somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ কেন অনন্য? পর্ব~১

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পিম্পল হল এক ধরণের সিবাম বা তৈলাক্ত পদার্থ যা ত্বকের ছিদ্র দিয়ে অতিরিক্ত নিঃসরণের সময়ে মৃত ত্বকের কোষে আটকে গেলে ঘটে। বিশেষ কিছু সময়ে এটি ফুসকুড়ি বা প্যাপুলে পরিণত হতে পারে।
ত্বকের ছিদ্রের ভিতরে থাকা সেবাসিয়াস গ্রন্থিগুলি ‘সিবাম’ নামক এক ধরনের মোমের মত এক ধরণের তৈলাক্ত পদার্থ তৈরি করে। যখন ত্বকের বাইরের স্তরগুলির মৃত ত্বক(একটি স্বাভাবিক এবং অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া, সাধারণত) ও তৈলাক্ত সিবাম একসাথে মিশে যায় এবং ত্বকের গোড়ায় সেবেসিয়াস গ্রন্থির অনবরত নিঃসরিত নতুন সিবামের অবরোধ তৈরি করে। এটি মূলত ঘটে যখন বয়ঃসন্ধির সময় ত্বক ঘন হয়ে যায়। সেবেসিয়াস গ্রন্থিটির তৈরি করা সিবাম থাকে যা ব্লকেজের পিছনে জমা হয়, যার ফলে বিশেষ কিছু ব্যাকটেরিয়া এই অঞ্চলে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে প্রদাহ এবং সংক্রমণের সৃষ্টি করে। ব্রণের অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে পারিবারিক ইতিহাস, স্ট্রেস, হরমোনের ওঠা-নামা, চুল ও ত্বকের যত্নের প্রসাধন ও ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এবং অজ্ঞাত বা অন্তর্নিহিত চিকিৎসার কারনে।

~ যে ভাবে ব্রণ হয়।

ঠিক কি কারণে ব্রণ হয়; সেটা এখনো পরিপূর্ণভাবে জানা যায়নি তবে এটি সম্ভবত জেনেটিক্স, ডায়েট, স্ট্রেস এবং অন্যান্য জীবনধারার বিষয়গুলির সংমিশ্রণ। কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে (একটি বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে) "পশ্চিমা খাদ্য", প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার ও উচ্চ গ্লাইসেমিক সহ অন্য কেমিকেল যুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে ব্রণ হতে পারে।
২০০২ সালে, এক বিজ্ঞানী Kitavan জাতির মধ্যে ব্রণের প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা করেন। পরীক্ষিত ১৩০০ জনের মধ্যে শুধুমাত্র জেনেটিক কারণগুলির পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে একটিও কেস পাওয়া যায়নি। কানাডিয়ান ইনুইট এবং জাপানি ওকিনাওয়ানদের উপর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই জনসংখ্যার মধ্যে ব্রণের প্রকোপ কম ছিল। কিন্তু সোডা, দুগ্ধজাত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের মতো পশ্চিমা খাবারের সাথে পরিচিত হওয়ার পরে তারা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন ব্রণের প্রকোপ বৃদ্ধির সম্ভাব্য কারণ বলে ধারনা করা হয়।
****
পিম্পল ~যার পেছনে লুকিয়ে আছে বুদ্ধিমান এই প্রাণীটির জন্ম সময়কার একটা রহস্য
আমরা নগ্ন এবং সম্পূর্ণরূপে দ্বিপদ, যা আমাদের নিতম্বকে নতুন আকার দিয়েছে ও আমাদের সূক্ষ্মতম কাজের জন্য উন্নত বাহু দিয়েছে যেটা একেবারেই ভিন্ন যা অন্য কোন প্রাইমেটদের মত পায়ের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।



খাড়া ভঙ্গি আমাদের আরও দক্ষতার সাথে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য চলার যোগ্যতা দিয়েছে। অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় আমাদের মস্তিষ্ক বড়, অনেক বেশী কুঁচকানো ও জটিল -যা আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে অনেক গুণে বাড়িয়েছে। এত বড় একটা মগজের জন্য একটি বৃহদাকার খুলি প্রয়োজন, কিন্তু মাকে হত্যা না করে জন্মের সময় আমাদের মাথার খুলি কতটা বড় হতে পারে তার একটি সীমা আছে। এত বৃহৎ একটা খুলি নিয়ে হোমোসেপিয়েন্সদের গর্ভাশয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পেলভিস এত চওড়া হওয়া প্রয়োজন যে তার দ্রুত হাঁটতে অসুবিধা না হয়।
জমাবার সুবিধার্থে আমাদের খুলিকে প্রসারিত করার জন্য চোয়ালের পেশীগুলিকে আটকে রাখার জন্য আমাদের মাথার খুলির সাথে একটি বড় বন্ধনী হারিয়েছি আমরা। সে কারণেই আমাদের চোয়াল ততটা শক্তিশালী নয় যার ফলে আমাদের জন্য আশযুক্ত কাঁচা খাবার খাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে। এর ফলশ্রুতিতে আমাদের চোয়াল ও দাঁতও ছোট হয়ে গেছে। আমাদের মুখের বৈশিষ্ট্যগুলি অন্য প্রাইমেটদের মত পাশের পরিবর্তে সামনের সমতলে বেশি অবস্থিত।
আমাদের এমন জিন রয়েছে যা আমাদেরকে অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনায় আরও জটিল বাচনভঙ্গির ক্ষমতা দিয়েছে এবং এই জীনের কারনে আমাদের ভোকাল কর্ডের উপর আমরা আরও ভাল নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি।
ব্রণ মূলত একটি মানব-নির্দিষ্ট (মূলত হোমো সেপিয়েন সেপিয়েন্সিসের) রোগ। হ্যাঁ, বিড়ালদের ব্রণ হয়, এবং কিছু অন্যান্য প্রাইমেটদের ব্রণ হতে পারে যদি বন্দী অবস্থায় বিভিন্ন খাদ্য খাওয়ানো হয়। তবে অন্য প্রাণীদের কোনটিরই মানুষের মতো এত বেশী ও খারাপ-ভাবে ব্রণ প্রকাশ পায় না। অনুমান করা হয় এই রোগটি ৮০% থেকে ৯৬% পর্যন্ত অসামঞ্জস্য-পূর্ণভাবে কিশোর-কিশোরীদেরকে প্রভাবিত করে।



তাই প্রশ্ন হল, কেন অন্যান্য প্রাণীদের ব্রণ মানুষের মতো হয় না?

জন্মদানের প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার জন্য আরেকটি বিবর্তনীয় অভিযোজন হতে পারে(!) সেবেসিয়াস গ্রন্থির উপস্থিতি; যা উচ্চ ঘনত্বে মাথার ত্বকে, কপালে ও মুখে উপস্থিত থাকে। সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলি গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসের পরে বিকাশ লাভ করে এবং জন্মের সময় আরো বড় এবং ভালভাবে বিকশিত হয়- প্রধানত গর্ভ ফুলের মাধ্যমে মায়ের বিশেষ হরমোনগুলির অনুপ্রবেশের কারণে।
অন্যান্য প্রাইমেট এবং প্রায় সমস্ত প্রাণীর তুলনায় মানুষের জন্য সন্তান প্রসব ভীষণ কষ্টকর শ্রম (ডাইস্টোসিয়া) এবং অনন্য। প্রসবের সময় মানুষের মতো এত সমস্যা ও বিপদ অন্য কোন প্রাণীর হয় না। আধুনিক চিকিৎসার অনুপস্থিতিতে, ২ থেকে ৫ শতাংশ মানব শিশু জন্মানোর আগেই ‘বার্থ ক্যানেলে’ মারা যায়। বাধ্য হয়ে বাইপেড হয়ে ওঠা এবং মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধির জন্য মানুষের বিবর্তন বাধাপ্রাপ্ত প্রসবের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা তৈরি করেছে । বাইপেডাল লোকোমোশন সম্ভব হওয়ার জন্য, মানুষের কঙ্কালের গঠনে, বিশেষ করে পেলভিসে অনেক পরিবর্তন অবশ্যই ঘটেছে। ফলস্বরূপ, মানুষের পেলভিসের আকৃতি এবং অভিযোজন উভয়ই পরিবর্তিত হয়েছে। একটি সরু পেলভিস দ্বিপদ গতির জন্য ভাল কিন্তু সন্তান জন্মদানকে আরও কঠিন করে তোলে।

~এটা ব্রণ নয় কুষ্ঠ রোগ।

হিলাদের পেলভিস বা একটি প্রশস্ত শ্রোণী প্রসবের জন্য ভাল, তবে অন্যান্য প্রাইমেটদের নবজাতকের মাথার আকৃতির তুলনায় এটি এখনও বিপদজনকভাবে সংকীর্ণ। জন্ম নালীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষের বাচ্চাদের ঘোরাতে হয়, অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তা করতে হয় না । প্রজাতির বিকাশের সাথে সাথে মানুষের মস্তিষ্কের আকারও বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে জন্মের নালী থেকে বের হওয়া মাথা পরিপূর্ণ রূপ পায় না। এর জন্য অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় মানব শিশুর জন্ম- কম বিকশিত অবস্থায় হয়।
মানুষকে একমাত্র প্রজাতি হিসেবে সাধারণত মহিলাদের সন্তান ধারণের ঝুঁকি কমাতে তাদের নিজস্ব প্রজাতির অন্যান্য সদস্যদের(‘কন-স্পেসিফিক’) সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও, মানব শিশুদের বড় ফন্টানেল রয়েছে যা জন্মের সময় মাথাকে আরও নমনীয় ও পিচ্ছিল করে তোলে এবং জন্মের পরে শিশুর মস্তিষ্ককে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে দেয়। এই ফন্টানেলগুলি অন্য যে কোনও প্রাণীর তুলনায় বন্ধ হতে তুলনামূলক-ভাবে দীর্ঘ সময় নেয় এবং এটি জন্মদানে সহায়তা করার জন্য একটি বিবর্তনীয় অভিযোজন।
মানব ভ্রূণের তুলনামূলক-ভাবে বড় মাথা এবং মায়ের আনুপাতিক ছোট পেলভিসের জন্য মানব শিশুর জন্মদান বাধাগ্রস্ত হয় বলে মনে করা হয়। মুখ, বুকে এবং পিছনে সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলির উচ্চ ঘনত্ব লক্ষ্যণীয়; এ কাঠামোগুলো এমন যা প্রসবের সময় সবচেয়ে বড় বাধা তৈরি করে। সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলি গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসের পরে বিকাশ লাভ করে এবং জন্মের সময় আরো ভালভাবে বিকশিত হয়। জন্মের সময় Sebum উৎপাদনও ক্ষেত্রবিশেষ বেশী হয়। এই জায়গাগুলিতে অতিরিক্ত তৈলাক্ত-করণ থাকা শিশুকে জন্মের সময় আরও পিচ্ছিল করতে সাহায্য করে; যা সফল প্রসবের জন্য একটি নির্বাচনী সুবিধা প্রদান করে, সিবাম একটি সাদা, ক্রিমি পদার্থ যা মানুষের জন্য ব্যতিক্রম অনন্য যা জন্মের সময়ে নবজাতকদের আবৃত করে রাখে।

~পুরুষ ও নারীদের পেলভিসের তুলনামূলক আকার।

সেবাসিয়াস গ্রন্থিগুলি সিবাম নামক যে তৈলাক্ত নিঃসরণ তৈরি করে যা জন্মের সময় প্রচুর পরিমাণে সিবাম উৎপন্ন হয়; জন্মের পরে এর মাত্রা হ্রাস পায় এবং এই ধারা বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত কম থাকে। দুর্ভাগ্যবশত; বয়ঃসন্ধিকালে সিবামের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে ত্বকের এমন অবস্থা হতে পারে যা ব্রণ নামে পরিচিত। ব্রণ হল সবচেয়ে সাধারণ চর্মরোগ, কিন্তু মানুষের ব্রণ কেন হয় সে বিষয়ে এখনও কোন স্পষ্ট ধারণা নেই।
(বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, মানবদেহের এই অঞ্চলে সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলির উচ্চ ঘনত্বের জন্য বেশী পরিমাণ সিবাম বা বিশেষ তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণের ফলে জন্ম নালীর( বার্থ ক্যানেল) এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে শিশুর প্রশস্ত অংশগুলিকে তৈলাক্ত করে অপ্রশস্ত পেলভিস দিয়ে সহজে বের হবার একটি নির্বাচনী বিবর্তনীয় সুবিধা প্রদান করতে পারে।)

~ মানুষ বাদে অন্য কিছু প্রাণীর এমন ব্রণের মত কিছু দৃষ্ট হয়।

~ মনে রাখতে এটা হাইপোথেসিস নির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।

বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন যে, জটিল ও বৃহৎ মগজের জন্য বড় মাথার প্রয়োজন। কিন্তু নারীদের পেলভিসের যে আকৃতি সেখান দিয়ে এই সাইজের মাথা বের হওয়া কষ্টসাধ্য! মানুষের পেলভিস বড় হয়েছে কিন্তু এর থেকে বেশী বড় হতে পারছে না তাহলে হাঁটাচলার অসুবিধে হবে। সে কারনেই ভীষণ এলোমেলোভাবে চলা এই বিবর্তন এবং কোন লক্ষ্যহীন প্রকৃতি(!) বিশেষ এক ধরেন তৈলাক্ত পদার্থ দিয়ে মাথা ও মুণ্ডু মুড়ে দেয় যার ফলে সরু বার্থ ক্যানেল ও অপরিসর পেলভিস দিয়ে সহজে নবজাতক বের হয়ে আসতে পারে। কিন্তু প্রকৃতি এটুকু করেই হাল ছেড়ে দিয়েছে! বয়ঃসন্ধিকালের আগে এর তেল আর তেমন নিঃসরণ হয় না- এর পরে আচমকা বেশী পরিমাণ বের হতে গিয়ে বেশ গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলে! কেন কি জন্য?
আমরা কোন প্রশ্নের উত্তর যখন পাইনা তখন প্রকৃতির উপরে দোষ চাপিয়ে ‘নির্দিষ্ট-লক্ষ্যহীন উদ্দেশ্যে’র কথা বলে পাশ কাটিয়ে যাই- ঠিক গোঁড়া ধার্মিকদের মত। কোন কিছুর ব্যাখ্যা করতে না পারলে বা না জানলে, ঈশ্বর সব জানেন বা তার উপরে দোষ চাপিয়ে দেয়।
বিষয়টা হচ্ছে; একথা বলে আপনি যখন বলবেন অন্য প্রাইমেটদের ব্রণ হয় তখন-ই আটকে যাবেন। তাদের-তো পেলভিস বা বার্থ ক্যানেলে জন্মদানের সময়ে সমস্যা হয় না- তবে কেন বেশী পরিমাণ সিবাম নির্গত হবার প্রয়োজন? মানুষের যেহেতু মুখে ও মাথায় ব্রণ হয় সেজন্য যুক্তিটি ধোপে টেকে যে, বড় মাথা হবার কারণে বেশী পরিমাণ সিবাম জন্মের আগে ওই অংশগুলো দিয়ে নির্গত হয়। কিন্তু অন্য প্রাইমেটদের কি মুখে মাথায় ব্রণ হয় না তাদের সারা শরীরে?
এর উত্তর খুঁজে পেলে সদুত্তর বেরিয়ে আসবে। সৃষ্টি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলা প্রকৃতির ভুল ধরার মত বিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আমাদের আরো বহু বহু পথ যেতে হবে।


~ পিম্পলের রকমফের!

পিম্পল মানুষকে প্রাণীজগতের বাকি অংশ থেকে আমাদের আলাদা করার অংশ। যদিও এটা সত্য যে ব্রণ ভালগারিসের প্রভাব (ভিন্ন রূপ) অন্যান্য প্রজাতির মধ্যেও দেখা যায়-এগুলি কিছু মেক্সিকান লোমহীন কুকুরের মধ্যে পাওয়া গেছে এবং অল্প কিছু গণ্ডার ইঁদুরের দেহেও মিলেছে –সেজন্য ধারণা করা হয়, ব্রণ মূলত আমাদের চুল-বিহীন ( অভিশপ্ত) প্রজাতির একটি রোগ। (কোন কোন অঞ্চলভেদে ৮৫ থেকে ১০০ শতাংশ কিশোর-কিশোরীরা ব্রণে আক্রান্ত হয় , সেইসাথে একটি উল্লেখযোগ্য অল্প কিছু প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ব্রণের প্রভাব দৃষ্ট হয়।)
বিশেষজ্ঞ কেল্ট এবং গিলবার্ট বলেছেন, যে আমাদের সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলির, লোমশ শরীরের সাথে কাজ করতে অভ্যস্ত, আমাদের চেহারার এই পরিবর্তনের বিবর্তন পিছনে পিছিয়ে গেছে। ফলস্বরূপ, যে সমস্ত তৈলাক্ত এবং মোম-যুক্ত সিবাম সাধারণত পশমকে লুব্রিকেট করার জন্য নির্গত হয় সেগুলো পরবর্তীতে একইভাবে নির্গত হতে থাকলেও আধুনিক মানুষের শরীরে লুব্রিকেট করার মতো বেশি পশম ছিল না। তাই পরিবর্তে আমাদের ছিদ্রগুলি আটকে দেয়। (হাইপার-ট্রাইকোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির অনেক সমস্যা আছে যেটা ‘ওয়্যার ওল্ফ সিনড্রোম’ নামেও পরিচিত। এটা বিশেষ একটা রোগ তাই এটা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, কিন্তু ব্রণ অতি সাধারণ একটা প্রাকৃতিক কার্যক্রম এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ নয়।)
যাই হোক না কেন, এই বিবর্তনীয় ধার একটি সংবেদনশীল সত্তা দ্বারা তৈরি ব্রণের চেয়ে ভাল। প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর বড়ই হৃদয়হীন, যিনি দেহ ঘড়িটির নকশা একটু এলোমেলো করে দিয়েছিলেন যাতে মানুষের সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলি আমাদের বিকাশের নির্দিষ্ট সময়ে সিবাম তৈরি করতে পারে- ঠিক যখন আমরা আমাদের চেহারা সম্পর্কে তীব্রভাবে সচেতন হতে শুরু করেছিলাম।
প্রকৃতপক্ষে বিবর্তন আমাদের আরেকটি স্বতন্ত্রভাবে মানবিক বৈশিষ্ট্য দিয়েছে বা এমন একটা ব্যাপার উপহার দিয়েছে; যেকোনো ব্রণের প্রাদুর্ভাব যা নিদারুণভাবে আমাদের জীবনধারাকে আরও অপ্রীতিকর করে তোলে।
কেল্ট এবং গিলবার্টের সাথে এই লেখক বিশ্বাস করেন যে এটা অন্যায্য, সংজ্ঞাহীন ও গুরুতর-ভাবে ব্রণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্ব-জ্ঞাত প্রতিক্রিয়া; আমাদের বিবর্তনীয় উৎসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে।

নেক লোকের জন্য, বিশেষ করে যারা সামাজিক সংবেদনশীলতার ব্যক্তিগত দিক নিয়ে উচ্চ স্কোর করেন, ব্রণ শুধুমাত্র একটি উপদ্রব নয়; বরং, এটি একজন ব্যক্তির মূল আত্ম-ধারণার মধ্যে ধ্বংসাত্মক-ভাবে প্রবেশ করতে পারে এবং গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে, এমনকি ব্রণে ক্ষত বিক্ষত চেহারা পোড়া বা দুর্ঘটনার কারণে মুখের বিকৃতির সাথে সম্পর্কিত কষ্টের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। নিউজিল্যান্ডের এক তৃতীয়াংশ কিশোর-কিশোরী যারা নিজেদেরকে "সমস্যা ব্রণ"-এ ভুগছে বলে বর্ণনা করেছিল তাদের আত্মহত্যা পর্যন্ত করার চিন্তা করে ছিল, এক চতুর্থাংশের ক্লিনিক্যালি উল্লেখযোগ্য মাত্রার বিষণ্ণতা ছিল এবং এক দশমাংশের উচ্চ মাত্রার উদ্বেগ ছিল।
তবে এই সকল দুর্ভাগা কিশোরেরা এই সত্যে সামান্য স্বস্তি পায় এই কথা জেনে যে, ব্রণ অন্যান্য মানব বৈশিষ্ট্যের মতো, জিন এবং পরিবেশের কিছু সংমিশ্রণ দ্বারা নির্ধারিত হয়। আমাদের ডিএনএ ডায়েট,পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস, সূর্যের এক্সপোজার বা অন্য কোনও কারণের সাথে ঠিক ব্রণের সম্পর্ক কতটুকু তার সন্মন্ধে খুব কমই জানা গেছে



আপনার ব্রণের দাগ কিছু ক্ষেত্রে আপনার কিশোর বয়সেই অদৃশ্য হয়ে যায় বা এটা চল্লিশেও থেকে যায় নিদারুণ এক অস্বস্তি হিসেবে। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, আপনার সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলি একদিন -একটি আদিম নদীর তলদেশের মতো শুকিয়ে যাবে। আপনি কোন এক বয়সে এসে সহজেই চমৎকার কিছু বলিরেখায় সেগুলো হারিয়ে ফেলতে পারেন চিরতরে। ভুলে যেতে পারেন হয় কোন একদিন আপনার চঞ্চল যৌবন ও দুরন্ত কৈশোর ছিল! তখন আপনি আপনার টানটান, মসৃন ও উজ্জক ত্বক নিয়ে কি দুঃশ্চিন্তাতেই না ছিলেন!! একসময় সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই একমাত্র আরাধ্য হবে।
তখন মনে হবে, আপনার কুঁচকানো চামড়ার নীচে যে সব ভীষণ কষ্টের ক্ষোভের বেদনার যে ব্রণের ক্ষতগুলো লুকিয়ে রয়েছে তারা কেবল প্রকৃতির একটি ক্ষণস্থায়ী প্রসাধনী বিপর্যয় ছিল।

অবশ্য আপনি হোমো সেপিয়েন্সদের প্রকৃতির এই বিবর্তনের ধারার উপরেও খানিকটা রুষ্ট হতে পারেন; যে বিবর্তনের ধারা খুব বেশী তাড়াহুড়ো করে আমাদের শরীর থেকে পশমগুলো কেড়ে নিয়েছে।
********
লেখা সুত্রঃ
Do other primates get acne? If so, how is it different from the type humans get?
Why do humans get acne? A hypothesis
What makes pimples so peculiar to people?
উইকিপিডিয়া সহ অন্যান্য অনলাইন মাধ্যম।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×