somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাগদা তো-ভ রাশিয়া- শেষ পর্ব

২৪ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর পরে কেটে গেছে পাঁচটি বছর।মাঝে কিছুটা সময়ের জন্যে দেশে ফিরে এসেছিলাম।১৯৯৮সালে ফের মস্কো গিয়ে শিশিরের খোজ করতেই এক বন্ধু বলল, 'ওতো এখন দেশে।'
‘দেশে?’অবাক হলাম। তবে কেন আমার সাথে যোগাযোগ করেনি?’
‘করবে ক্যামনে?’বিমর্ষ কন্ঠে বন্ধুটি বলল,‘ওর অবস্থা খুব খারাপ! বেঁচে আছে তাই বেশী।’
ভীষন অবাক হয়ে ভাঙ্গা কন্ঠে আমি তাকে শুধালাম ‘কি বলছ? কেন? ’
মানবসভ্যতার শুরু থেকেই হয়তো উগ্রবাদের চর্চা শুরু হয়েছে। কখনো বর্ণবাদের ব্যানারে কখনো ধর্মের ব্যানারে কখনো বা সংস্কৃতি কিংবা অন্য ব্যানারে।আধুনিক যুগে হিটলার সেটাকে দিয়েছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি!
তার দেখানো পথের সেই উগ্রবাদের চর্চা ইউরোপের কিছু কিছু দেশে এখনো বিদ্যমান। এমনিতেসেই সংগঠনগুলোর কার্যক্রম তেমনভাবে দৃশ্যমান না হলেও- ওদের খানিকটা অর্থনৈতিক মন্দাভাবে সেটা প্রকটভাবে প্রকাশ পায় কিংবা তারা ভয়ঙ্করভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এসব দেশের অর্থনৈতিক মন্দা বা অন্য কোন রাজনৈতিক কারনে কিংবা বিনা কারনেই এরা উঠতি যুবকদের উৎসাহিত উদ্দীপ্ত করে উস্কে দেয় মুলত এশিয়া বা অফ্রিকার অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। এসব যুবক-যুবতীদের বর্নবাদী দীক্ষায় দীক্ষিত করে।
কালো চামড়া ও চুলের লোকদের প্রতি এদের অসীম ঘৃনা! ওসব দেশের যেকোন সমস্যার মুলেই নাকি এরা।
সে কারনেই পথে ঘাটে যেখানেই পাও এদেরকে পিটাও। দু –চারটা কিল ঘুষিতে কাজ হবেনা- চেহারার এমন হাল করবে যেন নিজেরা নিজেকে চিনতে না পারে,পারলে খুনও করবে।
বহিবিশ্বের চাপে কিংবা পুলিশের দ্বৈরাত্যে যদিও এদের মহান কর্মে মাঝে মধ্যে ভাটা পরে। কিন্তু তলে তলে এরা ঠিকই সক্রিয় থাকে ।
রাশিয়াতেও এমনটা হল?ওদের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন ভীষন খারাপ তখন কে যেন কচি কচি ছেলেদের মাথায় ঢুকিয়ে দিল সব কিছুর মুলে ওই এশিয়া অফ্রিকানরা। ওদেরকে তাড়াতেই পারলে অর্থনীতিতে উন্নতির জোয়ার নামবে;
আর যায় কোথায় ‘যেই এশিয়ানদের বিশেষ করে ভারতীয়তের ওরা প্রেমের দেবতা হিসেবে পুজাজ্ঞান করত। হিন্দী সিনেমা দেখে যারা কাঁদত হাসত নাচত গাইত তাদেরকে ধরে ধরে প্যাদাতে লাগল!
চাইনিজদের সামনে নাকি যায়না কুংফু কারাতে কিংবা মার্শাল আর্টের শৈল্পিক ধাক্কায় উল্টো কুপোকাত হবে এই ভয়ে তাছাড়া ওদের চেহারা স্বজাতী কাজাক কিংবা চেচেনদের সাথে মেলে ভুল হয়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়।
নিগ্রোদের ডরায় খুব বেশী উগ্র গোয়াড় আর শক্তিশালী বলে। দু'য়েকবার আঘাত করতে গিয়ে নিজেরাই বেদম মার খেয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে।
অ্যারাবিয়ানদের তেলের পয়সা। দামী গাড়ি ছাড়া চলেনা। রাস্তা ঘাটে ফ্যা ফ্যা করে হাটলে তবে না দাবড়ে দাবড়ে ইদুরের মত পেটাবে! সেটা এক রকম মজা! ওদিকে পাকিদের চেহারাও আর্মেনিয়া , আজারবাইজানীদের
সাথে মেলে।
মুশকিল হল ভারতীয় বাংলাদেশীদের। চেহারা চলন বলন বলে দেয় শত মাইল দুর থেকে 'কিধার সে আয়া।' পিটাও..
আর রোগা পটকা বাঙালীকে মেরে যত সুখ। প্রতিরোধ করতে পারে কিনা সেটা বড় কথা নয়। প্রতিরোধ করে না।
এদের মারতে পারলে হাতের সুখ ,মনের সুখ , অন্য দশজন ভয় পাবে , পুলিশের কাছেও যাবেনা!
শিশিরও তেমনি পরিস্থিতির স্বীকার! তাকে রাস্তায় একা পেয়ে দশ-বারোটা ছেলে মিলে বেধরক পিটিয়েছে। মার খেয়ে বরফের ভিতর মুখ থুবড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। পরে কোন এক সহৃদ রুশ মহিলা তাকে হাসপাতালে পৌছে দেয়। আঘাতের ভয়াবহতা দেখে আর রুশ ছেলেদের নিঃশ্বংসতার কথা শুনে ডাক্তাররাই আঁতকে উঠেছিল!
তার চেহারার এমন হাল করেছিল যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাই দেখে চিনতে পারছিল না। অনেকবার অপারেশন শেষে সারা দেহ মুখে জোড়াতালি দিয়ে একটা নতুন অবকাঠামো যদিও কুশলী-শল্যবিদরা শেষ পর্যন্ত দাড় করিয়ে দিতে পেরেছিলেন তবে সেটা আর শিশিরের চেহারা ছিল না।
সে সময়টায় সবার চোখে মুখেই সর্বক্ষন আতংক! একাকী বের হওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা দল বেধেও বের হতে ভয়। প্রচন্ড খিদে পেলেও ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তাটা পার হয়ে দুটো পাউরুটি কিনে আনবে তারও উপায় নেই। আবার ঘরেতে বসে থাকাও নিরাপদ নয়। সন্ত্রাসীরা পুলিশের ছদ্মবেশে কিংবা বিভিন্ন কৌশলে ডাকাতি করছে! তবুও শুধু টাকা পয়সা - মালপত্র নিয়ে গেলে কথা ছিল, তারা যে ঘরে ঢুকেই বেধরক পেটায়। মহা-সমস্যা !
প্রতিদিনই খবর আসছে আজকে অমুককে কালকে তমুককে পিটিয়েছে। প্রায় সবারই অবস্থা শোচনীয় -মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। দু-য়েকজনের মৃত্যুর খবরও পেলাম!
তবুও বিপদ আপদের ভয়ে জীবন কখনও থেমে থাকেনা। রুটি রুজীর প্রয়োজনে বের হতেই হবে। তবুও মেট্রো বা বাসে নেহায়েৎ বিপদে না পড়লে চড়ি না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ট্যাক্সিতে যাতায়াত করি।
ব্যাবসায়িক প্রয়োজনেই তখন আমার নিয়মিত গন্তব্য ছিল ভে দে এন খাঁ (আমরা বলতাম বেদেন খা সঠিক উচ্চারনটা একটু কঠিন , রুশ ভাষায় ভি,দ্যা,এন,(খ)হা )উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা কয়েক'শ একরের বিশাল কম্পাউন্ড!
মহাকাশ গবেষনা কেন্দ্র থেকে শুরু করে মিউজিয়াম, বানিজ্য কেন্দ্র পার্ক সহ অনেক সরকারী গুরুত্বপূর্ন দফতর এখানে ছিল। কম্যিউনিজমের ভাঙনের পর এখন পার্কগুলোা বাদে সবকিছুই বিভিন্ন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া খাটছে। এখানটায় এখন গেলে হয়তো বোঝা যাবেনা কম্যিউনিজমের পতনের পর মুর্খ রুশ শাসকরা কিভাবে নিজেদের হাতে নিজেদের গৌরবজনক ইতিহাসকে ধ্বংস করেছে!
‘কসমস’সেন্টার। রুশ জাতির গর্ব করার মত অনন্য সাধারন মিউজিয়াম ছিল এটি। যা ছিল অন্য আর দশ-পাচটি মিউজিয়াম থেকে সম্পূর্ন ব্যাতিক্রম। মিউজিয়ামের বাইরে বিশাল ওই চত্বওে ঢুকলেই প্রথমে নজরে আসবে দুটো অত্যাধুনিক বিমান আপনাকে স্বাগত জানাতে পাখা মেলে দাড়িয়ে আছে । হয়তো ওর শেষ যাত্রী আপনিই আপনাকে পেটে পুরেই ও উড়াল দিবে অনির্দিষ্ট গন্তব্যে। কাছে গেলে অবাক হবেন সত্যিকারের বিমান দুটোর পেটে রেস্টুরেন্টের সাইন বোর্ড দেখে। বিমান দুটোর পিছনেই দাড়িয়ে আছে সুচালু অগ্রভাগ উর্ধ্বমুখে রেখে দু'দুটো রকেটকে পিঠে করে দুটো রকেট বুষ্টার।
মহাকাশ ভ্রমনে যাবেন? ঠিক এমনই একখানা রকেটে করে চাঁদে গিয়েছিলেন নীল আর্মষ্ট্রং ,ইউরি গ্যাগারিন, এডউইন অলড্রিন। বিস্বয় ভরা চোখে সেদিকে কিছক্ষন চেয়ে থেকে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস বুকের ভিতর চেপে রেখে শুভ্র ফেনিল পানির ফোয়ারাটা পেরিয়ে এগিয়ে যান মুল মিউজিয়ামের দিকে - বিশাল উচু গেট গলে ভিতরে ঢুকতেই আপনি থমকে দাড়াবেন চমকে উঠবেন সন্দেহ নেই!
অনেক দুর থেকে মাইকেল গ্যাগারিনের বিশাল পোট্রেট আপনাকে হাসিমুখে সন্ভাষন জানিয়ে মৃদু হেসে বলবে, আসুন আমাদের গর্বের ও মহান কর্মের ভাগীদার আপনিও হোন।
কি ছিলনা সেখানে। বিশাল বিশাল মহাকাশ যান থেকে শুরু করে মায় প্রথম মহাকাশচারী প্রানী ‘লাইকা’র মমি পর্যন্ত।
আর এখন সেখানে ইলেকট্রনিক্সের পাইকারী বাজার থেকে শুরু করে বাংলাদেশী ভাতের রেস্টুরেন্ট। মিউজিয়ামের অমুল্য ডেকোরশন পিসের কতকগুলো প্রশাসন সরিয়ে নিয়ে গেছে কয়েকটা চুরি গেছে আর বাকিগুলি এখানে পরে পরে নস্ট হচ্ছে। চারিদিকে ভাঙনের আভাস। স্যাতসেতে মেঝতে শত শত গর্ত ,ছাদ আর,দেয়ালের বর্ননা নাইবা করলাম। ইউরি গ্যাগারিনের ধুলি মলিন ছবিটা এখনো ওভাবে পরে আছে ।
বিষন্ন নয়নে সে চেয়ে চেয়ে দেখছে মহান সৃস্টির দুর্ভগ্যজনক পরিনতি!
আমার ও আমার বন্ধুদের বেশীরভাগেরই ব্যাবসাকি প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ওখানেই। তখন শীতের শেষ, তবুও বাইরে যথেস্ট ঠান্ডা, বরফ গলে মাটির ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সবুজ সতেজ প্রান। দিন বড় হচ্ছে আর রাত হ্রস্ব। পুরো রুশ জাতি গ্রীস্মের দীর্ঘ ছুটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আমাদের কাজ শেষে আড্ডা দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হত ।
সেদিন কেন যেন সবাই মিলে একটু সকাল সকালই বের হয়ে পড়লাম । যাদেও নিজস্ব গাড়ি ছিল তারা 'কসমসে'র গেট হতেই বিদায় নিয়ে চলে গেল। আমাদের গাড়ি পেতে হলে ভেদেনখা'র চত্বর ছাড়িয়ে অনেকদুর হেটে প্রধান সড়কে যেতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ভেদেনখার চত্বরে পূর্বে তালিকা-ভুক্তি ( সেজন্য উচ্চহারে ফি দিতে হত ) ছাড়া বাইরের কোন গাড়ি ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল। সেজন্য ইচ্ছেই হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক ঝড় বরফ আর বৃস্টিতে বাধ্য হয়ে আমাদের হাটতেই হত।
ভেদেনখার চত্বর থেকে বের হয়ে আমরা দশ বারজন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে আগপিছু করে হাটছি । আমি আর জাকির (সিলেটি বন্ধু ) ছিলাম সবার পিছনে।
মুল সড়কে পৌছানোর মুখেই লক্ষ্য করলাম কাকে ঘিরে যেন আমার বন্ধুদের জটলা। বিপদের আঁচ পেয়ে আমরা দ্রুত কাছে গিয়ে দেখি বার-তের বছরের একটা রাশান ছেলে ওদের সাথে ভীষন হম্বিতম্বি করছে! পুরোপুরি মাতাল পিচ্চিটা হাত পা ছুড়ে তার বক্তব্য ওদের বোঝানোর চেস্টা করছে কখনো একে ওকে ধাক্কা দিছে কিংবা কলার ধওে ঝাকাচ্ছে।
আমি বাচ্চা ছেলেটার সাহস বা স্পর্ধ্বা দেখে দারুন অবাক হলাম সেই সাথে আমার তার এমন অসৌজন্যমুলক ব্যাবহারের প্রতিউত্তরে আমার বন্ধুদের নিরবতা ও চোখে মুখে ভীত সন্ত্রস্ত অসহায় ভাব দেখে কস্ট পেলাম। কিভেবে যেন নিজের পৌরুষত্ব জাহির করতে গিয়ে ওদেরকে সরিয়ে বুক ফুলিয়ে সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ছেলেটার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
লম্বায় সে আমার কাধ সমানও হবে না অথচ কি সাহস! প্রচন্ড ক্ষিপ্রতায় আমার জ্যাকেটের বুকের কাছটায় খামচে ধরে বলল ‘ও তুমি তাহলে রুশ জান!’
তার এমনতর কথা শুনে আমি হতবাক ‘এর মানে এরা এতক্ষন ছেলেটাকে বুঝাচ্ছিল যে তারা রুশ জানে না!
-কেন?’
আমি জ্যাকেট থেকে তার হাতটা ছাড়িয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম ‘তা! কি হয়েছে?’
প্রতিউত্তরে সে একটু ক্রুর হেসে বলল, ‘এদেরেকে এতক্ষন ধরে বুঝাচ্ছি (বলতে বলতেই আমার পাশের বন্ধুটার গালে প্রচন্ড জোরে থাপ্পর মারল , সে গালে হাত দিয়ে পুরো ব্যাপারটাই হজম করে ফেলল যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গী ) শালারা কিছুতেই বুঝছে না । আমার মদ খাবার জন্য কিছু টাকা লাগবে ?’
‘মানে ? তুমিতো এমনিতেই মাতাাল! কত টাকা চাচ্ছ?’
‘পাঁচশ রুবল?’ভঙীটা এমন যে যা বলার ফিক্সট বলে দিয়েছে এর থেকে এক টাকাও কমানো সম্ভব নয়।
-বল কি মদ খেতে পাচশ রুবল! (প্রায় শ’ডলারের উপরে। এত টাকার মদ দিয়েতো ওর বাপের শ্রাদ্ধ করা যায়।)
‘আমাদের কাছেতো এত টাকা নেই । তুমি বিশ রুবল নাও।’
‘কি?’( চিভো-)বলে চিৎকার করে)সে আবার আমার হাত চেপে ধরে রক্তিম চোখে চেয়ে হিস হিস করে বলল, ‘যা চেয়েছি তাই দিতে হবে।’
আমি ঝাকুনি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিতেই ... সে সময়টার ( সেকেন্ড পাঁচেক)কথা আমার মনে নেই । শুধু মনে আছে একটা কোলাহলের শব্দ ডান দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখেছিলাম আট-দশটা রুশ ছেলে আমাদের লক্ষ্য করে দৌড়ে আসছে।
তাদের সবারই বয়স আঠারো থেকে বিশের কোঠায়। প্রত্যেকের পরনে আর্মিদের অনুরুপ পোষাক , মাথা কামানো। ওদের দৌড়ে আসার ভঙী দেখেই আমার মেরুদন্ড বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। মস্তিস্ক দ্রুত নির্দেশ পাঠাল পালাও!
ঠিক তখুনি ছেলেটা আবার আমার হাত চেপে ধরল। দুহাত দিয়ে সাড়াসির মত আকড়ে ধরে বলল ‘কই যাও? দাড়াও।
এবার আর আমি চেস্টা করেও নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারলাম না। অসহায় আমি সাহায্যের আশায় পাশের বন্ধুদের দিকে ঘুরে তাকাতেই দেখি কেউ নেই! সবাই ভেগেছে।
ছেলেগুলো ততক্ষনে একদম কাছে চলে এসেছে। আমি প্রানপন চেস্টা করছি নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে। এতটুকু পিচ্চির কি শক্তিরে বাবা! সে আমার হাত ধরে প্রায় ঝুলে পড়েছে। ঠিক তখুনি কে যেন আমার আরেকটা হাত চেপে ধরল। তাকিয়ে দেখি ওদেরই একজ ! এরাই ফ্যসিস্ট বর্নবাদী। দ্রুত সরিয়ে নেয়া মাথার পাশ দিয়ে প্রচন্ড ভারী একটা ঘুষি শীস কেটে বেরিয়ে গেল।
জীবন ও মৃত্যুর (হয়তোবা) মুখোমুখি দাড়িয়ে আমি তখন। ঠিক সেই সময়ে বিধাতার অশেষ করুনা যেন বর্ষিত হল আমার উপরে। কোত্থেকে অসুরের শক্তি এসে ভর করল আমার দু হাতে। এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দৌড় দিলাম।
ভীষন ব্যাস্ত রাস্তাটা কেমন করে যেন দু'সেকেন্ড দৌড়ে পেরিয়ে খোলা প্রান্তরের দিকে এগিয়ে গেলাম-উদ্দশ্য মাঠ পেরিয়ে কোলাহল পূর্ণ এক রাস্তার দিকে এগিয়ে যাওয়া। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি একদল হিংস্র শার্দুলের মত ওরা সবাই মিলে একসাথে আমার পিছু ধেয়ে আসছে। মাত্র কয়েক মিটার পেছনে। আমার গতি একটু শ্লথ করলেই মুহুর্তে ওরা এসে ধরে ফেলবে...
পিচ্ছিল লাল কালো এবড়ো থেবড়ো মাটির পথ দিয়ে আমি প্রানপন চেস্টায় দৌড়াচ্ছি। আরো শ দুয়েক মিটার এগুলেই আরেকটা বড় রাস্তা পড়বে । দুর থেকে দেখছি পুলিশ বা ট্রাফিকের মত কাউকে। ওরা কতদুরে এখন আর ফিরে দেখার অবকাশ নেই।
..দৌড়াচ্ছি আমি ... আর সামান্য একটু পথ বাকি .. হ্যা পুলিশই তো .. একি! সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে .. ঠিক তখুনি হঠাৎ পা হড়কে পরে গেলাম।
কাদা মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে তড়িৎ উঠে দাড়িয়ে পিছন ফিরে দেখি কেউ নেই! ভোজ বাজির মত উধাও! তার মানে পুলিশ দেখে ভেগেছে! উদভ্রান্তের মত রাস্তার কিনারে দাড়িয়ে কুকুরের মত বিশাল জিভ বের করে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে ভীত চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলাম আবার যদি অতর্কিতে এসে ঝাপিয়ে পরে!
ঠিক তখুনি কে যেন আমার নাম ধরে ডাক দিল। রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার বন্ধুরা একটা ট্যাক্সিতে দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে আমার অপেক্ষায় । তাদের সবার চোখে মুখেই আতঙ্কের স্পস্ট ছাপ!
...অবশেষে শেষ হল।
ফুটনোটঃএই ঘটনাটা যতটা সহজভাবে বর্ণনা করেছি ততটা সহজ মোটেই ছিলনা। রাশিয়ায় ঘটে যাওয়া সবশেষের এই ঘটনাটা আমার মনের গভীরে বড় ধরনের দাগ কেটে যায়। সময়বিশেষ খানিকটা সাহসী আমাকে প্রচন্ড ভিতু করে তোলে। মৃত্যু ভয় আমাকে জেঁকে বসে। সেই ভয়াবহ স্মৃতি প্রতি মূহুর্তে আমাকে দাবড়ে বেড়ায়।' জন্মিলে মরিতে হবে' এইটে ধ্রুব সত্যি কথা -যার কোন ব্যাত্যয় নেই-কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যু কার কাম্য?

আগের পর্বের জন্য;
Click This Link
প্রথম পর্বের জন্য;
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৯
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×