অনেকেই অনেক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, অনেকেই দারুণ আনন্দিত। অনেকেই, বিশেষ করে যারা বিএনপি করেন, মনে করছেন, 'বিএনপির সাথে ইন্টেরিম সরকারের একটা ইন্টারনাল সমঝোতা হয়ে গেছে; কাজেই আর তেমন চিন্তার কিছু নেই।' তবে, অনেকেই মনে করছেন, বিএনপির সামনে নতুন করে মূলা ঝুলিয়েছে ইউনুস সরকার। আমিও নিঃসন্দেহে এখনো এই বৈঠকের ফলাফলকে এত পজিটিভলি দেখতে পারছি না। এর পিছনে কারণও রয়েছে...

যেদিন বৈঠকটা হলো, সেদিনই দেশের খ্যাতিমান পলিটিক্যাল এনালিস্টদের বক্তব্য বেশ ভালো করে খেয়াল করলাম। এনাদের কয়েকজনের সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে চেনাজানা রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সাথে মেসেজে মত বিনিময়ের চেষ্টা করি সবসময়। ওনারাও ওনাদের রিপ্লাই বা ফিডব্যাক আমাকে জানান। তো দেখলাম, জাহেদ উর রহমান ভাই ও শাহেদ আলম এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছেন। তবে, মাসুদ কামাল ভাই, মঞ্জুরুল আলম পান্না ভাই, জিল্লুর রহমান ভাইয়েরা এটাকে নিয়ে অতটা আশাবাদী বা ইতিবাচক নন। জিল্লুর রহমান তো তাঁর ভিডিও কন্টেন্ট টাইটেলই দিয়েছিলেনঃ "বিএনপি ফাঁদে, তারেক ঝুঁকিতে!'

আসলে এই বৈঠকের শেষে যে যৌথ বিবৃতি পাঠ করা হলো, সেখানে বিবৃতি পাঠের সময় যে চারজন বসেছিলেন, এদের মধ্যে খলিলুর রহমান এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বডি ল্যাংগুয়েজেই বরং বেশ কনফিডেন্ট ও বুদ্ধিদীপ্ত একটা ভাব ছিল। বিএনপির সিনিয়ার নেতা আমির খসরু মাহমুদের বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে মনে হলো, পুরো ব্যাপারটাতেই ওনার একটু হলেও অস্বস্তি ছিল, পুরো বিষয়গুলোতে যেন নিমরাজি তারা।

বিএনপি যার পদত্যাগ চাইছিল বেশ করে, সেই খলিলুর রহমানকে দিয়েই যখন যৌথ বিবৃতি দেওয়ানো হলো, তখন সেটা ইন্টেরমেরই একটা বিশাল কূটনৈতিক বুদ্ধির বিজয় ছিল নিঃসন্দেহে।

দেশের অনেক মানুষ যেমনটা মনে করেন, আমিও তেমনটাই মনে করি যে ডঃ ইউনুস সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চাইবেন না। ডঃ ইউনুস চান বা না চান, তাকে যে একটি বা একাধিক বিশেষ পক্ষ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রাখতে চায়, এটা তো স্পষ্টই। 'পাঁচ বছর পাঁচ বছর,' 'অমুকেই আস্থা...নির্বাচন চাই না' টাইপের অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনগুলো যে বর্তমান ইন্টেরিম বা ডঃ ইউনুসের অজ্ঞাতে বা অমতে হয়েছে বা হচ্ছে, এমন মনে করার কারণ নেই। আর, বর্তমান ইন্টেরিমকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রেখে নিজেদের ফায়দা লুটে নেওয়ার সুযোগ করতে তো কিছু পক্ষ তৎপর- এই কথা অনেকেই জানেন বা বিশ্বাস করেন। কাজেই, দেশের গণতান্ত্রিক ট্রানজিশান সামনে খুব একটা সহজ নাও হতে পারে।

আমার ক্ষুদ্র রাজনৈতিক জ্ঞানে অনেক কিছুই মোটামুটি ভালোভাবে আঁচ করতে পারি। যেমন, ২০২৪-এ আওয়ামী লীগের সেই আমি-ডামি ইলেকশনের কয়েক মাস আগে, জাহেদ উর রহমান ভাইয়ের সাথে আলাপ হচ্ছিল দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। আমি ওনাকে বলেছিলামঃ "ভাই, আমার তো মনে হয় ভারত ও আমেরিকার পররাষ্ট্র পর্যায়ের মিটিংয়ে তো মনে হয় আমেরিকাকে ম্যানেজ করে ফেলেছে। আমেরিকা মনে হয় আর আওয়ামী সরকারের উপর তেমন প্রেসার দেবে না আর।“

উনি, আমার কথাকে খুব একটা সিরিয়াসলি নেননি। নির্বাচনের আগে বানানো তাঁর ভিডিও কন্টেন্টগুলোতেও তিনি এমন সম্ভাবনার উল্লেখ করেননি যে অবৈধ আওয়ামী সরকার এ যাত্রাতেই টিকে যাচ্ছে। বরং, ৭ জানুয়ারির সেই আমি-ডামি’ নির্বাচনের পর এক ভিডিও কন্টেন্টে দেখলাম উনি বলছেন, ‘নির্বাচন তো হলো, কিন্তু টিকবে কয়দিন!’ কিন্তু আসলে আওয়ামী লীগের সেই সরকার কিন্তু নির্বিঘ্নেই টিকে ছিল টানা সাত মাস। তাদের পতনের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছিল না, যদি না কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের গুলি করে মারার ফলে সৃষ্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যূত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হতো। সেই আন্দোলনের সাথে কিন্তু, নির্বাচন, গণতন্ত্র-এসব দাবিতে আন্দোলনের কোনো সংযোগ ছিল না।

যা-ই হোক, ডঃ ইউনুসের সরকা্রের ভিতর যদি যথেষ্ট পরিমাণে সততা ও স্বচ্ছতা দেখা যেত, গণঅভ্যূত্থানের থেকে জন্ম নেওয়া কথিত ছাত্র-তরুণদের দলটাও যদি সততা ও স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে পারত, তাহলে হয়তো আমার মতো ট্রুলি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমর্থককে এতো চিন্তিত হতে হতো না। কিন্তু সেটা তো হয়নি। বাংলাদেশের সামনের গণতান্ত্রিক ট্রাঞ্জিশনের পথ খুব একটা সহজ ও মসৃণ হবে না বলেই আমার ধারণা। তবে আমি এও আশা করব যে আমার এই ধারণা মিথ্যে প্রমাণিত হোক!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৫ রাত ৯:৩২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×