BOSE. সব ক্যাপিট্যাল লেটারে। বোস বাঙ্গালীদের একটি সাধারণ বাংলা পদবি। কিন্তু BOSE হল একটি বাংলা শব্দ যা অডিও সিস্টেমের ক্ষেত্রে উন্নত, উচ্চ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠত্বের বৈশ্বিক প্রতিশব্দ। এটা মুলত প্রয়াত ডঃ অমর গোপাল বোসের সৌজন্যে। উচ্চ-কর্মক্ষমতা, প্রিমিয়াম মানের অটো সাসপেনশন প্রযুক্তির বিশ্বে একজন বাঙ্গালীর অবদান।
ননি গোপাল বোস( ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় যোদ্ধা)-১ম বোস
এই অসাধারণ বক্তব্যটি স্বাভাবিকভাবেই আরও ব্যাখ্যার দাবি রাখে, যার জন্য আমাদের ১৯২০ সালের দিকে ফিরে যেতে হবে। মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে তার অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার সাথে সাথে, হাজার হাজার ভারতীয় যুবক অহিংসের অংশ হিসাবে রাস্তায় নেমেছিল। শুরু হয়েছিল চরম উত্তেজনা, বিক্ষোভ ও মিছিল ।
ননি গোপালপরীক্ষা প্রায় শেষের দিকে, যাইহোক, সেই সময়ে ননি গোপাল যেটা করতে পারতেন সেটাই সর্বোত্তম ছিল এবং সেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শেষে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন সম্ভবত পড়াশোনা করবেন বলে কেননা পরদিনই তার গুরুত্বপূর্ণ একটা পরিক্ষা ছিল। ঠিক এই সময়েই কলকাতা পুলিশ,তার জীবন এবং ইলেকট্রনিক্স শিল্পের ইতিহাস পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়। আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারীদের সন্ধানে তারা ননী গোপালের বাড়িতে পৌঁছে তাকে গ্রেফতার করে।
ননি গোপাল বোস
জন্মঃ ডিসেম্বর ০৫, ১৮৯৮
জন্মস্থানঃ কলিকাতা,পশ্চিমবঙ্গ
বাবাঃ দিবেন্দ্র বোস, মাঃ গিরিবালি বোস
সহধর্মিনীঃ স্যার্লোতে বোস
মৃত্যুঃ জুলাই ২৭,১৯৮১
ছবিঃ ননি গোপাল বোসের সাথে ছেলে অমর বোস ও সহধর্মিনী স্যার্লোতে বোস
পরদিন সকালে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হলে ননি গোপালকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই তার পরীক্ষা মিস হয়। এর কিছু দিন বাদে অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে একটি ফলো-আপ শুনানির জন্য আদালতে যাওয়ার পথে, তিনি পুলিশ হেফাজত থেকে পালাতে সক্ষম হন এবং নিখোঁজ হন। স্বাভাবিকভাবেই, কলকাতা তার জন্য আর নিরাপদ ছিল না, এবং বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাহায্যে, তিনি চেন্নাইতে (তৎকালীন মাদ্রাজ) পালিয়ে যান এবং সেখান থেকে নিউ ইয়র্কগামী একটা জাহাজে উঠে বসেন।
যখন তিনি জাহাজ থেকে নামলেন, তরুণ ননী গোপালের পকেটে ছিল মাত্র ৫ ইউএস ডলার । তার পরিচয় প্রমাণ করার জন্য তার কাছে একটি কাগজও ছিল না। যাইহোক, তিনি গদর পার্টির সদস্য সহ বেশ কিছু আবাসিক ভারতীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত সাহায্যের জন্য তিনি বিদেশ বিভুঁইয়ে সহজেই ছিতু হতে পেরেছিলেন। তিনি ফিলাডেলফিয়ার কাছে থাকার জায়গা খুঁজে পান এবং একটি ছোট রেডিও মেরামতের ব্যবসা স্থাপন করেন। মাস খানেক বাদেই তিনি স্যার্লোতে নামে একজন স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকার সাথে দেখা করেন, যিনি একজন ফরাসি-জার্মান বংশোদ্ভূত আমেরিকান ছিলেন। ভদ্র মহিলা হিন্দু এবং বেদান্ত দর্শনে গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন।
পরিচয় থেকে পরিণয়! কিছুদিন বাদেই দুজনের বিয়ে করে ফেলেন। দু’জনের বিয়ে হয় কলকাতা পুলিশের হাতে ননি গোপালকে গ্রেপ্তারের নয় বছর পর ১৯২৯ সালের ২রা নভেম্বর।
তাদের একমাত্র সন্তান ছিলেন অমর গোপাল বোস। পরবর্তীতে অমর গোপাল তার মাকে ‘আমার চেয়ে বেশি বাঙালি’ বলে বর্ণনা করতেন।
একজন বিপ্লবীর ছেলে ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ভিন্ন ধরনের বিপ্লবের সূচনা করেছিল। তার শৈশব কেটেছিল তার বাবার কর্মশালায় ইলেকট্রনিক্সের মৌলিক বিষয়গুলি দেখে এবং বাবার আগ্রহতেই অমরের ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়। স্কুল শেষ করে নিজের প্রচেষ্টা ও বাবা মায়ের আগ্রহে অমর গোপাল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) এ অধ্যয়ন করতে যান এবং একজন বৈদ্যুতিক এবং শব্দ প্রকৌশলী হয়ে ওঠেন। সেখান থেকে পাশ করে পরবর্তী ৪৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে MIT-এর অধ্যাপক পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ডক্টর অমর বোসঃ বিশ্বমানের অডিও সিস্টে ‘বোস’ এর উদ্ভাবক (২য় বোস)
আপনি কি কখনও 'বোস' অডিও শপের বাইরে দাঁড়িয়ে বোস অডিও সিস্টেমের উচ্চ মূল্য কথা বিবেচনা করে, যেগুলি একজন সাধারণ মানুষের পকেটের জন্য কিছুটা ভারী, তা বিবেচনা করে ভিতরে যাবেন ক যাবেন না এই নিয়ে দোদুল্যমান থেকেছেন?
হতে পারে, আপনি এই আন্তর্জাতিক মানের অডিও সিস্টেমগুলি দুবাই শপিং মল বা সিঙ্গাপুরের ইলেকট্রনিক্স দোকান থেকে কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, এই বিশ্বমানের অডিও সিস্টেমগুলি একজন অসাধারণ বাঙালি বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, একাডেমিক এবং উদ্যোক্তা ডঃ অমর গোপাল বোস আবিষ্কার করেছিলেন? তিনি বোস কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং আক্ষরিক অর্থে অডিও সিস্টেম এবং স্পীকারে বিপ্লব ঘটান।
জাপানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তখন আমেরিকার জন্য সেটি একটি কঠিন সময় এবং অভিবাসীদের জন্য সময়টা আরও বেশী খারাপ ছিল৷ বোসের বাবা অত্যন্ত চিন্তিত ছিলেন কারণ তার আমদানি ব্যবসা একটি শিপিং নিষেধাজ্ঞার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ সেই মুহুর্তে, যুবক অমর বোস পরিবারকে সমর্থন করার এবং সাহায্য করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। তিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার বিচক্ষণতা এবং চতুর ব্যবসায়িক বোধ প্রদর্শন করেছিলেন তিনি তার পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তার পিতামাতার বেসমেন্টে রেডিও ঠিক করতে শুরু করেছিলেন। সেই শখটি অচিরেই ব্যবসায় পরিণত হয়। বোসের বাবা তার ছেলের প্রচেষ্টায় অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তাকে উচ্চ শিক্ষার জন্য সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন।
অমর বোস একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে প্রমাণিত হন, যিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রির জন্য নথিভুক্ত হন। তিনি এমআইটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ডক্টরেটও শেষ করেছেন। বোস এমআইটি থেকে পিএইচডি অর্জন করার পরে, তিনি নিজেকে একটি উচ্চ-সম্পন্ন অডিও সিস্টেম একটি উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু হায়! তিনি সেই অডিও সিস্টেমের মিউজিক শুনে তিনি চরম হতাশ হলেন। তিনি জানতেন যে, সত্যিকারে মিউজিকের শব্দ কেমন হওয়া উচিত- এবং কেমন হলে সেটা শ্রুতি মধুর হবে। ছেলে বেলায় তার বাবা-মা তাকে বেহালা শিখতে বাধ্য করেছিলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি সঙ্গীত সুর শব্দ শোনার ও উপভোগ করার জন্য একটি কান তৈরি করেছিলেন এবং শব্দের কাজে আগ্রহী ছিলেন।
অবশেষে, বোস কর্পোরেশন ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা তাদের পাথ-ব্রেকিং অডিও যোগাযোগ এবং লাউড স্পীকার ডিজাইনের জন্য NASA এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাথে চুক্তি করেছিলেন। আজ, বোস আইপড ডকস, সাউন্ড-সাউন্ড হোম এন্টারটেইনমেন্ট স্পিকার সিস্টেম এবং নয়েজ-লেস হেডফোনগুলি বিশ্ব বাজারে দাপটের সাথে আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
ছবিঃ অমর বোস- তার গড়া সাম্রাজ্যের সামনে দাঁড়িয়ে।
বোসের লাউডস্পিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের স্টেপলস সেন্টার, সিস্টিন চ্যাপেল, মসজিদ-আল-হারাম, মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ এবং বেশ কয়েকটি অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ব্যবহৃত হয়।
বোস নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোনগুলি আজ সামরিক এবং পেশাদার পাইলট এবং মহাকাশযান মহাকাশচারীদের দ্বারা পরিধান করা হয়। এর গাড়ির অডিও সিস্টেমগুলি ‘মাসেরাতি’ এবং ‘মেবাচে’র মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলিতে কারখানায় ইনস্টল করা হয়েছে। এটি এখনও তাদের প্রথম পছন্দের পণ্য, বোস 901 স্পিকারের আপডেট সংস্করণ বিক্রি করে। শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে এইভাবে একজন বাঙালি এক সময় বিশ্ব জয় করেছিল এবং তার আবিষ্কারগুলি এখনও শব্দের বিশ্বে রাজত্ব করে।
অমর গোপাল বসু (ইংরেজি: Amar Gopal Bose; জন্ম ২রা নভেম্বর, ১৯২৯ - ১২ জুলাই, ২০১৩) একজন বাঙ্গালী ভারতীয়-আমেরিকান ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এবং বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা। অমর বোস (Amar Bose) নামেই তিনি অধিক পরিচিত। বিশ্বখ্যাত অডিও ইকু্ইপমেন্ট নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান বোস কর্পোরেশন এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়াম্যান।
২০০৭ সালে তিনি বিশ্বের ২৭১তম ধনী ব্যক্তি হিসাবে ফোর্বস এর ৪০০ শীর্ষ ধনী ব্যক্তির তালিকায় স্থান করে নেন। এ সময় তার নীট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।২০০৯ সালে তিনি এই তালিকা থেকে ছিটকে পড়েন এবং ২০১১ সালে আবার এই তালিকায় ফিরে আসেন; এবার তার নীট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শিক্ষা
অমর গোপাল বসুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায়।
অমর বসু মাত্র তের বছর বয়সেই তার উদ্যোক্তা প্রতিভার পরিচয় দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এ সময়ে পরিবারের জন্য বাড়তি আয়ের যোগান দিতে তিনি তার স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে মডেল ট্রেন ও হোম রেডিও মেরামতের একটি ছোট পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন।
পেনসিলভানিয়ার অ্যাবিংটনে অবস্থিত অ্যাবিংটন সিনিয়র হাইস্কুল সম্পন্ন করার পর বোস ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হন এবং ১৯৫০ এর শুরুর দিকে সেখান থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর বোস নেদারল্যান্ডের ‘এইডোভেন এ এনভি ফিলিপস ইলেক্ট্রনিকস এর গবেষণা ল্যাবে’ এক বছর কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি ফুলব্রাইট রিসার্চ স্টুডেন্ট হিসাবে দিল্লিতে এক বছর কাটান এবং এখানেই তার হবু স্ত্রী ‘প্রেমা’র সাথে পরিচয় হয় (পরবর্তীতে বিচ্ছেদ হয়ে যায়)। তিনি এমআইটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পিএইচডি সম্পন্ন করেন; তার অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু ছিল নন-লিনিয়ার সিস্টেমস।
অমর বসুর মেয়ে, মায়া বসু একজন পেশাদার কিরোপ্রাকটর।
'।
অমর বসুর মেয়ে, মায়া বসু একজন পেশাদার কিরোপ্রাকটর।
কর্মজীবন
স্নাতক সম্পন্ন করার পর অমর বসু এমআইটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদেন। ১৯৫৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার কাজে যোগ দিয়ে ২০০১ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন তিনি। অমর গোপাল বসু লক্ষ্য করেছিলেন যে, একটা বিরাট হলঘরে মঞ্চ থেকে নির্গত শব্দের মাত্র ২০ শতাংশ শুনতে পান একজন শ্রোতা আর বাকি ৮০ শতাংশই আসে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে। এই ধারণা থেকেই ‘সাইকো-অ্যাকোয়াস্টিক’ নামে শব্দবিজ্ঞানের নতুন এক শাখার জন্ম হয়। এই তত্ত্বের উপর নির্মিত ২২০১ স্পিকারই ছিল প্রথম ডিরেক্ট বা রিফ্লেক্টিং স্পিকার। এই স্পিকারের বাণিজ্যিক বিপণনের জন্য অমর গোপাল বসু নিজের একটি সংস্থা খোলেন ‘বোস কর্পোরেশন’ নামে।
যাইহোক, আর কিছু না হোক বিশ্ব তাকে যা মনে রাখবে তা হল BOSE কর্পোরেশন এর জন্য, যা অমর গোপাল ১৯৬৪ সালে তাকে প্রদত্ত কয়েকটি পেটেন্টের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিশেষ করে বিশ্বের সর্বকালের সেরা সাউন্ড সিস্টেমের লাউডস্পিকার ডিজাইনের জন্য। একটি সফট স্টার্ট-আপ হিসাবে শুরু করে, অমর গোপালের কোম্পানি শেষ পর্যন্ত একটি আইকনিক গ্লোবাল ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। যার বর্তমান কর্মী সংখ্যা ৮০০০-এর বেশি এবং বার্ষিক আয় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
২০১৩ সালে তার মৃত্যুর দুই বছর আগে, অমর গোপাল তার কোম্পানি MIT-কে দান করেছিলেন, তার আলমা ম্যাটারকে বিশ্বের অন্যতম প্রিমিয়াম অডিও সরঞ্জাম ব্র্যান্ডের মালিক বানিয়েছিলেন।
এখন ভাবুন, কলকাতা পুলিশ যদি ননি গোপালকে গ্রেপ্তার না করত, এবং তরুণ বিপ্লবী দেশ থেকে পালিয়ে না গেলে কী হত। আর যাই ঘটুক না কেন, এটা সম্ভবত নিশ্চিত যে বিশ্ব ‘বোস’ থেকে বঞ্চিত হত।
অমর বসু কোনো ধর্ম পালন করতেন না, যদিও তিনি প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য ধ্যান করতেন।
সম্মাননা এবং পুরস্কার
• লাউড স্পীকার ডিজাইন, টু-স্টেট এমপ্লিফায়ার-মডুলেটর এবং নন-লিনিয়ার সিস্টেমস এ অবদানের জন্য ১৯৭২ সালে IEEE এর ফেলো নির্বাচিত হন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ভানু বোস- প্রতিষ্ঠাতাঃ ভানু ইনকর্পোরেশন( ৩য় বোস)
কৃতী বাবার সন্তান। কম যান না নিজেও।তিনি Vanu, Inc. এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এ প্রতিষ্ঠানটি সফটওয়্যার ভিত্তিক রেডিও টেকনোলজি সরবরাহ করে যার মাধ্যমে একটি বেজ স্টেশন একই সাথে GSM, CDMA, এবং iDEN পরিচালনা করতে পারে।
বিশ্ব জুড়ে ওয়্যারলেস ও মোবাইল যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রেখে গেলেন ভানু। ভারতই হোক বা রোয়ান্ডা— প্রত্যন্ত গ্রামে সেলফোনের নেটওয়ার্ক জোগানোর ক্ষেত্রে তাঁর উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অন্য সামাজিক ক্ষেত্রেও অনবদ্য কাজ করে চলেছে তাঁর সংস্থার হার্ডওয়্যার। ঝড়-বন্যা-ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিখোঁজ পরিজনদের সন্ধান পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর রেডিওভিত্তিক প্রযুক্তি পৃথিবীর নানা প্রান্তে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুয়ের্তো রিকোর মারিয়া ঝড়ে বিপর্যস্ত, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানুষজনকে খুঁজে বার করার জন্য নিখরচায় ৪০টি কেন্দ্র চলছে তাঁরই জোগানো প্রযুক্তিতে।
ছবিঃ ভানু বোস তার খ্যাতিমান বাবা অমর বোসের সাথে ঘরোয়া আড্ডায়।
ভানু অমর বোস
জন্মঃ এপ্রিল ২৯,১৯৬৫, বোস্টন, আমেরিকা
মৃত্যুঃ নভেম্বর ১১,২০১৭, কনকর্ড, ম্যাসাচুয়েটস
শিক্ষাঃ এম আই টি, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, প্রতিষ্ঠাতাঃ ভানু ইনকর্পোরেশন
বিপ্লবীর নাতি, সফল ব্যবসায়ী তথা শিক্ষকের ছেলে ভানু তাঁর পরিচয় গড়ে তোলেন ‘স্পেকট্রামওয়্যার’ নিয়ে নিজের গবেষণাপত্রের ভিতে। বাবার সংস্থা বোস-এর ‘সাউন্ড সিস্টেম’ গুণমানে অসাধারণ হলেও বেশ দামি। অনেকেই মনে করেন, এ সব সকলের সাধ্যের জিনিস নয়। ভানুর অভিমুখটি ছিল ভিন্ন— কত বেশি মানুষকে মেলানো যায়, সেই লক্ষ্যেই কাজ করে গিয়েছেন তিনি।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত লেক্সিংটনের ভানু ইনকর্পোরেশনই প্রথম সংস্থা যেটি সফটওয়্যার-ভিত্তিক রেডিও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রথম স্বীকৃতি পায় মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে। এর পরে ওয়্যারলেস ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগের ছবিই পাল্টে দেন সৌরশক্তিতে, সামান্য বিদ্যুতে চলে— এমন সেলফোন-অ্যান্টেনার ব্যবস্থা করে। ভানুর জোগানো প্রযুক্তির দৌলতেই রোয়ান্ডার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ৩৭৬টি সেলুলার নেটওয়ার্ক কেন্দ্র চালু হয়েছে।
তিনি একটু দুঃখ করেই বলেছিলেন তার বাবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হয়েও সে দেশের জন্য তেমন কিছু করেননি। তিনি চেষ্টা করছেন কিছু করতে। বাবার উল্টো পথে হেটেছেন তিনি।
ভারতের গ্রামাঞ্চলে মোবাইল ফোনের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার যজ্ঞে সামিল হতে ২০০৫ সালে ভানু হাত মেলান ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব টেলিম্যাটিক্স’-এর সঙ্গে। টেলিযোগাযোগে উন্নতির লক্ষ্যে এটি ভারত সরকারের একটি সংস্থা। ২০০৮-এ ভারতে টেলি-পরিষেবা দেওয়ার একটি সংস্থা তাঁর প্রযুক্তি পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার শুরু করে।
এমআইটি কর্পোরেশনের বোর্ড সদস্য ভানু ছিলেন আমেরিকার ‘আর্মি সায়েন্স বোর্ড’-এর সদস্য। কাজ করছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’-এর কমিশনার হিসেবেও।
মাত্র ৫২ বছর বয়সে, আচমকাই মারা গেলেন ভানু বসু। ‘পালমোনারি এম্বোলিজম’ অর্থাৎ জমাট বাঁধা রক্ত বা অন্য কিছুতে ফুসফসের ধমনী রুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
বাবা ‘সিনিয়র বোস’ গিয়েছেন ৪ বছর আগে, ৮৩ বছর বয়সে। রোয়ান্ডা, পুয়ের্তো রিকো থেকে ভারত— সকল প্রত্যন্তবাসীকে মোবাইল ফোনে জুড়ে দেওয়ার রাস্তা দেখিয়ে ‘জুনিয়র বোস’-এর পথ চলা থমকে গেল অসময়ে।
গ্রন্থনাঃ শেরজা তপন
সুত্রঃ
গেট বেঙ্গলী
আনন্দবাজার
উইকি সহ অন্যান্য মিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৪৫