somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নভূক সময়ে স্বপ্নের বিকিকিনি....

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজধানী ঢাকার নাইটেঙ্গেল মোড়। গাড়ীর কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ, দোকানের সাটার পতণের শব্দ ,ধর-ধর,মার-মার, পুলিশের রায়ট কারের আর্তনাদ ছাড়া আর কোন শব্দ শোনা যাচ্ছেনা। কয়েকটা গাড়ি পুড়ে চাই হয়ে যাচ্ছে। বোমার আওয়াজে আর মুহর্মুহু গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে আশ পাশের দালান কোঠা। দুই দল মানুষ লাঠি সোটা আর আগ্নেয়াস্র নিয়ে ছুটাছুটি করছে। একদল জয় বাংলা আরেক দল জিন্দাবাদ ! অন্য একদল মানুষ প্রানভয়ে নেংটি ইঁদুরের মত দৌঁড়াচ্ছে। উর্দি পরা কিছু মানুষও ছুটছে। এরা আইনের লোক !
ভাঙ্গা কাঁচের গুঁড়ো , ব্যানার, ফেষ্টুন, কয়েকটা স্যান্ডেল, ছবির ফ্রেম ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । কিছু ফ্রেমে লেগে আছে মুজিবের ছবি, কিছু ফ্রেমে জিয়ার। এদের একজন বাংলাদেশ নামক কবিতার কবি আরেকজন ৭১ রনাঙ্গনের কবি। এরা দুজনে এক্ষনে একসাথে ভূপাতিত। পুলিশ, মারমুখো জনতা, পলায়নপর নেংটি ইঁদুর সবাই সমানে মুজিব-জিয়ার ছবি মাড়ি্যে যাচ্ছে। এদের কে কাকে ভালবাসে আর কে কাকে ঘৃণা করে বুঝার উপায় নাই।
তিন দিক থেকে তিনটা রাস্তা এসে মিসেছে এখানটায় । ঢাকা শহরের এই রকম জায়গাগুলো ফেরিওয়ালার হাঁকডাক, বাস কন্ডাকটরের ডান-বাম, যাত্রী-হেলপারের বচসা-খিস্তি খেউর, গাড়ির হর্ন,রিক্সার টুংটাং,ট্রাফিক পুলিশের হুইসেল, এম্বুলেন্সের আর্তনাদ ইত্যাকার নানা শব্দে ব্যাতিব্যাস্ত থাকে। রিক্সা, ঠেলা, ট্যাক্সি, বাস আর মানুষের গিট্টু লেগে থাকে সারাদিন।কিন্তু এখন সেখানে যুদ্ধের ডামাঢোল।

তোতা মিয়া এতক্ষন হোটেল বিজয় নগরের সামনে ফুটপাতে টং দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ঢাকা শহরে তোতা মিয়ার কিছুই চেনা নাই। লামনিরহাটের হাতিবান্ধা থেকে নাইটকোচে চড়ে আজ সকালেই সে প্রথমবারের মত ঢাকা শহরে এসেছে। জীবনের চাকা ঘুরাতে দুবাই যাবে । কাল সকালেই তার আকাশে উড়ার কথা। আদমের লোক বিজয় নগরে হোটেলে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়ে গেছে। কাল সকালে এসে নিয়ে যাবে। সারাদিন ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু গ্রামের ছেলে বলে কথা , সারাদিন ঘুমিয়ে থাকতে পারেনা সে। তাই বিকেলের দিকে হোটেল কক্ষ ছেড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে পান দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ঢাকা শহরে কত মানুষ, কত গাড়িঘোড়া, কত বড় বড় দালান কোঠা এসব দেখতে তার ভালই লাগছিল।
টং দোকানটায় দশ কি বার বছরের একটা ছেলে টু টাং শব্দে চা বানিয়ে নানা রকম মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে। একজন মাঝ বয়সী মানুষ চা খেয়ে একশত টাকার একটা নোট ছেলেটার হাতে দিয়ে ফেরৎ টাকার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা টাকাটায় আঙ্গুল ঘসে কি যেন পরখ করে।
- কিরে কি দেখস?
- না টাকাটা জাল কিনা দেখলাম। কাউরেতো আজকাল বিশ্বাস করা যায়না মামা।
- তুই জাল টাকা চিনস?
- হ' চিনি ! চিনুম না ক্যান? ঢাকা শহরে থাকতে হলে কি আবুল হইলে চলে !

এসব কথোপকথের মধ্যে তোতা হঠাৎ খেয়াল করে আদুরে কয়েকটা মেয়ে সেজে গুঁজে দেয়ালে ঠেস দিয়ে কিছু দুর পর পর দাঁড়িয়ে আছে। যেন কারো জন্য অধীর অপেক্ষায় সময় পার করছে।। সবচেয়ে কাছের মেয়েটি তোতার দিকে অপলক চেয়ে আছে এবং গাড় লাল রঙয়ের লিপিষ্টিক মাখা ঠোঁট প্রসারিত করে এক অদ্বুত ভঙ্গিমায় হাসছে। তোতার এই বিষয়টা খুব ভালো লাগে। সে হারিয়ে যায় কল্পনায়। হনুফার কথা মনে পড়ে তার। পূর্ণ যৌবনে হনুফা কে সে ভালবাসে বিয়ে করেছিল। এমন করেই হাসতো হনুফা। কিন্তু তোতার গরিবের সংসারে এসে তার সব হাসি হারিয়ে গেছে। হাসবে কি করে হত দরিদ্র তোতা যে তাকে কোনদিন ভাল একটা শাড়ি, একটা স্নো, একটা লিপষ্টিক এনে দিতে পারেনি। জীবনের সব ব্যার্থতা মুছে দিতেই তো ভিটে বাড়ি বন্ধক রেখে, তার বিনিময়ে কাল সকালে সে আকাশে উড়বে।চলে যাবে দুর দেশে। গতরে খেটে টাকা কামাই করবে। ফিরিয়ে আনবে হনুফার মুখের হারানো হাসি... তার চোখে মুখে স্বপ্নের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে,ঠোঁটের কোনে ধরা দেয় এক চিলতে নরম হাসি। শেষ বিকেলের আলোয় সে হাসি চিক চিক করে উঠে। ঠিক তখনই বেধে যায় বিজয় নগরের যুদ্ধ। আর তোতা মিয়া, খদ্দের প্রত্যাশী মেয়েটি, চা দোকানের চালাক ছেলেটি,আর কতগুলো মানুষ নেংটি ইদুঁর হয়ে দৌঁড়াতে শুরু করে....



মিনিট ত্রিশেক পরে আবার সরব হয়ে উঠেছে বিজয় নগর। একটা, দুটা করে দোকানের সাটার উঠানোর শব্দ শেষ বিকেলের মৌনতা উপেক্ষা করে কানে এসে লাগছে। যে মানুষগুলো পালিয়ে বেঁচেছিল তারা আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে। বাদামওয়ালা, আমড়াওয়ালা, চাওয়ালা আবার হাঁক ডাক শুরু করে দিয়েছে। একটু আগে বিজয় নগরের যুদ্ধে কার বিজয় হয়েছে তা নিয়ে কারো মথা ব্যাথা নেই। যেন কিছুই হয়নি। চায়ের দোকানগুলোতে সরব হয়ে উঠেছে টেলিভিশনের পর্দা। সোনালী ব-দ্বীপের কোথাও স্বপ্নের ফানুস উড়ানোর মেলা বসেছে। সেখানে উচ্চস্বরে স্বপ্ন ফেরী করে ফিরছেন দুজন চিরচেনা ফেরীওয়ালা। হাজার হাজার তোতা আর হনুফা সেখানে মন্ত্রমুগ্ধের মত সব শুনছে আর করতালি দিয়ে মুখর করে তুলছে চারপাশ।

শুধু কাকরাইল মোড়ে পিচঢালা রাজপথে উপুড় হয়ে পড়ে আছে একজন তোতা। নিথর ও রক্তেভেজা। পুলিশ, সাংবাদিক ঘিরে আছে বেওয়ারিশ লাশ। ক্লিক! ক্লিক!! ক্লিক!!! ক্যামেরার ফ্ল্যাশ পড়ছে বিরামহীন। কাল সকালে সবকটি খবরের কাগজে তোতার ছবি ছাপাবে। বিখ্যাত হয়ে যাবে তোতা ! স্বপ্নের হাটে এই যে অপূর্ব বলিদান....
বিকেল গত হয়ে সন্ধ্যার আঁধার নামতে শুরু করেছে। সাদা রঙের একটা এম্বুল্যান্স তোতার লাশ পেটে নিয়ে আর্তনাদ করতে করতে ছুটে চলে গেল লাশ কাটা ঘরের দিকে। সে আর্তনাদ যেন অনাগত সকালের হনুফা নামের এক গ্রাম্য বধুর বুকফাটা কান্নারই আগাম বার্তা.....


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩০
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×