somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ কেন অনন্য? পর্ব~৩

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপনার হাতের তালুর দিকে তাকান-বৃদ্ধাঙ্গুলিটা আলাদা রাখুন। রইল বাকি আপনার বাকি চারটা আঙুল কনিষ্ঠ,অনামিকা, মধ্যমা আর তর্জনী। দেখুনতো চেষ্টা করেই চারটা আঙুল দিয়ে কোন আঙ্গুলের অগ্রভাগের তালু মুখোমুখি স্পর্শ করতে পারেন কি না? পারবেন না নিশ্চিত- যদি পারেনও তবে অন্য আঙ্গুলের সাহায্য নিতে হবে। অনেকেই এক জীবনে এটা চেষ্টা করেই দেখে নাই। অথচ বুড়ো আঙুল দিয়ে কত সহজেই না বাকি আঙুল গুলোর যেখানে সেখানে স্পর্শ করা যায়! বাকি আঙ্গুলগুলোর বিপরিতদিকে কেন এমন গাট্টাগুট্টা ভারি অথচ ভীষন করিৎকর্মা আঙুল কেন এসে দাড়াল সেটা ভেবে দেখেছেন কি?
(এবার ভিন্ন একটা বিষয়; আপনার দুটো হাতের তালু সামনে উপুর করে রাখুন। এখন ভাবুন; ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছেন। জায়গাটা আমার একেবারে হাতের তালুর মত চেনা। সত্যি কি? আমি নিশ্চিত এইমাত্র না দেখে থাকলে আপনি সঠিক তালুর চিত্র আঁকতে পারবেন না (৯৯%)।)
এবার আসল বিষয়টাতে আসি। আপনি কি ভেবে দেখেছেন আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের পেছনে আমাদের বুড়ো আঙুলটার তাতপর্য কতটুকু??
সকালের ব্রাশ থেকে শুরু করে রাতের মশারি টাঙ্গানো পর্যন্ত সারদিন কতভাবেই না সাহায্য করছে এই আঙুলটা।
******
বৃদ্ধাঙ্গুলিকে বলা হয় Opposable thumbs বা বিপরীতমুখী আঙুল। একই হাতের বাকি আঙুলগুলির উল্টোদিকে এই আঙুলখানা থাকে বলে এর এমন নাম।
মানুষের বৃদ্ধাঙ্গুল না থাকলে কী হবে? বাকি চারটা আঙ্গুলের এত চমৎকার সব নাম দেবার পরে এই আঙুলের নাম কেন বুড়ো বা বৃদ্ধ রাখা হোল সেটা বোধগম্য নয়।

থাম্বস বা বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া, আমাদের বর্তমান প্রযুক্তির সাথে অনেক দৈনন্দিন কাজ অনেক বেশি কঠিন হবে, যদিও একেবারে অসম্ভব নয়, তবে বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া আপনার দৈনন্দিন জীবন যাপন একবার কল্পনা করুন? আপনি নিশ্চিত এটা চাইবেন না- বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া আধুনিক জীবন যাপন আপনার কাছে ভয়ঙ্কর অসহ্যকর মনে হবে- পরিবর্তে আদিম থেকে যাবেন, নিছক অস্ত্র এবং ফল তালুতে বন্দী করতে আমাদের মুষ্টি ব্যবহার অনেক সহজতর ছিল।
মানুষের হাত দক্ষতার এক বিস্ময়!! এটি একটি একটি সুতা সুইয়ের সুক্ষ ছিদ্র দিয়ে গলাতে পারে, একটি পিয়ানোর চাবিতে জটিল সুর তুলতে পারে এবং একটি কলম বা পেইন্টব্রাশ দিয়ে দুর্দান্ত শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারে। কিছু বিজ্ঞানী ধারনা করেন যে, আমাদের হাতগুলি সাম্প্রতিক বিবর্তনের লক্ষ লক্ষ বছর ধরে তাদের অনন্য বৈশিষ্ঠ তৈরি করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি নতুন গবেষণা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলে : মানুষের হাতের কিছু বৈশিষ্ঠ শারীরবৃত্তীয়ভাবে আমাদের অতি নিকটতম প্রাইমেট শিম্পাঞ্জি সহ অন্যান্য অনেক বনমানুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে অনন্য। মানব নির্মিত সরঞ্জাম তৈরির উৎসের জন্য অনুসন্ধানগুলির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। সেইসাথে মানুষ ও শিম্পাঞ্জির মধ্যিখানে যারা এসেছিল সেইসব আদি হোমসেপিয়েন্সদের হাত দেখতে কেমন ছিল ও মানুষ আর শিম্পাঞ্জি যখন দুটো প্রাইমেটে ভাগ হয়ে গেল তখন তাদের পূর্বপুরুষ দেখতে কেমন ছিল সেই বিষয়ে জানার জন্য আরো ব্যাপক অনুসন্ধান ও গবেষনার প্রয়োজন রয়েছে?



মানুষ এবং শিম্পস সম্ভবত প্রায় ৭ মিলিয়ন বছর আগে একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল এবং তাদের হাত এখন খুব আলাদা দেখাচ্ছে। আমাদের অপেক্ষাকৃত লম্বা বুড়ো আঙুল এবং ছোট আঙুল রয়েছে, যা আমাদের আঙুল দিয়ে আমাদের থাম্বকে যেকোনো বিন্দুতে স্পর্শ করতে দেয় এবং এইভাবে সহজেই বস্তুগুলিকে ধরতে পারে। অন্যদিকে, শিম্পাদের বাকি আঙুলগলো অনেক লম্বা আঙুল কিন্তু বুড়ো আঙুলটা বেশ খাটো, গাছে দোলানোর জন্য উপযুক্ত কিন্তু সুক্ষ কোন কিছু গ্রিপ করার জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়। কয়েক দশক ধরে গবেষকদের মধ্যে নিশ্চিত ধারণা ছিল যে শিম্প এবং মানুষের সাধারণ পূর্বপুরুষের শিম্পের মতো হাত ছিল এবং আমাদের আরও ভাল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হিসাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের চাপের প্রতিক্রিয়ায় হাত পরিবর্তিত হয়েছে।
(রে নিই মানুষ শুরু থেকেই চিতার ক্ষিপ্রতায় দৌড়ুতে চেয়েছে কিন্তু তার গতি তার পুর্বপুরুষদের থেকে দিনের পর দিন শ্লথ হয়ে গেছে। বিবর্তন এখানে উল্টো কাজ করেছে।
ফের ধরুন যে, মানুষ যত বেশী অন্ধকারে দেখতে চেয়েছে ততবেশী রাতকানা হয়েছে। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন আরে গর্ধভ; প্রাইমেট শ্রেণীর অন্য কেউ আছে যে রাতে দেখে- সবারইতো প্রয়োজন ছিল?
আছে দাদা- aotidae পরিবারের, যারা রাতের বানর নামে পরিচিত বা তাদের বড় চোখের কারণে প্রায়শই আউল বা পেঁচা বানর বলা হয় মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনাঞ্চলে বাস করে। এরাওতো কোন এক সময় একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বাকি যারা আছে তারা হয় দুর্দান্ত স্পর্শকাতর নয় ভীষন শক্তিশালী নয় গতিশীল আর বেশীরভাগ রাতের অতর্কিত আক্রমানকারী থেকে অনেক দূরে থাকে
।)

~ আমাদের নিকটতম আত্মীয় শিম্পাঞ্জিদের বুড়ো আঙুল।

কিন্তু সম্প্রতি কিছু গবেষক এই ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করেছেন যে শিম্পদের সাথে বিবর্তনীয় বিভক্ত হওয়ার পর থেকে মানুষের হাত মৌলিকভাবে তাদের অনুপাত পরিবর্তন করেছে। প্রাচীনতম মানব পাথরের হাতিয়ারগুলি ৩.৩ মিলিয়ন বছর পুরানো বলে মনে করা হয়, তবে নতুন প্রমাণ আবির্ভূত হয়েছে যে মানব রেখার প্রথম দিকের কিছু সদস্য - যেমন ৪.৪-মিলিয়ন বছর বয়সী আরডিপিথেকাস রামাইডস ("RD") - ছিল হাত -তৈরি ছিল যা আধুনিক মানুষের সাথে শিম্পদের তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ, যদিও এটি সরঞ্জাম তৈরি করেনি। এবং ২০১০ সালে, এখন ওয়াশিংটন, ডিসিতে। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে, জীবাশ্মবিদ সার্জিও আলমেসিজার নেতৃত্বে একটি দল তর্ক করতে শুরু করেছে যে মানব-শিম্পের বিবর্তনীয় বিভাজনের খুব শীঘ্রই ৬ মিলিয়ন বছর আগে, মানব আত্মীয়দের ইতিমধ্যেই এই যুক্তি ছিল। মানুষের মতো হাতও। এটিতে পর্যাপ্ত বল সহ আঙুল দিয়ে থাম্ব টিপানোর ক্ষমতাও রয়েছে, যা একটি নির্ভুল গ্রিপের একটি মূল দিক।
( অন্য একটা গবেষণা বলছে কিন্তু বুড়ো আঙুল বিবর্তিত হয়েছে ২ মিলিয়ন বছর আগে আর ডি’র সাথে যার বয়সে পার্থক্য মাত্র আড়াই মিলিয়ন বছর!!!)
প্রাথমিক হাতগুলি আসলে কেমন ছিল তা বোঝার জন্য, আলমেসিজা এবং তার সহকর্মীরা আধুনিক মানুষ সহ জীবিত বানর এবং বনমানুষের বৃহৎ সংখ্যক বুড়ো আঙুল এবং আঙুলের অনুপাত বিশ্লেষণ করেছেন। তারপরে তারা তাদের বেশ কয়েকটি বিলুপ্ত প্রজাতির বনমানুষ এবং আর্ডি, নিয়ান্ডারথাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ২-মিলিয়ন বছর বয়সী অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা সহ প্রাথমিক মানুষের হাতের সাথে তুলনা করেছিল, যা এর গবেষকরা বিতর্কিতভাবে ভেবেছিলেন যে তারা মানুষের সরাসরি পূর্বপুরুষ হতে পারে। . . নমুনাটিতে একটি ২৫-মিলিয়ন বছরের পুরানো জীবাশ্ম বানরও রয়েছে যা প্রোকনসুল নামে পরিচিত।

~প্রোকনসুল

তথ্যসুত্রঃ Humans have more primitive hands than chimpanzees
******
এবার আসুন; এক নজরে, মানুষের এবং প্রাইমেট হাত প্রায় অভিন্ন দেখতে পারে। তারা অনেক বৈশিষ্ট্য ভাগ করে নেয় এবং উভয়ই অন্যান্য অনেক ফাংশন উপলব্ধি করতে এবং সম্পাদন করতে পারে। কিন্তু বেশ কিছু পার্থক্য দুই হাত আলাদা করেছে।
বিপরিতমুখী অঙ্গুষ্ঠঃ
প্রাইমেট এবং মানুষের উভয় হাতেরই বিপরিতমুখী আঙুল বা অঙ্গুষ্ঠ রয়েছে যা হাতের অন্য চারটি আঙুলকে স্পর্শ করার জন্য নড়াচড়া করতে পারে। কিন্তু মানুষের বুড়ো আঙুল প্রাইমেট বুড়ো আঙুলের চেয়ে লম্বা, পেশীবহুল এবং অনেক বেশি মুভেবল। হ্যান্ড রিসার্চ ওয়েবসাইটের মতে, মানুষের লম্বা বুড়ো আঙুলগুলি গাছ থেকে দোলানোর জন্য তাদের হুকের মতো আঁকড়ে ধরার পথে প্রাইমেটদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে, ।
বাকি চার আঙুলঃ
প্রতিটি হাতের বিপরীতমুখী অঙ্গুষ্ঠ ছাড়াও চারটি আঙুল আছে, কিন্তু মানুষের আঙুল ছোট এবং চ্যাপ্টা। হাত গবেষকেরা বলেন যে প্রাইমেটদের লম্বা, বাঁকা আঙুলগুলি গাছে দোলানোর জন্য প্রাণীর সক্ষমতাকে সহায়তা করে
অঙ্কের অনুপাতও আলাদা। অঙ্কের অনুপাত দ্বিতীয় ও চতুর্থ আঙ্গুলের দৈর্ঘ্য বা তর্জনী ও অনামিকা আঙ্গুলের সাথে তুলনা করে এবং 2D:4D দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্রাইমেটদের 4D সাধারণত মানুষের 2Dএর তুলনায় কম। মানুষের আঙুলগুলি মোলায়েমভাবে সম্পুর্ণরূপে বাঁকিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল স্পর্শ করার জন্য তালুর কেন্দ্রের দিকে ঘোরাতে পারে। প্রাইমেটদের আঙুল তেমন নমনীয় ও মুভেবল নয়।
আঙ্গুলের রেখাঃ
মানুষের হাত এবং প্রাইমেট হাত উভয়েরই আঙ্গুলের ছাপ ও তালুর রেখা বা পালমার হোর্লস রয়েছে, তবে রেখাগুলি আলাদা। প্রাইমেট ফিঙ্গারপ্রিন্টের তুলনায় মানুষের আঙুলের ছাপগুলির ঘনত্ব বেশি থাকে, যার অর্থ হল প্রিন্ট রিজগুলি বা লাইনগুলি একসাথে কাছাকাছি থাকে৷ যদিও মানুষের হাতের রেখার লাইনগুলি ঘন হয়, তবে এই লাইন প্রাইমেটদের সাধারণত সামগ্রিকভাবে বেশি থাকে। অর্থাৎ প্রাইমেটদের মানুষের তালুর চেয়ে বেশি ক্রিজ বা সিমিয়ান রেখা রয়েছে।
আন্দোলনঃ
জার্নাল অফ অ্যানাটমি অনুসারে, মানুষের হাত প্রাইমেট হাতের চেয়ে অনেক বেশি সঁচরণশীল(চলনশীল)। মানুষ সম্পূর্ণরূপে তাদের হাত ঘোরাতে পারে সেইসাথে প্রসারিত এবং কব্জিতে তাদের হাত ঝুলিয়ে রাখতে পারে। প্রাইমেটরা - বিশেষ করে যারা হাঁটে তাদের হাতের নড়াচড়ায় অতটা নমনীয় হয় না। নাকল-ওয়াকারদের কব্জির হাড় যখন তাদের হাঁটুতে চাপ দেয় তখন তাদের হাত বাঁকানো বা প্রসারিত হতে বাধা দেয়।
বিবর্তন
অ্যানাটমি জার্নাল ব্যাখ্যা করেছে যে, কোন এক সময় মানুষের ও প্রাইমেট হাত আজকের তুলনায় অনেক বেশি মিল ছিল। প্রাইমেট হাত একই রয়ে গেলেও, মানুষের হাত নতুন কাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পরিবর্তিত হয়েছে।কোন কিছু সুক্ষ কিংবা তীব্রভাবে ধরার জন্য কিংবা গ্রীপকে শক্তিশালী করার জন্য মানুষের হাতের বিকাশের সাথে জড়িত, যার ফলে, আরও নমনীয় আঙুল এবং কব্জি এবং আঙুলগুলি ঘোরানোর ক্ষমতা ও সর্বোপরি আজকের এই সভ্যতায় এসে দ্রুত পৌঁছানোর পেছনে শরিরের যেই অঙ্গের অবদান সবচেয়ে বেশী তেমন একটি লম্বা বৃদ্ধাঙ্গুল পেয়েছি আমরা।
তথ্যসুত্রঃ Differences Between a Cat, Dog, & Human Skeleton
*****
বুড়ো আঙ্গুলের বয়স কত? মুল তথ্যসূত্রঃ সায়েন্স ম্যাগাজিন।



কাউকে ভবিষ্যতে বুড়ো আঙুল দেখানোর আগে ভাববেন। আমাদের আজকের এই সভ্যতার পেছনে অতি সাধারণ এই বৃদ্ধাঙ্গুলির অবদান কতটুকু?
আমাদের বুড়ো আঙুলটা কত কাজেই না লাগে। নানান সরঞ্জাম তৈরি, পোশাক সেলাই, আচারের বয়াম খোলতে,মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের বুড়ো আঙুলটা নেই সেটা ভাবা যায়? আচ্ছা সে আপনারা ভাবুন।

মাদের এই বুড়ো আঙুলটা ঠিক কত বয়সের বুড়ো? কেন আমরা একে বুড়ো আঙুল বলি- আসলেই এটা আঙুলদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বুড়ো? বুড়ো আঙ্গুলের বয়স নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এটি রহস্য হয়েই ছিল গবেষকদের কাছে। নতুন একটি গবেষণা বলছে বুড়োটা প্রায় ২ মিলিয়ান বছরের বুড়ো। প্রায় ২ মিলিয়ান বছর পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এটি লাভ করে। কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ট্রেসি কিভেল বলছেন গবেষণাটি যুক্তিসম্পন্ন। পূর্বপুরুষদের বুড়ো আঙুল কি করে কাজ করে সেটা জানা এত সহজ নয়। তবে এটা নিশ্চিত যে, অন্যান্য আঙ্গুলের চেয়ে বুড়ো আঙুল বিবর্তিত হয়েছে সবচেয়ে কাছা কাছি সময়ে। সেই হিসেবে এটাকে সবচেয়ে নবীন আঙুল বলাই শ্রেয়।
ফসিলে যথেষ্ট পরিমাণ পেশি সংরক্ষিত থাকে না। সুতরাং এই ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বপুরুষদের আমাদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে এমন কিছু হাড় ঠিক কতটা কাছাকাছি এর উপর নির্ভর করতে হয়। হাতের অস্থি গুলো এমনিতেই ছোট এবং এসব এর ফসিলও খুব কম। সাদৃশ্যের রকমফের হয় অস্থির সাথে পেশিগুলো কীভাবে যুক্ত আছে তার উপর। অনেকসময় দেখা যায় অস্থির একই গঠনতন্ত্র থাকা সত্ত্বেও মুষ্টির দৃঢ়তায় পার্থক্য হতে পারে।
জার্মানির তিউবেনজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাটেরিনা হরবতি এবং তার সহকারীরা মানুষের বিভিন্ন প্রজাতির জীবাশ্ম নিয়ে সেগুলোর বুড়ো আঙ্গুলের উপর গবেষণা করেন। তারা সেগুলোর হাড়ের আকৃতি এবং নরম টিস্যু নিয়ে কাজ করেন। সেই সাথে তারা নমুনাগুলোর ত্রিমাত্রিক গঠন তৈরি করেন এবং এগুলোর টর্ক হিসেব করেন। গবেষকরা প্রায় এক লক্ষ বছরের আগের দুইটা আধুনিক মানুষ প্রজাতি এবং চারটি নিয়ানডারথাল এর ফসিল নিয়ে গবেষণা করেছেন । এছাড়া আড়াই থেকে তিন লক্ষ বছর আগের হোমো নালেডি প্রজাতির নমুনা নিয়েও কাজ করেন। হোমো গণের সিস্টার গণ অস্ট্রেলোপিথেসিন ( অস্ট্রেলোপিথেকস আফেরেন্সিস,অ.আফ্রিকানাস,অ.সেদিবা) এর নমুনাও গবেষণার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ( যদিও এর একটাও আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি)
বিজ্ঞানীরা থ্রিডি কম্পিউটার সফটওয়ার ব্যবহার করে ফসিলের অপোনেনস পলিসিস পেশি পুনরায় যুক্ত করে একটা তিনমাত্রিক ইমেজ তৈরি করেন। উল্লেখ্য যে অপোনেনস পেশি বুড়ো আঙুল কে হাতের তালুর ভেতরের দিকে ভাজ করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও এই পেশি আরো শক্ত এবং দৃঢ়ভাবে কোনো কিছু ধরা যেমন সেলাই এর সময় সুচ অথবা হাতুড়ি নিয়ে কাজ করার সময় হাতুড়ি দোলাতে সহায়তা করে। এটি একটি ত্রিকোণাকার পেশি যা মূলত বুড়ো আঙ্গুলের বিপরীত ডিরেকশন এ কাজ করে। এইক্স মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োম্যাকানিক্স লরেন্ট ভিগারৌক্স বলেন সর্বমোট দশটি ভিন্ন ধরনের পেশি থাম্ব এর চলনে সহায়তা করে। এরপর তারা একই প্রক্রিয়া আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্স এবং শিপাঞ্জির উপর চালান। দেখা যায় ফলাফল দুইটা হোমো গণের অন্তর্ভূক্ত
প্রজাতির নমুনার সাথে মিলে যায়। বিজ্ঞানীরা “কারেন্ট বায়োলজি” তে রিপোর্ট করেন যে হোমো গণের সকল সদস্যদের থাম্ব ( বৃদ্ধাঙ্গুলি) এর দৃঢ়তা একই।

হরবতি বলেন আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সদের আঙ্গুলের নৈপুন্যতার স্তর দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়ার্টক্র্যান্স এ পাওয়া দুইটা হোমিনিন প্রজাতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ওই প্রজাতিগুলো প্রায় দুই মিলিয়ান বছর পূর্বের। তবে তাদের ফসিল এতটাই অসম্পূর্ন যে এরা আসলে কোন বংশ বা প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। গবেষণাপত্রটির লেখক বলেন যে এদের বৃদ্ধাঙ্গুল হোমো গণের সদস্যদের সাথে এতই মিলসম্পন্ন যে তারা হয়ত হোমো গণের সদস্যই হতে পারে। কিন্তু অস্ট্রেলোপিথেসিনস গণের সদস্যদের বৃদ্ধঙ্গুল শিম্পাঞ্জির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে অ.সেদিবার সাথে সোয়ার্টক্র্যান্স এ পাওয়া ফসিল নমুনার সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এরা হোম স্যাপিয়েন্সদের মতো এতটা দক্ষতা অর্জন করতে পারে নি। গবেষকরা জানান এই গণের সদস্যরা হয়ত সেরকমভাবে অভিযোজিত হওয়া ছাড়াই বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারত। যেখানে হোমো গণের সদস্যরা আরো সরঞ্জাম তৈরিতে এবং আরো দক্ষ হতে পেরেছিল।
পুরো গবেষণা এটাই বলছে যে আধুনিক স্যাপিয়েন্স তথা আমাদের বুড়ো আঙ্গুলের বয়স প্রায় ২ মিলিয়ন বছর। আর এই পুরোনো বুড়ো আঙুল মানুষদের আরো ভাল পাথরের সরঞ্জাম তৈরি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই সভ্যতায় পৌছাতে সহায়তা করেছে।

বাংলা তথ্যসুত্রঃ
বুড়ো আঙ্গুলের বয়স কত?
*****
যদি আমাদের আরেকখানা বুড়ো আঙুল থাকত???



আমাদের উল্টোদিকের অঙ্গুষ্ঠি দুটোই (opposable thumbs আমাদের সবচাইতে প্রভাবশালী প্রাইমেট করে তুলেছে। যদি মাত্র দুটি দুটো বৃদ্ধাঙ্গুল আমাদের বিবর্তনীয় সিড়ির সর্বোচ্চ শীর্ষে উঠতে সাহায্য করে, তবে যদি আমরা আরেকজোড়া এমন আঙুল পাই তবে সেগুলো দিয়ে আর কী করতে সক্ষম হব?
ড্যানি ক্লড ডিজাইনের (An augmentation designer exploring the future body) সহযোগিতায় ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন (ইউসিএল) দ্বারা পরিচালিত একটি বিশদ গবেষণায় আমাদের মস্তিষ্ক একটি রোবোটিক আঙুল ব্যবহার করে শরীরের বৃদ্ধিকে সমর্থন করতে পারে কিনা তা দেখতে চেয়েছিল। যা ভাবা তাই কাজ; তৃতীয় একটা বুড়ো আঙুল ঢুকে গেল!! তৃতীয় আঙুলটি একটি নমনীয় ত্রি-মাত্রিক প্রিন্ট করা থাম্ব এক্সটেনশন যা বুড়ো আঙুলের সাথে সংযুক্ত করে দুটি চাপ-সংবেদনশীল সেন্সরের মাধ্যমে বেতার নিয়ন্ত্রিত হয়।
গবেষকরা পাঁচ দিন তৃতীয় বুড়ো আঙুলটি পরীক্ষা করেছেন, পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন কাজের জন্য অতিরিক্ত এই আঙুলখানা ব্যবহার করতে শিখেছে, যার মধ্যে রয়েছে কোন বস্তু আঁকড়ে ধরা, মগ আঁকড়ে ধরা, সেইসাথে আরও জটিল কার্যকলাপ। তারা সকলেই খুব দ্রুত বুড়ো আঙুলের ব্যবহার আয়ত্ত করতে পেরেছিল আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারা মূর্ততার ধারনা ব্যবহার করতে শুরু করেছিল, যার অর্থ হল আঙুলটি তাদের শরীরের একটি প্রাকৃতিক অংশের মতো অনুভূত হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অংশগ্রহণকারীরা তাদের অন্যান্য আঙুলগুলি ব্যবহার করার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে শুরু করেছিল, এমনকি যখন তাদের হাতে রোবোটিক বৃদ্ধাঙ্গুল সংযুক্ত ছিল না তখনও। দীর্ঘক্ষণ ডিভাইসটি ব্যাবহার করার পর, মস্তিষ্ক অন্য আঙুলগুলিকে অন্যভাবে পরিচালনা করতে শুরু করে এবং তাদের স্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তন করে।
গবেষকেরা অবশেষে এই মতানৈক্যে পৌঁছেছে যে আমাদের মস্তিষ্ক দ্রুত শরীর অতিরিক্ত সরঞ্জামের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং এটিকে শরীরের একটি প্রাকৃতিক অঙ্গ হিসাবে সংহত করতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা আরও মূল্যবান তথ্য সংগ্রহের জন্য আরও পরীক্ষা চালাতে চান, তারা আশা করেন যে এই আবিষ্কারটি প্রকৃতপক্ষে মানব-রোবট একীকরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে যা কৃত্রিম পদার্থের প্রতি আমাদের ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে।

তথ্যসুত্রঃWhat Would You Do With an Extra Thumb, Human?
******
কেন মানুষের বৃদ্ধাঙ্গুল আছে?



হোমো স্যাপিয়েন্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সম্পর্কে বিবর্তন তত্ত্বের একটি শেষ না হওয়া ধারা রয়েছে -অন্যান্য প্রাণীরা একে অপরকে কামড়ায়, নখর দিয়ে আচড় দেয়, থাপ্পড় বা ধাক্কা দেয়, কিন্তু শুধুমাত্র একটু প্রজাতির মধ্যে মোহাম্মদ আলীর মত চরম জনপ্রিয় ব্যক্তি রয়েছে যে সেই হাতটাকে মুঠো করে কাউকে বেদম জোড়ে ঘুষি মারতে পারে। হাত মুঠোয় চেপে চেপে আন্তঃ-প্রজাতির হোমোসেপিয়েন্সরা- সবচেয়ে আগ্রাসী ভুমিকায় অবতীর্ন হতে পারে।

উটাহ ইউনিভার্সিটির একজন বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী ডেভিড ক্যারিয়ার বিশ্বাস করেন যে আমাদের প্রধান সুবিধা হল আমাদের বুড়ো আঙ্গুলের দক্ষতা বা কনফিগারেশন যা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় আঙুলগুলিকে গুটিয়ে রাখে, আঘাত করার শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে এবং হাতের ভঙ্গুর হাড়কে রক্ষা করে। (গুরুত্বপূর্ণভাবে, পুরুষের তর্জনীগুলি অনামিকা আঙুলের তুলনায় খাটো হয়, তাই তারা বুড়ো আঙ্গুলের গোড়ায় পেশীবহুল স্ফীত অংশের পিছনে স্থিরভাবে এটে থাকে; নারীদের ক্ষেত্রে, দ্বিতীয় এবং চতুর্থ আঙুলগুলি সাধারণত একই রকমের হয়।) জার্নালটি তাদের সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশ করেছে যে, মানুষের বিশেষ করে পুরুষদের মুখের হাড়গুলি একটি ঘুষি সহ্য করতে সক্ষম হওয়ার জন্য বুড়ো আঙ্গুলের বেশীর দৃঢ়তা ও সক্ষমতার সাথে বিকশিত হতে পারে।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির শারীরিক নৃবিজ্ঞানী মেরি মার্জকে বলেছেন, বিবর্তনে সুনির্দিষ্ট দুই আঙুলের আঁকড়ে ধরা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। "কিন্তু আপনি যদি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেন তবে আপনি সত্যিই এটি এতটা ব্যবহার করেন না।
মানব বিবর্তন জার্নালে তাদের সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যে, মানুষের বিবর্তনের সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয়টা হচ্ছে হাত ও আঙ্গুলের বিবর্তন – যেটি সাধারণ একটি পাথরকে আঁকড়ে ধরে এটিকে হাতিয়ারে রূপ দেয়।

একটি পাথর নিক্ষেপের জন্য বুড়ো আঙুল অবশ্যই এক ধরণের হাতিয়ার। রাইস ইউনিভার্সিটির সুজান কেমার বলেন, ‘আমি একটি মেয়ের মতো কিছু নিক্ষেপ করতে পারি, কিন্তু আমি যে কোনো শিম্পাঞ্জির চেয়ে ভালো নিক্ষেপ করি।' কেমার, একজন ভাষাবিদ, তিনি মনে করেন যে বুড়ো আঙুল তার সুক্ষ পেশী সঞ্চালন দ্বারা মস্তিষ্কের বিকাশকে উন্নীত করে।
থাম্বস আপ সরিয়ে নিন, তখন Facebook-এর "লাইক" এর জন্য একটি ভিন্ন আইকনের প্রয়োজন হবে৷ আপনি কাউকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারবেন না, ইশারায় ধন্যবাদটা উঠেই যাবে -তাই কখনই আপনার বুড়ো আঙুলকে হালকাভাবে নেবেন না—বিশেষ করে যখন আপনি টাইপ করছেন তখন তো নয়-ই৷

তথ্যসুত্রঃ Why Do Humans Have Thumbs?
******
এ লেখার বাকি এই অংশোটুকু নেহায়েত বিনোদনের জন্য

মানুষের বুড়ো আঙুলের সঙ্গে তার ব্যক্তিত্ত্ব জড়িত!



আসুন দেখে নিই আধুনিক জ্যোতিষবিদ্যা কি বলে? ( বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত নয়- বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার।)
বুড়ো আঙুল সম্বন্ধে জানার আগে, করতলে বিভিন্ন আঙুল সম্বন্ধে কয়েকটি বিষয় আমাদের জানা প্রয়োজন। মানুষের ক্ষমতা ও যোগ্যতা যা কিছু আছে তার প্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে হাতের পাঁচটি আঙুল। আঙুল যত দীর্ঘ হবে মানুষের মধ্যে ততই অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রকাশের ব্যাপারে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। দৈঘ্যের দিক থেকে আমরা চার ধরণের আঙুল আমরা দেখে থাকি। (১) অতিদীর্ঘ আঙুল (২) মধ্যমদীর্ঘ (৩) অল্প দীর্ঘ (৪) মিশ্র দীর্ঘ।
অতিদীর্ঘ যাদের আঙুল, তারা বিশেষভাবে সব কাজ নিপুণ ভাবে করে থাকে। আত্মবিশ্বাস বেশী থাকার জন্য এরা কিছুটা বেপরোয়া হয়। আর যাদের মধ্যম দৈর্ঘ্য, এরা মাঝামাঝি ধরণের দক্ষতা কর্মে প্রকাশ করে থাকে। আর যারা অল্প দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আঙুল নিয়ে জন্মেছে, এরা কোনও কাজেই সে রকম দক্ষ নয়। মিশ্র আঙুল মিশ্র ফল দেয়।
বিবর্তনের মাধ্যমে আমরা এই বুড়ো আঙুল পেয়েছি। আজকের মানুষ, মানুষ হিসাবে যে বিকাশ লাভ করেছে তার পেছনে এই বুড়ো আঙুলের অবদান সব চেয়ে বেশী। অন্য আঙুলের মত বুড়ো আঙুলের তিনটি অংশ। প্রথম পর্ব করতলের সঙ্গে মিশে আঙুলের ক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। মাঝের পর্ব ও তৃতীয় পর্ব অর্থাৎ যার পিছনে নখ আছে।
প্রথম পর্ব বা শুক্রের ক্ষেত্র, যার যত বড় এই ক্ষেত্র তার সজ্ঞান মনের শক্তি তত বেশী হবে। মাঝের পর্ব, যা আমাদের অর্ধ সজ্ঞান মনকে পরিচালনা করে।এই পর্ব যদি অন্য পর্ব থেকে বড় হয়, তবে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের সূচনা করে। এই অর্ধসজ্ঞার ক্ষেত্র যার বলবান, তার কাছে গেলে মনে হয় যেন একটা বলশালী ব্যক্তিত্বের কাছে এসেছি। এমন কি নতি স্বীকারও করা যায়। এবার তৃতীয় পর্ব, এই পর্ব মানুষের বিচার শক্তির পর্ব। সোজা কথায় আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে। নিজের কাম, ক্রোধ, লোভ, এই সবকে দমনে রাখে। এটি সেফটি ভাল্ভের মত কাজ করে। বুড়ো আঙুলের আকার যত বড় সে তত ব্যক্তি চরিত্রকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখে।
অন্য আঙুলদের ক্ষেত্রে, অন্য আঙুলগুলো যত কাছাকাছি থাকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে তত ভাল। কিন্তু বুড়ো আঙুলের ক্ষেত্রে, এটা ঠিক বিপরীত। বুড়ো আঙুল অন্য আঙুল থেকে যত দূরে থাকে, ব্যক্তিত্বের বিকাশ তত বেশী জোরালো হবে।
যাদের বুড়ো আঙুল বড় বা লম্বা তারা হৃদেয়ের চেয়ে মস্তিস্ক দ্বারা বেশী চালিত হয়। তারা যে কোনও ঘটনাকে নানা দিক দিয়ে বিচার করে। যাদের বুড়ো আঙুল বেশ বড় এবং অন্য আঙুলগুলো কনিকাল, তারা শিল্প-সাহিত্য যাই সৃষ্টি করুক না কেন, তার মধ্যে অনুভবের চেয়ে বুদ্ধির প্রভাব বেশী থাকে।
তথ্যসুত্রঃ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখে কী ভাবে ব্যক্তিত্ব বোঝা যায়
******
দেখি সুমুদ্রশাস্ত্র কি বলে? ( এরা প্রত্যেকেই দাবি করে যে, এইসব শাস্ত্র বিজ্ঞানেরই অংশ)

বুড়ো আঙুলের তিনটি অংশ দেখেই জানা যায় জীবনের নানা রহস্য


সমুদ্র শাস্ত্র এমন একটি শাস্ত্র, যা ব্যক্তির শারীরিক গঠন দেখে তাঁর ভবিষ্যৎ ও স্বভাব সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। এমনকি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দেখেও এই শাস্ত্রের সাহায্যে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা করা যায়। হস্তরেখার পাশাপাশি শুধুমাত্র বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখে কোনও ব্যক্তির স্বভাব সম্পর্কে জানা যেতে পারে।
বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের প্রথম অংশ
১. এটি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সবচেয়ে ওপরের অর্থাৎ নখের দিকের অংশ। যে ব্যক্তির বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের প্রথম অংশ দ্বিতীয় অংশের তুলনায় লম্বা হয়, সেই ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি প্রবল। নিজের সিদ্ধান্ত নিতে এঁরা নিজেরাই সক্ষম।
২. এমন ব্যক্তি কারও অধীনে থেকে কাজ করতে পছন্দ করেন না। ধর্মের ওপর প্রবল আস্থা থাকে এমন ব্যক্তির। ব্যক্তিত্ব অত্যন্ত আকর্ষক। তাই যে কেউই প্রথম দর্শনে এঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন।
৩. এমন ব্যক্তি যৌবনকালের তুলনায় বৃদ্ধাবস্থায় অধিক বেশি সংবেদনশীল হন। বয়সকালে এঁরা অধিক সুখী হয়ে থাকেন। আবার বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের প্রথম বা দ্বিতীয় অংশ সমান সমান হলে এমন ব্যক্তি সমাজে সম্মান লাভ করেন। এঁরা কাউকে প্রতাড়িত করেন না।

দ্বিতীয় অংশ
১. বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের দ্বিতীয় অংশ তর্ক শক্তির স্থান হিসেবে বিবেচ্য। দ্বিতীয় অংশ, প্রথম অংশের তুলনায় বড় হলে বুঝতে হবে, সেই ব্যক্তির তর্ক শক্তি প্রবল। এঁদের সঙ্গে তর্কে কেউ পেড়ে উঠতে পারে না।
২. তবে এঁদের স্বভাবের একটি খারাপ দিকও রয়েছে। সঠিক হোক বা ভুল, নিজের সমস্ত কথাকে এরা সত্যি প্রমাণিত করতে এতটাই তর্ক করেন যে, অপরপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে যায়।
৩. অযথা তর্ক করে যান এমন ব্যক্তি। তাই সভ্য সমাজে সম্মান লাভ করতে পারেন না।

তৃতীয় অংশ
১. বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের তৃতীয় অংশকে শুক্র পর্বত বলা হয়। এটি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সবার নীচের অংশ। প্রথম দুই অংশের তুলনায় এটি অধিক বিস্তৃত, উন্নত ও সুদৃঢ়। এই অংশ সাধারণের তুলনায় একটু উঠে থাকলে ও গোলাপী রঙের হলে এমন ব্যক্তি প্রেমের বিষয় অনেকটা এগিয়ে থাকেন।
২. এমন ব্যক্তির অনেক বন্ধু হয়। সমাজে বিশেষ স্থান লাভ করেন এঁরা। কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়েও ভয় পান না এবং তার মোকাবিলা করেন। যে ব্যক্তির শুক্র পর্বত অধিক উঠে থাকে, তাঁরা কামুক ও ভোগী হয়ে থাকেন।
৩. সৌন্দর্যের পিছনে এঁরা উন্মাদের মতো ছুটতে থাকেন। এর ফলে প্রায়ই অপমানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তা সত্ত্বেও প্রেম ও সৌন্দর্য লাভের জন্য যে কোনও পর্যায় যান এঁরা।

তথ্যসুত্রঃবুড়ো আঙুলের তিনটি অংশ দেখেই জানা যায় জীবনের নানা রহস্য!
*****
এবার দেখি পুরনো জ্যোতিষশাস্ত্র কি বলে;

বুড়ো আঙুলেই ভাগ্য বুড়ো আঙুলেই ভবিষ্যৎ

থ্যটি অবাক হওয়ার মত হলেও সত্যি। আপনার বুড়ো আঙুলেই লুকিয়ে আছে আপনার জীবনের অনেক তথ্য।
আপনার জীবনের ওঠা পড়া, আপনার মনের নানা গোপন ঘরের চাবিকাঠি আর নিজের চোখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নিজের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য।
নিজেরকে জানা নিজেকে চেনা এটাই যে কোনও ধর্মের মানুষের একটি বড় লক্ষ্য। প্রতি মানুষের নিজেকে জেনে নেয়া উচিত। কিন্তু তার উপায় কি ? উপায় বুড়ো আঙুল। জ্যোতিষ শাস্ত্রে এই বুড়ো আঙুল দেখেই বজায় মানুষের মনের অনেক কথা।
জ্যোতিষীরা মনে করেন জ্যোতিষশাস্ত্র একটি বিজ্ঞান। আর বিজ্ঞান পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করে তবেই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। তাই প্রথম পরীক্ষাটি করুন আপনার নিজের উপরেই।
আপনি জানেন কি আপনি কোন ধরনের মানুষ এবং আপনার ব্যক্তিত্ব কি ধরণের তা প্রকাশ করতে পারে আপনার হাতের হাতের আঙুল আপনার হাতের শুধুমাত্র বুড়ো আঙুল আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনেক তথ্যই প্রকাশ করতে পারে।

আসুন আপনার নিজের ব্যক্তিত্ব জেনে নেয়া যাক শুধুমাত্র বুড়ো আঙুল দেখে।

তিন ধরণের হাতের বুড়ো আঙুলের ভাঁজের লম্বার পার্থক্য থাকে। প্রথম ধরনের আঙুলে বুড়ো আঙুলের উপরের অংশের চাইতে নিচের অংশের দৈর্ঘ্য কম, দ্বিতীয় ধরনের বুড়ো আঙুলের উপরের অংশ ও নিচের অংশের দৈর্ঘ্য সমান বা প্রায় সমান এবং তৃতীয় ধরনের বুড়ো আঙুলের উপরের অংশের চাইতে নিচের অংশের দৈর্ঘ্য বেশী। মূলত এই ৩ ধরণের আঙুলের পার্থক্য দেখা যায় বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ।

এবার নিজের হাত দেখে মিলিয়ে নিন আপনার বুড়ো আঙুল কোন ধরণের । তার পর শুরু করুন বিশ্লেষণ।

যদি আপনার বুড়ো আঙুলের উপরের অংশের চাইতে নিচের অংশের দৈর্ঘ্য কম হয়ে থাকে তবে আপনি অনেক আত্মবিশ্বাসী এবং জীবনের ব্যাপারে উৎসাহী একজন চনমনে মনের মানুষ। আপনি জীবনে অনেক কিছু করতে চান, আপনি সমাজে পরিচিতি লাভ করতে চান।
প্রেমিকা বা প্রেমিকের থেকে দূরে থাকলে আপনি অস্থির হয়ে পড়েন। যদি আপনার বুড়ো আঙুল হয় দ্বিতীয় ধরনের অর্থাৎ, বুড়ো আঙুলের উপরের অংশ ও নিচের অংশের দৈর্ঘ্য সমান বা প্রায় সমান। তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা। আসুন এবার মিলিয়ে নিন
আপনি ভাবুক প্রকৃতির। কাজ করার আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা আপনার পদ্ধতির মধ্যে পড়ে। আপনার এই পদ্ধতি আপনাকে জীবনে সফলতা আনতে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। আপনি অনেক শান্ত এবং স্থির। উত্তেজনাতেও আপনি মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন।
আপনার আঙুল যদি হয় তৃতীয় ধরনের বুড়ো আঙুলের মতো অর্থাৎ উপরের অংশের চাইতে নিচের অংশের দৈর্ঘ্য বেশি তবে,আপনি একজন বিশ্বস্ত এবং নির্ভর করা যায় এমন মানুষ। আপনি গোপন কথা কখনই প্রকাশ করে দেন না। আপনি পরিবারে এবং সমাজে ভরসা করা যায় এমন মানুষ হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছেন। আপনার সবদিকে লক্ষ্য রাখার সহজাত প্রবৃত্তি আছে। আপনি সব কাজেই মনোযোগী এবং চিন্তাশীল।
আপনারা পড়লেন কিভাবে বুড়ো আঙুল দেখে সহজেই আপনি নিজের এবং অন্য মানুষদের সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন। তবে সঠিক ভাবে এই ধারণা করতে গেলে কিছুটা অনুশীলন দরকার। আশা করি আগামী দিনে আপনার এই অনুশীলন করবেন এবং একটি মানুষকে দেখেই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে খুব তাড়াতাড়ি ধারণা করে ফেলতে পারবেন।

তথ্যসুত্রঃবুড়ো আঙুলেই ভাগ্য বুড়ো আঙুলেই ভবিষ্যৎ
******
মানুষ কেন অনন্য? পর্ব~১
মানুষ কেন অনন্য? পর্ব~২
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকারিতে কোন দলের কি অবস্থান

লিখেছেন এ আর ১৫, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৫

জামাত অবশ্যই ১০০% রাজাকার এবং ১০০% মুক্তিযুদ্ধ বিরুধী ।

সে হিসাবে বিএনপি ৩০ % রাজাকার এবং ৭০% মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের,
সে হিসাবে জাতীয় পার্টি ৩০% রাজাকার এবং ৭০ % মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। 'জয় বাংলা' কখনোই কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্লোগান ছিল না।

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৬



পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের নির্মম শোষণ, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের লড়াইয়ে এই আইকনিক স্লোগানটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করেছিল।

এই স্লোগান বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে, যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

খোদাকে ধন্যবাদ

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১



এই ছবিটি ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর আলোকচিত্রী জিএমবি আকাশের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল।
....খোদা আমাকে মাফ করুন। আর, তাঁর কাছে শুকরিয়া জানাই, তিনি আমাকে এবং আমার আশে-পাশের মানুষকে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন আমরা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি। শেখ হাসিনাকে এখনও বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী বলে দাবি করে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, শেখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বদ বুয়া

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৫

আমার বাসার সামনের বাসায় একটা ছোট্ট ছেলে ছিল নাম বাবলু। তার বাবা চায়ের দোকানদার। একদিন আমি একটা ম্যাট্রেস কিনে বাসার সামনে আসতেই বাবলুর বাবা আমাকে সাহায্য করলো ম্যাট্রেস তিনতলার উপরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×