somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লোভী কাজী – একটি তাজিক রুপকথা

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অতি সংক্ষেপে তাজাকস্থানের পরিচিতিঃ
স্থানীয় নাম: জুমহুরি তোজিকস্তান
প্রাক্তন সোভিয়েত রাশিয়ার অঙ্গভুক্ত ছিল। স্বাধীনতা পায় ১৯৯১ সালে।
মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশ তাজিকস্থানের আয়তন ১৪৩,১০০ কি.মি.যা যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন অংগরাজ্য থেকে সামান্য বড়। লোক সংখ্যা মাত্র সত্তর লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার। তাজিকস্থানের লোকদের বলা হয় তাজিক-ভাষা পার্সিয়ান তাজিক যা ইরানী ভাষার অনুরুপ। তবে ব্যাবসা বানিজ্য এবং সরাকারি ভাবে এখনো রুশ ভাষাটা বেশী ব্যাবহৃত হয়।
জনসংখ্যার বেশীরভাগ মুসলিম।
তাজিকস্থানের ৯৩ ভাগ এলাকা পাহাড় পর্বত দিয়ে ঘেরা।যার শুধু পঞ্চাশ ভাগ ঘিরে আছে পৃথিবীর ছাদ বলে খ্যাত পামির মালভুমি। তাজিকস্থান মুলত ভূমিকম্প-প্রবন অঞ্চল।
এর পুবে চীন,দক্ষিনে আফগানিন্থান,পশ্চিমে উজবেক আর উত্তরে কাজাকস্থান।
বড় নদী আমু দারিয়া।

লোভী কাজী – একটি তাজিক রুপকথা
বিশ্বাস কর আর নাই কর তাজিকের প্রত্যন্ত গায়ে বাস করত এমন এক গরীবলোক যে উদয় অস্ত হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করেও যে ক’পয়সা উপার্জন করত তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্ট হত। যে কারনে তার অবস্থার উন্নতি দুরের কথা উল্টো দিনদিন বেশী গরিব হয়ে পড়ছিল।
‘এভাবে আর চলতে পারেনা।’লোকটা মনে মনে ভাবল। ‘এর থেকে শহরে গিয়ে তার ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টা করবে।’
ক’দিন বাদেই সে তার বউ বাচ্চাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলল শহর অভিমুখে।
সে কখনো শহর দেখেনি। জানেওনা কোন পথে গেলে শহর মিলবে। অজানা গন্তব্যের দিকে হাটতে হাটতে একসময় ঠিকই পেয়ে গেল একটা শহরের দেখা। শহরে ঢুকেই সে আর কালবিলম্ব না করে কাজের সন্ধানে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতে লাগল। যে যাই বলুক না কেন সে সেইটেই করতে প্রস্তুত; সে কাজ যত কষ্টের আর যতই নীচুমানের হোকনা কেন। এমন কোজা লোকের কাজের অভাব হয় না।
শুরু হল ফের রাতদিন কাজ। যা পয়সা উপার্জন করে তার খুবই সামান্য অংশ নিজের জন্য যতটুকু না হলেই না ততটুকু খরচ করে বাকি পয়সা তার কোমরে বাঁধা ছোট্ট একটা থলেতে জমিয়ে রাখা শুরু করল।
প্রতিদিন সে ভাবে আরেকটু বেশী কাজ করলেই আরো বেশী কামানো যাবে। যত বেশী করে টাকা জমাতে পারব তত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারব।‘আহা! ছেলেমেয়েরা না জানি কি খেয়ে আছে।’

এই ভেবে ভেবে সে প্রতিদিন বিশ্রামের সময় কমিয়ে দিয়ে কাজ করার সময় আরেকটু বাড়িয়ে দেয়। এভাবে কেটে গেল কয়েক মাস। একদিন সে বসে হিসেব করল ক’টাকা জমেছে। গুনে দেখে প্রায় আটশ টাঙ্গা*। তখনকার দিনে আটশ টাঙ্গা অনেক।
তার ইচ্ছে ছিল আরো কিছুদিন কাজ করে আর কিছু টাঙ্গা জমলে তবে বাড়ি ফিরে যাবে। যাতে করে আর কোনদিন অভাবে না পড়তে হয়। সে ভাবল,টাকাগুলো এভাবে রাখা ঠিক হবেনা। নিজের কাছে রাখলে চুরি - ছিনতাই হয়ে যেতে পারে।
সে একবার ভাবল এগুলো কোন এক গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখলে কেমন হয়?’ কিন্তু কেউ যদি দেখে ফেলে? সবখানেই তো শঠ প্রতারক চোর ডাকাত ঘুরে বেড়াচ্ছে।
‘প্রত্যেকেই ভাবে এই শহরের কাজী নাকি খুব সৎ ও ধার্মিক।’ সে ফের ভাবল,তার থেকে টাকাগুলো কাজীর কাছে রেখে দিলে কেমন হয়। যখন আমি গায়ে ফিরে যাব তখন টাকা গুলো তার কাছ থেকে নিয়ে গেলেই হয় ।’
অবশেষে সে কাজীর কাছেই গেল। কাজী তাকে কাছে ডেকে নম্র স্বরে জিজ্ঞেস করল সে কেন এসেছে?
কাজীর এহেন ব্যাবহারে সে ভীষন পুলকিত ও বিগলিত হয়ে বলল,
- মহামান্য কাজী সাহেব,আমি আপনার কাছে এসছি আমার এই টাকা গুলো জমা রাখতে। দয়া করে কি আপনি এগুলো আপনার হেফাজতে রাখবেন। আমি এই শহরেই থাকি ,এখানেই কাজ করি। বাড়ি ফেরার সময় হলে টাকাগুলো আবার আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাব।’
কাজী তার হতে থেকে টাকা গুলো নিয়ে। গুনে দেখে - তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাস্যে বললেন,
-‘ঠিক আছে তুমি যেভাবে বলছ তাতে আমি না করি করি কিভাবে। তুমি আমার কাছে টাকা রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পার। টাকা রাখার জন্য এমন নিরাপদ জায়গা আর তুমি পাবেনা।’
সে চলে যাবার পরে কাজী টাকা গুলো ফের গুনে তার বিশাল সিন্দুকে রেখে দিল।
আরো কিছুদিন বাদে সেই গরিব লোকটা ভাবল,অনেক হয়েছে এবার বাড়ি ফেরা যাক।’ যে টাকা কামাই করেছি তাদিয়ে বহুদিন সাচ্ছন্দে কাটানো যাবে।’
গায়ে ফেরার আগেরদিন সে গেল কাজীর কাছে,
- হে মহামান্য কাজী! আমি কি আমার টাকাগুলো ফেরৎ পেতে পারি? আগামীকালই আমি গায়ে চলে যাব বলে মনস্থির করেছি।’
প্রতি উত্তরে কাজী তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
- কোন টাকার কথা তুমি বলছ?
-ওই সেই আটশ টাঙ্গা- যেগুলো আপনার কাছে গচ্ছিত রেখেছিলাম। মহামান্য কাজী!
-তুমি পাগল নাকি! কি উল্টাপাল্টা কথা বলছ! কবে তুমি টাকা রেখেছ আমার কাছে?
দরিদ্র লোকটা কান্না জড়িত কন্ঠে কাজিকে মনে করিয়ে দেবার চেস্টা করল কবে কিভাবে তার কাছে সে টাকাটা জমা রেখেছিল,
- আপনি হয়তো ভুলে গেছেন - মহামান্য কাজী। আমিই সেই যে আপনার কাছে...
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই কাজী ভয়ঙ্কর ক্ষেপে গিয়ে উচ্চস্বরে বলল;
-তোমার সাহস কত! আট’শ টাঙ্গা! তোমার চৌদ্দগুস্টি কখনো সপ্নে দেখেছে এক’শ টাঙ্গা! কোত্থেকে পেয়েছ তুমি আটশ টাঙ্গা -অ্যা?
দরিদ্রলোকটা বহু অনুনয় বিনয় করল। মেঝেতে পরে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদল । কাজী সেদিকে ভ্রুক্ষেপ তো করলইনা উল্টো চাকর ডেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল!
অনোন্যপায় দরিদ্র লোকটি কোন দিশা না পেয়ে প্রচন্ড হতাশা নিয়ে এক গাছের নীচে বসে বিলাপ করে কাঁদতে লাগল;
‘হায়! আমার সব কিছু হারিয়ে গেল। আমার বহুকষ্টের উপার্জন। ওই কাজী সবকিছু কেড়ে নিল আমার থেকে!’
সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল এক মাঝবয়েসী রমনী। দরিদ্র লোকটার বিলাপ করে কাঁদতে দেখে সে দয়াপরবশত; হয়ে তার কাছে এগিয়ে খুব মোলায়েম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
-তোমার কি হয়েছে ভাই? কেন তুমি এখানে বসে এমন বাচ্চাদের মত কাঁদছ?
দরিদ্র লোকটা কাদতে কাদতেই বলল,
-বোন আমার,আমার কষ্টের কথা তোমাকে কি বলব! আমি বছর ধরে না খেয়ে না ঘুমিয়ে রাত দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে কয়টা টাকা উপার্জন করেছিলাম, আজ তার সবগুলোই হারিয়েছি।’
-কি হয়েছে আমাকে খুলে বল? ’মহিলা তাকে জিজ্ঞেস করলেন।
দরিদ্র লোকটা তাকে গোড়া থেকে কিছু খুলে বলে সে তিক্ত কন্ঠে বলল,
-হায়! সবাই বলে এই কাজী নাকি সবচেয়ে সৎ ও ধার্মিক!
মহিলা তার কথা সব কথা শুনে বললেন,
‘মন খারাপ কোরনা কিছুই হারায়নি তোমার। ’চলো আমার সাথে চলো, ভেবে দেখি কি করা যায়।’
ভদ্রমহিলা তাকে তার নিজের বাড়ি নিয়ে গেলেন। তিনি প্রথমেই জোগার করলেন মজবুত বড় সড় একটা কাঠের বাক্স তারপর তার ছোট ছেলেকে কাছে ডেকে বুঝিয়ে বললেন ওর কি করনীয়;
‘আমি এই লোকের সাথে যাচ্ছি কাজীর সাথে দেখা করতে। তুমি দুর থেকে শুধু আমাদের লক্ষ্য করবে -সাবধান কেউ যেন না দেখে ফেলে। আমরা কাজীর বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়লে তুমি দ্রুত নিজেকে কোথাও লুকিয়ে ফেলবে -এবং অপেক্ষা করবে যতক্ষন পর্যন্ত না কাজী এর টাকা ফিরিয়ে দেয়। সে টাকা ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির মধ্যে ঢুকে চিৎকার করে বলবে,মা বাবা তার উট আর মালসামানা নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছে। ঠিক আছে?’
‘ঠিক আছে মা -তুমি যেভাবে বলেছ আমি ঠিক তাই করব।’ ছেলেটি বলল।
ভদ্র মহিলা তার সেই বাক্সটি তার মাথায় চাপিয়ে দরিদ্র লোকটিকে নিয়ে কাজীর বাড়ির দিকে রওনা হল। ছেলেটি তার কথামত তাদের পিছু পিছু গেল।
কাজির বাড়ির কাছে আসতেই মহিলা দরিদ্র লোকটাকে বলল,
-তুমি এখানে দাড়াও। আমি আগে ঢুকি - কিছু পরে তুমি ঢুকবে।
কাজী তাঁর মাথায় বড় সড় একটা বাক্স দেখেই বেশ উৎসাহের সাথে জিজ্ঞেস করল,
-বোন আমার- কি ব্যাবসার উদ্দেশ্যে এখানে এসেছ?
ভদ্র মহিলা প্রতিউত্তরে বললেন,
-আপনিতো আমার কথা শুনে থাকবেন মহামান্য কাজী সাহেব।’ আমি রহিমের স্ত্রী। ওই যে ধনী ব্যাবসায়ী রহিম ! চিনেছেন?
-হ্যা হ্যা চিনবনা কেন। বিলক্ষন চিনি।’
-আমার স্বামী তার কাফেলা নিয়ে ব্যাবসায়ের উদ্দেশ্যে দুর দেশে গিয়েছেন। জানিনা কবে ফিরবেন। বহুদিন ধরে আমি শান্তিতে ঘুমোতে পারছিনা। আমার বাড়ির চারপাশে চোর-ছ্যাচ্চোড়ে ভর্তি। আমার মনে হয় তারা আমার বাসায় চুরি করার ধান্ধা করছে।
এই বাক্সটার ভিতরে আমাদের গয়না-গাঁটি,হিরে –জহরত,টাকা -পয়সা সব কিছু রক্ষিত আছে। এইটে এখানে বয়ে আনতে বেশ কষ্ট হয়েছে। যা ভারী! আমি আপনার কাছে এগুলো গচ্ছিত রাখতে এসেছি। আমার স্বামী ফিরে এলে তিনিই এসে এগুলো নিয়ে যাবেন।’
কাজী বাক্সটার উপরে হাত বুলিয়ে মনে মনে ভাবল ;
‘এরমধ্যে কমপক্ষে চলি­শ পঞ্চাশ হাজার টাঙ্গা নগদ আছে । আর হিরে জহরত মিলে লাখ ছাড়িয়ে যাবে । রহিম ব্যাটার কথা অনেক শুনেছি। এ রাজ্যের সবচেয়ে ধনীদের একজন ।’বাক্স থেকে নজর সরিয়ে সে মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল;
-ঠিক আছে বোন আমার। আমি এই সম্পত্তি¡গুলো শুধু তোমার ভালর জন্য আমার জিম্মায় রেখে দিচ্ছি। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পার। সবকিছুই ঠিক টাক ফেরত পাবে। এখান থেকে একটা টাঙ্গাও হারাবে না।’
মহিলা একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে কাজীর দিকে তাকিয়ে বলল;
-সত্যিইতো এগুলো আমি ঠিকঠাক ফেরত পাব?’
-তুমি সারা রাজ্যের লোকের কাছে আমার কথা জিজ্ঞেস করতে পার। আমি কতটা সৎ ও ধার্মিক। বিন্দুমাত্র সন্দেহ কোরনা আমার উপরে।’
ঠিক তখুনি সেই দরিদ্র লোকটা সেখানে প্রবেশ করল।
কাজী তাকে দেখেই ভীষন উৎফুল্ল­ হয়ে মনে মনে ভাবল,‘ঈশ্বর যেন স্বর্গ থেকে ঠিক সময় মত এঁকে পাঠিয়েছে !’ আমার সততা প্রমান করার মত এখন এর থেকে বড় মওকা আর মিলবে কোথায়! মহিলার সন্দেহ দুর করার জন্য আমি এই ফকিরটার তার সব টাকা পয়সা ফিরিয়ে দিয়ে - বিনিময়ে এই টাকা আর হিরে জহরত ভর্তি বাক্সটা যে করেই হোক নিজের কাছে রেখে দিব। এ সব কিছু আমারই হবে হাঃ হাঃ!’
কাজী মহিলার দিকে ঘুরে বলল,
-‘আমি ফের বলছি তোমাকে,বোন,তোমার এই টাকা পয়সা গচ্ছিত রাখার জন্য এর থেকে ভাল কোন জায়গা পাবেনা ।তোমার নিজের কাছে রাখার থেকে অনেক ভাল এগুলো আমার জিম্মায় রেখে যা। তুমি যখনই চাইবে তখুনি এগুলো ফেরত পাবে।’
আশেপাশে দাড়িয়ে থাকা কাজীর কিছু তোষামোদকারী আর বিশ্বস্ত চাকর -বাকরেরা তার প্রতিটা কথায় এমন ভাবে মাথা নাড়ছিল যে কাজীর প্রতিটা কথাই সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাসযোগ্য,এ রাজ্যে উঁনার থেকে সৎ লোক মেলা ভার !
কাজী এবার সেই দরিদ্র লোকটাকে দেখিয়ে উচ্চস্বরে বলল;
-একে দেখো;এই লোকটা যে তার সব সঞ্চয় আমার জিম্মায় রেখেছে! আজ সকালে এসে তার টাকাগুলো ফেরত চাইলে আমি প্রথমে তাকে চিনতে পারিনি বেশভুষা দেখে ভেবেছিলাম কোন চোর বা প্রতারক। তখন তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। এখানে যদি কেউ তাকে চিনে থাকে- তার পক্ষ হয়ে জামিন দেয়,তাহলে তার জমা রাখা প্রতিটা পয়সা এইমুহুর্তে ফিরিয়ে দিতে রাজী।’
কাজীর কথা শেষ হতেই ভদ্রিমহিলা বললেন,
-মান্যবর কাজী সাহেব,আমি এই আমি এই নিঃস্ব লোকটাকে কমপক্ষে দু’বছর ধরে চিনি। সে গ্রাম থেকে এসেলি শহরে কাজের উদ্দেশ্যে অর্থ উপার্জনের জন্য হেন কাজ নেই যা সে করেনি। কি পরিশ্রমটাই না সে এতদিন করেছেৎ! আমার ওখনেও সে কয়েকবার কাজ করেছে। বিশ্বাস করুন- আমি এমন পরিশ্রমী লোক আমার জীবনে আর দেখিনি। আমার ধারনা,অন্য যে কোন মজুরের চাইতে সে এ কদিনে অনেক বেশী টাকা কামিয়েছে।’
‘তুমি একে চেন! ’কাজী বেশ উতফুল্ল হয়ে বলল;তাহলেতো আর কথাই নেই -আসো ভাই এদিকে এস;নাও তোমার টাকা সব গুনে নাও।’
কাজী তার সিন্দুক থেকে টাকার থলেটা বের করে তার মালিককে বুঝিয়ে দিল। এবার ফের মহিলার দিকে ফিরে বলল;
-দেখলেতো বোন;নিজের চোখে দেখলে আমার এখানে টাকা পয়সা রাখা কত নিরাপদ! এই তল্লাটে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে অত্যান্ত বিশ্বাস যোগ্যতার সাথে কারো জমা রাখা ধন রত্ন তার মালিককে চাহিবা মাত্র বুঝিয়ে দেয়।’ বাক্সটা এখানে রেখে তুমি নিশ্চিন্ত মনে বাড়িতে ফিরে যেতে পার।”
কথাটা বলেই কাজী বাক্সটা নিজের জিম্মায় নেয়ার জন্য হাত বাড়াল।
ভদ্র মহিলা যখনি কাজীর হাতে বাক্সটা দিতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে ‘তার ছেলে চিৎকার করতে করতে সেই ঘরে ঢুকল;
-মা! মা! তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসো! বাবা ফিরে এসছে!’
-ও তাই নাকি! কি বলছ! অবশেষে সে ফিরল! আর আমি ভেবেছিলাম না জানি কবে ফিরবে!’ মহিলার মুখ খুশীতে ঝলমল করে উঠল। “যাক বাবা! অযথাই কাজ কে এইসব ধনসম্পত্তি রাখার ঝামেলায় জড়াচ্ছিলাম। তোমার বাবা যখন ফিরে এসছে তাহলেতিনিইতো এসব দেখেশুনে রাখতে পারবেন।”
মহিলা এ কথা বলে,কাজীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বাক্সটা ফের মাথায় নিয়ে দরিদ্র লোকটাকে সাথে নিয়ে ফিরে গেল বাড়ির পথে।
“কখনো হতাশ হইও না,ভাই,”সে যেতে যেত বলল।“মনে রেখ পৃথিবীতে এমন কোন প্রতারক নেই যে কুটচালে সবসময়ই সফল হবে।
তুমি তোমার জীবনের অনেক বেশী সময় ভয়ঙ্কর কষ্টে কাটিয়েছ। এখন তোমার সুখের সময়। এখন যাও তোমার পরিবারের কাছে ফিরে ফিরে গিয়ে এই কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বাকী জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটাও।’
বিদায় নিয়ে তারা দুজনে ভিন্ন চলে গেল।
ওদিকে কাজী তার বোকামীর জন্য বসে বসে রাগে দাঁত কিড়মিড় করছে। তার নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। সে মাথা চাপড়ে বিলাপ করতে লাগল’
“এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী লোক আমি! সে বিড়বিড় করে বলতে লাগল।“
কি ভয়ঙ্কর দুর্ভাগ্য আমার। ইশ্ ওই ব্যাটা রহিম যদি মারা যেত! কি হত সে যদি সামান্য একটু দেরী করে আসত। একবার যদি মাল সামানা গুলি আমার জিম্মায় রাখতে পারতাম। ওহহো! তাহলে এমুহুর্তে আমি কত টাকার মালক হতাম... আমার বড় সিন্দুকটা ভরে যেত সোনা গহনা আর দামী জহরতে।। আর কখনো আমি আর এমন সুযোগ পাব না- আর কখনো না।”
লোভী কাজীর বড় ধরনের প্রতারনা করার এই সুযোগ হারানোর বেদনা কোনদিনও ঘুচলো না।।

ভাষান্তর ও রুপান্তরঃ শেরজা তপন
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×