দেশের স্বনামধন্য পত্রিকাগুলোতে এত বেশী বস্তুনিষ্ঠ জনগুরুত্বপূর্ণ অতিশয় জ্ঞানগর্ভমূলক এমন চমৎকার সংবাদ প্রকাশ করে যে, আমি খানিকটা অদ্ভুদ উদ্ভট বিনোদনমুলক খবর পাঠের প্রত্যাশায়; নিয়মিত সস্তা দামের পত্রিকা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ রাখি।
এদের খবর পাঠ করলে বোঝা যায় সাংবাদিকতা কতটা মহান গুরুত্বপূর্ন সৎ ও নিষ্ঠার একটা পেশা। এরা পত্রিকার চিপায় চাপায় এমন সব চাঞ্চল্যকর সংবাদ ছাপাবে যা পড়ে আপনার গায়ের লোম/পশম সব দাঁড়িয়ে যাবে।
এই যে আজকের একটা টাটকা নিউজ; দক্ষিনের অমুক নায়ক স্যুটিং স্পটে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এলেন।
খবরে প্রকাশ, দক্ষিনের অমুক তুমুল জনপ্রিয় নায়ক স্যুটিং স্পটে শট দেবার সময়ে অতর্কিতে দেয়াল ভেঙ্গে ঢুকে পড়া একটা নিয়ন্ত্রনহীন ট্রাকে চাপা থেকে মুহুর্তের জন্য বেঁচে যান। কোন এক স্পট বয় তার জান বাজি রেখে ত্বরিত তাকে সেখান থেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে না দিলে তিনি তৎক্ষণাৎ ট্রাকে চাপা পড়ে মারা যেতেন।(হুবুহু না পুরা বেরেন থেইক্যা লিখছি)
-কি মিয়া গায়ের লোম খাড়াইছে? এইবার ভাইরাল হওয়া ভিডিওটা দেখেন। তাইলে বুঝবেন।
কিংবা অমুক নায়িকা অল্পের জন্য বোমা হামলা থেকে বেঁচে গেলেন!
-তাই নাকি- কইস কি মফিজ? এই নায়িকা মইর্যা গেলে আমিতো সুইসাইড খাইতাম। পড় দেখি কি লিখছে?
অমুক নায়িকা দিল্লী থেকে বোম্বে ফেরার পরে জানতে পারল; দিল্লীর ওই হোটেল থেকে বের হবার মাত্র ঘন্টা তিনেক পরে কিলোমিটার খানেক দূরে আরেক হোটেলে জঙ্গী হামলা হয়েছে!! কিছু ককটেলের শব্দ পাওয়া গেছে।
ভাইরালঃ এই নিয়ে নায়িকা মিডিয়ার সামনে কান্নাকাটি করে বেড়াছেড়া অবস্থা। সে কালো একটা কম্বল টাইপের ওড়না গায়ে দিয়ে ঘুরছে। চোখে কালো চশমা( কাদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেছে তাই)। মিডিয়ার সামনে তার বাহু উন্মুক্ত করে এখনো দাঁড়িয়ে থাকা লোম দেখাচ্ছে!!
কিংবা, দৌলতদিয়া ঘাটে ধরা পড়ল বিশাল পাঙ্গাস!!
ছবি;একটা পাঙ্গাস মাছ হাতে দুইজন লোক হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
দৌলতদিয়া ঘাট স্থানীয় প্রতিনিধির বরাত দিয়ে বলা হয়; গতকাল দৌলতদিয়া ঘাট নিবাসী চানু মোল্লার মাছ ধরার জালে পদ্মা নদীতে বিশাল এক পাঙ্গাস ধরা পড়ে। ঘাটে আসার পরে মেপে দেখা যায় সেই পাঙ্গাসের ওজন ১৮ কেজি। এই বিশালাকৃতির মাছ দেখার জন্য দৌলতদিয়া মাছের আড়তে সর্বস্তরের জনগন ভিড় করছে।
এইসব সংবাদ দেখে আমার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। নতুন উদ্যোমে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আর যেদিন ‘তসলিমা নাসরিনে’র কলাম আসে সেইদিনতো কথাই নাই। দুপুরের খাবার ভুলে তার কলাম পড়ি।
বাঘের পেটে কোটি টাকার মাংস
‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’র সংবাদ আমি একা একা পড়ে দারুন জ্ঞানার্জন করে একা একা জ্ঞানী হয়ে যাচ্ছি – না আমার সাথে ‘মফিজ’ ও আছে, ও পড়ে আর আমি শুনি। মাঝে মধ্যে মনে চায় আপনাগো লগে কিছু শেয়ার করি। আজকের এই সংবাদটা ছিল বিশেষ কিছু। আপনাদের জ্ঞানীয় উন্নতির জন্য বিশেষ করে বদ্দা, ঠাকুর মাহমুদ ভাই,গোফরান ভাই সহ চাঁটগায়ের ব্লগারেরা বেজায় খুশী হবেন দেখে শেয়ার করতে মন চাইল;
*****
মুল খবরঃ সাদা বাঘে রঙিন চিড়িয়াখানা
সাংবাদিক;রেজা মুজাম্মেল,চট্টগ্রাম
--------------
- চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছিল বাঘশূন্য। ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীনের উদ্যোগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আনা হয় দুটি বাঘ। মাত্র ছয় বছরে চিড়িয়াখানায় এখন বাঘের সংখ্যা ১৬টি। এর মধ্যে পাঁচটিই বিরল সাদা বাঘ। একসঙ্গে এতগুলো বাঘ দেশের আর কোথাও নেই।
আমিতো এটুকু খবর মফিজের মুখে শুনে আকর্ণ দন্ত বিকশিত করে হাসতে লাগলাম! কি তেলেসমাতি। মাত্র ছয় বছরে দুইটা থেকে ১৬ খানা ব্যাঘ্র! ! উৎপাদন রেশিয়ো তো চমৎকার। বাঙ্গালীর মান রেখেছে ব্যাটা। এইজন্যই তো বাঙ্গালীরা ‘বাঘেরর বাচ্চা’ উপাধি দেয়। এরপরে আবার ৫ খানা সাদা মানে অতি বিরল আলবিনো ব্যাঘ্র!!!
-কস কি মফিজ তেত্রিশ লাখ টাকার বাঘ ৬ বছরে প্রফিট দিছে ২৩১ লাখ টাকা। তার উপরে বিরল সাদা বাঘের দাম কয়েক্গুন! প্রফিট আর প্রফিট। ফাও কথা কস ক্যান- সরকারের সব খাতে খালি লস আর লস! এই দেশের চাঁটিগা’রে বিশ্ব ব্যাঘ্র প্রজনন ক্ষেত্র ঘোষনা করলে -কেমন হয় ক’দি?
-পরের টুক পড়তো দেখি আর কি কি চাঞ্চল্যকর সংবাদ আছে?
আজ্ঞে; চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, চট্টগ্রামের একমাত্র চিড়িখানায় বাঘ থাকবে না, তা ভাবাই যায় না। তাই মেজবাহ স্যারের একান্ত প্রচেষ্টায় আফ্রিকা থেকে দুটি বাঘ আনার পর তাদের নাম দেওয়া হয় শুভ্রা ও রাজ। তাদের ঘরে জন্ম নেয় সাদা বিরল বাঘ। পর্যায়ক্রমে বাঘগুলোর ঘরে আসে ১৬টি শাবক। এর মধ্যে পুরুষ বাঘ পাঁচটি এবং মহিলা বাঘ ১১টি।
-দুর্দান্ত! এই মেজবাহ সাহেবরে এইবার স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া উচিৎ। সুন্দরবনের সব বাঘ ধরে তার হাতে দিলেই হয়। সারা দেশ বাঘময় হয়ে যাবে। থামলি ক্যান পড়?
-উস্তাদ একটু ভুল লিখছে মনে হয়!! ‘মফিজ মাথা চুলকাচ্ছিল।‘
-কি ভুল লিখল ক’দি?
-বাঘগুলোর প্রধান খাবার গরু ও মুরগির মাংস।
-ঠিকইতো লিখছে। তোর কি মনে হয় ওরা দুম্বার মাংস ছাড়া খায় না?
-না উস্তাদ এর পরের লাইন; দৈনিক তাদের জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ৬ লাখ টাকার ৭২ কেজি মাংস। প্রতি মাসে তাদের জন্য মাংস কিনতেই ক্রয় হয় প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
-হেঃ হেঃ তা ভুল আছে একটু। এরা অনেক ব্যাস্ত মানুষ- তাড়াহুড়ায় লিখছে মনে হয়। ওইখানে হবে একটা বাঘ প্রতিদিন ৭২ কে জি মাংস খায় তাইলে ১৬ খানা বাঘের ১১৫২ কেজি মাংস লাগে যার দাম ৬ লাখ।
-কন কি বস ৬ বছরে ১৩০ কোটি টাকার মাংস খাইছে!!!
-এবার আমি মাথা চুলকাই; ছয় বছর আগেতো সব বাঘ ছিলনা- ওইখান থেইক্যা ত্রিশ/চল্লিশ কোটি বাদ দে।
আচমকা আমি চিৎকার করে উঠলাম, মফিজ-রে ছয় বছরে বাঘে ১০০ কোটি টাকার মাংস খায়া ফেলছে রে! চাঁটিগার বেবাক গরুতো ওরা খাইয়া সাফ কইরা ফেলল!!
এই ব্যাটা মফিজ ক’দি দিনে ৭২ কেজি মাংস কেমনে খায় ওরা- আরে দ্যাখতো কেজি প্রতি মাংসের দাম কত পড়ল?
-ওস্তাদ, ৫২০ টাকা কেজি।
-এইটা কি গরুর মাংসের দাম নাকি ব্রয়লার মুরগীর দাম? ওরা কি মইষের মাংস খায় না?
-আপনি এত জ্ঞানী মানুষ বস আপনি না জানলে আমি জানবে ক্যামনে?
-আচ্ছা মফিজ গুগুল মাইর্যা দ্যাখতো একেকটা বাঘের ওজন কত?
-এইখানে লিখছে ৮ ফুট লম্বা এক মদ্দা বাঘের ওজন ১৫০ কেজি আর মাদী বাঘের ১২০ কেজি।
-কস কি মফিজ এগো পুরা বডিতে পাকস্থলী নাকি!! ওজনের অর্ধেক মাংস খায়!!! মদ্দা পাঁচখান, ১১ খান মাদি হইলে পুলাপাইন কই? ওরাও কি ৭২ কেজি খায়?
-মফিজরে আমার মাথাডা ঘুরাচ্ছে- দেতো ফোনডা এট্টু ওয়াল্ডডা ঘুইরা আসি।
হাতি খায় দিনে পাঁচশ পাউন্ড! এই খাবার এর কোয়ান্টিটি বেশী মনে হইলেও এটা তার শরিরের মুল ওজনের মাত্র এক শতাংশ। হাতি খুব কম ঘুমায়; দিন রাত বেশীরভাগ সময় এরা খাবার খোঁজায় ব্যাস্ত থাকে।
অতিক্ষুদ্র মৌমাছি হামিংবার্ড ( সাইজ ৬১ মিলিমিটার) নাকি তার শরিরের অর্ধেক পরিমান মধু পান করে। সাকুল্যে ওর ওজন আড়াই গ্রাম। সে বেচারা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের নিমিত্তে একখানে স্থির থাকার জন্য মিনিটে ৪০০০ বার এর অধিক পাখা নাড়ানোর প্রয়োজনে যে পরিমান শক্তি ক্ষয় হয় সেটা পুরণের জন্য তাদের দৈনিক সোয়া একগ্রাম মধু পান করতে হয়।
এবার পেলাম এক ইদুর ব্যাটারে। এইটা সবচেয়ে বড় খাদক –‘পিগমি শ্রে’ নামে এই ইঁদুর শ্রেণীর প্রাণী খাবারের খোঁজে ২০০০ বর্গ- মাইল ব্যাপি চষে বেড়ায়। প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর এদের খাবার চাই। প্রানী জগতের সবচেয়ে দুর্দান্ত বিপাকীয় শক্তি এদের। এই জাতীয় ইঁদুরের হৃদপিন্ডের গতি নাকি মিনিটে ৮০০ বার। যার জন্য তাদের প্রচুর এনার্জী প্রয়োজন হয়। এরা নাকি নিজেদের ওজনের তিনগুন খাবার খায় প্রতিদিন।
ওদিকে সবচেয়ে বড় দানবের খাবারের খবর নেয়া হোল না। প্রতিদিন যার চার টন খাবার লাগে। সুমুদ্রের অতীব ক্ষুদ্র ‘ক্রিল’ তাদের একমাত্র খাদ্য। এত খাবার তবুও ওরা তাদের শরিরের ওজনের মাত্র ৫০ এর এক ভাগ খায়। দানব এই নীল তিমিদের ওজন দুইশ টন অব্দি হয়।
কই এখানেতো বাঘের কথা নাই!! তাহলে ওরা যে বলল, গুড়া,গারা, বুইড়া,ধারী, মদ্দা, মাদী প্রতিদিন ৭২ কেজি মাংস খায়!! প্রতিদিনে ৭২ কেজি মাংস খাওয়া বাঘের খবর ওরা মনে হয় এখনো পায় নাই।
-একটা প্রাপ্ত বয়স্ক বাঘের সপ্তাহে লাগে চল্লিশ কেজি মাংস। প্রতিদিন হিসেবে ৬ কেজির কিছু বেশী। একবার পেটপুরে মাংস খাবার পরে ওরা কয়েকদিন অভুক্ত কাটায়। বাঘিনীর খাদ্যের চাহিদা আরো কম।
-তার মানে ২২০ টাকা কেজি ব্রয়লার আর ৭০০ টাকা কেজি গরু –দুইটা মিলে কেজি পড়ে ৪৬০ টাকা( আজকের বাজার দর হিসেবে। বাঘ যদি কচি দেশী ষাড়ের মাংস আর দেশী মুরগী না খোঁজে।)
-সবগুলারে গড়ে ৬ কেজি প্রতিদিন ধরলে- যান চার কেজি বাড়িয়ে দিলাম। আদরের বাঘ বলে কথা। তাছাড়া ওদেরও ঘরে একটু ভাল মন্দ রান্না বান্না করতে হয় তো।
-১০ কেজি গুণ ১৬ টি বাঘ= ১৬০ কেজি গুণ ৪৬০ টাকা দর = ৭৩৬০০ টাকা গুণ ৩০দিন= মাসে ২১,৯০০০০(একুশ লাখ নব্বুই হাজার) গুণ ১২ মাস= বছরে ২৬২,৮০০০০.০০( দু কোটি বাষট্টি লাখ আশি হাজার)
-এমন করে তাকাচ্ছেন কেন? যান ধরলাম ৩ কোটি। মাসে ১ কোটি ৮০ লাখ হইলে বছরে ২১ কোটি ৬০ লাখ তার থেকে বাদ দেন ৩ কোটি- তাইলে হইল কত?
-থাকল জিরো টাকা মিয়া। এইটা বাংলাদেশের হিসাব- এত ত্যানা প্যাচান ক্যান? আর একটাও কথা কইবেন না সোজা হাটা দেন নাইলে এই জীবনে আর হিসাব কিতাব করার সুযোগ পাবেন না।
-ভাই আর একটা কথা; আফ্রিকা থেকে বাঘ এনে এই দেশে বছরে ২২ কোটি টাকার মাংস খাওয়ায় খাঁচায় পোষার দরকার কি? এতে দেশের কি উন্নয়ন হচ্ছে?
-গেলি শালার পো শালা!!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:৪৩