গরু কেনাঃ
আপডেটঃ আজব এই দেশে কাঁচা মরিচের কেজি ৮০০ টাকা আর আস্ত গরুর কাঁচা চামড়া বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়!!!!!!!!!!!!
এবারের গরুর অত্যাধিক মূল্য নিয়ে প্রায় সব ক্রেতাদেররই ক্ষোভ আক্ষেপ ও হতাশা ছিল। এক ব্লগারতো ব্লগে লিখেই ফেললেন, গরুকে কি সোনা খাওয়ানো হয় নাকি?
অনেকেই গরুর হাটে যাবার ঝামেলায় জড়াতে চান না। এমনিতেই আষাঢ় মাস ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টির হানা, গা জ্বলানো গরম আর ঘাম। ওদিকে খড় আর গোবড় মেশানো প্যাঁচপ্যাচে কর্দমাক্ত গরুর হাট অনেকেই এড়িয়ে চলতে চেয়েছিল। এর আগে অনলাইনে ওজন মেপে গরু কিনে বেশীরভাগ ক্রেতারাই প্রতারিত হয়েছেন- তাই এবার সরাসরি খামারে গিয়ে গরু দেখে কেনার হারটা ব্যাপক ছিল। তবে খামারিরা একেবারে খাটি দেশী গরু, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে, সুষম খাবার দিয়ে লালন পালনের টোপ ফেলে বেশ ভালই দু'পয়সা কামিয়েছেন। যারা যারা খামার থেকে গরু কিনেছেন তারা প্রায় সবাই( বড় গরু বাদে) চলতি কোরবানের হাটের দর থেকে অনেক বেশী দিয়েছেন।
বড় গরু বাদে কেন? কেননা বড় গরুর মুল্য যাচাই করা যায় না। পাঁচ লক্ষ টাকার একটা গরু মাংসের পরিমান হিসাব করে লাভ-লস বের করতে পারবেন না।
গ্রামে যারা ব্যাক্তিগতভাবে কোরবানিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে যারা গরু লালন পালন করে তারা বেশ খাটাখাটুনি করে অতীব সতর্কতার সাথে গরুর পরিচর্যা করে। নিয়মিত গা ঘষে গোসল করায়,রাতে মশা ডাসার আক্রমন থেকে তাদেরকে রক্ষার জন্য মশারি খাটিয়ে দেয়, কেউ কেউ শীতে হিটার আর গরমে ইলেক্ট্রিক পাখার ও ব্যাবস্থা করে। এরা নিজেরা না খেয়ে গরুকে তাজা ঘাস, খৈল, ভুষি খড় খাইয়ে গরুর সাস্থ্য অটুট রাখে। মফঃস্বল বা গ্রামে এখন পশু খাদ্য, সাপ্লিমেন্ট, ভেটেনারি ঔষধ আর ডাক্তাদের বেশ চাহিদা। প্রায় সব বড় ঔষধের দোকানে গরু মোটাতাজা করনের সাপ্লিমেন্ট আর ঔষধ বিক্রি হয়।
গ্রামের এই প্রান্তিক ছোট্ট খামারিদের সমস্যা একটা; তারা নিজের গরুটাকেই সেরা গরু মনে করে। অনলাইন মিডিয়ার কল্যাণে সারা দেশের বাজার দরের আপডেট থাকায় তারা নিজেদের গরুর বাজার দরের তুলনায় অনেক বেশী দর হাঁকে। প্রায় সবার টার্গেট থাকে ঢাকায় এনে গরু বিক্রি করার।
এবার গ্রামে যে গরুর দাম দেড় লাখ টাকা বলা হয়েছে সেটা ট্রাক ভাড়া ও ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিয়ে ঢাকার হাটে এনে কয়েক দিন-রাত রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আধপেটা খেয়ে প্রায় ঘুমহীন কিংবা খড় বিচালীর গাঁদায় গরুর পাশে একটুখানি চোখ বুজে কাটিয়ে দিয়ে বহু কষ্টে এক লাখ বিশে সেই গরু বেঁচে কিংবা বিক্রি করতে না পেরে উল্টো কয়েক হাজার টাকা গচ্চা দিয়ে ভীষণ হতাশ হতে বাড়ি ফিরে গেছে!
এটা কিন্তু এবারই নয়- প্রতিবারের কাহিনী। এ বছর কিরা কসম কেটে, ঢাকা শহরকে শাপশাপান্ত করে বলে, সামনের বছর আর ঢাকা আসবে না- পরের বছর সব ভুলে ফের নতুন উদ্যোমে আসে।
ঈদের শেষ দুদিন ক্রেতা বিক্রেতার দারুণ এক খেলা জমে। আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকেরা সেই খেলায় জয় পরাজয় নিয়ে প্রতিক্ষনের তুমুল তর্কে লিপ্ত হয়।
কার গরু কেনায় লাভ হল আর কার-টা লসে হল এই নিয়ে হুলস্থুল কান্ড ঘটে। চায়ের দোকানের আড্ডা থেকে বুদ্ধিজীবিদের আসর; সবখানেই সেই এক আলোচনা।
যে লোক দারুণ দর কষাকষি করে খাটি একখান দেশী গরু কিনেছে বলে খুশীতে বগল বাজিয়ে গরুর দড়ি ধরে জোড় কদমে বাড়ির দিকে হেটে যায়- রাস্তায় কেউ যদি একটু পানসে মুখে বলে দামটা একটু বেশী মনে হচ্ছে? ভালই হৈসে।কিংবা ভাইতো ক্রস গরু কিনছেন! তাহলে কম্মো সাবাড়।! তাঁর গরু কেনার সব খুশী বরবাদ!
************************* ************************
কোরবানীঃ
গরু কেনা থেকে কোরবানীর বিষয়টা কম হ্যাপার নয়! হাট থেকে গরু এনে গ্যারেজ ইলেক্ট্রিক পোল কিংবা গেটের গ্রীলে বেঁধে রাখার পরে, গরুর খাবার নিয়ে সবাই ব্যাপক হুলস্থুল শুরু করে দেয়। সবারই তখন গরুর প্রতি বিশেষ ভালবাসা উথলে ওঠে। সুযোগ বুঝে খড় বিচালি আর ঘাসের দাম আকাশ্চুম্বী হয়। এখমুঠো খড় বা ঘাসের দাম ত্রিশ টাকা থেকে উপররে দিকে উঠতে থাকে। ছোলার খোসা বা ভুষি ৭০ টাকা কিলো। যেখানে আস্ত ছোলা মৌসুমে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
আনাড়ি এক/দুই দিনের খামারী বা কৃষকেরা সেই ঘাস খড় ভুষি নিয়ে পেটপুজা করানোর জন্য চরম হাস্যকর প্রচেষ্টা চালায়। দুয়েকজন বিশেষজ্ঞ আবার ঘুরে ঘুরে পরামর্শ দিয়ে তাদের বিশেষ জ্ঞান জাহির করে। এমনে না ভাই এমনে খাওয়াতে হবে। খৈল ভুষি কিছুক্ষন পানিতে ভিজিয়ে খড় গুলো তাঁর মধ্যে ঠেসে দিন দেখবেন গরু গপ গপ করে খাচ্ছে! আরে এইসন শুকনা খাবার খাওয়াএন না- তাজা ঘাস দেন। ভাইরে আগে পানি খাওয়ায় নেন- দেখেন না ওর পানি তেষ্টা লাগছে।
গরু কেনার পরে সবার জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হয়!
আল্লাহ বলেছেন নাকি নিজের প্রিয় প্রাণীকে তাঁর নামে উতস্বর্গ করতে হবে তাই গরু কেনার পরে সবার এটাকে তাঁর প্রিয় পশু বানানোর চেষ্টার কমতি থাকে না। জেনুইন কসাই ঠিক করা ব্যাপক এক হ্যাঁপা। এদিন নাকি ঢাকার সব সব্জি বিক্রেতা মৌসুমী কসাই হয়ে যায়। যারা সব্জী ফল মহল্লায় ভ্যানে ফেরি করে বিক্রি করে তাদের সাথে প্রায় সব ফ্লাট বা বাড়ির মালিক/বুয়া/দারোয়ানদের সাথে সখ্যতা থাকে।
ওদের কথায় বিশ্বাস করে সবাই। ওরা সহজেই জাত কসাইয়ের টোপ ফেলে গরু বানানোর( কাটার) চুক্তি করে ফেলে। ঢাকার বাইরে থেকে হাজার হাজার মৌসুমি কসাই এসে মাথায় একখানা তেতুল কাঠের খাম্বা আর ক'খানা ছুড়ি চাপাতি নিয়ে পাড়া মহল্লায় ঘুরে বেড়ায় গরু বানানোর চুক্তির আশায়। মিরপুরে একেবারে জাত বিহারি কসাইয়ের চাহিদা বেশ- তবে তাদের চাহিদাও আকাশচুম্বী! গরুর মুল্যের- হাজারে দু'শ টাকার নীচে তারা মাংস কাটতে চায় না। তাঁর মানে দুই লাখ টকার গরুর জন্য শুধু কসাইকে দিতে হয় চল্লিশ হাজার!! ভাবা যায়। কিছুদিন আগে এই টাকায় দারুণ আস্ত গরু মিলত।
ঢাকার বাইরের কসাইরা আস্ত গরুর চুক্তিতে কিংবা হাজারে একশ টাকায় মাংস কেটে দেয়। এর থেকে কমে গেলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। কাটাকাটিতে সকাল থেকে সন্ধ্যে লেগে যেতে পারে। মাংস থেতলে, হাড় গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে তেল চর্বি পানি কাদায় মাখামাখি হয়ে এক বিদিকিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটা অসম্ভব নয়। অনেকেই ভুল লোকের খপ্পরে পড়েদিন শেষে নিজের নির্বুদ্ধিতায় মাথা চাপড়ায় আর হায় হায় করে।
অনেকেই এইসব হ্যাপায় না গিয়ে নিজেরাই মানহস কাটে। এ কাজ করতে গিয়ে কারো হাত কাটে কারো পা ছিলে যায় কারো হাড়ের টুকরো চোখে গিয়ে অনর্থ ঘটায়- সারা দেহ রক্ত, অস্থি, মজ্জায় মাখামাখি হয়ে যায়। মাংস কাটতে কাটতে দিন গড়িয়ে যায়- তবুও এ কাজে দারুন আনন্দ আছে।
ঈদের কসাইদের নিয়ে অনেক গল্প করা যায় - শুধু এটা নিয়ে লিখতে গেলে ধারাবাহিক গল্প হয়ে যাবে।
* প্রতিবার কোরবানীতেই তের চৌদ্দ বছরের মাদ্রাসার ছাত্রদের খোলা রক্তমাখা ছুড়ি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। কোন মতেই ব্যাপারটাকে আমি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারি না। এবার এলাকার মসজিদের এক হুজুরকে ধরেছিলাম। তিনি প্রথমে অস্বীকার গেলেন। তারপরে বললেন, বালেগ না বালেগ সবাইকে দিয়ে কোরবানি করা যায়। অথেনটিক রেফারেন্সের পরে জুত মত চেপে ধরলে বললেন, উনি আসলে এই সন্মন্ধে সঠিক ভাবে জানেন না- জেনে জানাবেন।
***
এই আষাঢ়ে বেড়িয়ে আসা
ছেলের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভীষণ পড়ার চাপ। ঈদের এই ছুটিই শেষ ছুটি। প্রতিবার ঈদের পরদিন ওরা নানাবাড়ি যায়। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যাব না। কিন্তু ছেলে নাছোড়। একদিনের জন্য হলেও যেতে হবে। আমাদের টলাতে না পেরে শেষমেশ কথাবার্তা বন্ধ করে দিল।
বাচ্চাদের অনুরোধ আর সবার আমন্ত্রনে অবশেষে যেতেই হল।
সারাদিন মেঘলা আকাশ - মাঝে মধ্যে সূর্য একটু উঁকি দিয়েই মুখ লুকিয়ে ফেলে। মাঝে মধ্যে তুমুল বৃষ্টি কখনোবা অনবরত টিপ টিপ করে ঝরতে থাকে। বৃষ্টি থেমে গেলেই গা জ্বালানো গরম আর প্যাচপ্যাচে ঘাম- এর পর রাস্তা ঘাটের কাদা-পানি চরম বিরক্তির কারণ ঘটায়। আষাঢ়ের এই সময়টা ভীষণ অপছন্দের আমার। ছাতাটা কখনো ভীষণ জরুরী কখনোবা বাড়তি বোঝা মনে হয়। এরমধ্যে এই ছুটির সময়ে মফস্বলে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বিদ্যুৎ কখন আসে কখন যায় ঠিক নাই।
শনিবারের খবরে দেখলাম, শুক্রবারে দেশের চাহিদা ছিল কমবেশি ৮৩০০ মেগা ওয়াট আর উৎপাদন ৮৩০০ মেগাওয়াট, বিদ্যুৎ ঘাটতি ০। ওদিকে ওদিন ওখানে ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না।
গাছের আম এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আম্রপালি আর ফজলি বহাল তবিয়তে ঝুলছে। প্রতিরাতে আধাপাকা আম খসে মাটিতে পড়ে। সকালে ঝুড়ি ভরে যায় সেই আমে। রান্না গরুর মাংস জাল দিতে দিতে তৃতীয়দিনের ঝুরিটা ঘিয়ে ভাজা পরোটা দিয়ে দারুণ স্বসাদু খেতে। তবে এক বেলা মাংস খেলে বাকি দুই বেলা ভর্তা ডাল আর পাতলা মাছের ঝোল ছাড়া আর কিছু মুখে রুচে না। এই গরমে পোলাও মাংস দেখলেই গা গুলোয়!
পদ্মা সেতু হবার পরে ওখানে যতগুলো বড় ফেরি ছিল সব নাকি পাটুরিয়া দৌলতদিয়া রুটে দিয়েছে। ফেরি নাকি সারাদিন ঘাটে অপেক্ষা করে গাড়ির। এখন নাকি ফেরি আছে গাড়ি নাই।! কিন্তু আমি যাওয়া আসার পথে এর কোন সত্যতা খুঁজে পেলাম না।
অফিস খুলে গেলেও ফকির আর রিক্সাওয়ালাদের ঈদ ফুরায়নি। ফেরার সময়ে ফেরিতে এমন আরেক গ্রুপের দেখা পেলাম। প্রথম দুই পক্ষকে আপনি ধমক ধামক দিতে পারবেন। কিন্তু এদের সামনে রা কাড়ার উপায় নেই। হিজরাদের সারা দেশ জুড়ে এখন ভীষণ দৌরাত্ম!
পাটুরিয়া দৌলতদিয়ার ফেরিতে এরা কমন। আগে জোর জবরদস্তি করত। বাচ্চা সহ কেউ গেলে হেনস্তা করত-কিন্তু ইদানিং না বললে খুব একটা চাপাচাপি করে না।
ওদের দেখে একটা ছেলে আমার পাশের বাসের জানলা দিয়ে মুখ বের করে চিৎকার করে বলল, সব শালার ভুয়া পুষ্যা মানুষ হিজল্যা সাজছে।
আর যায় কোথায়, তবে ওর কপাল ভাল যে মাত্র দু'জন হিজরা ছিল। শুরু হল তাঁকে উদ্দেশ্য করে বেদম গালিগালাজ। তবে এদের যেসব অশ্লীল গালির সাথে আমি পরিচিত সে তুলনায় এরা দুজন বেশ সভ্যই বলা চলে।
তবে পুরো গালি আমি এখানে লিখতে পারছি না, একটু ইঙ্গিতে দিই,
ওই খানকির ছাওয়াল কি কস? আমরা হিজরা না- তাইলে তোর মা হিজরা? আমি তোর মার বয়েসী- হিজরা না হইলে আমার *** দিয়া তোর মত দুইচাইর খান ছাওয়াল পয়দা করতাম। কাপড় খুলতাম? পাশে ওইডা কি-ডা তোর বউ? ওই ছিনাল মাগীও কি হিজর্যা? এক কাম কর ওরে কালেকশনে পাঠা-আর আমারে তোর সাথে নিয়ে চল। এমন আদর দিমুরে নাটকির পুলা- সারা জীবন আমার পুন্দের পেছন পেছন ঘুরবি... বাসের প্যসেঞ্জারেরা তো বটেই আশে পাশের সব লোকরাও ওই অল্প বয়েসী দম্পত্ত্বিদের দিকে চেয়ে মিটি মিটি হাসছে। বেচারা নতুন বুয়ের সামনে যে ভাবখানা নিয়েছিল সব ধুলোয় ভুলন্ঠিত, মুখ লুকাবার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না সে এখন। হয়তো শ্বশুর বাড়ির প্রথম ঈদটাই মাটি হল তাঁর।
***
কেউ একজন বলেছিল; সমধিকারের ভিত্তিতে এক বছর পর পর হাট থেকে গরু কেনা কোরবানীর পুরা দায়িত্বটা মেয়েদের নিজেদের কব্জায় নেবার জন্য আন্দোলন করা উচিৎ। আপনেরা কি বলেন? আমরা একটু রিলিফ পাইতাম।
কোরবানীর আগে শুধু রাস্তায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করব, আফা দাম কত নিল? যেই দামই বলুক, কইতাম; আফায় তো পুরা ঠগছেন! জাস্ট মজাক আর কি।
ছবিঃ নেট থেকে নিয়ে একটু এডিট করা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৩:০৩