বিশ বছরের গন্ডিতে এসে জীবনে কে কত ব্যর্থ বা কতটা সফল এইসব কিছু হয়তো বা যাচাই করা যায়না, কিন্তু আমার খুব হিংসে হয় জানো যখন চারপাশে খুব সুখী কিছু কাপল দেখি, যারা হাজার ঝগড়াঝাটি, মারমারি, কাটাকাটির পরেও বছরের পর বছর এনিভারসারি সেলিব্রেট করতে থাকে। আমার খুব ইচ্ছে হতো আমাদের এনিভারসারির দিনটা আমি সন্ধ্যার পরেই সেলিব্রেট করবো বলে, এর জন্য মা কে কি এক্সকিউজ দিবো এর-ও চার পাঁচ রকমের প্ল্যানিং স্যানিং মনে মনে করে ফেলতাম মাঝে মাঝে! সেদিন লাল রঙের জর্জেট শাড়ি পড়বো, চুলগুলো খুলে দিবো, কালো রং এর ছোট্ট টিপ পড়বো আর পেছন থেকে হঠাত করে এসে তোমার চোখ দুটো চেপে ধরবো। তুমি বিরক্তি নিয়ে বলবা, “এত দেরী করে কেউ??” ঐ দিন যদি জোছনা রাত হয় তাহলে আমরা অটোতে করে হাইওয়ে রোডে বহুদূর যাবো। আমি ওইদিন বকবক করে তোমাকে বোর করবোনা প্রমিস, ওইদিন আমার গান শোনার জন্য তোমাকে বার বার অনুরোধ করতেও হবেনা। আমি নিজে থেকেই গান করবো!! আমরা কোন দামী রেস্টুরেন্টে যাবোনা, ক্যান্ডল লাইট ডিনার করবোনা। আমরা হাতে হাত রেখে জোছনা দিয়ে আমাদের ফার্স্ট এনিভারসারি সেলিব্রেট করবো। জানো আমার লাল রং এর জর্জেট শাড়ি নেই। কিন্তু সেদিন ছোটকাকির লাল কালো শাড়িটা খুব মনে ধরে যায়। এনিভারসারির দুই দিন আগে বাড়ি গিয়ে শাড়িটা নিয়ে আসবো এই প্ল্যানিং ও করে রাখছিলাম।
এসব শুনে তুমি হয়তো বা বলবে, বিচ্ছেদ তো আমি-ই করলাম এখন এসব শুনাচ্ছি কেন তোমাকে? আচ্ছা বিচ্ছেদের পর তুমি কি সম্পর্ক জোড়া লাগাতে চেয়েছিলে? একবার-ও? তুমি জানো আমি অপেক্ষা করেছিলাম? তুমি যা করেছো সে সব কিছুর পরেও? একবার যদি আমার কাছে এসে বলতে সেই প্রথমবারের মত, “তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়। তোমাকে ছাড়া আমার কোন অস্তিত্ব নাই। আমার দোষ ছিল, আমি মানছি, মাফ করে দাও আমাকে, এখন প্লিজ ফিরে আসো!!” শুধু একগুচ্ছ শব্দের অপেক্ষা ছিল দেবাশীষ ! তুমি বলোনি! তোমার কাছে তোমার সন্দেহদগ্ধ মানসিকতা, অর্থহীন ক্রোধ, নিজের দোষের প্রতি অন্ধত্ব আর অসুস্থ জীবনযাপনের থেকে আমাকে বিসর্জন দেয়া শ্রেয় মনে হয়েছিল। তাই তুমি সম্পর্ক জোড়া লাগাতে চাওনাই। কিন্তু বিশ্বাস করো কি থেকে আমার মনে হয়েছিল তুমি ফিরে আসবে! একটা সময় আমার জন্য কম পাগলামো করোনাই তুমি। এক সপ্তাহ আগেও ঝগড়ার সময় তোমার ভয়েস ক্র্যাক করেছিলো, অনেক কষ্টে কান্না চেপে গিয়েছিলে আমার মনে আছে! আর এক সপ্তাহ পরে আমরা আজ কোথায় আছি দেখো!! এক সপ্তাহ নয় এক মাস হতে চলেছে এখন আজ আমি এই অর্থহীন কিছু টাইপিং এর ছলে তোমার কল্পনার আশ্রয় নিয়ে আছি।
গত বৃহস্পতিবারে ভার্সিটির গেইটের সামনে তোমার দিকে চোখ পড়ে যায়, তুমি ঐ আকাশি শার্ট টা পড়েছিলে! দুই সেকেন্ড তাকায় ছিলাম তোমার দিকে বোধ হয়, ঐ দুই সেকেন্ডে গত পাঁচমাসের ফ্ল্যাশব্যাক চোখের সামনে দিয়ে ঝলকানি দিয়ে গেলো বলে মনে হয়েছিল।
ফেইসবুকে তোমার প্রোফাইলে মাঝে মাঝে ঢুকি, বাহ বেশ দিব্যি আছো! দুই তিনটা কোচিং এ ক্লাস নিচ্ছো, ঘুরে বেড়াচ্ছো বন্ধুদের সাথে, আবার চেইন স্মোকারের মত স্মোকিং শুরু করছো। লিভার, ফুসফুসের প্রতি কি নির্মম অত্যাচার!! আচ্ছা দেবাশিষ তোমার কি একবারের জন্যেও মনে হয়নাই তুমি ভুল ছিলে? তুমি যা কিছু করছো তার আগা গোড়া সবকিছু ভুল ছিল? আমার দোষ ছিল আমি মানি কিন্তু তুমি যা করে গেছো সেইসবকিছু??
তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে ইদানিং বেশ কথা হয়, ওকেও এমনই ইমোশনগুলো বুক চিড়ে চিড়ে দেখাতে তাই না? এই কদিন হলো আমি জানতে পারলাম আমার জন্য ওকে ছেড়ে দিয়েছিলে তুমি। এ কথা জানলে তোমাকে ভালবাসার রুচিই হতোনা আমার।
আমার নিজেকে নিয়ে আমার নিজের অনেক গর্ব জানো? আমার সম্ভ্রম, আমার আত্মমর্যাদা আমার কাছে অনেক মূল্যবান! যেদিন তুমি আমার গায়ে হাত তুলছিলে সেদিন আমার আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হয়নি, ক্ষুন্ন সেদিন হয়েছিল যেদিন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার ভালবাসতে শুরু করছিলাম। আর এই যে প্রতিটা শব্দ আমি যখন টাইপ করছি আর প্রতিটা মুহুর্ত যখন তোমার কথা ভাবছি আমার সম্ভ্রম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তোমার এক্স তোমাকে খুব সস্তা গণ্য করে, আমাকে বললো তোমার ইমোশনগুলোও সস্তা, আসতেও সময় নেয়না, যেতেও সময় নেয়না। কিন্তু এই সস্তা ইমোশনগুলোকেই যত্ন করে বুকের ভেতর রেখে দিতাম। কেন জানো? কারন আমার ইমোশনগুলো তোমার কাছে ছিল বলে। ভেবোনা আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো বা স্বপ্নগুলোকে পরিণতি দিতে চাই বলে তোমাকে ফিরে আসতে দিবো! আমার গর্বকে ক্ষুন্ন করে হলেও এই যে আবেগের লালন করছি, কারণ আমার ইমোশন তোমার ইমোশনের মতো সস্তা না। পাঁচ মাস অনেক কম সময় হলেও ভালবাসাগুলো অনেক দামী আমার কাছে। তোমার জন্য নয়, আমার নিজের জন্য। আমি তোমাকে ভালবেসেছিলাম বলে। আর আমার আবেগের চলে যেতেও অনেক সময় লাগবে বলে, অনেকটা বেশি সময় লাগবে!
মনে আছে সরকারী কলেজের বেঞ্চে বসে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমাকে “ I love you” বলেছিলে? ইশ! চশমার পেছনে তোমার অসহায় দুটি চোখে সে কি আকুতি!!! যেন আমি তোমার হয়ে যাই? আমি প্রাণপনে ভালবাসি দেবাশীষ আমি প্রাণপনে ভালবাসি তোমার ঐ অসহায় দুটি চোখের চাহনিকে। আমি ছাড়া আর অন্য কেউ নাই, আমার দিকে তাকালে তুমি স্বর্গ দেখতে পাও, আমাকে কতটা চাও আর কতটা ভালবাসো তুমি মুখ ফুটে না বললেও তোমার ঐ দুই চোখের চাহনিই আমাকে বলে দিতো। আমি খুব মিস করি তোমার ঐ চোখদুটোকে।
সেই চোখদুটির দিকে তাকিয়ে আমার মনে হয়েছিল, এই চোখগুলোতে অশ্রু ঝড়িয়ে আমি কোনদিন চলে যাবোনা। আমি পারবোই না অমন নিষ্পাপ একটা মানুষকে কষ্ট দিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে। আমি বলেছিলাম, আমি তোমার পর আর কারো সাথে অন্তত পক্ষে প্রেম আর কোনদিন করতে পারবোনা। আজ কি জঘন্য ভাবে আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে বলো। তারপরেও আমি আমার ঐ শপথ রেখে দিয়েছি। কতজন তোমার পরে আমার পাশে আসতে চেয়েছিল, কাউকে আসতে দেইনাই। না তোমার জন্য নয়। আমার জন্য। আমি তোমার মত আমার ভালবাসাকে সস্তা হইতে দিবোনা। তুমি যেমনই হও না কেন তোমাকে ভালবাসছিলাম। এটা চরম সত্যি, ভালবাসিও। আর আমার ভালবাসাও আমার কাছে গর্ব করার বিষয়। হেনতেন বিষয় না যে আজ ব্রেক আপ হইছে কাল ভালো কেউ আসলে তার হাত ধরে চলে যাবো। এমনটা হয়না দেবাশীষ। তুমি তোমার ভালবাসাকে সম্মান করলে এমনটা করতে পারোনা। আমি তোমাকে আমার ভেতরে রেখে দিবো। আমার মতCো করে ভালবেসে যাবো। তোমাকে কCোনদিন বলবোও না। কারন এই ভালবাসা পাওয়ার মত যোগ্যতা তোমার নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৬