somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুস্কাইয়া ব্লুদা-২

২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ ডলারে আশি রুবল! খুব বেশী টাকা কি? জানতে হলে আসুন আমরা একটু ঘুরে আসি পেরেস্ত্রোইকা পরবর্তী রাশিয়ায়।
টাইম মেশিনে চড়ে গিয়েছিলাম আমরা রাশিয়ায়। ঠিক যেন শায়েস্তা খানের আমল বিরাজ করছিল তখন।
দশখানা ডিমের দাম ছিল ছত্রিশ কোপেক(!) তার মানে আশি রুবলে আট হাজার কোপেক! কতগুলি ডিম মিলবে?
এক ডলারে শ’খানেক বোতল বিয়ার ,পচিশ বোতল ভদকা, কিংবা দশ বোতল শ্যাম্পেন কেনা যেত!
ভাবুন একবার কোথায় ছিলাম?
আমাদের ডিপার্টমেন্ড ডিনের বেতন ছিল নব্বুই রুবল- মানে দেড় ডলারেরও কম! সাথে অবশ্য সরকারের তরফ থেকে কিছু ‘তালোন’ বা রেশন দেয়া হত(কম্যুনিষ্ট শাসনামলের সব বিলি ব্যাবস্থা তখনো বিদ্যমান ছিল)।সেই রেশন আমরা মানে ছাত্ররাও পেতাম। কয়েক কেজি চিনি,ময়দা,তেল,মাখন তার সাথে আবার কয়েক বোতল ভদকাও!আমরা অবশ্য স্টাইপেনের পয়সাটা পকেটে রেখে ‘তালোন’ সব দিয়ে দিতাম ‘আখরান’ বা হোস্টেলের গার্ডদের।
আমাদের ক্যান্টিনের মাসিক খাবারের ফি ছিল মাত্র পচিশ রুবল(সেটা দিতেও অবশ্য একসময় কষ্ট হত- কেননা টাকার মায়ায় আমাদের ততদিনে পেয়ে বসেছে।)
খাবারের মেন্যু ছিল; সকালে বাতোন’(সাদা পাউরুটি) আর খেলেব’(আমরা বলতাম কালা রুটি- মুলত যব দিয়ে তৈরি একধরনের কালচে পাউরুটি,স্বাদ একটু অন্যরকম)।সাথে এক প্লেট টাটকা ছানা,শ’খানেক গ্রাম বাটার,চিনি আর ইচ্ছে মত চা কফি।
দুপুরে দারুন স্বাদের ট্রাডিশনাল স্যুপ(আলু,মাংশ আর ডাল দিয়ে রান্না করা- আমরা চারজনে বড় এক গামলা নিমেষে সাফ করে ফেলতাম)সাথে গমের ভাত ও কাটলেট কিংবা মুরগী ফ্রাই। আর যতখুশী জুস।
বিকেল পাচটা থেকে ছ’টার মধ্যে ডিনার; কাশা(বিশেষ এক ধরনের ফিরনি বা যাউ) সাথে গাজর টম্যাটো আর শসার ফ্রেস সালাত আর কফি জুস ইচ্ছে মত।
প্রথম ক’দিন অবশ্য রাতে কষ্ট হত ভীষন- পেটে পাথর বেধে থাকার মত অবস্থা ছিল। পরে হোস্টেলে ডিম সেদ্ধ, ওয়েফার(আঃ কি দারুন স্বাদের ওয়েফার- শুধু খেতেই ইচ্ছে করত) বিস্কুট এনে রেখে দিতাম। একসময় নিজেরা রান্না করেই খাওয়া শুরু করলাম।
মাঝারি মানের হোটেলে গিয়ে জনা আস্টেক বন্ধু মিলে ভুরিভোজ করলেও দশ রুবলিয়া বিল হত না!
পচিশ ডলারে একটা রঙ্গিন টিভি পাওয়া যেত! আর বলার দরকার আছে? এখন মনে হচ্ছে না আশি রুবলে অনেক টাকা?
সেবারই অবশ্য একবছরে চারবার জন্মদিন পালন করেছিলাম। কি করব পয়সা খরচ করে পার্টি দিতে মন চাইত। রাশিয়ানরা হকচকিয়ে যেত আমাদের অনুষ্ঠানের জৌলুস দেখে!আহাহা দশ ডলারের এক পার্টি ছিল সেইরকম জাকজমক!
ফুটনোটঃ ১৯৬১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে ১ রুবল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০০ রুবলের নোট বাজারে ছাড়া হয়। সেটা চলতে থাকে সুদীর্ঘ ত্রিশ বছরাধিকাল। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে একশ রুবলের নোটের পাশাপাশি ২০০,৫০০,১০০০ রুবলের নোট বাজারে ছাড়ে যেটর অংক বাড়তে বাড়তে ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ পাচ লক্ষ রুবলের কাগজের নোট বাজারে আসে। ১৯৯৮ সালে বাজারে আসে নতুন নোট যেটা পুরনো নোটের তিন শুন্য কমে গিয়ে ১০০০ রুবলের সমান মুল্যমান এক রুবলের নোট বাজারে আসে যেটা আজ অব্দি চলছে। এখন (অক্টোবর-২০১১)এক ডলারে পাওয়া যায় প্রায় ত্রিশ রুবল। তার মানে আমার সেই সময়কার পুরনো মুদ্রার হিসেব করলে ত্রিশ হাজার রুবল প্রায়!
*হায় হায় আমি যে আড়াইশ ডলার রুবলে কনভার্ট করে ব্যাংকে রেখেছিলাম তার কি অবস্থা?
অনেক হিসাব কিতাব করে দেখলাম দীর্ঘ উনিশ বছরে সেটা মাত্র ষোল ডলারে এসে ঠেকেছে। তবে বাৎসরিক পনের শতাংশ হারে যদি সুদ পাওয়া যাত আশা করা যায় বছর বিশেক বাদে আসল টাকাটা ফিরেও পেতে পারি!সব মিলিয়ে উনচল্লিশ বছর… মন্দ না!!তবে তদ্দিন যদি সেই ব্যাংক লোপাট হয়ে না যায়!(রিপোস্ট)
চলবে...
আগের পর্ব Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×