somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসল তথ্য কি????

২৯ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গতকালের পত্রিকার দুটো সংবাদ নিয়ে আমি ব্যাপক কনফিউজড। যদিও আমি এসব আলোচনা থেকে নিজেকে দূরে রাখি তবুও নিজেকে নিবৃত করতে পারলাম না;
দেশে মজুদ ও তেলের ঘাটতি নেই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পেট্রোল অকটেন রয়েছে। ডিজেল কিনতে হবে। কিন্তু আপনাকে পেট্রোল-অকটেন কিনতে হবে না। দেশে মজুদের কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখন যে মজুদ আছে তা দিয়ে আমরা তিন মাস, ছয় মাস, নয় মাসের খাদ্য কিনতে পারি।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি সেখান থেকে বাই প্রোডাক্ট (উপজাত) হিসেবে রিফাইন করা পেট্রোলও পাই, অকটেনও পাই। বরং যতটুকু চাহিদা তার থেকে অনেক বেশি পেট্রোল এবং অকটেন ? আমাদের আছে এগুলো অনেক সময় বাইরে বিক্রিও করি। -বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৮শে জুলাই( হুবুহু তুলে ধরা হল)
মন্তব্যঃ হে মোর মওলা এতদিন পরে এসে জানলাম বাংলাদেশ পেট্রোল/ অকটেন রপ্তানি করে!!! আমার এই দেশে থাকার কোন যোগ্যতা নেই।
--------------------------------------
ডিজেল চাহিদা মিটবে ৩২ দিনের : বিপিসি- বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৮শে জুলাই( হুবুহু তুলে ধরা হল)
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেছেন, যে পরিমাণ ডিজেল মজুদ আছে, তাতে সারা দেশের ৩২ দিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। একই সঙ্গে বর্তমানে পেট্রোলের মজুদ ১৫ দিনের, অকটেনের নয় দিনের, ফার্নেস অয়েল ৩২ দিনের, জেট ফুয়েল ৪৪ দিনের মজুদ আছে। গতকাল বিপিসির ঢাকা লিয়াজোঁ অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ একটি চক্রাকার প্রক্রিয়া। আজকে যে অকটেনের 'মজুদ নয় দিনের, দু-এক দিনের মধ্যে ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেনবাহী একটি জাহাজ আসবে। সেটা আসার পর মজুদের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮ দিনের।
জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে চিন্তিত নয় বিপিসি। আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনা তৈরি করা আছে। এই সাইকেলে কোনো সমস্যা নেই। পেট্রোলের শতভাগ দেশেই উৎপাদন হয়। এর সঙ্গে মজুদের কোনো সম্পর্ক নেই । বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, কোনো পেট্রোল পাম্পকে তেল কম বা নির্দিষ্ট পরিমাণ দেওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যারা নিজ উদ্যোগে এমনটা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনা তৈরি করা আছে। এই সাইকেলে কোনো সমস্যা নেই। দেশে বর্তমানে ডিজেল ৪ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন, অকটেন ১২ হাজার ২৩৮ মেট্রিক টন, পেট্রোল ২১ হাজার ৮৮৩ মেট্রিক টন, জেট ফুয়েল ৬২ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন এবং ফার্নেস অয়েল ৮৫ হাজার ৪১ মেট্রিক টন মজুদ আছে। সারা দেশে প্রতিদিন ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলের চাহিদা রয়েছে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা : বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি বা সংকট নেই। সংকটের কোনো আশঙ্কাও নেই। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের আওতাধীন কোম্পানিগুলোর ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ছয় মাসের জন্য প্রয়োজনীয় তেল আমদানির প্রক্রিয়া পাইপলাইনে রয়েছে। জুলাই মাসে ১৪টি জাহাজে এসেছে জ্বালানি তেল, আগস্টে আসবে আরও ১০ জাহাজ।
----------------------------------------------
এখন একটুখানি আলোচনা করি তেল গ্যাস নিয়ে( আমি এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই- ভুল থাকলে শুধরে দিবেন দয়া করে)

প্রাকৃতিক গ্যাসঃ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস পরিবহনের পাশাপাশি, প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) হিসেবে তৈরি করা বা গ্যাস-থেকে-তরল (GTL) প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসকে অন্যান্য তরল পণ্যে রূপান্তর করা যায়। GTL প্রযুক্তি প্রাকৃতিক গ্যাসকে তরল পণ্য যেমন পেট্রল, ডিজেল বা জেট ফুয়েলে রূপান্তর করতে পারে। Fischer–Tropsch (F-T), মিথানল থেকে গ্যাসোলিন (MTG), এবং সিন্থেসিস গ্যাস থেকে গ্যাসোলিন প্লাস (STG+) সহ বিভিন্ন GTL প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে। F–T সিন্থেটিক ক্রুড তৈরি করে যা আরও উন্নততর পণ্যে পরিমার্জিত হতে পারে। অন্যদিকে MTG প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে সিন্থেটিক পেট্রল তৈরি হতে পারে। প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে একক-লুপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি গ্যাসোলিন, ডিজেল, জেট ফুয়েল এবং সুগন্ধি রাসায়নিক তৈরি করা সম্ভব।

তেলের খনিতে গ্যাস পাওয়া যায়। কয়লার খনিতেও গ্যাস পাওয়া যায়- আবার গ্যাসের খনিতেও তেল পাওয়া যায়।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ২ কোটি ৮০ লক্ষ ব্যারেল তেলের মজুত রয়েছে। যা বিশ্বের মজুত তেলের ০.০% । এই তেল পুরোটা উত্তোলন করলেও এক বছরের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়।
বিশ্বের মোট চাহিদার মাত্র ০.১ ভাগ বাংলাদেশ ব্যাবহার করে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের কি আদৌ গ্যাসকে গ্যাসোলিন,ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনে এ রুপান্তর করার জন্য STG+ প্লান্ট আছে? গ্যাসকে যদি রুপান্তর করাই হয় তবে আমাদের দৈনন্দিন ব্যাবহার গ্যাস আসে কোত্থেকে?
এর শেষের উত্তরটুকু আছে এখানে- কিন্তু STG+ প্লান্টের মাধ্যমে উৎপাদিত পেট্রল ও অকটেন আসলেই কি আমাদের পুরো বছরের চাহিদা মেটাতে পারে?


STG+ প্লান্ট: চুল্লি ৪ থেকে মিশ্রণটি ঘনীভূত হয়ে পেট্রোলে/অকটেনে রুপান্তরিত হয় । নন-কনডেন্সড গ্যাস এবং পেট্রোল একটি প্রচলিত কনডেন্সার/সেপারেটরে আলাদা করা হয়। পণ্য বিভাজক থেকে বেশিরভাগ নন-কনডেন্সড গ্যাস পুনর্ব্যবহৃত গ্যাসে পরিণত হয় এবং ফিড স্ট্রীমে রিঅ্যাক্টর ১-এ ফেরত পাঠানো হয়।
-----------------------------------
পেট্রোলিয়ামঃ ভূগর্ভ থেকে যে তরল জ্বালানি তোলা হয় তাকে পেট্রোলিয়াম বলে। অপরিশোধিত তেলকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। পেট্রোলিয়ামে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদানের স্ফুটনাঙ্ক ভিন্ন ভিন্ন হয়। স্ফুটনাংকের উপর ভিত্তি করে তেল পরিশোধনাগারে পৃথকীকৃত বিভিন্ন অংশের নাম পর্যায়ক্রমে পেট্রলিয়াম গ্যাস,পেট্রোল (গ্যাসোলিন),ন্যাপথা,কেরোসিন, ডিজেল তেল,লুব্রিকেটিং তেল ও বিটুমিন। মিথেন ও ন্যাপথেন এবং এ্যারোমেটিক ক্রমের তরল হাইড্রোকার্বনের রাসায়নিক মিশ্রণই হচ্ছে খনিজ তেল।

এবার নীচে পেট্রোলিয়াম শোধনাগারে প্রক্রিয়াকরনের চিত্রটা দেখি;

চিত্র-১

এখন ভাবছি; আমরা আসলে পেট্রোল বা অকটেন কোথা থেকে পাই? পেট্রোলিয়াম(ক্রুড ওয়েল/অপরিশোধিত তেল) নাকি গ্যাস থেকে???

ওদিকে প্রধানমন্ত্রীর কথার কিছু সত্যতা মেলে ওইসি ওয়ার্ল্ড থেকে;
বাংলাদেশ প্রতি বছর ১৯.২ মিলিয়ন ডলারের পরিশোধনকৃত পেট্রোলিয়াম রপ্তানী করে( মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইউএ ই, ভারত ও বার্মার কাছে!!!) ফের ০.০% সারা বিশ্বের তেল রপ্তানী হিসেবে!
মন্তব্যঃ মারহাবা এইটা তো জানতাম না- এ দেখি তেল নিয়ে তেলেসমাতি কারবার!!!

কিন্তু ফের একি কথা শুনি( তথ্যঃ ওইসি ওয়ার্ল্ড)
বছরজুড়ে পরিশোধনকৃত পেট্রোলিয়াম আমদানি করে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের। আমদানী করা সেইসব দেশের তালিকায় ফের মালয়েশিয়া, ভারত ও সিঙ্গাপুর আছে!!! (ওরা তেল বেচে ফের কেনে কেন??)

পুরো বিষয়টা কাল থেকে আমার মাথায় খোচাচ্ছে! প্রধানমন্ত্রী কি ঠিক বলছেন নাকি বিপিসি নাকি ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য?
প্রধানমন্ত্রী সবকিছু জানবেন এটা মোটেই ভাবা উচিৎ নয়। কিন্তু তার পরামর্শক বা উপদেষ্টারা কি সঠিক তথ্য দিচ্ছেন তাকে? অন্য যে কারো বক্তব্য থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের গুরুত্ত্ব অনেক বেশী। তবে সঠিক তথ্যটা কি- আমরা কার উপর ভরসা করব?

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৪২
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×