somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাগনার – ভয়ঙ্কর এক ভাড়াটে খুনে বাহিনী

২৫ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাগনার যার সঠিক রুশীয় উচ্চারন вагнера ‘ভাগনের’ এই ‘ভ’ আমাদের বাংলার ঠোট সরু করে ‘ভ’ এর মত নয় এটা নিচের ঠোট সামনে এগিয়ে শিশ দেবার মত করে উপরের ঠোট ভিতরের দিকে নিয়ে ‘ও’ এবং ‘ভ’ ইয়ের মাঝামাঝি উচ্চারণ।
বিশ্বখ্যাত জার্মান মিউজিক কম্পোজার ‘Wilhelm Richard Wagner’ এর নামানুসারে এমন ভয়ঙ্কর নিশ্বংস ভাড়াটে বাহিনীর নামকরন করা হয়েছে ভাবলেই বুকের মধ্যে কষ্ট হয়। তবে কেন তাঁর নামে এই ভাগনার বা ভাগনার গ্রুপের নামকরন হ্ল।
আমাদের প্রায় সবারই ধারনা ভাগনার গ্রুপ এই রাশিয়া উক্রাইনের যুদ্ধেই আত্মপ্রকাশ করেছে, এর আগে এই গ্রুপের কোন অস্তিত্ব ছিল না!
একথা জানতে হলে আমরা প্রায় দু’দশক আগে পিছিয়ে যাই;
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, রাশীয়ার সামাজিক অবক্ষয়, অর্থনৈতিক টানাপড়েন, রাজনৈতিক দৈন্যতার সুযোগে গড়ে ওঠে নতুন এক নাৎসিদের মত ফ্যাসিস্ট সংগঠন; যাদেরকে বলা হত ‘স্কিনহেড’। এদের অনেকেই মাথা মুড়ে সামরিক বাহিনীর অনুরূপ পোষাকে চলাফেরা করত। প্রথমে বিচ্ছিন্নভাবে এদের কার্যক্রম শুরু হয় মুলত; এশীয়, মধ্য এশীয় ও আফ্রিকানদের মারপিট,ছিনতাই, লুটপাট ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে। ১৯
৯৪ থেকে ২০০০ সাল এদের ভয়ঙ্কর নিঃশ্বংস তৎপরতায় পুরো রাশিয়া জুড়ে বিদেশীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। (আমার ‘কাগদা তো-ভ রাশিয়াতে’ ওই সময়কালের ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ আছে। )
কাগদা তো-ভ রাশিয়া (Once upon a time in Russia)

পুতিন ক্ষমতায় আসার পরে মুলত তাঁর ও রাশিয়ান মাফিয়াদের আস্কারা ও অনুপ্রেরণায় এদের সংগঠন সংঘবদ্ধ হয়।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সংস্থার একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ কিম্বার্লি মার্টেন, ২০০৫ সালে এর ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন এবং পুরানো ব্যক্তিগত সামরিক গোষ্ঠীতে এর শিকড় খুঁজে পেয়েছেন।


~ দিমিত্রি উতকিন
ধারনা করা হয় যে, দিমিত্রি উতকিন নামে নাৎসি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হিটলারের অন্ধভক্ত ভাগনার নামে এই ভাড়াটে বাহিনীকে সংগঠিত করে। হিটলারের প্রিয় সুরকার ছিলেন, Wilhelm Richard Wagner’। সেই সুত্রে উতকিন-ও তাঁর ভক্ত ছিল। ভাগনারের মিউজিক্যাল কল সাইন ভাগনার গ্রুপের লোগো হিসেবে ব্যাবহার হয়। ধারনা করা হয় ভাগনার গ্রুপের সদস্যরা গ্রুপে যোগ দিয়ে তাদের দেহে এই কল সাইনের ট্যাটু আঁকত।
এটা দিমিত্রি উতকিনের ছবি। তাঁর গায়ে আকা ভাগনারের কল সাইন ও হিটিলারের নাজি বাহিনীর লোগো।
ভাগনার গ্রুপ গত দুইযুগেরও বেশী সময় ধরে ভীষণ গোপনীয়তার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তাদের তৎপরতা চালিয়ে আসলেও তারা কখনোই তেমন আলোচনায় আসেনি।


~ Wilhelm Richard Wagner’।

*ভাগনার* Wagner – ভয়ঙ্কর এক ভাড়াটে খুনে বাহিনী
রুশ সেনাদের সহযোগী ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে ইউক্রেনে যুদ্ধরত ভাগনার গ্রুপকে একটি ‘অপরাধী সংগঠন’ হিসেবে বেশ আগেই চিহ্নিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনে বর্তমানে এই গোষ্ঠীর প্রায় ৫০,০০০ যোদ্ধা সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কারবি।
ভাগনার গ্রুপের এখনকার নেতা হচ্ছেন ইয়েভগেনি প্রিগোশিন – যিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মিত্র। মি. কারবি বলেন, গ্রুপটির যোদ্ধাদের ৮০ শতাংশই নেয়া হয়েছে কারাবন্দীদের মধ্যে থেকে।
ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির সংবাদদাতা বার্ন্ড ডেবুসম্যান জুনিয়র জানাচ্ছেন, এই ভাগনার গ্রুপকে “বিভিন্ন দেশে সক্রিয় একটি অপরাধী সংগঠন” বলে ঘোষণার ফলে যুক্তরাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে ব্যাপকভিত্তিক কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
কিন্তু আমার কথা হচ্ছে রাশিয়ার এই গোপন সংগঠন সারা বিশ্বব্যাপী সুদীর্ঘ সময় ধরে ভয়ঙ্কর সব তৎপরতা চালানোর পরেও কেন তাদেরকে আগেই নিষিদ্ধ করা হয়নি। সম্ভবত এর উত্তর; চোর এ চোরে মাসতুতো ভাই। এমন অবৈধ গোপন সংগঠন বাকি সব ক্ষমতাধর দেশেরই আছে।
নিকট অতীতে এই ভাগনার গ্রুপ সিরিয়া, লিবিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রসহ বেশ কিছু দেশে তৎপর ছিল। সম্প্রতি পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত ও সোলেদার শহর দখলের লড়াইয়ে ভাগনার গ্রুপ বড় ধরনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার পরেই সারা বিশ্বের দৃষ্টি কাড়ে।
কয়েকদিন আগে উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ার ট্রেনে করে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র আনার যে গোয়েন্দা ছবি প্রকাশ পেয়েছে – সেসব অস্ত্রশস্ত্র পরে ভাগনার বাহিনীই ব্যবহার করেছে বলে বলা হচ্ছে।

কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভাগনার বাহিনী?
বিবিসির এক অনুসন্ধানে বলা হয়, চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা একজন রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উতকিন (সম্ভবত) এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তবে বর্তমানে এর প্রধান হচ্ছে ধনী ব্যবসায়ী ইয়েভগেনি প্রিগোশিন – যাকে পুতিনের শেফ বা বাবুর্চী বলা হয় কারণ একসময় তিনি ক্রেমলিনের জন্য খাবার সরবরাহ করতেন।


~ গুরু-শিষ্য এক ফ্রেমে। চমৎকার যুগল!!
এযাবৎ পাওয়া নির্ভরযোগ্য সুত্রের তথ্য বিশ্লেষন করে জানা যায় ক্রাইমিয়া দখলের জন্য রাশিয়ার ২০১৪ সালের যুদ্ধে ভাগনার গ্রুপের যোদ্ধারা প্রথম ভুমিকা পালন করে। এর পর ২০১৫ সালে সিরিয়াতে সরকারসমর্থক বাহিনীর পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করে ভাগনার বাহিনী, এবং সেসময় তারা তেলের খনিগুলোও পাহারা দিত ( পাহারা দেয়া মানে; ইচ্ছেমত তেল উত্তোলন করে চোরাই পথে বিক্রি করত)।
তা ছাড়া ভাগনার বাহিনী ভাড়াটি সৈন্যরা লিবিয়ায় জেনারেল খলিফা হাফতারের সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে এবং মধ্য-আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে হীরার খনি পাহারার কাজেও নিয়োজিত।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সরকার ইসলামি জঙ্গী গ্রুপগুলো-কে দমনের জন্য 'ভাগনার' বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে। তাঁর মানে এখনো তারা রাশিয়ার বাইরে সক্রিয়। ধারণা করা হয়, সুদানে সোনার খনিও পাহারা দেবার কাজ করছে 'ভাগনার' বাহিনীর যোদ্ধারা।
সুদান ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। হোয়াইট হাউজের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনে বাখমুত দখলের লড়াইয়ে 'ভাগনার' গ্রুপ সক্রিয় থাকার কারণ হচ্ছে মি. প্রিগোশিন সেখানকার লবণ ও জিপসামের খনিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চান।

[sb]ভাগনার গ্রুপের যোদ্ধারা কারা?
সূত্রমতে, ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে ভাগনার গ্রুপের যোদ্ধা। এর মধ্যে হাজার হাজার যোদ্ধা এসেছে রাশিয়ার কারাগারগুলোতে থাকা বন্দীদের মধ্যে থেকে।
প্রথমদিকে তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৫,০০০ – যাদের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন রেজিমেন্টের সাবেক সৈন্য। তবে ক্রেমলিন নিয়মিত বাহিনীর জন্য লোক পেতে সমস্যায় পড়ার পর এই ভাগনার বাহিনী বড় সংখ্যায় সেনা নিয়োগ শুরু করে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, রুশ শহরগুলোতে ওয়গনার গ্রুপের বিলবোর্ড দেখা যাচ্ছে এবং তারা প্রকাশ্যেই লোক নিয়োগ করছে । রুশ মিডিয়াতে তাদের দেশপ্রেমিক সংগঠন হিসেবে তুলে ধরা হয়।
ভাগনার গ্রুপের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে ইউক্রেনের বুচা ও কিয়েভের নিকটবর্তী এলাকায় বেসামরিক লোকদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ আছে।


~ভাগনার বাহিনীর হাতে নিহত উক্রাইনের বেসামরিক মানুষের লাশের সারি।

জাতিসংঘ ও ফরাসী সরকার এর আগে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডাকাতির অভিযোগ আনে। এর পর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী ২০২০ সালে ওয়াগনারের যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি ও তার আশপাশে ল্যান্ড মাইন ও অন্য বিস্ফোরক পেতে রাখার অভিযোগ আনে।
জানুয়ারি মাসে ভাগনার বাহিনীর একজন সাবেক কম্যান্ডার নরওয়েতে দলত্যাগ করে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার পর দাবী করেন, তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হতে দেখেছেন।


ভিতালি ভোতানভোস্কি উত্তর ককেশাসের একজন সুপরিচিত স্থানীয় ব্লগার এবং মানবাধিকার কর্মী যিনি মস্কোর বছরব্যাপী আগ্রাসনের প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করেছেন এবং সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। তাঁর সাথে প্রথমবার যোগাযোগ করেন আন্দ্রে কার্গিন নামে ২২ বছর বয়েসী ভাগনারের ভাড়াটে সৈন্যের এক খালা। তিনি বেশ কয়েকমাস তাঁর ভাগ্নের কোন খবর পাচ্ছিলেন না। ভাগনারের সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেও তিনি কোন সদুত্তর পাননি। ভাগনারদের সাথে চুক্তি পত্রে তাঁর বিস্তারিত উল্লেখ ছিল- যদি কোন কারনে কার্গিন মারা যায় তবে তাঁর মৃত্যুর খবর ও লাশ তাকেই পাঠাবে। শুধু তাই নয় যুদ্ধে কার্গিনের মৃত্যু হলে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ খালার একাউন্টেই আসার কথা।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে, ভোতানভস্কি ইউক্রেনে মারা যাওয়া ওয়াগনেরাইটদের জন্য একটি বিশেষ কবরস্থানে রাশিয়ায় কার্গিনের কবর খুঁজে পান। ওয়াগনাররা তার খালার কখনই সাথে যোগাযোগ করেননি তাকে জানাতে যে তার ভাগ্নেকে হত্যা করা হয়েছে বা তিনি কি তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দিতে চান। অবশেষে তিনি তাঁর ভাগ্নের মৃতু সন্মন্ধে নিশ্চিত হলেন ভোঁতানভস্কির তোলা একটি ছবি দেখে।
এরপর থেকেই,অনেক পরিবার তাদের আত্মীয়দের ভাগ্য সম্পর্কে ভোতানভস্কির সাথে যোগাযোগ করেছে যারা ইউক্রেনে ওয়াগনারের জন্য ভাড়াটে হিসাবে লড়াই করেছিল।


~ ভাগনার সৈন্যদের কবর।

ভিতালী (এখানে ভোতানভস্কি হবে) রেডিও লিবার্টি (কাভকাজ *ককেশাস ডট রিয়ালিকে) বলেন যে, তিনি ইউক্রেনে নিহতদের কবর খুঁজতে শুরু করার পর থেকে তিনি দক্ষিণ রাশিয়ায় এবং ভলগোগ্রাদ এমনকি বেলারুশ এবং কাজাখস্তানের মতো দূরেও কিছু ভাগ্নার বাহিনীর সদস্যদের কবরের খোঁজ পেয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, পরিবারগুলিকে মৃত্যুর বিষয়ে জানানো হয়নি। দিমিত্রির সেই সব কবরস্থান আবিষ্কার করার পরে তাদের আত্মীয়রা আর বেঁচে নেই বলে তারা জানতে পেরেছিল।
ভিতালি বলেছেন এযাবৎ শুধুমাত্র একজনের খবর আমি পেয়েছি যার স্ত্রীকে জানানো হয়েছিল যে যুদ্ধে তাঁর স্বামী মারা গেছেন।
তিনি এতদ অঞ্চলে ভ্রমণের সময়ে প্রচুর কবস্থান আবিস্কার করেন যা ভাগনারের লগো খচিত কালো পতাকা আর হলুদ পুস্পস্তবকে ঢাকা ছিল।
এই কালো পতাকা এবং হলুদ পুষ্পস্তবকগুলি ইউক্রেনে মারা যাওয়া ওয়াগনার সৈন্যদের কবরের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ভাগনার বাহিনী করে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে সোলেদার এবং বাখমুতের মতো পূর্ব ইউক্রেনের শহরগুলিতে কঠোর লড়াইয়ে ব্যাপক হতাহতের শিকার হয়েছে।
কটি ফাঁস হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে — ভাগনারের বস ইয়েভজেনি প্রিগোজিন, এও বলেছেন যে পরিবারের সদস্য ইউক্রেনে যুদ্ধে মারা গেলে নগদ অর্থ প্রদান করবে। . মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বলছে যে বন্দীদের নিয়োগ করা হয়েছিল তাদের বলা হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে তারা মৃত্যুবরন করলে তাদের পরিবার ৫ মিলিয়ন রুবেল (৭১০০০ ডলার) অনুদান পাবে।
সমস্ত মৃতদেহকে সরিয়ে ফেলার জন্য, ভাগনার তার মৃত যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ কবরস্থান তৈরি করেছিল, যাদের মধ্যেবে বেশীরভাগকে কারাগার থেকে মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ করার জন্য ডাকা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ভিতালি সর্বপ্রথম দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়ার বাকুস্কায়া গ্রামে গত ডিসেম্বরে বিশাল ভাগনেরিয়ান কবরস্থান আবিষ্কার করেন।
সাজা মওকুফ বড় অঙ্কের বেতন, যুদ্ধ শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা, লুটের মাল ভাগ সহ বিশেষ আশ্বাসের ভিত্তিতে যারা ভাগনারের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে তাদের বড় অংশের পরিনতিই হয়েছে এমন নিষ্ঠুর ও অমানবিক। মৃত্যর পরে তাদের পরিবারকে সেই প্রতিশ্রুত অর্থ দিতে হবে বলে তারা খবরটাও চেপে যায়।
"ভিতালি অবশ্য একথাও স্বীকার করেছেন যে, [রাশিয়ার] আশেপাশে এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলিতেও যেখানে যুদ্ধের সরঞ্জাম ও খাবার রসদ যোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় সেখানে মৃতদেহ পরিবহনের চেয়ে এক জায়গায় সমাধিস্থ করা সহজ,"।



ভাগনারের সৈন্যরা কত বেতন পান?
তাদের প্রশিক্ষণের সময়, PMCs প্রতি মাসে ১১০০ ডলার বেতন পায়। ভাগনার প্রাইভেট মিলিটারি কন্ট্রাক্টর (PMCs), যারা সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত নিয়মিত রাশিয়ান সার্ভিসম্যানদের বেতন অনুমান করা হয় প্রতি মাসে ৮০ হাজার থেকে ২৫ হাজার রাশিয়ান রুবেল ( ৬৬৭-২০৮৩ ডলার) এর মধ্যে।

ভাগনার-এর অর্থের উৎস
সম্প্রতি রাশিয়ান ধনকুবের ভাগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ২০২৪ সালে ইউক্রেনে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। যা পুতিনের জন্য বিশাল মাথাব্যাথার কারণ।
রাশিয়ায়, ভাগনার একটি অফিসিয়াল কোম্পানি নয় কারণ সে দেশের আইন কোন বেসরকারী সামরিক কোম্পানির অস্তিত্বের অনুমতি দেয় না। পরিবর্তে, এটি মস্কোর গোপন সমর্থনে ও অন্য কোন দেশের সরকারের সাথে দৃঢ় সম্পর্কের ভিত্তিতে একটি জটিল সত্তার আড়ালে লুকিয়ে আছে।
যদিও পশ্চিমাবিশ্ব তাদের অর্থোপার্জনের বিভিন্ন উৎস খুঁজে পেয়েছে কিন্তু রাশিয়া বরাবরই আর্থিক উপার্জনের উৎস অব্যাহতভাবে গোপন রেখেছে। কিন্তু অন্যদিকে রাশিয়া বিভিন্ন ফ্রন্টে তাদের অর্থ আদান প্রদান করার অনুমতি দিয়েছে। .

তাহলে কিভাবে রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ অর্থ উপার্জন করে?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াগনার গ্রুপের কার্যক্রম আফ্রিকায়, বিশেষ করে সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (CAR) এবং লিবিয়ায় প্রসারিত হয়েছে, যেখানে এটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র প্রিগোজিনের স্বার্থ রক্ষা করে।
গত বছর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিএআর, মালি, সুদান এবং মহাদেশের অন্য কোথাও প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাটের জন্য ওয়াগনার ভাড়াটেদের অভিযুক্ত করেছে।
ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার যুদ্ধের শেষ বছরে, ভাগনার গ্রুপ তার নেটওয়ার্ক আরও প্রসারিত করেছে, যেখানে শুধু বিভিন্ন খনির থেকে লাভ ১ বিলিয়ন পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
বহনযোগ্য পণ্য ও মূল্যবান রত্ন, যেমন সোনা এবং হীরা,ভাগনার -এর জন্য অর্থপ্রদানের আদর্শ উপায় কারণ সেগুলি সহজেই হোয়াইটওয়াশ করা যায়।
সেন্ট পিটার্সবার্গে RN ট্রেডিং নামে নিবন্ধিত একটি অস্পষ্ট কোম্পানি দ্বারা এই রত্নগুলির ব্যবসা করছে বলে জানা গেছে। যদিও তাদের সরকারী অনুমোদন দেয়া হয়নি- তবুও তারা খোলামেলাভাবে এই ব্যাবসা করে আসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর, সুদানের কর্মকর্তারা খার্তুমে রাশিয়াগামী একটি বিমান পরিদর্শন করেছিলেন ও বিস্কুট বা কুকি হিসাবে লেবেলযুক্ত অনেকগুলো বাক্সে সোনা খুঁজে পেয়েছিলেন।

আফ্রিকার বন সম্পদ ধ্বংস
২০২২ সালে "অল আইস অন ভাগনার" উদ্যোগের দ্বারা তৈরি একটি ওপেন সোর্স তদন্তের একটি প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে যে একটি ভাগনার কোম্পানিকে কঙ্গো বেসিনের একটি এলাকায় কাঠের ব্যবসার জন্য ৩০ বছরের পারমিট বরাদ্দ করা হয়েছিল, যা একটি বিশ্বের অনুন্নত রেইনফরেস্টের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ২০২১ সালে কাঠ কোম্পানি ‘বোইস রুজ’ কাঠের ব্যাবসার অনুমোদন পাবার সময় ওয়াগনার ভাড়াটেরা সিএআর-এর বোদা শহরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ধারনা করা হয় এখান থেকে অলরেডি ৮৯০ মিলিয়ন ডলারের বেশী অদ্যবধি ভাগনারেরা আয় করেছে।


~ কঙ্গো বেসিন রিসার্ভ রেইনফরেস্ট। এই সেই বিরলতম স্থান শুধুমাত্র যেখানে বাস করে মানুষের নিকটতম আত্মীয় (ধারনাগত) 'বোনোবোস' বা পিগমি শিম্পাঞ্জি। বন উজার হবার সাথে সাথে তাদের আবাস্থলও হুমকির সম্মুখীন।

মধ্যপ্রাচ্যের তেল
এটি রিপোর্ট করা হয়েছে যে ওয়াগনার গ্রুপকে সিরিয়ায় ভাড়াটে হিসেবে কাজের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল এবং গ্যাসের অর্থ প্রদান করা হয়েছিল।
২০১৮ সালে, ইউএস-অনুমোদিত EvroPolis, প্রিগোজিন-নিয়ন্ত্রিত আরেকটি কোম্পানি, ওয়াগনার ভাড়াটেদের বিনিময়ে দায়েশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দখলে থাকা তেলক্ষেত্র দখলের বিনিময়ে সিরিয়ার সরকার বিশেষ সুযোগ দিয়েছিল।
EvroPolis অ্যাকাউন্টিং রেকর্ড থেকে জানা যায় যে সিরিয়ার হোমসে আল-শায়ের গ্যাস প্লান্ট এবং অন্যান্য তিনটি তেল কুপ থেকে শুধুমাত্র ২০১৭ সালে প্রিগোজিনের ফার্ম প্রায় ১৬২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

# এই নিবন্ধের এডিটিং চলমান।

সুত্রঃ
Готов забрать Бахмут: Кадыров отреагировал на плач Пригожина /unian.net
BBC News
No Body No Money/ rferl.org
https://metro.co.uk/
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:০০
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×