ভাষান্তরঃ স্বর্গত শেরজা তপন
মুলঃ স্বর্গবাসী নাম না জানা কিছু সোভিয়েত ‘বোকা ও দুষ্টু’ নাগরিক!
উৎপত্তিস্থলঃ চিরতরে স্বর্গে নির্বাসিত সমাজতান্ত্রিক ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’।
~ অনুবাদের ত্রুটির জন্য অনুবাদক দায়ী থাকিবেন কিন্তু বর্তমান সময়ের ‘বিশেষ দেশে’র সাথে মিল পাওয়া গেলে অনুবাদক দায়ী নন।
উৎসর্গঃ বিদের বিভূঁইয়ে থাকা ‘নরকবাসী’ আমার প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই- বোনেদের।
~দুই ভাই,আলেগ ও আন্দ্রে, যারা আমেরিকাতে থাকত এবং কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিল।
তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে চলে যাবে। তারা সোভিয়েত-এর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সহ অন্যান্য বিষয়ে আমেরিকান গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রতিবেদনে বিশ্বাস না করলেও তারা সাবধানতা অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তাই দুই ভাই একসাথে রাশিয়াতে না গিয়ে বড় ভাই ছোট ভাইকে পাঠাল ওখানকার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য।
মিডিয়ার প্রতিবেদনের বিপরীতে যদি জীবনযাত্রার অবস্থা ভাল হয় এবং কেজিবি'র দ্বারা নিপীড়ন সম্পর্কিত রিপোর্টগুলি মিথ্যা হয় তবে, আন্দ্রে কালো রঙের কালি ব্যবহার করে আলেগ'কে একটি চিঠি লিখবেন যার রং ইঙ্গিত দেবে যে,এই চিঠির ভাষ্য সঠিক। তবে,সোভিয়েত-এর পরিস্থিতি যদি খারাপ হয়ে থাকে এবং আন্দ্রে সত্য লিখতে ভয় পায়- তবে সে লাল কালি ব্যবহার করবে যা ইঙ্গিত দেবে যে, সে চিঠিতে যা বলেছে তা বিশ্বাস করা উচিত নয়।
মস্কোতে ফিরে যাবার তিন মাস আন্দ্রে তার প্রথম চিঠি পাঠিয়েছিল। সেটি 'কালো কালি' দিয়ে লেখা ছিল,
‘প্রিয় ভাই আলেগ!
আমি এখানে খুব খুশি! এটি একটি সুন্দর দেশ,আমি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং উচ্চ মানের জীবনযাত্রা উপভোগ করছি। বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় এটা নিশ্চিত একটা স্বর্গ! সমস্ত পুঁজিবাদী সংবাদপত্রের কথা মিথ্যা ছিল। সব কিছু সহজেই পাওয়া যায়! সেখানে কেবলমাত্র একটি ছোট জিনিস-এর ঘাটতি রয়েছে,যার নাম ‘লাল কালি’
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~কমিশন পরিদর্শনে একটি পাগল আশ্রমে এসেছিলেন। তাদের শুভেচ্ছা জানাতে,রোগীরা একজন সঙ্গীতানুষ্ঠানে একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের একটি গান গাচ্ছিলেন ‘ও ও ও, স্বর্গ-সম সোভিয়েত ছেড়ে যেতে মন নাহি চায়!’
কমিশন লক্ষ্য করল যে, উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ একজন গান গাইছে না।
এই যে শুনুন‘আপনি গান গাইছেন না কেন?’
‘আমি পাগল নই,আমি এখানে নার্স’।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~এক ভিনদেশী কম্যুনিস্ট ডেলিগেট মস্কোতে এসে ইচ্ছা পোষণ করলেন, একটা কিন্ডারগার্ডেন পরিদর্শনে যাবেন।কেননা বাচ্চারা কোন সত্য লুকিয়ে রাখতে পারেনা বলে তার ধারনা।
কোন এক কিন্ডারগার্ডেনে তার পরিদর্শনে যাবার আগে কিন্ডারগার্ডেনের কর্মকর্তারা ভাল করে শিখিয়ে পড়িয়ে দিল বাচ্চাদের,তোমাদের যেই প্রশ্নই করেননা কেন তোমরা প্রতি উত্তরে বলবে,পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় আমাদের সোভিয়েত স্বর্গ-পুরি! ‘
সেই ভদ্রলোক কিন্ডারগার্ডেন পরিদর্শনে এসে এক ক্লাস রুমে ঢুকে বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করলেন,
‘বাবুরা, তোমরা কি এই কিন্ডারগার্ডেন পছন্দ কর?’
সব বাচ্চা সমবেত ভাবে বলল, -পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় আমাদের সোভিয়েত স্বর্গ-পুরি।‘
হুমম, তোমাদের এখানে যে খাবার দেয়া হয় সেটা কি রুচি সম্মত?
এবারও বাচ্চারা একসাথে বলল, -পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় আমাদের সোভিয়েত স্বর্গ-পুরি। ‘
তোমরা কি তোমাদের প্রিয় খেলনাগুলো পাও?
সবাই ঠিক একই ভাবে বলল, -পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় আমাদের সোভিয়েত স্বর্গ-পুরি। ‘
আচমকা ক্লাসের এককোণে সব’চে ক্ষুদে বাচ্চাটা ডুকরে কেঁদে উঠল।‘
ক্লাস-টিচার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সেই বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করল ‘মিশা তুমি কাঁদছ কেন বাবা?’
মিশা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ম্যাডাম আমি সোভিয়েত ইউনিয়নে যাব!’
~~~~~~~~~~~~
ছবিঃ প্রিন্টসেট থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৩৩