somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ কেন অনন্য? পর্ব~২

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানুষ কেন অনন্য? পর্ব~১
"গুজ বাম্প’ এসেছে শব্দটা মূলত হাঁসের পশমের গোঁড়ার যোগসূত্র থেকে। হাঁসের পালক যেই বহিঃশ্চর্মের ছিদ্র থেকে বৃদ্ধি পায় তা মানুষের চুলের ফলিকলের মতো। যখন একটি হংসের পালক ছিঁড়ে ফেলা হয়, তখন পালক যেখানে ছিল তার ত্বকে যে ধরনের উত্তল ছিদ্র দেখা যায় সেগুলো পশম দাড়িয়ে যাবার বা গায়ে কাটা দেবার পরে মানুষের ত্বকের অনুরূপ।
পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা এর কাছাকাছি ভিন্ন ফর্ম ব্যবহার করে; উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনামি, কোরিয়ান, জাপানিজ, ফিনিশ, ডাচ, লুক্সেমবার্গিশ, ফরাসি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং গ্যালিসিয়ান ভাষায় হাঁসের বদলে‘মুরগি বাম্প’ ব্যবহৃত হয়; আইরিশ ও হিব্রু ভাষায় ইংরেজির মত হাঁস ব্যবহার করে।‘মুরাশকি’ বেলারুশ ভাষায় যার অর্থ পিঁপড়া সেটা ‘গুজবাম্প’ এঁর প্রতিশব্দ হিসেবে ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান ভাষায় ব্যবহার হয় (যেটা, ত্বকে পিঁপড়ার হামাগুড়ি দেওয়ার অনুভূতির ইঙ্গিত করে)।
কিছু লেখক যৌন সংক্রামিত রোগের উপসর্গের জন্য ‘গুজবাম্প’ শব্দটা প্রয়োগ করেছেন। ১৬ শতকে সিফিলিস সংক্রামিত হওয়ার জন্য " উইনচেস্টার গুজ এঁর কামড়" ছিল একটি সাধারণ শব্দবাক্য। " উইনচেস্টার গুজ " ছিল দক্ষিণ লন্ডনের পতিতাদের ডাকনাম, তার লন্ডন প্রাসাদের এলাকায় উইনচেস্টারের বিশপ কর্তৃক লাইসেন্স-প্রাপ্ত ছিল।
মানুষের গুজবাম্প হাতের বাহুতে সবচেয়ে বেশি হয়, তবে পা, ঘাড় এবং লোমযুক্ত ত্বকের অন্যান্য অংশেও দেখা যায়। কিছু লোকের মুখমণ্ডল ও মাথায়ও গুজবাম্প হতে পারে।
গুজবাম্পস বা গুজ বাম্প হল একজন ব্যক্তির ত্বকে শরীরের চুলের গোড়ায় এমন অনুভূতি যা যখন সুড়সুড়ি, ঠাণ্ডা হয় বা ভয়, উচ্ছ্বাস বা যৌন উত্তেজনার মতো শক্তিশালী আবেগ অনুভব করে তখন অনিচ্ছাকৃত-ভাবে দেখা দিতে পারে।

চরম আবেগ
যখন তারা ভয় পায় বা ভয়ের অনুভূতি হয় তখন কিছু লোক প্রায়শই বলে যে তাদের "গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেছে" ।
যখন শরীর লড়াই বা পালানোর জন্য প্রস্তুত হয়, তখন সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্র অ্যাড্রেনালিন (এপিনেফ্রিন) দিয়ে রক্তে প্লাবিত করে, একটি হরমোন যা এমন উচ্চ-চাপের পরিস্থিতিতে হৃৎস্পন্দন, বিপাক এবং শরীরের তাপমাত্রাকে দ্রুত করে। সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্র তারপরে পাইলোরেকশন রিফ্লেক্সকেও ট্রিগার করে, যার ফলে প্রতিটি চুলের ফলিকলের গোড়ার সাথে সংযুক্ত পেশীগুলি সঙ্কুচিত হয় এবং চুলকে উপরে তোলে।

সঙ্গীত
কানাডিয়ান গবেষকরা জানিয়েছেন যে, যখন কোন মানুষ সঙ্গীত দ্বারা বিশেষভাবে মোহাবিষ্ট হয় - আন্দোলিত হয়, তখন তাদের মস্তিষ্ক এমন আচরণ করে যেন তারা সুস্বাদু খাবার ( কিংবা সাইকো-ট্রপিক ওষুধ) প্রতি সাড়া দিচ্ছে। রাসায়নিক ডোপামিন দ্বারা আনন্দের সূত্রপাত হয়, যা ‘ঠাণ্ডা লাগা( শীত অনুভব করা)’ নামে পরিচিত এমন একটা শারীরিক প্রভাব তৈরি করে যা হৃৎস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস, তাপমাত্রা এবং ত্বকের বৈদ্যুতিক সঞ্চালনের পরিবর্তন ঘটায়। এর ফলে এক ধরনের শিহরণ অনুভব হয় এবং শরীরের রোম দাঁড়িয়ে যায়।

আহার
খাবারের কারণে শরীরের তাপমাত্রা আচমকা কমে বা বেড়ে গেলে কিংবা বিশেষ কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে।
আফিম হেরোইন বা অন্য কিছু নেশা থেকে বিরতি নিলে বা ছেড়ে দিলে ঘন ঘন গুজবাম্প হতে পারে।

স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রণ
একটি অজানা কিছু মানুষের সচেতনভাবে সংবেদন এবং শারীরবৃত্তীয় এই লক্ষণগুলি শুরু পারে। এই ঘটনাটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে, সহজাত বলে মনে হয় কিন্তু কোনভাবেই অনুশীলন করে শেখা বা অর্জন করা সম্ভব নয়।
এই ধরনের লোকদের হৃৎস্পন্দন বাড়ানোর ক্ষমতা থাকে যা মাথার খুলির গোড়া থেকে শরীরের নিচের দিকে ঠাণ্ডা স্রোত প্রবাহের মাধ্যমে গুজবাম্পস সৃষ্টি করতে পারে, এটা মূলত বাহুতে হয়- তবে শরীরের অন্যস্থানে হইয়াও অস্বাভাবিক নয়। এই ধরনের ব্যক্তিদের সম্পর্কে আরও জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

চকবোর্ডের শব্দ ও কম্পন এবং প্রাইমেট হেরিটেজ হাইপোথিসিস
চকবোর্ড জুড়ে আঙ্গুলের নখের শব্দের প্রতিক্রিয়া হিসাবে লোকেরা প্রায়শই গুজবাম্প অনুভব করে। (হাইপোথিসিস) ধারনা করা হয় যে এটা মূলত আদিম সময়ে ধ্বনিগত-ভাবে প্রাইমেটদের ‘কষ্টের অনুভূতি’র শব্দ ছিল।

****************
গুজবাম্প হতে পারে যখন তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যায়, যেমন ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকা, যখন ত্বক দ্রুত তার পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হয় না। ঠাণ্ডা পরিবেশের উদ্দীপনা প্রতিটি লোমকূপের সাথে সংযুক্ত ক্ষুদ্র পেশীর (চুলের পেশী সোজা করে) সংকোচন ঘটায়। এই সংকোচনের ফলে চুল সোজা হয়ে যায়, যা চুলে আটকে থাকা জলকে বাষ্পীভূত করে ত্বক থেকে উপরে উঠিয়ে চুলের মাথায় দ্রুত শুকিয়ে ফেলে। এমনও হতে পারে শরীর ঠাণ্ডা থেকে নিন্মস্থ ত্বককে রক্ষার জন্য উপরস্থ ত্বকের মুখ বা কুপগুলো বন্ধ করে দেয়।



মানুষের মধ্যে
মানুষের মধ্যে, গুজবাম্প বিস্ময়কর সঙ্গীত শোনা, শক্তিশালী এবং ইতিবাচক আবেগ অনুভব করা বা মনে রাখা (উদাহরণস্বরূপ, একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা জেতার পরে), বা টিভি দেখার সময় ভয়ের আবহ সৃষ্টি হলে। অজানা আতঙ্কে, ভয়ের অনুভূতিতে, অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতির কথা ভেবে, অতিরিক্ত আনন্দে পশম দাড়িয়ে যেতে পারে।



অন্য প্রাণীদের বা প্রাইমেটদের
পশম বা চুলে আচ্ছাদিত প্রাণীদের প্রসারিত চুল বাতাসকে আটকে রাখে, একটি অন্তরক স্তর তৈরি করে। মূলত তাদের ‘গুজবাম্প’ রাগ বা ভয়ের প্রতিক্রিয়াও হতে পারে: ছড়িয়ে থাকা চুলগুলি শত্রুদের ভয় দেখানোর জন্য প্রাণীটিকে বড় দেখায়। এটি শিম্পাঞ্জি ( কেন হয় কেমনে হয় এটা খুঁজে পাওয়া যায় নি), কিছু নিউ ওয়ার্ল্ড বানর যেমন, তুলা-কাপড ট্যামারিন, ইঁদুর ও ভীত বিড়াল কুকুর আক্রমণকারীকে ভয় দেখানোর জন্য খাড়া পশম প্রদর্শন লক্ষ্য করা যায়।
উচ্চতার ভয়ের কারণে একটি বিড়ালছানার ত্বকে গুজবাম্প। ( এটাকে আদপে গুজবাম্পস বলা যায় কি-না সেটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত)।

যাইহোক আদপে আজ অবধি গুজবাম্প নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা হয়নি। এখনো পর্যন্ত ভাবা হয় ‘গুজবাম্প এর কারণ ও এর ধরন অন্য যে কোন প্রাণীর তুলনায় আধুনিক মানুষ ব্যতিক্রম’। আসলে হোমো-সেপিয়েন্সদের শরীরবৃত্তীয় ব্যাপার অনুভূতিমূলক মানসিক বিষয়গুলো যতটুকু ভাবা হয় তার থেকে অনেক অনেক বেশী জটিল ও রহস্যময়য়।
******


লেখাসুত্রঃ উইকি, সায়েন্স ডট কম সহ অনন্যান্য অনলাইন সুত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০৯
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×