আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
ভোরের শুরু থেকে রাতের দ্বি-প্রহর পুরোটা সময় আমার এলিনার কাছে পিঠে থাকতে হয়। অল্প বয়সীরা যা হোক আকার ইঙ্গিত আর অতি ভাঙ্গা ইংরেজি বুঝে নেয়, সমস্যা হয়েছে মুরুব্বীদের নিয়ে।
ওদিকে ববি আমার বন্ধুু সুমনকেও কব্জা করেছে। সারাদিন ওর টিকিটির দেখা নেই। সকালে নাস্তার টেবিলে ববিকে কাছে পেয়ে অনুযোগের স্বরে বললাম; দোস্ত তোমরা-তো হেব্বী মোস্ত মাস্তি করতেছ, আমারে এই গ্যাঁড়াকলে ফাঁসাইল ক্যান?
ও ফিচেল হাসি দিয়ে বলল, তোর ডার্লিং তুই সামলা।( কথোপকথন রুশ ভাষায় ছিল- কেউ কিচ্ছু বোঝেনি)। যদিও ঘর ভর্তি রমণী বিশেষ করে এলিনার আসে পাশে থাকতে আমারও ভাল লাগছিল কিন্তু বিষয়টা ও কিভাবে নিচ্ছে সেটা যাচাই করতে একটু খানি ভণিতা।
আজ সন্ধ্যায় এলিনার আর ববির গায়ে হলুদ। বর পক্ষের হোল সবাই আর কনে পক্ষের আমি সবে-ধন। এক্কেবারে একেলা পড়ে যাই তাই বন্ধু সুমনকে দলে ভেড়ালাম। যদিও সে বুঝে গেছে তাঁর কর্মকাণ্ড ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা মাফিক হবেও তবুও এলিনার আশে পাশে থাকতে পারবে ভেবে চরম খুশী।
এলিনাকে সোনালী পাড়ের হলুদ শাড়ি আর গাঁদা ফুল দিয়ে সাজিয়ে মঞ্চে বসানোর পরে আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাই আরকি! আশে পাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখি কারো চোখের পলক পড়ছে না। একই মঞ্চে দুজনের হলুদ হবে। তবুও মেয়েরা এসে আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে খানিকটা জোড় করে এলিনার পাশে নিয়ে বসাল। আমার খানিকটা ছোঁয়ায় ও যেন ভীষণভাবে কেঁপে উঠল।
বহুদিন বাদে ওর শরীরের উষ্ণতা আমাকে আবিষ্ট করল-আমার মস্তিষ্ক বিবশ হয়ে পড়ল ওর শরীরের মাতাল করা ঘ্রাণে।
গায়ে হলুদ ব্যাপারটা এলিনার পরিচিত সমাজে ভীষণ অন্যরকম একটা বিষয়। সে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। কি করতে হবে- কিসের পরে কি হবে সবকিছু তাঁর ধারনার বাইরে।
ও আমার দিকে ফিরে রক্তিম চেহারায় হেসে বলল, তোমার এই পোশাক মানিয়েছে ভাল।
আমি ধন্যবাদ দিয়ে বললাম; তোমাকে আজ অন্যরকম লাগছে।
এবার সে বোকার মত ফের হেসে বলল, আমিতো কিছুই জানিনা কি করতে হবে। যদিও ববি আমাকে অভয় দিয়েছে; বলেছে সবাইকে বাংলায় ‘ধন্যবাদ’ দিতে হবে আর যে খাবার মুখের কাছে এগিয়ে দিবে তা থেকে একটু একটু খেতে হবে। এ ধরনের খাবার-তো এ জন্মে আমি কোনদিন খাই নি!
-কোন সমস্যা নেই। সব মিষ্টি জাতীয় খাবার। ভালো না লাগলে মুখের মধ্যে রেখে কিছুক্ষণ পর পর টিস্যুর মধ্যে কায়দা করে ফেলে দিলে হবে।
আমার কথা শেষ হতে সে ফিক করে হেসে ফেলে বেশ লজ্জায় মাথা নিচু করল। তদ্দণ্ডে আমার মনে হোল এতো সত্যকারেই বাঙ্গালী বধূ।
সব মেয়েদের পরনে সোনালী পাড়ের হলুদ শাড়ি আর ছেলেদের কাঁচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি। চারিদিকে ভীষণ রকমের হলুদামেজ। এলিনার কাছে এই নতুনত্ব বিস্ময়কর! সে নার্ভাস ও অবাক দৃষ্টিতে চারিদিকের মানুষজনকে দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সবাই তাকিয়ে আছে ওর দিকে- উপস্থিত অতিথিদের কাছেও ব্যাপারটা একেবারেই নতুন। অতি সুন্দরী এক রুশ রমণী গায়ে হলুদের সাজে মঞ্চে উপবিষ্ট বিষয়টা ভীষণরকম ব্যতিক্রম! অভ্যাগতদের সারাজীবন গল্প করার মত উপকরণ!
অতিথি বেশী নয়- বাড়ির ছাদে মেরাপ বেঁধে ছোট খাট আয়োজন! সব মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেক মানুষ হবে।
প্রথমে মুরুব্বিদের পালা! ববির মা আসলেন- এলিনার কপালে প্রথম হলুদ ছোঁয়ালেন। এলিনা যেন কিঞ্চিত কেঁপে উঠল। আমি খালাম্মার সাথে খানিকটা খুনসুটি করলাম।আমার মজার কথায় কেউ মাইন্ড করে না। তিনি উল্টো আমার মুখেও খানিকটা হলুদ ছোঁয়ালেন। এলিনা আমার দিকে চোখ ঘুরিয়ে হেসে ফেলল। আমি খানিকটা বিব্রত।
উপস্থিত অতিথিদের বেশীরভাগের সাথেই এই দুই দিনে আমার কুশল বিনিময় হয়ে গেছে। আমি সবাইকে পরিচিত করানোর চেষ্টা করছি। মাঝে মধ্যা ববির সাহায্য নিচ্ছি। ও শালা বেশ সিরিয়াস ভঙ্গীতে হলুদ নিচ্ছে। রাতে মাল টেনেছে- এখনো মুখ দিয়ে সামান্য গন্ধ বেরুচ্ছে! তাই কথা বলছে সাবধানে। তবে দূর থেকে বন্ধুরা ইশারায় মজা করছে- আর সে লাজুক হেসে নীরবে প্রতিউত্তর দিচ্ছে।
বাড়ির গুড়া গাড়া বাচ্চা কাচ্চা, সবাই এক এক করে হলুদ দিচ্ছে। এলিনা আমার থিউরি ফলো করছে। কারো কারো প্রশ্ন আমার ইন্টারপ্রেট করতে হচ্ছে- কোনটা এলিনা নিজেই ইয়েস নো তে উত্তর দিচ্ছে। ববির ছোট বোন আর ওর বান্ধবীরা পড়ল আমাকে নিয়ে। সারা মুখে হলুদ লেপ্টে একাকার। এলিনা এসব দেখে হাসতে হাসতে কাত হয়ে পড়ল। তবে সব কিছুতে ববির প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল। তবে ইয়ার্কি ফাজলামি করলেও আমি বেশ সংযত ছিলাম।
সব বন্ধুদের শেষে আসল আমার পালা। প্রথমে ববিকে দিলাম পুরো মুখ লেপ্টে – এরপর আস্ত একটা রসগোল্লা ওর অনেক নেতিবাচক আবদার স্বত্বেও মুখে ঠেসে ভরে দিলাম। চারিদিকে হাসির হুল্লোড়! আঙ্গুলের মাথায় খানিকটা হলুদ নিয়ে – হলুদ ছোঁয়ানোর ছলে ওর কপোলটা ছুঁয়ে দিলাম – সারা শরীরের রক্ত যেন পুঞ্জীভূত হয়ে সহস্র বীণার ঝংকারে এটম-এর গতিতে ছড়িয়ে পড়ল।
~এলিনা আমার দিকে তাকিয়ে আছে নির্লিপ্ত নয়নে। তবে সারা মুখাবয়ব জুড়ে তীব্র বিদ্রূপাত্মক তাচ্ছিল্যের হাসি!
~প্রথম খন্ড প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:২৭