somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুস্কাইয়া ব্লুদা-১

২৮ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন বিষয়বস্তুর বেশী গভীরে আমার ঢোকার যোগ্যতাও নেই ঢোকার চেষ্টাও করিনা। সেই কারনেই কোন বিশ্লষনধর্মী বা গবেষনা ধর্মী লেখালেখি সবসময় এড়িয়ে চলি।একজন বিদেশী ছাত্র হিসেবে যখন একদম অচেনা অজানা শহর মস্কো পৌছুলাম তখন ভুলেও একবার মাথায় আসেনি আমি কোনদিন লেখালেখির সাথে জড়িয়ে পড়ব।
তখন একবারও এইরকম মনে হলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙ্গে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলোকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে-তাদের সামাজিকতা রাজনীতি পারিবারিক মুল্যবোধ আর মানসিকতার আরো গভীরে প্রবেশকরার চেষ্টা করতাম।
বহু জাতি ভাষা আর সংস্কৃতির সমষ্ঠি নেয়ে গড়ে উঠা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে বসে কোন একটা বিশেষ জাতি সন্মন্ধে জানা আসলেই দুরুহ।পরাশুনা ভ্রমন আরো বিশেষ কিছু কারনে রাশিয়া উইক্রাইন আর মলদোভিয়ার বেশ কিছু মফস্বল আর গ্রামে গিয়ে সাধারন মানুষের সাথে মেশার সৌভাগ্য হয়েছে।আমার সাদামাটা চেখো দেখা সেইসব সাধারন মানুষদের ঐতিহ্য আচার সংস্কৃতি আর মানসিকতা নিয়ে ব্লগের পাঠকদের জন্য অতি সাধারন ভাবে( ভাষাগত ও সুন্দর শব্দশৈলী রচনায় আমার সীমাবদ্ধতার জন্য অসাধারন ভাবে লেখা আমার সাধ্য নয়) উপস্থাপন করছি আমার এই লেখাটা।তবে ভাষাগত সমস্যা,বয়স আর সল্প সময় অবস্থানের কারনে অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় হয়তো আমার নজরেই আসেনি।আমার রাশিয়া ভ্রমন অনেকটা কুয়োর ব্যাঙের সুমুদ্র দর্শনের মত। রাশিয়াকে যারা গভীরভাবে জেনেছেন দেখেছেন তাদের অনেকের কাছেই হয়ত লেখাটা পড়ে আমার জ্ঞানের বহর দেখে মনক্ষুন্ন হতে পারেন। সেইজন্য তাদের কাছে লেখার শুরুতেই কড়জোরে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি-আপনারা যারা আমার থেকে বেশী জানেন তারা দয়াকরে ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দিলে কৃতার্থ হব।

রাশিয়ার মুদ্রার নাম কমবেশী আমরা সবাই জানি। রুবল যার বহুবচন রুবলিয়া। একের অধিক মুদ্রা হলে বলা হয় রুবলিয়া।
পেরেস্ত্রোইকার পরে দেশটা যখন তের খন্ডে ভাগ হয়ে গেল তখন স্বাধীন প্রজাতন্ত্রগুলো পড়ল মহা ঝামেলায়! প্রথম বছরখানেক তারা বাধ্য হয়ে রাশিয়ান সেই রুবলগুলোই ব্যাবহার করত-কিন্তু স্বাধীন দেশ বলে কথা- নিজস্ব মুদ্রা না থাকলে ইজ্জত থাকে?কিন্তু মুদ্রা ছাপাবে কোথায়? কারো যে সিকিউরিটি প্রেস বা টাকশাল নেই!বিদেশী কারেন্সীর সাথে দেশীয় মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারন ,মুদ্রার নতুন নাম,কাগজ নকশা সবকিছু মিলিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলল!
আমি মুদ্রা বিশেষজ্ঞ নই তাই আরো কিছু ব্যাপার ছিল যে কারনে কিছু কিছু স্বাধীন দেশ বাধ্য হয়ে কিংবা জোসে অতি সাধারন কাগজের দুইপাশে রঙ্গিন ছাপ দিয়ে মুদ্রার বিকল্প কুপন নাম দিয়ে বের করল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারী না থাকায় সরকার ইচ্ছেমত কুপন ছাপাল-রাস্তাঘাটে কুপনে কুপনে সয়লাব! পন্যমুল্য নির্ধারন করার কেউ নেই, রুবলের সাথে কুপনের বিনিময় মুল্য একেদিন একেক রকম! ঘন্টার ব্যাবধানে সব পাল্টে যাচ্ছে। বিক্রেতারা কুপন দেখলেই নাক সিটকায়। তারা কুপন থেকে রুবলের প্রতিই তাদের আগ্রহ যেন বেশী!সেই টালমাটাল সময়ের কোন একদিন মস্কো থেকে মালদোভিয়ায় যাবার পথে কিয়েভের স্টেশনে এইরকম তিনহাজার কুপন দিয়ে আমি মাত্র একবোতল কোক কিনেছিলাম!
তৎকালিন রাশিয়ার মুদ্রাস্ফিতি নিয়ে আমার একটা ব্যক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলি;
প্রথম যখন রাশিয়ায় যাই তখন ১ডলারের বিনিময় মুল্য পেতাম কমবেশী আশি টাকা। প্রথম মাস ছয়েক এমন স্থিতি অবস্থা বজায় ছিল। আচমকা মুদ্রা বাজার কেমন যেন টালমাটাল হয়ে উঠল। ডলারের বিপরিতে রুবলের মান কমতে থাকল। একমাসে সেটা গিয়ে ঠেকল আড়াইশ রুবল-এ। তারপর আবার কিছুদিন ঝিম মেরে থাকল। আমাদের আমাদের কয়েকজন বড় মাপের মুদ্রা বিশেষজ্ঞ(!)ক্লাসমেট পরামর্শ দিল এখনই সময় ডলার বেচে রুবল কিনে রাখা- কদিন বাদে কনফার্ম দাম পড়ে যাবে। তবে পুলাপান সবাই, হাতের অল্প কিছু ডলার খুইয়ে কপর্দকহীন হবার রিস্ক নেয় না। কমবেশী সবাই-ই কাছে থাকা ডলারের একটা অংশ বেচে দিয়ে রুবল করে ব্যাংকে রেখে দিল।
…মাস তিনেক বাদের অবস্থা; আমার আড়াইশ ডলারের বিনিময়ে কেনা রুবলের মান নেমে গিয়ে বিনিময় মুল্য পচিশ ডলারে এসে ঠেকেছিল। সেই টাকা মনের দুঃখে আজ অব্দি উঠাইনি। রাশিয়ার তাম্বুভ নামের এক শহরের সরকারী ব্যাংকে সুদে আসলে বাড়ছে। সপ্ন দেখি কোন একদিন হয়ত সেই টাকা আড়াইশ ডলারের সমান হবে!

ইতিহাস থেকে: কুপন(যার অফিসিয়াল নাম ‘কার্ব ভানেত’) উক্রাইনান ইতিহাসে মুদ্রিত তৃতিয় কাগজের মুদ্রা।প্রথমবার মুদ্রিত হয় ১৮৯১-১৯২০ সালে। দ্বীতিয়বার মুদ্রিত হয় দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ১৯৪২-১৯৪৫ সালে। আর তৃতীয়বার মুদ্রিত হয় ১০ই জানুয়ারী ১৯৯২ সালে। যা ১ কুপন থেকে শুরু করে দশলক্ষ কুপনের নোট পর্যন্ত বাজারে ছাড়া হয়েছিল। কয়েক বছর বাদে এর নাম ও মুল্যমান পরিবর্তিত হয়ে ১৯৯৬ সালে ‘রিভনিয়া’ নামে নতুন মুদ্রিত নোট বাজারে ছাড়া হয়।
১৯৯৬ সালের ২রা সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ই সেপ্টেম্বরের জন্য মাত্র পনের দিনের জন্য রিভনিয়ার পাশাপাশি কুপনের প্রচলন ছিল বাজারে তারপর সব কুপন বাতিল করা হয়। উল্লেখ্য তখন মুদ্রাস্ফিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে এক লক্ষ কুপনের মান মাত্র ১ রিভনিয়ায় রুপান্তরিত হয়!
*উপরের ১০০ কুপনের নোটখানা দীর্ঘ উনিশ বছর আমার কাছে সযত্নে রাখা আছে।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২১ রাত ১১:০৩
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×