ঘাসের উপরে একখানা ইট চাপা দিয়ে রাখলে কিছুদিন বাদে সূর্যালোকের অভাবে সে ঘাসের রঙ বিবর্ণ হলদেটে হয়ে যায়। ঠিক তেমনি রুশীয়দের ধবল ত্বক দীর্ঘদিন সূর্যালোকের স্পর্শ না পাবার জন্য কেমন যেন ফ্যাকাসে সাদা হয়ে যায়-আর তাইতো সামারের শুরুতেই ওরা পড়িমড়ি করে ছোটে নদী খাল পুকুর আর সুমুদ্রের পাড়ে সূর্যস্নান করে চামড়াটা পোড়ানোর জন্য। সেই পোড়া চামড়ার রঙ প্রথম দু-চারদিন ভীষন বেমানান লাগে। কিন্তু ক'দিন বাদেই তাদের মসৃন ত্বকে একটু সেই তামাটে আভা সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় অনেকগুন।
কিন্তু লারিসার সেই সোনারাঙ্গা ত্বক কখনো বিবর্ণ হতে দেখিনি।
যেখানে তার অতি কাছের বান্ধবীরা পর্যন্ত পড়িমড়ি করে ছোটে প্রতি প্রত্যুষে নদীর পাড়ে তোয়ালে, সানস্ক্রিন আর স্যুইমস্যুট ব্যাগে পুরে সেখানে পুরো সামারে সে গুনে গুনে পাঁচদিনও গিয়েছে কিনা আমি সন্দিহান। সূর্যালোকের চরম তাপে দগ্ধ হবার থেকে ঘরে বসে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকাটা অনেক বেশী উপভোগ করত।
সেদিন মইনের সাথেই বাইরে গিয়েছিলাম। একদল পাকিস্থানী ডাঙ্কারের( আদম ব্যাবসায়ি) সাথে সাথে জরুরি মিটিং থাকায় আমি বিরক্ত হব ভেবে আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দিল।
পর পর দুবার বেল টিপলে- ঘুম চোখে আন্দ্রে এসে দরজা খুলে দিল। দুপুর সবে গড়িয়েছে - গ্রীস্মের উজ্জল আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত। চারিদিকে কত উচ্ছলতা আর আনন্দের উপকরন।রুশীয় অতি এক ঘেয়ে জীবনে সামান্য কিছু স্বস্তি দিয়ে আশির্বাদ হয়ে গ্রীস্মের আগমন । এই সময়ে কোন রুশীয় যুবক-যুবতি ঘরে বসে থাকার কথা কল্পনাও করেনা। কিন্তু এই দুই গাধা টাইপের ভাই-বোন সুযোগ পেলেই পড়ে পড়ে ঘুমায়।
কড়িডোর পার হয়ে আমাদের রুমে ঢুকতে গিয়ে থমকে গেলাম...দরজার সোজাসুজি আমার সিঙ্গেল খাটটা। সাদা ধবধবে বিছানার উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে লারিসা।পরনে শুধু সুতির অতি মোলায়েম একটা টি-শার্ট আর শরিরে ভীষনভাবে এটে থাকা গায়ের সোনা রাঙ্গা রঙ্গের সাথে ভীষনভাবে মিলে যাওয়া প্রায় সোনালী অতি ক্ষুদ্র একখন্ড অন্তর্বাস মাত্র! প্রথম দৃষ্টিতে ভ্রম হবে নগ্ন ভেবে।
লারিসসা চৌকস ব্যালে শিল্পি। সুগঠিত পা জোড়া তার শিল্পচর্চার মুল অনুসঙ্গ। পুরুষ হিসেবে নারিদেহের প্রতি আজন্ম আকর্ষনকে অবহেলা করতে পারিনা। টি-শার্ট কোমর ছাড়িয়ে উঠে গেছে খানিকটা -তার সুঢৌল কটিদেশ দর্শনে মোহিত না হয়ে উপায় নেই। আমার সে দৃষ্টিতে কামুকতা ছিলনা- ছিল চরম সৌন্দর্য দর্শনে বিহ্বলতা আর বিমুগ্ধতা! বনের দিকের দরজাটা খোলা ছিল-গভীর সু-উচ্চ বনভুমির গাছের উজ্জল শ্যামা পাতার ফাক গলে ঝকঝকে সূর্যের আলো মায়াবী এক রুপ ধরে দরজাটা সন্তর্পনে পেরিয়ে অতি মোলায়েম ভাবে আছড়ে পড়েছে সল্প বসনা লারিসার গায়ে। তার উজ্জল ত্বকে স্বর্গীয় আভা ছড়িয়ে আমার দৃষ্টিকে কোন এক যাদুকরী ক্ষমতায় মোহাবিষ্ট করে ফেলেছে। সে দৃষ্টি ফেরানোর সাধ্য আমার নেই...
পাতলা টি শার্টটা কোমড় থেকে উঠে গেছে খানিকটা-নিখুত ঢালু কটিদেশের অসামান্য সৌন্দর্য আমাকে আরো বেশী বিমুগ্ধ করল। সে মূহুর্তে আমি ভুলে গিয়েছিলাম- সে আমার বন্ধুর হবু প্রেমিকা কিংবা ভাবি ভার্যা। আমার দৃষ্টির সন্মুখে অসামান্য এক নারী দেহের সৌন্দয্য।নিজের দৃষ্টিকে শাসন করার চেষ্টার কথা একবারও আমার মাথায় আসেনি।তিন তিনেট বছর কেটে গেছে এই রুশ দেশে। দূর্দান্ত দেহ সৌষ্ঠবের অর্ধ নগ্ন কিংবা প্রায় বিবসন তরুণী অবারিত সূর্যের আলোয় দেখেছি ঢেড়-তবুও কেন এত বিহ্ববলতা?
মেয়েদের তৃতিয় চক্ষু নাকি নিদ্রামগ্ন অবস্থাতেও সক্রিয় থাকে-এর প্রমান পেলাম ততক্ষণাত! আচমকা লারিসা জেগে উঠে সোজা তাকাল আমার দিকে। পরক্ষনেই ধড়মড় করে উঠে বসে-বেশ খানিকটা লজ্জায় কপোল রাঙ্গিয়ে বলল,স্যরি! তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।' বলেই সে দ্রুত হাতে বিছানার চাদরটা টেনে দিয়ে সেই পোশাকেই আমার পাশ কেটে বেরিয়ে গেল। আমি ভীষন অবাক হলাম দেখে, সে তার পোষাক নিয়ে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত নয়। আমার বিছানায় শোয়াটা তার দৃষ্টিতে ছিল অপরাধ। এই রুমটা তারই ছিল-আমরা হুট করে এসে দখল করেছি। প্রায় প্রতিটা মানুষেরই নিজের রুমখানা বড় প্রিয় থাকে। সেইখানে ঘুম হয় সবচেয়ে সরেস। লারিসা এখন যেইখানেই থাকুকনা কেন এই রুমটাই তার সবচেয়ে প্রিয় হবে সেটাইতো স্বাভাবিক। আমাদের অবর্তমানে সেখানে এসে যদি একটু সুখনিদ্রা যায় তাতে আর এমন কি অপরাধ।
আমার এড্রিনালের ক্ষরন তখন বেড়ে গেছে -মাথার দুপাশের শিরা দপ দপ করছে।প্রচুর উষ্ণ রক্ত জমে দু-কান যেন বিস্ফোরনের অপেক্ষায়...আর হৃদপিন্ড চলাচলের গতির শব্দ স্টেথিস্কপ্ ছাড়াই টের পাওয়া যাচ্ছে বিলক্ষন।আমি গিয়ে ধপ্ করে বসে পড়লাম মইনের ডিভানে।
ঘুমন্ত কোন নারীকে এভাবে দেখাটা যে খুব ভাল রুচির পরিচায়ক না সেটা তখন মাথায় এল।
সে মূহুর্তে ফের লারিসার প্রবেশ; মিশু তোমার কাছে সিগারেট আছে।
আমি ঘোলা দৃষ্টিতে তাকালাম ওর দিকে। কি দারুন নিঃস্পাপ মুখভঙ্গী তার! আমার কামুক দৃষ্টি তাকে স্পর্শ করেনি বিন্দুমাত্র। প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে তার দিকে বাড়িয়ে ধরে অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরালাম। খানিকটা পাপবোধ স্পর্শ করল আমাকে-মনে হল যেন বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। বয়স তখন কম-প্রচন্ড আবেগী মন। বন্ধুর জন্য জান দিতে পারি এক তুড়িতে। অল্প কষ্টে মুষড়ে পড়ি-আর সামান্য আনন্দে খুশীতে উদ্বেল হয়ে অট্টহাসিতে ফাটিয়ে দেই বিশ্ব চরাচর।
নিজেকে খুব ছোট মনে হয়েছিল তখন। কামুকতা আমাকে গ্রাস করেনি সেটা বললে ডাহা মিথ্যে বলা হবে। আমি টগবগে যৌবনের পুরুষ-প্রকৃতিগতভাবেই নারীদেহ আমাকে টানবে সেইটেই স্বাভাবিক। ঠিক সেই মূহুর্তে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম; সম্পর্কের ফরমেটটা পাল্টে ফেলব।
তখুনি ঠিক যাত্রার সেনাপতির মত মইনের হুড়মুড় করে মঞ্চে প্রবেশ।
চোখ দুটো ইষৎ লাল মুখে কনিয়াকের কড়া গন্ধ! দারুন স্ফুর্তিতে আছে সে -মুখ হাসিতে উদ্ভাসিত। নিশ্চয়ই কোন বড় ধরনের সুখবর আছে?
আমি কিছু জিজ্ঞেস করা আগেই হড়বড়িয়ে বলতে শুরু করল; আরে মিশু ভাই, আজকে দারুন একটা ডিল হইল।
আমি সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে?
-লাতিফ ভাই-চরম একটা প্রোপোজাল দিসে।
লাতিফ মানে পাকি লতিফ- শালা ভাব নিয়ে নিজেকে লাতিফ বলে।ওর নাম শুনেই আমার চরম খবর শোনার আগ্রহ মূহুর্তে উবে গেল!
বিশাল বপুর অতি চতূর সেই পাকিস্থানী লোকটাকে আমার প্রথম দিন থেকেই পছন্দ হয়নি। তাই আজকে ওর সঙ্গ ত্যাগ করে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসেছি।ময়লা গাত্র বর্ণ-গোলগাল চেহারা যেটা আমাদের ধারনার পাকিস্থানীদের সাথে যায়না।মইনের সাথে দেখা হলেই-হালুম হালুম করে বুকে জড়িয়ে ধরে। আশেপাশের সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয় ও তার আপন মায়ের পেটের ভাই এর মত! দু-চাখানা গেয়ো উর্দূর তোষামদি শব্দে মইন গলে যায়; সেও বলার চেষ্টা করে' আপকো সাথ মিলকে বহুত আচ্ছা লাগা লাতিফ ভাই।'
মইন এখানকার নামীদামি আদম ব্যাবসায়ী। এই দেশে দু-চার দশজন ভীনদেশী মানুষ থাকে তাদের সবাই-ই ওকে একনামে চেনে। আগে ছিল বাঙ্গালীদের রাজত্ব। এখন ইষ্ট ইন্ডিয়া কম্পানীর মত পাকিদের আগমন।
লতিফের মত মহা ধুরন্ধর কয়েকজন চ্যালা চামুন্ডা নিয়ে এখানে এসেই প্রথম ও সহজ টার্গেট করল মইনকে। দেখা হলেই ওকে নিয়ে এত ব্যতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে যে দৃষ্টিকটু লাগে। বোকা মইনকে বোঝালেও বোঝে না।
লাতিফ ভাই ওর কাছে যেন দেবদূত। আঞ্চলিক উর্দূ ছাড়া সে আর কোন ভাষাতেই কথা বলতে পারে না। মাঝে মধ্যে দু-চারখানা ইংরেজী শব্দ বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে।মইনের উর্দূ তথবৈচ- ভয় লাগে কি বোঝাতে গিয়ে কি বলে কখন আটকে যায়!
ইচ্ছে না হলেও শুনতে হল মইনের কথা;
লাতিফ ভাইয়ের নাকি দুই'শর উপরে আদম আছে।চাইলেই আরো হাজার খানেক নিয়ে আসতে পারবে। চুক্তি হবে প্রোফিটের ফিফটি ফিফটি। লোক তার আর পাঠানো আমার। আগে দেবে অর্ধেক-ওপারে লোক গেলেই পুরা টাকা একবারে দেবে।
আমি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালাম ওর দিকে। লতিফ ওকে ভাই ডেকে গলা জড়িয়ে মদ খেয়ে-পুরো সম্মোহন করে ফেলেছে। আমি এখন কিছু বলতে গেয়ে চক্ষুশুল হব।
. ৬ নম্বর পর্ব শেষ।
আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম পর্বের জন্যঃ
http://www.somewhereinblog.net/blog/sherzatapon/29732358
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৫৩