Hum, rahen ya na rahen kal
Kal yaad aayenge ke ye pal
কাল আমরা থাকি বা না থাকি,
কাল এই মুহূর্তগুলি মনে রাখবে,
মুহূর্তগুলো ভালোবাসার মুহূর্ত,
এসো -আমার সাথে চল,
এসো -ভেবেছ কি জীবনটা কত ছোট,
কাল-কে ফের পেলে কতইনা সৌভাগ্যের হবে।
আমরা থাকি বা না থাকি, এই মুহূর্তটি আমরা মনে রাখব।
রাতের আঁধার ভেঙ্গে দিয়ে
দেখো সেই রাত কত সুন্দর,
এসো -আমরা দুজনে মিলে
লিখি তোমার-আমার এই প্রেমের গল্প
আমরা থাকি বা না থাকি, এই মুহূর্তটি কাল আমাদের মনে রাখবে।
আসন্ন সকাল,জানিনা নতুন কোন রঙের খেলায় মাতে
আমার ইচ্ছাগুলোকে রেখে দিও কোন এক চিহ্নের মত
আমরা থাকি বা না থাকি, এই মুহূর্তটি আমরা মনে রাখব।
কাল আমরা থাকি বা না থাকি,
কাল এই মুহূর্তগুলি মনে রাখবে,
মুহূর্তগুলো ভালোবাসার মুহূর্ত,
এসো -আমার সাথে চল,
এসো -ভাবি জীবন কতই না ছোট,
কাল-কে ফের পেলে কতইনা সৌভাগ্যের হবে।
আমরা থাকি বা না থাকি, এই মুহূর্তটি আমরা মনে রাখব।।
* কাল বলতে আগামীকাল বোঝানো হয়েছে।
--------------------------------------------------------
নব্বুই এর দশকের শেষভাগে ভারতের অন্যতম প্রতিভাবান মিউজিক ডিরেক্টর লেসলি লুইস ওয়েষ্টার্ন গানের নতুন এক ধারার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ভারতবর্ষকে। রক সং! স্বনামধন্য গীতিকার মেহেবুবের কলমের ছোঁয়া আর কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ নামের তরুন এক শিল্পির অসাধারন কন্ঠে নেচে উঠল সারা ভারতের তরুণেরা। শুধু কি ভারত- বাংলাদেশ পাকিস্থান হয়ে নেপালের যুবারাও চরম আবেগে কে কের কন্ঠের সাথে সুর মেলাতে লাগল। দুর্দান্ত এই প্রেমের গানটি শেষ-মেষ বন্ধুদের গান হয়ে গেল, আড্ডার জনপ্রিয় গান হয়ে গেল। যারা অল্পসল্প হিন্দি জানে তাদের সরল সহজ এই কথাগুলো হৃদয়াঙ্গম করতে কষ্ট হয়নি। হিন্দি বিমুখ চরম জাতীয়তাবাদী ঘরনার অনেক ছেলে-মেয়েরাও লুকিয়ে কে কের এই গান শুনত।
আমরা অনেক কিছুকেই অতি আবেগে জাতিগত কিংবা ভাষাগত কারনে আঞ্চলিক করে ফেলতে চাই- অবহেলাভরে ভালো সৃষ্টিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি। এর ব্যতিক্রম নন খোদ ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষাভাষির ভারতীয়রাও। কে কের মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গবাসীদের উন্মাদনা দেখে জনপ্রিয় এক বাঙ্গালী গায়ক রুপঙ্কর খেপে উঠল। তার কথাটা এমন; আমরা অনেকেই কে কের থেকে ভাল গাই কিন্তু সব আলোটাই কে কের মত শিল্পী কেড়ে নেয়- আমরা থাকি ব্রাত্য, আজ পয়সার জন্য গান ছেড়ে আমাকে অভিনয় করতে হয়। তার এই কথায় ফেসবুক ইন্সটাগ্রামে নিন্দার ঝড় উঠল। স্বাভাবিকভাবেই বেচারা কোণঠাসা হয়ে পড়ল। সে সম্ভবত একবার আমাদের জেমস-এর হিন্দি সিনেমাতে গান গাওয়া নিয়েও এমন ধারার মন্তব্য করেছিল- তখন বাংলাদেশীরাও ক্ষেপে গিয়েছিল।
------------------------------------------------
অবশেষে তার পক্ষালম্বন করলেন ওপার এপার বাংলার জনপ্রিয় জীবনমুখী ধারার গানের শিল্পী’ নচিকেতা’। লোকটার ঠোঁটকাটা হিসেবে অপবাদ আছে। তবে কথাগুলো ভাল বলেছে। গুনী শিল্পীদের সম্মান করতে জানেন তিনি;
রাজার মতো মৃত্যু হয়েছে কেকে-র। এমন মৃত্যুই তো সকলে চায়। আমরা শিল্পীরা আসলে জনসমুদ্রে মিশে যেতে চাই। ওই ভিড়ে পিষ্ট হতে চাই। ভিড়ের চাপে মরে যেতে চাই। ওখানেই তো শিল্পীর সার্থকতা। শ্রোতাদের ভিড়ে এক জন শিল্পী মিশে গিয়ে জীবনের শেষ গান শোনাচ্ছেন, এটাই শিল্পীর স্বপ্ন। কেউ কেউ বলছেন, ভিড়ের কারণেই মৃত্যু হয়েছে কেকে-র। মোটেও নয়। গাঁন্ধীজী জনসমুদ্রে মিশেছেন। ইন্দিরা গাঁন্ধী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনকি নরেন্দ্র মোদীও জনসমুদ্রে মিশে যেতে চান। যানও। ওঁরা রাজনৈতিক ‘পারফর্মার’। আমরাও ‘পারফর্মার’, তবে সাংস্কৃতিক। আমাদের সকলেরই এই ভিড়ের খিদে থাকে। মাইকেল জ্যাকসনের ছিল। এলভিস প্রেসলির ছিল। কেকে-র ছিল। আমার আছে। আমি গত ৩০ বছর ধরে এই জনসমুদ্রে মিশছি। দুর্ভাগ্য, কেকে-র মতো মৃত্যু হল না। ও আমার থেকে কয়েক বছরের ছোট ছিল। তা-ও বলব, রাজার মতো গিয়েছে। ওর মৃত্যু আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। বাঙালি যে ওকে এত ভালবাসে, সেটা দেখে ভালও লাগছে।
আমি পাহাড়ে বেড়াতে এসেছি। কাল রাতেই কেকে-র কথা শুনেছি। আজ জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়(বাঙ্গালী অভিনেতা) ফোন করেছিল। ও-ই আমাকে বলল, ‘‘দাদা তোমার গান কেকে খুব পছন্দ করত। বিশেষ করে রাজশ্রী।’’ আমি তো শুনে চমকে উঠলাম। ও আমার গান শুনত! কেকে এত ভাল গান গাইত! আমি তো ওর ফ্যান ছিলাম। কিন্তু ও আমার গান শুনত জানতে পেরে, ভাল লাগছে। আসলে বাঙালিকে সারা ভারত শোনে। শুধু বাঙালিই সেটা বুঝতে পারে না।
রূপঙ্করও আমার থেকে ছোট। ছোটদের অভিমান অনেক বেশি। ওরা বাংলার কথা বলতে চায়। বাংলা সংস্কৃতিকে ওরা আন্তর্জাতিক করতে চায়। আসলে কী জানেন তো, রবীন্দ্রনাথ নোবেল না পেলে তিনিও আঞ্চলিক কবি হয়ে থেকে যেতেন। সত্যজিৎ রায় এই কলকাতায় পুরনো বাড়িতে থাকতেন। আর সুভাষ বোস বাংলোয় থাকতেন। কার পরিচিতি সর্বভারতীয় স্তরে বেশি? বাঙালিদের অভিমান আছে। থাকবে। আমার নেই।~ শিল্পী নচিকেতা
-------------------------------------------------
~ কেকে অন্য কত কি জনপ্রিয় গান গেয়েছে কি না গেয়েছে সেই নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা ব্যাথা নেই। অনেক কম শিল্পীর সৌভাগ্য হয় একটা মাস্টারপিস গান গাইবার। কেকে সেই সুযোগ পেয়েছিল ‘পল’ বা 'মুহুর্ত' গানে।
এখনো আমি আবেগে মথিত হই তার সেই গানের সুর আর কথায়।
---------------------------------------
কলেজের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে হোটেলে ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন গায়ক কেকে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ। তরতাজা কেকের এ ভাবে, অসময়ে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তাঁর গানের ভক্তরা। এখনও তাঁদের কানে একটানা বেজে চলেছে, ‘হাম রহে ইয়া না রহে কাল…’
কেকের মৃত্যুর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর প্রকাশ্যে এসেছে একটি সিসিটিভি ফুটেজ। তাতে দেখা যাচ্ছে, হোটেলের লবিতে হেঁটে যাচ্ছেন কেকে। মনে করা হচ্ছে, লিফ্ট থেকে নেমে ওই লবি দিয়ে হেঁটেই ঘরে পৌঁছন শিল্পী। লিফ্টে ওঠার পর দৃশ্যত অসুস্থ লাগছিল তাঁকে। নিউ মার্কেট এলাকার ওই বিলাসবহুল হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে অবশ্য কেকে-কে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি। বরং স্বাভাবিক ছন্দে হাঁটতে হাঁটতেই চলে যেতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। পাশে ছিলেন ম্যানেজার হিতেশ ভাট। কেকের পরনে ছিল অনুষ্ঠানেরই পোশাক, গলায় একটি সাদা তোয়ালে ছিল। যে তোয়ালে দিয়ে অনুষ্ঠানে বার বার ঘাম মুছতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। হিতেশের সঙ্গে গল্প করতে করতেই লবি দিয়ে সোজা হেঁটে ঘরের দিকে চলে যান তিনি।
হিতেশ জানিয়েছেন, নিজের ঘরে ঢুকেই একটি সোফায় বসতে গিয়ে পড়ে যান কেকে। তখন টেবিলের কোনায় মাথা ঠুকে কেটে যায়। হিতেশ চিৎকার করে হোটেলের কর্মীদের ডাকাডাকি শুরু করেন। ততক্ষণে অচেতন হয়ে পড়েছেন কেকে। হোটেলকর্মীরা চিকিৎসককে ফোন করেন। চিকিৎসক বিপদ বুঝে কেকে-কে একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। অত কম সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা না হওয়ায় হোটেলের গাড়িতে তুলেই ইকবালপুর রওনা হতে হয়। কিন্তু যাত্রাপথেই সব শেষ।
ওপারে ভাল থাকুন প্রিয় শিল্পী।
• অনুবাদটা হয়তো ঠিক ঠাক হয়নি। কবিতা লেখা আমার কম্মো নয়।
লেখা সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা ও উইকি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২২ সকাল ১১:৪৭