somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন শুধু পুরুষদেরই মরে যেতে হয় কিংবা পুরুষরা-ই মরে যাবে বলে কেন ভাবা হয়?

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেদিন বাসায় ফেরার সময়ে এফ এম রেডিওতে শুনছিলাম কবিতাটা। সুনীলের একটা বিখ্যাত কবিতা। আগেও একটু আধটু শুনেছি কিন্তু সেভাবে মন দিয়ে শোনা হয়নি কখনো। নিঃসন্দেহে চমৎকার ব্যতিক্রমী আধুনিক ধারার কবিতা। সুনীলের হাতের ছোঁয়ায় যে কোন পাথর সোনা হয়ে যায়। গার্গী নামক এক আবৃতি-কারিকা তার সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে আবৃতি করছিল। তবে আমার কিন্তু কবিতাটা ভাল লাগছিল না- শেষ দিকে এসে রাগে শরীর জ্বলছিল। কেন? বলি তবে;
~ কবিতার যুবক সারাদিন কাজ করে ভিড় জ্যাম ঠেলে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে বাসায় ফিরেছে। ভীষণ ক্ষুধার্ত ক্লান্ত- কিন্তু বউ তার রান্না করেনি। সে এসে ন্যাকামি শুরু করল সে সময়ে; জামাই তাকে ভালবাসে কি না?
রাতে ঘুম আসছে না, দুঃস্বপ্ন দেখছে, গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছে, তপ্ত রোদে প্রচণ্ড ভিড়ে রাস্তা ক্রসিং করার সময়, গাল কেটে রক্ত পড়ছে, অসুস্থতায় মর মর অবস্থা, এমনকি যুদ্ধ লেগেছে- সবাই দিক্বিদিক ছুটে পালাচ্ছে বা প্রচণ্ড ঝড় উড়ে গেছে ঘরবাড়ি,আশ্রয় নেই - সেদিকে মেয়েটার কোন হুশ নেই 'সে আছে তার ভালবাসা নিয়ে'।
চরম কঠিন কঠিন সমস্যার মধ্যে সে পরীক্ষা নিচ্ছে যেন, পৃথিবীর তাবৎ পুরুষের; ভালবাসে কিনা?
আমার বিরক্তি চরমে উঠল; একেবারে শেষে এসে;

ধরো সব ছেড়ে চলে গেছ কত দুরে,
আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে আছ
হতভম্ব আমি যদি চিৎকার করে বলি-ভালবাস?
চুপ করে থাকবে?নাকি সেখান থেকেই
আমাকে বলবে ভালবাসি, ভালবাসি..


- আরে তাজ্জব ব্যাপার!! এত শত পরিক্ষা দিয়ে অবশেষে পুরুষকেই কেন মরতে হবে- মরেও বেচারার শান্তি নেই। কবরের নীচ থেকেও ধ্বনি তুলে বলতে হবে ভালবাসি, ভালবাসি।
আমি জানিনা সবসময় পুরুষরাই কেন মরে? পুরুষদের-ই কেন মরতে হয়- কিংবা পুরুষরাই কেন কিংবা কিসের আশায় নিজেদের মারে????
~একজন পুরুষের লেখা এমন কবিতা মেয়েরা লুফে নিয়েছে ভীষণভাবে! এ কবিতা শুধু নারীদের আবেগের কথা বলে। আপনার কি জানা আছে পৃথিবীতে কোন নারী কবি এমন একটা কবিতা লিখেছে-যা একান্ত শুধু পুরুষদের জন্য,তাদের আবেগকেই ধারণ করে?

ভালবাসি, ভালবাসি: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ধরো কাল তোমার পরীক্ষা,রাত জেগে পড়ার
টেবিলে বসে আছ,
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাত করে ভয়ার্ত কন্ঠে উঠে আমি বললাম-
ভালবাস? তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো ক্লান্ত তুমি, অফিস থেকে সবে ফিরেছ,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত..
খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ঘর্মাক্ত আমি তোমার
হাত ধরে যদি বলি- ভালবাস?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু
চাপ দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি.. অসমাপ্ত



‘নজরুলের বিখ্যাত ‘অভিশাপ’ কবিতা।

আমার ছোট চাচা বিয়ে করেছিল আশির দশকের শুরুতে। আমরা তখন নেহায়েত পোলাপান। আকদ হবার পরে আমার চাচী চাচাকে কিছু উপহারের সাথে একটা TDK অডিও ক্যাসেট পাঠাল।
সেই ক্যাসেটে একখানা মাত্র কবিতা ছিল ‘চাচী’র কণ্ঠে। একেবারে আনাড়ি আবৃতি-কারিকা। আবৃতি করতে করতে মাঝখানে বেশ কয়েকবার আটকে গেছেন। এসব তখন অবশ্য ভাল করে বুঝতাম না।
তবে চাচা আমার সে কবিতা শুনে যেন কেঁদে ফেলেন- চরম আবেগে থর থর করে কাঁপেন।
সুযোগ পেলেই সে কবিতা শোনে। তার ব্যাপক বড় মনের আবেগ আমাদেরো ছুঁয়ে যায় -আমরাও ‘ছোট মনে’র আবেগ নিয়ে উদাস হয়ে ইতিউতি ঘুরে বেড়াই!
তবে এ কবিতা মেয়েদের কণ্ঠে মানানসই নয়, পুরুষদের-ই আবৃতি করার কথা। তবে আমার প্রশ্ন- উপমহাদেশের পুরুষরাই কেন ভালবাসার খাতিরে মরে, পুরুষদেরই কেন মরে যেতে হয়।
(অফটপিকঃ সেই চাচী আমার অল্প বয়সেই চলে গিয়েছিলেন। এই কবিতাটার বেশ ক’টা লাইনের সাথে চাচার জীবন মিলে গিয়েছিল অক্ষরে অক্ষরে। সে কথা অন্যদিন হবে।)

অভিশাপ
কাজী নজরুল ইসলাম


যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
ছবি আমার বুকে বেধে
পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মরু কানন গিরি
সাগর আকাশ বাতাশ চিরি
সেদিন আমায় খুজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
স্বপন ভেঙ্গে নিশুত রাতে, জাগবে হঠাৎ চমকে
কাহার যেন চেনা ছোয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে-
জাগবে হঠাৎ ছমকে,
ভাববে বুঝি আমিই এসে
বসনু বুকের কোলটি ঘেষে
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শুন্য শয্যা মিথ্যা স্বপন
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে
গাইতে গিয়ে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না
বলবে সবাই- সেই যে পথিক তার শোনানো গান না?- অসম্পুর্ন


এপার ওপার বাংলা থেকে শুরু করে পুরো এই উপমহাদেশ জুড়ে, উর্দু, হিন্দি, মারাঠি, তামিল বা গোর্খা ভাষায় প্রচুর গান আছে;
‘তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার মরণ যাত্রা যেদিন যাবে’ ‘আমি যদি যাই হারিয়ে কখনো’- এই একই ধাঁচের কাছাকাছি সুরের!
মেয়েরা কখনোই এমন গীত রচনা করেনি, সুরও দেয়নি বলে আমি যতদূর জানি( যদি আপনারা কেউ জানেন, তবে আমাকে জানাবেন)। তবে গেয়েছে ঢের; পুরুষদের আবেগ পুঁজি করে তারা সুর তাল লয় নিয়ে খেলেছে।
ওরা আবেগ নিয়ে প্রায় কান্নার স্বরে জানতে চাইবে,ওগো তুমি কি আমাকে ভালবা-স, ভালবা-স? আর আমরা পুরুষেরা মরে ভুত হয়ে পচে গলে গিয়ে কয়েক হাত মাটির গভীর থেকে বলব, ‘হ ভালবাসি’।– আহা আহা কি আহ্লাদ!!
-----------------------------------------
বিয়ের পরে এটা ছিল আদুরে আবদার! তোমাদের এটা-তো ভাড়া বাড়ি?
-হ্যাঁ- কেন তুমি জান না?
হেসে বলে'
-জানি-গো, আচ্ছা শুনেছি এত বছর ধরে তোমরা ঢাকা আছে- একটা বাড়ি তো দুরের কথা,ফ্লাট-ও তো কিনতে পারতে না কি?
-তা হয়তো কিনতে পারতাম। আমাদের পরিবারের কেউ বৈষয়িক না। সেভাবে কেউ ভাবিবি।
-ভাড়া বাসায় থাকতে আমার একদম মন চায় না। নিজের বাড়ি, হোক সে ছোট্ট কুটির কিং বা দো-চালা বাড়ি। তবুও নিজের তো।
এইভাবে শুরু...

বাচ্চা কাচ্চা হবার পরে সেই আবদার অনুরোধ হুমকি ধামকির পর্যায়ে চলে যায়। আমার কথা না হয় না ভাবলে- তুমি না থাকলে ওদের কি হবে একবার ভাব-তো। নিজেদের একটা মাথা গোঁজার ঠাই পর্যন্ত নাই। ওদের ভবিষ্যতের জন্য ক'টা টাকা তুমি ফিক্সড করে রাখোনি। আমি না থাকলে( বেশ হালকা চালে) তুমি তো টপ করে আরেকখানা বিয়ে করবে। আর যদি আল্লা না করুক তোমার কিছু হয়ে যায়( এটা নিশ্চিত হচ্ছে) তবে ওদের কি হবে?
আমরা কয় বন্ধু একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছি। যার একখানা আছে তার দু’খানা ফ্লাট দরকার, যার দেশে আছে তার বিদেশে দরকার। যার কোটি টাকা ডিপোজিট আছে তার আরো কয়েক কোটি টাকা প্রয়োজন- সবার গিন্নীরা একই আলোচনা করে, ‘তুমি না থাকলে ওদের কি হবে’?
বুঝি; পুরাদস্তুর গৃহিণীদের স্বামীরা যদি হুট করে মারা যায় তবে তারা অকুল পাথারে পড়ে। শ্বশুর বাড়িতে সে তখন উটকো ঝামেলা, বাপের বাড়িতে সে আশ্রিতা। চাকুরীজীবী মেয়েদেরও ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়- সন্তানদের নিয়ে একাকী ভয়ঙ্কর এক জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়।
সবই বুঝলাম –সবই বুঝি! তবু তাবৎ স্ত্রীরা কেন ভাবে তার স্বামী বা পুরুষেরাই আগে মরে যাবে? কেন পুরুষদেরকে প্রতি পদে পদে ভয় দেখানো হয়? কেন শুধু পুরুষদেরই মরে যেতে হয়- পুরুষরা-ই কেন মরে যাবে বলে ভাবা হয়?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩১
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×