তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি । মফস্বলের ভাঙ্গা বেড়ার সেই ছোট্ট স্কুলটাতে ভাল ছাত্র হিসেবে অন্যদের তুলনায় মনে হয় একটু ভালই ছিলাম না হলে ক্লাসে প্রথম সারিতে থাকব কেন ? আমার স্মরণ শক্তি খুব দুর্বল সেজন্য এখন কিছুটা দ্বিধান্বিত আসলেই কি ভাল ছাত্র ছিলাম নাকি ভদ্র বালক ছিলাম? যাহোক গড় পড়তা মান খারাপ ছিল বলে মনে হয় না।
প্রতিদিন একগাদা বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়া ক্লাসে স্যারদের একঘেয়ে বকবকানি আর সামান্য ভুলচুকে অমানুষিক অত্যাচার টিফিন পিরিয়ডে খেলার নামে মাঠ দিয়ে ছুটোছুটি আর সেই খেলা খেলতে গিয়ে প্রায়শই পরে গিয়ে হাত-পা ছিলে বাসায় এসে মায়ের বকুনি খাওয়া ছিল আমাদের প্রতিদিনের রুটিন। তখন মনে হোত এ জীবনের কোন ভ্যারিয়েশন নেই- ছিল বড্ড নিরামিষ ।
কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তোমার জীবনের কোন সময়টা সবচেয়ে মিষ্টি মধুর স্মৃতিতে ভরপুর এবং সেই দিনগুলিতে আবার ফিরে যেতে মন চায় । প্রতিউত্তরে দু চারজন দুর্ভাগ্যবানরা ছাড়া প্রায় প্রত্যেকেই নির্দ্বিধায় বলবে ‘আমার ছেলেবেলা।’
কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আমিও ওই দুর্ভাগ্যবানদের একজন। আমি আমার সেই ছেলেবেলায় ফিরে যেতে খুব বেশী আগ্রহী ছিলাম না কখনো। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে অন্য অনেক কিছুর মত ইচ্ছে অনিচ্ছাগুলো পালটে যায়।
তখনকার খুব অল্প কিছুই স্মৃতি আছে যা মনকে একান্তভাবে নাড়া দেয়। কে জানে এখন মনে হয় বুঝতে পারছিনে সেই দিনগুলি হয়তো জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন ছিল ,হয়তোবা বৃদ্ধ বয়সে মনে করে চোখের জল ফেলব ।
উজ্জল। টগবগে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একটি ছেলে । এমন ডানপিটে প্রতিভাবান ছেলে আমি খুব কম দেখেছি । তবে তার জন্ম আমাদের গাঁয়ে না ভিন গায়ে। কোথায় ছিল আজ ভুলে গেছি। তার বাবা ছিলেন ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তা। (টি এন ও)
চাকরীর ক্ষেত্রে তাকে দু’চার বছর পর পরই তল্পি তল্পা নিয়ে একশহর ছেড়ে অন্য শহরে ডেরা বাঁধতে হত । সরকারী এইসব চাকুরেদের সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে সন্দেহ নেই। প্রথমত পড়াশুনা। ঘন ঘন স্কুল পরিবর্তনের জন্য প্রায়শই ‘ব্রেক অব স্টাডি’র স্বীকার হতে হয়। তাছাড়া একটা পরিবেশ ছেড়ে অন্য পরিবেশে গিয়ে মানিয়ে নিতে হলে সময়ের প্রয়োজন। সম্পূর্ণ নতুন এক শহর অন্য পরিবেশ একটু ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে তাল মেলাতে না পেরে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এরা হয় ঘরকুনো নয়তো অতি আড্ডাবাজ হয় আবার কেউ কেউ বখে যায় । সেজন্য বাবা মায়েরা সবসময়ই তটস্থ থাকেন তাদেরকে নিয়ে নিজেদের গণ্ডির বাইরে ওদেরকে মিশতে দিতে চান না ।
দুদিন যেতে না যেতেই ভদ্র-বালকের স্বরূপ উন্মোচিত হল। পুরো ক্লাস তার কাছে নাজেহাল পর্যদুস্ত! একটু বোকা সোকা সহজ সরল ছাত্রদের সে নিত্যনতুন উদ্ভাবিত অত্যাচারে অতিষ্ঠ করে তুলল । বেচারারা জল-ভর্তি চোখে মুখ বুজে সয়ে গেছে শুধু নালিশ করার সাহস পায়নি কেননা শত হলেও সে এ স্কুলের সবচেয়ে সম্মানিত ছাত্র । ব্যতিক্রমধর্মী দুষ্টুমি বুদ্ধি আর বাকচাতুর্যে তার সাথে পেরে ওঠা মুস্কিল ছিল । ভাবতাম সে শুধুই বুঝি ডানপিটে —ছাত্র হিসেবে লবডঙ্কা! কিন্তু আমাদের ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করে তুখোড় বুদ্ধিমত্তার ঝাঁপি খুলে স্যারদেরও প্রিয় পাত্র হয়ে গেল।
এতগুলো গুণ থাকাতে তাকে হিংসে না করে উপায় ছিল না ।
সে ছিল যতটা দুরন্ত আমি ছিলাম ততটাই শান্ত কিন্তু কি আশ্চর্য কারনে দুজনের মধ্যে একসময় গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
তা কাছেই প্রথম শিখলাম কি করে ক্লাস ফাঁকি দিতে হয় কিভাবে শিক্ষকের উপস্থিতিতে নিরীহ মুখ করে তার অগোচরে চূড়ান্ত ফাজলামি করা যায়।
শিক্ষকরাও যে একেবারে বুঝতেন না তা কিন্তু নয়, তবে তাকে কিছু বলার মত সাহস তাদের হয়ত ছিল না ।
দুজনের বন্ধুত্ব তখন চরমে যেন মানিক জোড়। আমরা একসাথে ক্লাসে বসি একসাথে খেলি একসাথে প্রাইভেট পরি আর সে দুষ্টুমি করে আমি সহযোগিতা করি। মেয়েদের ব্যাপারেও সেই বয়সে একটু উৎসুক হয়েছিলাম তারই বদান্যতায়। ওদেরকে নিয়ে সে এমন সব কথা বলত যে না জানি কত অভিজ্ঞ। তবে তার জ্ঞানের বহর দেখে হতবাক হতাম নিঃসন্দেহে।
আমাদের (বিশেষ করে আমার)দীর্ঘ একঘেয়ে জীবনে সে আনলো পরিবর্তনের ছোঁয়া । তাকে পেলে আনন্দে আত্মহারা হই কেউ কেউ তাকে অপছন্দ করলেও একদিন ক্লাসে সে না আসলে সবাই বিমর্ষ হয়ে পরে । উপরে ভাব দেখাত সে না আসায় তারা বড্ড খুশী কিন্তু বোঝা যেত এটা তাদের মেকী উৎসব।
তবে আশ্চর্যের বিষয় এত ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব থাকা স্বত্বেও ক্লাসের সময়টুকু বাদে আর কখনই কোথাও তার সাথে দেখা হয়নি । ছুটির দিন মায় কোন ঈদ উৎসবেও সে আমাদের কারো সাথেই দেখা করেনি । আমরাও কখনো এনিয়ে তাকে অভিযোগ করিনি । বুঝতে পারতাম পরিবারের শাসনের গণ্ডি ভেঙ্গে আমাদের কাছে আসা তার জন্য একটু কষ্টসাধ্য ।
তাই সে হয়ত সেটুকু পুষিয়ে নিতে স্কুলের সময় টুকু ইচ্ছেমত উপভোগ করে ।
তখন সবে পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেছি । স্কুল ফাইনালে সে আমাকে টপকিয়ে একধাপ উপরে উঠে গেছে । সে নিয়ে মনে মনে একটু বিরূপ হলেও তার সাথে সম্পর্কের বিন্দুমাত্র অবনতি হল না ।
হ্যাপি এতটুকুন মেয়ে (ওই বয়সে বড়ই লাগত) কিন্তু কোমড় অব্দি লম্বা চুল ছিল , ফর্সা একহারা গড়ন,দেখতে বেশ লাগত ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সবাই তার দিকে ঠারে ঠুরে এক আধবার তাকাত । সেও হয়তো বুঝতে পেরে দিন দিন আরো বেশী দেমাগি হয়ে উঠছিল । ক্লাসে আসতে যেতে কারো দিকে তাকায় না । যদিও সে আমাদের নীচের ক্লাসে পড়ত কিন্তু দু ক্লাসের মাঝে একটা বাঁশ নিমিত দেয়াল( বেড়া) থাকায় ক্লাসে বসেও তাকে দেখতে অসুবিধা হত না ।
তবে আমাদের দৌড় ওই ভালোলাগা পর্যন্তই ওই টুকুতেই শান্তি। এর থেকে বেশিদূর অগ্রসর হওয়ার মানসিকতা বয়স সাহস কারোই ছিলনা। ভালবাসা কি তখন অবশ্য উজ্জলের বদান্যতায় একটু একটু বুঝতে শিখেছি তবে এটাও জানি এসব বড়দের জন্য ।
চলছিল বেশ আচমকা একদিন ক্লাস শেষে উজ্জল আমাকে নিরিবিলি এককোণে টেনে নিয়ে গেল গোপন কিছু বলার অভিপ্রায়। আমি একটু অবাকই হলাম ওতো এভাবে গোপনে কিছু বলে না! যা বলে সবার সামনে উঁচু গলায় বুক ফুলিয়ে । তাহলে..
‘শোন ..আমি প্রেমে পড়েছি?’
আঁতকে উঠলাম , অ্যা বলে কি?শুনেই আমার হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে ! কাঁপা গলায় বললাম‘ কার?’
‘হ্যাপির।’
‘কি বলিস? ওতো ‘হিন্দু ’মেয়ে?’
‘তাতে কি? ভালবাসার মধ্যে ধর্ম কি?’
হাঁ হয়ে গেলাম তার কথা শুনে ।এমন একটা কথা বলার বা চিন্তা করার মত দুঃসাহস তখন আমার ছিল না! এখনো হয়তো নেই। ধর্মটা তখন জীবনের প্রতি পলে পলে আষ্টে পৃস্টে জড়িয়ে আছে। খুব ভোরে উঠে মক্তবে যেতে হত আরবি পড়ার জন্য। ‘মক্তবের হুজুররা শুধু আরবি পড়িয়েই ক্ষান্ত দিতেন না উর্দুও দুচার ছত্র পড়িয়ে ছাড়তেন। দেশ স্বাধীন হয়েছিল অনেক আগে কিন্তু উর্দুর ভুত তখনো তাদের মাথা থেকে নামেনি । ধর্মকে তারা এমনভাবে উপস্থাপন করতেন যে একটু এদিক ওদিক হলেই কেল্লা ফতে। তখন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধার চেয়ে ভয় জাগত বেশ। একটু কিছু হলেই জাত গেল ধর্ম গেল বলে সবাই চিৎকার করে উঠত। এখনো অবস্থা তেমনিই আছে। তাই এমন কথা চিন্তা করার দুঃসাহস দেখাই কেমনে?
একটু চিন্তা করে বললাম, ‘এখন কি করবি?’
সে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। তার এই হাসিতে আমি আরো শঙ্কিত হয়ে উঠলাম কেননা ‘এর মাজেজা ভয়ংকর কিছু তা আগেই জেনেছি !
দুদিন পরে ক্লাস করছি। আমাদের স্কুলের সবচেয়ে গুরু গম্ভীর আর কঠিন চরিত্রের হেড স্যার (ঈমান স্যার) ক্লাস নিচ্ছিলেন। অন্য স্যারের ক্লাসে একটু আধটু ফাজলামি করলেও ইঁনার ক্লাসে সুবোধ বালক সেজে থাকি।
আমরা দুজন বরাবরের মত পাশাপাশি বসে আছি। হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে হ্যাপি ক্লাসে ঢুকল। আচমকা এমন ড্রামাটিক দৃশ্য হেড স্যারকেও বিচলিত করল। তিনি তাকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে?
‘সে কিছু বলতে চাইলে কিন্তু কান্নার তোড়ে ভেসে গেল।’
ক্লাস রুমে পিন পতন নীরবতা। আমরা সবাই নির্নিমেষে চেয়ে আছি ঘটনার পরবর্তী দৃশ্যের অপেক্ষায়…
এবার সে ডান হাতের মুঠো খুলে একটা দোমড়ানো মোচড়ানো কাগজ বাড়িয়ে দিল হেডস্যারের দিকে। হেডস্যার কাগজটা হাতে নিয়ে ভাঁজ খুলে পড়লেন।
আমরা সবাই অতি আগ্রহে হেড স্যারের দিকে চেয়ে আছি; ভেবেছিলাম উনি লেখাটা আমাদের পড়িয়ে শোনাবেন। কিন্তু আমাদেরকে হতাশ করে তিনি আবার সেটা ভাঁজ করে টেবিলের উপর রেখে দিলেন। একটুক্ষণ ঝিম মেরে থম থমে কণ্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করলেন‘ তুমি জানো মা এটা কে লিখেছে।”
সে মাথা নেড়ে জানাল, জানে কান্নার দমক তখনো থামেনি।
‘কে বলতো?’
সে এবার আমাদের দিকে হাত উঁচিয়ে উজ্জলের দিকে ইঙ্গিত করল ‘ও’
আমি অপার বিস্ময়ে হয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকালাম। ওর মুখের রক্ত সরে গেছে। সে লজ্জায় যেন কুঁকরে যেতে চাইছে। ততক্ষনে হেডস্যার ক্লাসের এক ছাত্রকে দিয়ে দপ্তরিকে ডাকতে পাঠিয়েছেন।
আমাদের কারোই বুঝতে বাকী রইল না আজ ভয়ংকর কিছু ঘটবে!
দপ্তরী আসলে স্যার ওঁকে জোড়া বেত আনতে বলল। ভয়ে আমার অন্তরাত্মা কেপে উঠল!
দপ্তরী দ্রুত ছুটে গিয়ে বেত জোড়া নিয়ে আসল। স্যার সে দুটো হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে নেমে এলেন প্রত্যাশিত জায়গায়। আমি ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেলেছি।
‘দাড়াও।’ স্যারের এমন ভয়ঙ্কর কণ্ঠ কখনো শুনিনি।
‘কিরে ব্যাটা দাড়াচ্ছিস না ক্যান?’ কেন যেন মনে হল আমাকে উদ্দেশ্য করে তিনি কথাগুলো বলছেন। একটু চোখ তুলে তার মুখের দিকে তাকাতেই ভীষণ ভাবে চমকে উঠলাম,‘একি তিনি আমাকে দাড়াতে বলছেন? কেন..? ভেবে পেলাম না।’
তার সেই ভয়াবহ চাহনির সামনে আমি কোন প্রশ্ন করার ভাষা হারিয়ে ফেললাম।
হ্যাপির দিকে একবার করুন চোখে চেয়ে উঠে দাঁড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল বাড়ি। বাতাসে শীষ কেটে চাবুকের মত আছড়ে পরছে সেই শুকনো বেতজোড়া। কেউ কোন প্রতিবাদ করল না। এমনকি সেও নিষ্পলক তাকিয়ে আছে আমার দিকে একবারের তরে বলল না —স্যার অপরাধী এ’না সে।মনে হয় কাউকে মার খাওয়াতে পেরেই সে খুশি ছিল।
ওফ্ সে কি বীভৎস অত্যাচার! আজ এত বছর পরেও মনে হলে আমি শিউড়ে উঠি।
সেদিনের সেই ঘটনার পরে উজ্জলের সাথে বেশ কিছুদিন ভাল করে কথা বলিনি। যদিও সে বার বার ক্ষমা চেয়েছে তার কৃত কর্মের জন্য । তার কয়েকমাস পরেই অবশ্য তার বাবার অন্যত্র পোস্টিং হবার সুবাদে সে আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেল। আর কখনো তাকে দেখিনি এই জীবনে সেও আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি!
সেই থেকে আমাকে পেয়ে বসল নারী-ভীতি বন্ধু বান্ধবদের সাথে যথেষ্ট সাবলীল থাকলেও মেয়েদের সামনে চোখ তুলে কথাই বলতে পারতাম না
ইন্টার মিডিয়েট পর্যন্ত কো এডুকেশনে পড়েছি কিন্তু একান্ত বাধ্য না হলে কোনদিন কোন মেয়ে ক্লাসমেটের সাথে কথা বলিনি । ক্লাস রুমে এমন এক কোনে বসতাম যেন সেখান থেকে মেয়েদেরকে নজরে না আসে।
উচ্চ বিদ্যালয়ে বরাবরই উপস্থিত বক্তৃতা কিংবা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। ম্যাট্রিক পরীক্ষার কিছু আগে স্কুল বার্ষিক প্রতিযোগিতায় কবিতা আবৃতি করব বলে মনস্থির করলাম। যদিও আবৃতি-কারকদের মত ভরাট দরাজ কণ্ঠ আমার নেই তবু ওই মফস্বল শহরে যেটুক আছে সেটুকুতেই চলবে। কাজী নজরুলের কঠিন একটা কবিতা বেছে নিয়ে দিন তিনেক ঝাড়া মুখস্থ করলাম সেই সাথে চলল, ব্যাপক ভাব নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে প্রাকটিস ।
কবিতাটা এত বেশী ঠোটস্ত হয়ে গেছিল যে প্রতিযোগিতার দিন একটা চিরকুট নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করলাম না।
নির্দিষ্ট দিনে ঢাউস মাইকে আমার নাম ঘোষিত হলে দুরু দুরু বক্ষে স্টেজের মধ্যিখানে মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। 'নতুন অভিনেতাদের নাকি দর্শকের দিকে তাকাতে নেই তাহলে তার ডায়লগ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে'।
আমি সেই ভুলটিই করলাম। স্টেজের সামনের সারির দর্শকের দিকে তাকাতেই দেখি একসারি মেয়ে বসে হাঁ করে আমার দিকে চেয়ে আছে। ঘাবড়ে গিয়ে এবার তাকালাম ডানপাশে দেখি সেখানকার অবস্থাও তেমনি। এতগুলো মেয়ে এভাবে আমার দিকে চেয়ে আছে সেটা ভেবেই আমার হাত-পা অসাড় হয়ে গেল !! সবকিছু ভুলে স্থাণুর মত দাড়িয়ে আছি। পিছন থেকে স্যার ফিস ফিসিয়ে বললেন ‘কি ব্যাপার কিছু বলছিস না ক্যান?’
কি বলব ছাই আমি সব ভুলে গেছি। পুরো কবিতাতো দুরের কথা এমুহূর্তে আমার কবিতার নামই মনে আসছে না !
মনে করার চেষ্টারত অবস্থায় শুকনো ফ্যাঁসফেসে কণ্ঠে দু-তিনবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করলাম ,‘আমার কবিতার নাম..’ ব্যাস এই টুকুনই। স্যার ওদিকে বেল চাপছেন তার মানে সময় শেষ। আচমকা তিনি হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন ‘স্টেজ থেকে নাম।’
আমি লজ্জিত বিমর্ষ বদনে মাইক্রোফোনের সামনে থেকে সরে আসতেই দর্শক-সারিতে হাসির রোল উঠল। আমার মনে হল শুধু মেয়েরাই হাসছে!
মিরোর-আপু একটা মন্তব্যে বলেছেন;
কিন্তু শেরজা কি চিজ সেটাতো জানি।
সাত ঘাটের জল খেয়েও বলে প্রেমে পড়েনি।
আমি যে কত সুবোধ ভদ্র বোকা ও ভীতু বালক ছিলাম সেইটে বোঝানোর জন্য ভীষন কষ্ট করে এই বাল্যস্মৃতিগুলো টেনে আনলাম
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪