১ ডলারে আশি রুবল! খুব বেশী টাকা কি? জানতে হলে আসুন আমরা একটু ঘুরে আসি পেরেস্ত্রোইকা পরবর্তী রাশিয়ায়।
টাইম মেশিনে চড়ে গিয়েছিলাম আমরা রাশিয়ায়। ঠিক যেন শায়েস্তা খানের আমল বিরাজ করছিল তখন।
দশখানা ডিমের দাম ছিল ছত্রিশ কোপেক(!) তার মানে আশি রুবলে আট হাজার কোপেক! কতগুলি ডিম মিলবে?
এক ডলারে শ’খানেক বোতল বিয়ার ,পচিশ বোতল ভদকা, কিংবা দশ বোতল শ্যাম্পেন কেনা যেত!
ভাবুন একবার কোথায় ছিলাম?
আমাদের ডিপার্টমেন্ড ডিনের বেতন ছিল নব্বুই রুবল- মানে দেড় ডলারেরও কম! সাথে অবশ্য সরকারের তরফ থেকে কিছু ‘তালোন’ বা রেশন দেয়া হত(কম্যুনিষ্ট শাসনামলের সব বিলি ব্যাবস্থা তখনো বিদ্যমান ছিল)।সেই রেশন আমরা মানে ছাত্ররাও পেতাম। কয়েক কেজি চিনি,ময়দা,তেল,মাখন তার সাথে আবার কয়েক বোতল ভদকাও!আমরা অবশ্য স্টাইপেনের পয়সাটা পকেটে রেখে ‘তালোন’ সব দিয়ে দিতাম ‘আখরান’ বা হোস্টেলের গার্ডদের।
আমাদের ক্যান্টিনের মাসিক খাবারের ফি ছিল মাত্র পচিশ রুবল(সেটা দিতেও অবশ্য একসময় কষ্ট হত- কেননা টাকার মায়ায় আমাদের ততদিনে পেয়ে বসেছে।)
খাবারের মেন্যু ছিল; সকালে বাতোন’(সাদা পাউরুটি) আর খেলেব’(আমরা বলতাম কালা রুটি- মুলত যব দিয়ে তৈরি একধরনের কালচে পাউরুটি,স্বাদ একটু অন্যরকম)।সাথে এক প্লেট টাটকা ছানা,শ’খানেক গ্রাম বাটার,চিনি আর ইচ্ছে মত চা কফি।
দুপুরে দারুন স্বাদের ট্রাডিশনাল স্যুপ(আলু,মাংশ আর ডাল দিয়ে রান্না করা- আমরা চারজনে বড় এক গামলা নিমেষে সাফ করে ফেলতাম)সাথে গমের ভাত ও কাটলেট কিংবা মুরগী ফ্রাই। আর যতখুশী জুস।
বিকেল পাচটা থেকে ছ’টার মধ্যে ডিনার; কাশা(বিশেষ এক ধরনের ফিরনি বা যাউ) সাথে গাজর টম্যাটো আর শসার ফ্রেস সালাত আর কফি জুস ইচ্ছে মত।
প্রথম ক’দিন অবশ্য রাতে কষ্ট হত ভীষন- পেটে পাথর বেধে থাকার মত অবস্থা ছিল। পরে হোস্টেলে ডিম সেদ্ধ, ওয়েফার(আঃ কি দারুন স্বাদের ওয়েফার- শুধু খেতেই ইচ্ছে করত) বিস্কুট এনে রেখে দিতাম। একসময় নিজেরা রান্না করেই খাওয়া শুরু করলাম।
মাঝারি মানের হোটেলে গিয়ে জনা আস্টেক বন্ধু মিলে ভুরিভোজ করলেও দশ রুবলিয়া বিল হত না!
পচিশ ডলারে একটা রঙ্গিন টিভি পাওয়া যেত! আর বলার দরকার আছে? এখন মনে হচ্ছে না আশি রুবলে অনেক টাকা?
সেবারই অবশ্য একবছরে চারবার জন্মদিন পালন করেছিলাম। কি করব পয়সা খরচ করে পার্টি দিতে মন চাইত। রাশিয়ানরা হকচকিয়ে যেত আমাদের অনুষ্ঠানের জৌলুস দেখে!আহাহা দশ ডলারের এক পার্টি ছিল সেইরকম জাকজমক!
ফুটনোটঃ ১৯৬১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে ১ রুবল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০০ রুবলের নোট বাজারে ছাড়া হয়। সেটা চলতে থাকে সুদীর্ঘ ত্রিশ বছরাধিকাল। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে একশ রুবলের নোটের পাশাপাশি ২০০,৫০০,১০০০ রুবলের নোট বাজারে ছাড়ে যেটর অংক বাড়তে বাড়তে ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ পাচ লক্ষ রুবলের কাগজের নোট বাজারে আসে। ১৯৯৮ সালে বাজারে আসে নতুন নোট যেটা পুরনো নোটের তিন শুন্য কমে গিয়ে ১০০০ রুবলের সমান মুল্যমান এক রুবলের নোট বাজারে আসে যেটা আজ অব্দি চলছে। এখন (অক্টোবর-২০১১)এক ডলারে পাওয়া যায় প্রায় ত্রিশ রুবল। তার মানে আমার সেই সময়কার পুরনো মুদ্রার হিসেব করলে ত্রিশ হাজার রুবল প্রায়!
*হায় হায় আমি যে আড়াইশ ডলার রুবলে কনভার্ট করে ব্যাংকে রেখেছিলাম তার কি অবস্থা?
অনেক হিসাব কিতাব করে দেখলাম দীর্ঘ উনিশ বছরে সেটা মাত্র ষোল ডলারে এসে ঠেকেছে। তবে বাৎসরিক পনের শতাংশ হারে যদি সুদ পাওয়া যাত আশা করা যায় বছর বিশেক বাদে আসল টাকাটা ফিরেও পেতে পারি!সব মিলিয়ে উনচল্লিশ বছর… মন্দ না!!তবে তদ্দিন যদি সেই ব্যাংক লোপাট হয়ে না যায়!(রিপোস্ট)
চলবে...
আগের পর্ব Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫৩