somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলকাশ- পর্ব ৭

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে দোভাষি হিসেবে বেশ আকর্ষনীয় একটা চাকুরি পেলাম! মইনের কোন একটা কাজে লাগছি ভেবে নিজের কাছেই বেশ ভাল লাগছিল।
তবে বেতনভুক নয়। মইনের একান্ত আগ্রহে ও স্ব-ইচ্ছাপ্রণোদিত! মনটাকে নির্লোভ করে সব আদর্শ ঝেড়ে ফেলে মইনকে জিগার দোস্ত ভেবে এবার উঠে পড়ে লাগলাম-ওদের প্রণয় করাতেই হবে।
গ্রীস্মের ছুটি শেষ। লারিসার পরাশুনার থেকে স্পোর্টস এ আগ্রহ বেশী। তবুও বাপ-মায়ের দাবড়ানিতে কলেজে যায়। কলেজ থেকে ফিরে বিকেলে ফের ব্যালের প্রশিক্ষনে। এবার অলিম্পিকে মালদোভা থেকে তার যাবার বেশ ভাল সম্ভাবনা আছে। অবসর সময়টুকু তার কাটে আমাদের সাথে। কাটে না বলে আমরা কাটাতে বাধ্য করি বলতে হয়।
সিগারেট আর কড়া মিঠে লাল পাণীয়ের লোভে সেইসাথে খানিকটা সঙ্গভোগের জন্য সে এখানে আসে। সারাদিন লারিসার অদর্শনে হা পিত্যেস করতে থাকা মইন বিকেল হলে পরিপাটি পোষাক পরে-চুল নিয়ে অনেক তেলেসমাতি করে সারা গায়ে পারফিউম মেখে অতিথির মত বসে মিটি মিটি হাসতে থাকে।
লারিসা সরাসরি চলে যায় বারান্দায়-সেখানে পাতা ডিভানটায় কিছুক্ষন ঝিম মরে বসে থেকে মৃদু স্বরে আমাকে অনুরোধ করে একশলা সিগারেট দেবার।
মইন যেন এই অপেক্ষায় ছিল-সে লাফ দিয়ে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে নতুন সিগারেটের প‌্যাকেটটা বের করে আমার হাতে দিয়ে বলবে-যান পুরাটা খাওয়ান।
আমি লারিসাকে সিগারেট দিতে গেলে সে আমাকে তার পাশে বসতে বলে। কখনো খানিকটা নিচু কন্ঠে ছাড়া ছাড়া কখনোবা উচ্চ কন্ঠে তড়বড় করে।
মইন ঘরে বসে অপেক্ষা করে ওর মুড বোঝার।
মুড ভাল বুঝলে ওয়াইনের বোতল নিয়ে হাজির হয় বিগলিত হেসে আর পরিবেশ থমথমে হলে কোন এক ছুতোয় আলতো করে গিয়ে আমার পাশে বসে। উদ্ভট আলাপ জুড়ে দেয়। লারিসাকে উদ্দেশ্য করে তার প্রশ্ন সব; অর্থ বিত্ত প্রেম বিয়ে নিয়ে।'
জিজ্ঞেস করেননারে ভাই,ওর কোন পছন্দের ছেলে আছে?
আমি প্রশ্ন করি তেমনটাই- লারিসা সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ফিক করে হেসে উড়িয়ে দেয়।
কথার ফাঁকে আসে আস্তে মইনের প্রসঙ্গে আসি। ভ্রু কুঁচকানো ভাবটা কমেছে তার- এখন বেশ খানিকটা সহজ হয়েছে সে। মানুষ কিভাবে অর্থ কামায় এরা জানেনা-তাই বেশ ভাল রোজগারপাতি করা মানুষদের এরা অন্য চোখে দেখে।মইন এদের কাছে বেশ কেউকেটা একজন। এমন একটা মানুষ ওর জন্য এত সব ত্যাগ স্বীকার করে ভেবে ও দারুন গর্বিত হয়। আমি যে অন্যের উচ্ছিস্টে মানুষ সেটা ভেবে সে হৃদয়ের আকুলতাকে সন্তর্পনে পাশে সরিয়ে খানিকটা করুনার দৃষ্টিতেই দেখছে ইদানিং।
আমি অবশ্য বেশ আনন্দিত আমার প্রতি ওর দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টে গেছে দেখে।
ভাবি এবার তাহলে বরফ গলবে।
মইন এমনিতে খানিকটা ভিতু,স্নায়বিক দৌর্বল্যগ্রস্ত আর লাজুক টাইপের-যেটা লারিসার সামনে প্রকট হয়। তবে এলকোহল পেটে পড়লে সে অনেক বেশী সাবলীল।
তাই বিকেল থেকেই তার চোখের কোনে রঙ লাগতে শুরু করে। লারিসা আমাদের রুমে আসার আগেই সে নার্ভাস ভাবটা অনেকখানি কাটিয়ে ওঠে।
আমাদের সাথে গল্পে বসে আরো দু-চার পেগ গিলে বেশ চনমনে উৎফুল্ল হয়ে যায়। তখন তার মুখে কথার তুবড়ি ছোটে। শেষমেষ সে রুমানিয়ান ভাষাতেই শুরু করে লারিসার সাথে গপ্পো-মেয়েটা কিছুই বোঝেনা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। ব্যাপারটা বেশ করুন হাস্যকর! লারিসার অনুরোধে আমাকেই ফের উদ্ধারকর্তা হিসেবে ছুটে যেতে হয়-ভাষার ঝামেলা মেটাতে।
আমার ধারনা ভিতু লাজুক ভাবটা আর স্নায়বিক দৌর্বল্য কাটানোর জন্যই মইনের অ্যালকোহলের আসক্তির শুরু। যে কোন পার্টিতে যাবার আগে- কোন মিটিং এর আগে দু-চার পাত্তর ওয়াইন ভদকা কিংবা কনিয়াক পান না করে সে বের হত না। লারিসার সাথে পরিচয়ের পরে সেটা এখন নিয়মিত হল।
লারিসার খানিক ব্যস্ততায় আমরা খানিকটা উপকৃত হলাম। ছুটি ছাটার দিনগুলো বাদে আমরা গুহাবাস থেকে বের হওয়া শুরু করলাম।মইন কিছুটা ইচ্ছে অনিচ্ছায় আর আমার তাড়ায়। এ শহরে যে জনা বিশেক বাঙ্গালী আছে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু হল-ব্যাবসাকে খানিকটা প্রসার করার নিমিত্তে যেটা ভীষন জরুরী। আদম রাখার জন্য নতুন বাড়ি খুজে বের করা পুরনো আদমগুলোর খোজ খবর নেয়া একটা রুটিন ওয়ার্ক যেটা এদ্দিন ভুলে ছিলাম। গ্রীস্মের এই এই মধ্যিখানে ঘরে বসে থাকার কোন মানেই হয় না।
পার্কের পরিবেশ এখন দারুন মনোরম। কোন কাজ না থাকলে পার্কে বসে আড্ডা দিই। কিষিনেভের সেই পার্কটার সাথে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কখনো দু-জন কখনো চারজন কখনোবা মলদোভির সব বাঙ্গালী এসে জড়ো হত সেই পার্কে। সবার সাথেই সবার ঘনিষ্ঠতা যা প্রায় বন্ধুত্বের পর্যায়ে পড়ে। পৌঢ় বৃদ্ধ নয় কেউ যৌবনের প্রারম্ভ সবার- সংসার পাতেনি তখনো কেউ। প্রায় অবসর সবারই সারাদিন -বাড়িতে ফেরার তাড়া নেই। গালগপ্পো, কৌতুক, গান, নিত্য নতুন বাহারী খাওয়া চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দর্শনীয় কিছুকে উপভোগ করাই ছিল সেই আড্ডার অনুসঙ্গ।
এখানে মুলত আসে প্রেমিক জুটি, বৃদ্ধা আর শিশুর হাত কিংবা পেরাম্বুলেটার ধরে গর্বিত মায়েরা। পেরাম্বুলেটার-এ শুয়ে থাকা বাচ্চাগুলো যেন মোমের পুতুল-একদম শান্ত নিরীহ। চুপ চাপ শুয়ে থেকে শুধু এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে। কাউকে টুঁ-ফ্যা করতে শুনিনি কোনদিন। আমাদের চোখ ঘুরে ফিরে যেত জুটিগুলোর দিকে। কত ধরনের রঙ তামাশা, চুম্বন আদর আর খুনসুটি যে চলত তাদের মধ্যে তার ইয়ত্বা নেই। পুরো পার্কে আমরাই কয় বান্দর তাদের সেই কান্ড কারখানা দেখে নিজেদের মধ্যে গুজুর ফুসুর করতাম আর ঠা ঠা করে হাসতাম। প্রেম করে ওরা- বাপরে! এতবেশী গলাগলি ঢলাঢলি দেখে মনে হত মানুষ এ্যত্তো ভালবাসে ক্যামনে?
তবে মইন এসব দেখে কখনো উদাস-বিমর্ষ হয়। সে হয়তো ভাবে লারিসার কথা-ওকে নিয়ে সেকি কোনদিন এমনি উদ্দাম প্রেমলীলায় মেতে উঠতে পারবে?
সপ্তম পর্ব শেষ।
আগের পর্বের জন্য: Click This Link
আলকাশ প্রথম পর্বের জন্য:
http://www.somewhereinblog.net/blog/sherzatapon/29732358
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৩৭
২৪টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×