somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেটা এক স্বর্গ ছিল- যা চিরতরে হারিয়ে গেছে!

১৩ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন একদিন; আমি সোভিয়েত ইউনিয়নের যুগের কথা বলছি। জীবন যাত্রা ছিল অনেক বেশী সুখী আর সহজ কিন্তু সমৃদ্ধ নয়। তবে বেশীরভাগ লোক তাদের কাজ আর জীবন যাত্রা নিয়ে বেশ সস্তুষ্ট ছিল। অল্প কিছূ মানুষ -হয়তো কোন কোন সমাজে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।এরা কখনোই কোন অবস্থাতেই সুখী নয়-


মি এদের কথা বলছিনা। আমি বলছি সোভিয়েত সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কথা। যারা সমাজতন্ত্রের বিখ্যাত মতাদর্শ নিয়ে একখানে বন্ধুর মত জড়ো হত। হারিয়ে যাওয়া সেই স্বর্ণযুগের কথা এখন বয়স্করা গল্প করে শোনায় "soft Soviet education" (доброе советское воспитание - in Russian; দোব্রোই সোভিতস্কোই ভোস পিসানিয়ে) উঠতি বয়সী তরুন-তরুণীদের যাদের তখনো জন্ম হয়নি কিংবা জন্ম হলেও নেহায়েৎ শিশু ছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে একটি বিশাল দেশ টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে গিয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে সেই নাম -পেরিয়ে গেছে তিরিশ বছরের অধিককাল সময়। তারা পেয়েছে বহু আরাধ্য তথাকতিথ বাক স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু তাতে করে কতটুকু সুখী ও সমৃদ্ধ করেছে সেই জাতিকে,ওদের অন্তরের মধ্যে একটু ঢুঁ মেরে দেখুন?
বহু প্রাক্তন সোভিয়েত নাগরিকদের জিজ্ঞেস করে দেখুন, তাদের অন্তরে এখনো সোভিয়েত দিনের সেই সুখস্মৃতি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন-------~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজাভেন্নি সোভিয়েস্কিঃ Unforgettable Soviet
কিরগিজস্তান থেকে সাশা
সাশা একজন ৬৮ বছর বয়সী রাশিয়ান (২০১০ সালে বিশকেকে দেখা হয়েছিল)। তিনি ১৯৭০ -এর দশকে একটি ধাতব কারখানায় কাজ করার জন্য বিশকেকে এসেছিলেন। তিনি তার স্ত্রীর সাথে কিরগিজ রাজধানীর একটি শহরতলিতে অবস্থিত কারখানার একটি কলোনির বাড়িতে থাকতেন। তাদের একমাত্র সন্তান নাদিয়া রাশিয়ায় হেয়ারড্রেসার হিসেবে কাজ করত। তিনি এখন অবসরপ্রাপ্ত,অতি অল্প কিছু টাকা তিনি পেনশন বাবদ পেয়েছেন। তিনি আমাকে বেশ আবেগী কম্পিত কণ্ঠে সোভিয়েত যুগ সম্পর্কে বলেলন যে, তিনি রাশিয়া এবং কিরগিজস্তান উভয় দেশ সন্মন্ধেই জানেন।
‘ আমি সাইবেরিয়ায় সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে চাকরি করে- চেলিয়াবিনস্ক মেটালার্জিক্যাল( মেতালুর্জিকাল) ফ্যাক্টরিতে চাকুরি পাই,আমরাই প্রথম মধ্য এশীয় কর্মী যারা সেখানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিল। বিশকেকে তখন সেনাবাহিনীতে আমার পরিচিত বন্ধুরাও ছিল। আমি কারখানার একটি দলের প্রধানের দায়ীত্বে ছিলাম।
তুমি জানো সেই ৮ই মে এবং ২৩ফেব্রুয়ারি ক্রেমলিন চত্বরে প্যরেড মার্চের কথা? সবই এখন স্বপ্ন মনে হয়। তুমি সে সময়ের গল্প জানো না; তোমার বাবা -মাকে জিজ্ঞাসা কর,তারা তোমাকে বলবে: হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলি অনেক সুন্দর ছিল। আসলে না হারালে আমরা কোনদিন জানতামই না কি হারিয়েছি। সবকিছুই ছিল তখন নিজেদের; মাথা গোঁজার ঠাই,নিশ্চিত জীবনযাপনের জন্য ছোট কিংবা বড় একটা চাকুরি,মাসান্তে বেতন- সেটা অঢেল না হলেও মোটামুটি সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ঠ ছিল। বিনামূল্যে চিকিৎসা ছিল,সপ্তাহান্তে আমরা সিনেমা,পার্ক ও গ্রীষ্মে পাহাড়ে কিংবা দাচায় যেতাম। জীবনটা খুব বেশী উপভোগ্য না হলেও বেশ ভালো ছিল। আমাদের চাহিদা ছিল কম-সপ্নের গন্ডি বাঁধা ছিল, তবুও সেটুকুতেই আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম।
আর আজ,তুমি শুধু চিন্তা করো কিভাবে আরো টাকা কামাবো। সৌভাগ্যবশত আমাদের পেনশন এবং আশ্রয় আছে। অন্যথায়,আমি জানিনা কিভাবে বেঁচে থাকতাম ... যখন আমি যুবক ছিলাম তখন একবারের জন্যও ভাবিনি যে, আমার শেষ জীবনটা এইভাবে বিশকেকে কাটবে।
আমি ভেবেছিলাম অবশেষে একদিন আমি রাশিয়ায় ফিরে যাব- যদিও সেখানে আমার পরিবারের কেউ নেই তবুও। আমার যৌবনটা কাটিয়েছি সেখানে। আমার স্কুলের বন্ধুদের সাথের ছবি এখনো আমার কাছে আছে-যখন আমি কমসোমল ( কমসোমল- স্কাউটের মত, রাশিয়ান ইয়াং কম্যিউনিষ্ট লীগ) এর পাইওনিয়ার ছিলাম। ক্রেমলিনে আমি সেই প্যরাডে আমি সোভিয়েত পতাকা বহন করেছি ... "
সাশার কথাগুলো অন্য অনেকের মনের কথা-তার বা তার কাছাকাছি বয়সের মধ্য এশিয়ার- রাশিয়ানরা প্রায় একই ধারনা লালন করে। ইউ এস এস আর ভেঙ্গে যাবার পরে নতুন এই রাশিয়া তাদের কাছে ভীষণ অপরিচিত লাগে- নিজেদেরকেও এখানে বহিরাগত মনে হয়।
এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে স্বাধীনতার পর মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর নতুন ঘোষিত আইন সংখ্যালঘু রাশিয়ানদের প্রস্থান করতে প্ররোচিত করেছিল,যারা সোভিয়েত আমলে বিশেষাধিকার লাভ করেছিল। যদি অনেক তরুণ রাশিয়ান রাশিয়ায় চলে যায়,বয়স্ক ব্যক্তিরা এখনও এই প্রজাতন্ত্রগুলিতে রয়ে গেছে যেখানে তাদের মধ্যে অনেকেই দুই বা তিন প্রজন্ম ধরে বসবাস করেছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে,সোভিয়েত শাসনের পতনা যা সবার জন্য ব্যাপক আশ্বস্তকর অনুভূতি প্রদান করেছিল ।
যেখানে জন্ম থেকেই মানুষ তাদের জীবনকে সামাজিক ব্যবস্থার হাতে তুলে দেয়- যার মুলে ছিল কম্যুনিস্ট পার্টির দায়দ্ধতা! তারা পুরো সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগনের কাছে একযোগে পৌছে দিয়েছিল কিন্ডারগার্টেন,স্কুল,স্কাউট (কমসোমল) আর্মি ট্রেইনিং,উচ্চশিক্ষা,উদ্যাম ও কর্মপ্রচেষ্ট, সবার জন্য কাজ,অবকাশ যাপন কেন্দ্র,চিকিৎসা ও বাৎসরিক লম্বা ছুটি। প্রত্যেকেই সেই যুগে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে ছেড়ে দিয়ে নিজেকে দারুন নিরাপদ মনে করত। এখন সেই নিরাপত্তার দায়িত্ব বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে নেই। বিশাল সেই দেশটা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে গিয়ে পনেরোর অধিন স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছে। বেশিরভাগ দেশ এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তারা শুধু পরিচালিত হয়েছে পরিচালকের চেয়ারে কখনো বসেনি। শিক্ষা কর্মসংস্থান চিকিৎসা আর নিরাপত্তা দিতে তারা অনেকাংশেই ব্যর্থ! কাজাখস্তান থেকে সুদুর আলমাজ পর্যন্ত সবাই অপ্রত্যাশিত সেই ভয়ঙ্কর ভাঙ্গনের খেলায় দিশেহারা পর্যদুস্ত!

~তিন পর্বের প্রথম পর্ব সমাপ্ত~

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:২১
৩১টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×