somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গান্ধীজীর দেশে ফেরা

১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, ইতিহাস কখনও বিপরীত মেরুর দুই নক্ষত্রকে বিশ্ব মঞ্চে একত্রিত করার বিষয়ে কৃপণতা করেনি। তবুও, প্রাক-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইতালিতে, একটি অদ্ভুত জুটি কিছু সময়ের জন্য বিপরীত মেরুর দুই মহারথী একত্রিত হয়েছিলেন- যা সারা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। যখন তপস্বী, ভারতীয় স্বাধীনতা, অহিংস নাগরিক অবাধ্য নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৯৩১ সালের ডিসেম্বরে রোমে যুদ্ধবাজ, ইতালীয় ফ্যাসিবাদী একনায়ক বেনিটো মুসোলিনির সাথে দেখা করেছিলেন।
১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকে, মুসোলিনি গণনা করার মতো একজন ব্যক্তি ছিলেন। চার্চিল এবং জর্জ বার্নার্ড শ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মহাত্মা গান্ধীর মতো বিখ্যাত মানুষ তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। দুই মহৎ এবং বিশ্বস্ত আত্মা যাদেরকে মুসোলিনি ইতালিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাদের প্রতি তার সর্বোত্তম ব্যবহার বা আচরণ করে বাধ্য করত তার কৃতিত্বের প্রশংসা করতে।

সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪১-১৯৪৩ সালে মুসোলিনির বন্ধু হয়েছিলেন। ১৯৪১ সালের জানুয়ারিতে কলকাতা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি যখন কাবুলে পৌঁছান, তখন তিনি কাবুল থেকে বার্লিন পর্যন্ত যাত্রার জন্য একটি ইতালীয় নাম ধরেছিলেন - অরল্যান্ডো ম্যাজোটা।

১৯৩১ সালের ডিসেম্বরে লন্ডনে দ্বিতীয় গোলটেবিল সম্মেলনে যোগদানের পর ভারতে ফেরার পথে মহাত্মা গান্ধী এক সপ্তাহের জন্য জেনেভায় ছিলেন। তিনি রমা রঁলার সাথে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা আলোচনা করতেন, যার মহাত্মার সংক্ষিপ্ত জীবনী (১৯২৪ সালে প্রকাশিত) ইউরোপে গান্ধীর খ্যাতি বাড়িয়েছিল। এই কথা গান্ধী নিজেই স্বীকার করেছিলেন।

৮ ডিসেম্বর, গান্ধী রঁলাকে মুসোলিনির সাথে দেখা করতে রোমে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান। রমা রঁলা গান্ধীকে নিরুৎসাহিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। "আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আপনার চারপাশের সবাই ফ্যাসিস্ট হবে, এমনকি বিদেশী সাংবাদিকরাও।" রমা রঁলা গান্ধীকে ১৯২৬ সালে ঠাকুরের সফরের কথা মনে করিয়ে দেন-যে সেই সফরে মুসোলিনির প্রশংসা করার জন্য রবীন্দ্রনাথকে, চাটুকার ও ফ্যাসিষ্ট উপাধী দেয়া হয়েছিল। গান্ধী রমা রঁলার সতর্কবাণী উপেক্ষা করে মুসোলিনির সাথে সাক্ষাৎ করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকেন।
গান্ধী মিলান থেকে একটি বিশেষ ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলেন (যেখানে বিশাল জনতা তার আগমনে উল্লাস করেছিল)। রোমে তিনি রোল্যান্ডের এক বন্ধু জেনারেল মরিস মন্টের সাথে থাকতেন। মুসোলিনি ২০ মিনিটের জন্য তার সাথে দেখা করেছিলেন। তিনি তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মনোযোগী ছিলেন, ভারত সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
তবে এই সাক্ষাতের পরে তার সমস্ত বিবৃতি, বক্তৃতা সংবাদপত্রে নোংরাভাবে প্রচার করা হয়েছিল, ইচ্ছাকৃত-ভাবে ফ্যাসিস্টপন্থী দেখানো হয়েছিল। গান্ধী- তার উপর চালানো কৌশল সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তাঁর সমস্ত বক্তৃতা থেকে "অহিংসা" শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। সহজ কথায়, ঠাকুরকে যেভাবে অপদস্থ করা হয়েছিল তার ব্যাপারে তেমনি পন্থা ব্যাবহার করেছিল ইউরোপীয় মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী মহল। বহুল পঠিত Giornale D' Italia-এ মহাত্মার একটি জাল সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল।
গান্ধী, ২০শে ডিসেম্বর ১৯৩১ তারিখে রমা রঁলাকে মুসোলিনি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক ভাষায় লিখেছেন: “মুসোলিনি আমার কাছে একটি রহস্য। তার করা অনেক সংস্কার আমাকে আকৃষ্ট করেছে। তিনি কৃষকদের জন্য অনেক কিছু করেছেন বলে মনে হয়… আমাকে যা আঘাত করে তা হল মুসোলিনির নির্মমতার পিছনে মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্য। এমনকি তার চাতুর্যময় দুর্দান্ত বক্তৃতার পিছনেও তার জনগণের আন্তরিকতা এবং ভালবাসার বলয় রয়েছে। এটাও আমার কাছে মনে হয় যে বেশিরভাগ 'ইতালীয়রা মুসোলিনির লোহার শাসন পছন্দ করে...'

মহাত্মা গান্ধী কখনই কোন মানুষের মধ্যে মন্দকে দায়ী করেননি, কিন্তু তাঁর সাধুতা ও পবিত্রতা তাঁকে একাধিকবার ভুল পথে যেতে বাধ্য করেছিল।
*****
উপোরোক্ত নিবন্ধটা একটা ইতিহাস যা অনেকেই জানেন। কিন্তু ইতালি সফর শেষে তিনি স্বদেশে জাহাজে ফিরে আসার সময়ে বেশ চমকপ্রদ একটা ঘটনা ঘটে। কোন ইতিহাসেই সেটা উল্লেখ নেই- অবশ্য থাকবার কথাও নয়। শুধু বাংলাভাষার সর্বকালের সেরা রম্য রচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী সেই জাহাজের এক স্টুয়ার্টের জবানীতে আকর্ষনীয় রম্য ঢঙ্গে সেই গল্পটুকু পাঠকদের জন্য তুলে না ধরত তবে সেটা চিরকাল সবার অগোচরেই থেকে যেত।

গান্ধীজীর দেশে ফেরা; সাল ১৩৬৩ ৷ ~সৈয়দ মুজতবা আলী
১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইতালি থেকে জাহাজে ফিরছিলাম ; ঝকঝকে চকচকে নতেন জাহাজ, তিলটি পড়লে কুড়িয়ে তোলা যায়। যাত্রী পালের সুখে-সুবিধার তদারক করনেওয়ালা স্টয়ার্ডের সঙ্গে আমার বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল। তাকে বললাম, “এরকম সাফফা জাহাজ কখনো দেখিনি।”

সে বিশেষ উৎসাহ না দেখিয়ে বললে, “হবে না! নতুন জাহাজ। তার উপর এই কিছুদিন আগে তোমাদের মহাত্মা গান্ধী এই জাহাজে দেশে ফিরেছেন।”

আমার অদ্ভুত লাগল। মহাত্মাজী শরীর খুব পরিষ্কার রাখেন জানি, কাপড়-চোপড়, বাড়ি-ঘর-দোরও, কিন্তু এত বড় জাহাজখানাও কি তিনি মেজে ঘষে—? বললাম, “সে কি কথা ?”
স্টুয়ার্ড' বলল — “মশায়, সে এক মস্ত ইতিহাস । এ যাত্রায় খুব বেঁচে গেছি। ইংরেজ যদি ঘন ঘন গোলটেবিল বৈঠক বসায়, আর তোমাদের ঐ গান্ধী যদি নিত্যি নিত্যি এই জাহাজে যাওয়া আসা আরম্ভ করেন, তবে আর বেশী দিন বাঁচতে হবে না।”

আমি বললাম – “তোমার কথাগুলো নতুন ঠেকছে। গান্ধীজী তো কাউকে কখনো জ্বালাতন করেন না।”
স্টুয়ার্ড বলল – “আজব কথা কইছেন স্যার ; কে বললে গান্ধী জ্বালাতন করেন ? কোথায় তিনি, আর কোথায় আমি।
ব্যাপারটা হল; নন- ইতালির বন্দরে জাহাজ বাঁধা। দিব্যি খাচ্ছি-দাচ্ছি-ঘুমোচ্ছি, কাজকর্ম চুকে গেছে, এমন সময় বলা নেই, কওয়া নেই, শুনতে পেলাম কাপ্তেন সাহেব পাগল হয়ে গেছেন ৷ ছুটে গেলাম খবর নিতে। গিয়ে দিখি তিনি দু’হাত দিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ছেন আর সাতান্নবার করে একই টেলিগ্রাম পড়ছেন ! খবর সবাই জেনে গেছে ততক্ষণে। মুসোলীনি (ইল,দুচে) টেলিগ্রাম করেছেন, মহাত্মা গান্ধী এই জাহাজে করে দেশে ফিরছেন। বন্দোবস্তের যেন কোনো ত্রুটি না হয়৷

তারপর যা কাণ্ড শুরু হল, সে ভাবলেও গায়ে কাঁটা দেয়। গোটা জাহাজ- খানাকে চেপে ধরে ঝাড়ামোছা, ধোওয়া-মাজা, মালিশ-পালিশ যা আরম্ভ হল তা দেখে মনে হল ক্ষয়ে গিয়ে জাহাজাখানা কর্পুর হয়ে উবে যাবে। কাপ্তেনের খাওয়া নেই, নাওয়া নেই ৷ যেখানে যাও, সেখানেই তিনি তদারক করছেন । দেখছেন, শুনেছেন, শুকছেন, চাখছেন, আর সবাইকে কানে কানে বলছেন, 'গোপনীয় খবর, নিতান্ত তোমাকেই আপনজন জেনে বলছি, মহাত্মা গান্ধী আমাদের জাহাজে করে দেশে ফিরছেন।' এই যে আমি, নগণ্য স্টয়ার্ড', আমাকেও নিদেনপক্ষে বাহান্নবার বলেছেন ঐ খবরটা যদিও ততদিন সব খবরের কাগজে বেরিয়ে গেছে গান্ধীজী এই জাহাজে যাচ্ছেন ; কিন্তু কাপ্তেনের কি আর খবরের কাগজ পড়ার ফুরসত আছে ?
আমাদের ফার্স্ট ক্লাসের শোঁখিন কেবিন-(কাবিন দ্য ল্যুক্স যেটা ইংরেজীতে ডিলাক্স কেবিন হয়েছে বলে ধারনা ) গুলো দেখেছেন? সেগুলো ভাড়া নেবার মত যক্ষের ধন আছে শুধু, রাজা- মহারাজাদের আর মার্কিন কারবারীদের। সেবারে যারা ভাড়া নিয়েছিল তাদের টেলিগ্রাম(তার) করে দেওয়া হল, 'তোমাদের যাওয়া হবে না, গান্ধীজী যাচ্ছেন। অর্ধেক জাহাজ গান্ধীজীর জন্য রিজার্ভ - পল্টনের একটা দল যাবার মত জায়গা তাতে আছে।
শৌখিন কেবিনের আসবাবপত্র দেখেছেন কখনো? সোনার গিল্টি রূপোর পাতে মোড়া সব। দেয়ালে দামী সিঙ্ক, মেঝেতে ঘন সবুজে রঙের রাবার আর ইরানি গালিচা ছ ইঞ্চি পুরু, পা দিলে পা দেবে যায় ! সেগুলো পর্যন্ত সরিয়ে ফেলা হল । মুসোলিনী ভেনিসীয়-রাজপ্রাসাদ (পালাদাসো ভেনেদ,সিয়া) থেকে চেয়ার-টেবিল, খাটপালঙ্ক পাঠিয়েছেন। আর সে খাট, মশয়, এমন তার সাইজ; ফুটবলের বি টীমের খেলা তার উপরে চলে। কেবিনের ছোট দরজা দিয়ে ঢোকে কি করে। আন, মিস্ত্রী- ডাক, কারিগর- খোল, কবজা, ঢোকাও খাট। সে এক হৈ হৈ ব্যাপার—মার-মার কাণ্ড।!
খাবারদাবার আর বাদবাকী যা সব মালমশলা যোগাড় হল, সে না হয় আরেক হপ্তা ধরে শুনে নেবেন ।

সব তৈরী। ফিটফাট। ওই যে বললেন, তিলটি পড়লে কুড়িয়ে তোলা যায়, ছুঁচটি পড়লে মনে হয় হাতী শুয়ে আছে ।
গান্ধীজী যেদিন আসবেন সেদিন কাগ-কোকিল ডাকার আগে থেকেই কাপ্তেন সিঁড়ির কাছে ঠায় দাঁড়িয়ে, পিছনে সেকেন্ড অফিসার, তার পিছনে আর সব বড়কর্তারা, তার পিছনে বড় স্টুয়ার্ড', তার পিছনে লাইব্রেরিয়ান, তার পিছনে শেফ দ্য কুইজিন (পাচকদের সর্দার ), তার পিছনে ব্যাণ্ড বাদ্যির বড়কর্তা, তার পিছনে—এক কথায় শুনে নিন, গোটা জাহাজের বেবাক কর্মচারী। আমি যে নগণ্য স্টুয়ার্ড', আমার উপর কড়া হুকুম, নট নড়ন-চড়ন- নট-কিচ্ছা। বড় স্টুয়ার্ডের কাছে যেন আমি চব্বিশ ঘণ্টা থাকি। আমার দোষ ? দু-চারটে হিন্দী কথা বলতে পারি। যদি গান্ধীজী হিন্দী বলেন, আমাকে তর্জমা করতে হবে। আমি তো বলির পাঁঠার মত কাঁপছি ।

গান্ধীজী এলেন। মুখে হাসি, চোখে হাসি। ‘এদিকে সার, এদিকে সার' বলে কাপ্তেন নিয়ে চললেন গান্ধীজীকে তাঁর ঘর— কেবিন দেখাতে। পিছনে আমরা সবাই মিছিল করে চলেছি। কেবিন দেখানো হল,—এটা আপনার বসবার ঘর, এটা আপনার সঙ্গে যাঁরা দেখা করতে আসবেন তাঁদের অপেক্ষা করার ঘর, এটা আপনার পড়ার, চিঠিপত্র লেখার ঘর, এটা আপনার উপাসনার ঘর, এটা আপনার খাবার ঘর- যদি বড় খাস কামরায় যেতে না চান, এটা আপনার শোবার ঘর, এটা আপনার কাপড় ছাড়ার ঘর, এটা আপনার গোসলখানা, এটা চাকরবাকরদের ঘর । আর এ অধম তো আছেই—আপনি আমার অতিথি নন, আপনি রাজা ইমানুয়েল ও ইল দু’চের(মুসোলিনি) অতিথি ৷ অধম, রাজা আর দু’চের সেবক।'

গান্ধীজী তো অনেকক্ষণ ধরে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর বললেন, 'কাপ্তেন সায়েব, আপনার জাহাজখানা ভারী সুন্দর। কেবিনগুলো তো দেখলাম ; বাকী গোটা জাহাজটা দেখারও আমার বাসনা হয়েছে। তাতে কোন আপত্তি—?'
কাপ্তেন সায়েব তো আহলাদে আটখানা, গলে জল। গান্ধীজীর মত লোক যে তাঁর জাহাজ দেখতে চাইবেন এ তিনি আশাই করতে পারেন নি।
‘চলুন চলুন' বলে তো সব দেখাতে শহর করলেন। গান্ধীজী এটা দেখলেন, ওটা দেখলেন, সব কিছ, দেখলেন। ভারী খুশী। তারপর গেলেন এঞ্জিন-ঘরে ৷ জানেন তো সেখানে কি অসহ্য গরম। যে-বেচারীরা সেখানে খাটে তাদের ঘেমে ঘেমে যে কি অবস্থা হয় কল্পনা করতে পারবেন না। আপনি গেছেন কখনো ?
আমি বললাম, “না।”
গান্ধীজী তাদের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ গুম, হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন । কাপ্তেনের মুখেও হাসি নেই। আমাদের কাপ্তেনটির বড় নরম হৃদয় ; বুঝতে পারলেন গান্ধীজীর কোথায় বেজেছে।
খানিকক্ষণ পরে গান্ধীজী নিজেই বললেন, 'চলন কাপ্তেন।' তখন তিনি তাঁকে বাকী সব দেখালেন । সেখানে কাঠফাটা রোদ-সব শেষে নিয়ে গেলেন খোলা ডেকের ওপর। কাপ্তেন বললেন, 'এখানে বেশীক্ষণ দাঁড়াবেন না, স্যার। সর্দি গর্মি' হতে পারে।'
গান্ধীজী বললেন, 'কাপ্তেন সায়েব, এ জায়গাটি আমার বড় পছন্দ হয়েছে। আপনার যদি আপত্তি না থাকে তবে এখানে একটা তাঁবু খাটিয়ে দিন, আমি তাতেই থাকবো । কাপ্তেনের চক্ষু স্থির। অনেক বোঝালেন, পড়ালেন । গান্ধীজী শখ, বলেন, 'অবিশ্যি আ-প-না-র যদি কোন আপত্তি না থাকে।' কাপ্তেন কি করেন । তাঁব, এল, খাটানো হল। গান্ধী সেই খোলা ছাদের তাঁরাতে ঝাড়া বারোটা দিন কাটালেন।
কাপ্তেন শয্যাগ্রহণ করলেন। জাহাজের ডাক্তারকে ডেকে বললেন, “তোমার হাতে আমার প্রাণ। গান্ধীজীকে কোনো রকমে জ্যান্ত অবস্থায় বোম্বাই পৌঁছিয়ে দাও। তোমাকে তিন ডবল প্রমোশন দেব।”
আমি অবাক হয়ে শুধালাম, – “সব বন্দোবস্ত ?”
স্টুয়ার্ড হাতের তেলো উঁচিয়ে বললো, “পড়ে রইল। গান্ধীজী খেলেন তো বকরীর দুধ আর পেঁয়াজের স্যুপ। কোথায় বড় বাবুর্চি, আর কোথায় গাওনা-বাজনা। সব ভণ্ডুল। গান্ধীজী শুধু, রোজ সকালবেলা একবার নেমে আসতেন আর জাহাজের সবচেয়ে বড় ঘরে উপাসনা করতেন। তখন সেখানে সকলের অবাধ গতি—কেবিন-বয় পর্যন্ত।
কাপ্তেনের সব দুঃখ জল হয়ে গেল বোম্বাই পৌঁছে। গান্ধীজী তাঁকে সই করা একখানা ফোটো দিলেন। তখন আর কাপ্তেনকে পায় কে? আপনার সঙ্গে তাঁর বুঝি আলাপ হয়নি? পরিচয় হওয়ার আড়াই সেকেণ্ডের ভিতর আপনাকে যদি সেই ছবি উনি না দেখান তবে আমি এখান থেকে ইতালি অবধি নাকে খত দিতে রাজী আছি। হিসেব করে দেখা গেছে ইতালির শতকরা ৮৪.২৭১৯ জন লোক সে ছবি দেখেছে।”

স্টুয়ার্ড কতটা লবণ লঙ্কা গল্পে লাগিয়েছিল জানি নে ; তবে এই কথাগুলো ঠিক যে—গান্ধীজী ঐ জাহাজেই দেশে ফিরেছিলেন। ‘পালাদ সো ভেনেদাসিয়া’ থেকে আসবাব এসেছিল, গান্ধীজী এঞ্জিনরুমে গিয়েছিলেন, জাহাজের দিনগুলো কাটিয়েছিলেন তাঁবুতে, আর নীচে নাবতেন উপাসনার সময়ে। অন্য লোকের মুখেও শুনেছি৷
তথ্য সংযোজন ও অনুলেখনঃ শেরজা তপন

লেখাসুত্রঃ
বড়বাবু- সৈয়স মুজতবা আলী
sundayguardian; mussolini used tagore gandhi
The florentine; mahatma Gandhi Italian visit mussolini
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৪৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×